রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
যোগাযোগ ব্যবস্থায় একসময়কার নৌযান নির্ভর উপজেলা ছিল হোমনা এবং তিতাস। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের হাত ধরে কুমিল্লা-২ সংসদীয় এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত কুমিল্লা-২ আসনে আওয়ামীলীগের তৃণমূল সুসংহত করতে মাঠের রাজনীতিতে সময় দিচ্ছেন তিতাস উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান পারভেজ হোসেন সরকার। টার্গেট অভূতপূর্ব জয়ের মধ্যদিয়ে আসনটি পুনরুদ্ধার করা। দলের মনোনয়ন নিয়ে নৌকার মাঝি হতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন পারভেজ। অন্যদিকে আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে আবারও মনোনয়ন পাবার আশায় হোমনার আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ সক্রিয় হয়ে ওঠেছেন। পাশাপাশি হোমনা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবিএম সিদ্দিকুর রহমান আবুল মাঠে রয়েছেন। ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এ আসনে বিনাভোটে জাতীয়পার্টির কমপরিচিতি সম্পন্ন ব্যক্তি আমীর হোসেন এমপি নির্বাচিত হলেও আসনটিতে প্রভাব রয়েছে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির।
এদিকে এ আসনের পাঁচবারের নির্বাচিত এমপি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বর্ষিয়ান রাজনীতিক এমকে আনোয়ার সম্প্রতি মৃত্যুবরণ করলে হোমনা ও তিতাসে আগামীর নেতৃত্বের হাল কে ধরবে এনিয়ে দ্বিধাদ্ব›েদ্ব পড়েছে দলটি। আর এ অবস্থায় বিএনপির একটি অংশ আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আনোয়ারপুত্রকে নেতৃত্বে আনতে চায়। তারা চায় আগামীতে এমকে আনোয়ারের জেষ্ঠ্যপুত্র মাহমুদ আনোয়ার কায়জার দলের প্রার্থী হোক। তবে বিএনপির আরেকটি অংশ হোমনা উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান মোল্লা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জহরকে আগামী নেতৃত্বের কান্ডারি মনে করছেন। আজিজ ও জহর দুইজনই বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি। তবে আসনটি পুনরুদ্ধারে আওয়ামীলীগের শক্ত অবস্থানের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য শক্তিশালী ও সবার কাছে গ্রহণ্যযোগ্য প্রার্থী দিবে বলে জানান কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা। কারণ এমকে আনোয়ারবিহীন কুমিল্লা-২ আসনে বিএনপি শক্ত নেতৃত্ব দিতে না পারলে বর্তমানে আওয়ামীলীগের যে শক্ত অবস্থান তৈরি হচ্ছে তা আগামী নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর ক্ষেত্রে জয় পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
হোমনার একটি পৌরসভা এবং ৯টি ইউনিয়ন আর তিতাসের ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে কুমিল্লা-২ আসন। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির বিএনপির দূর্গ হিসেবেই পরিচিতি রয়েছে কুমিল্লা-২ আসনের। ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী মোজাফফর আলী। এরপর দীর্ঘ ৪৪ বছরেও বিজয়ের মুখ দেখেনি আওয়ামীলীগ। এ আসন থেকে বিএনপির এম কে আনোয়ার পাঁচবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। সম্প্রতি তিনি মৃত্যুবরণ করলে হোমনা-তিতাস বিএনপি এখন নেতৃত্ব সঙ্কটে। ফলে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে হোমনা ও তিতাস উপজেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে মোড় ঘুরতে শুরু করেছে। আগামীর বিজয় সুনিশ্চিত করতে স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী দলটির ভেতরে নেতাদের মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্কের উত্তরণ ঘটছে। আওয়ামীলীগ এবং নৌকার প্রশ্নে হোমনা-তিতাসের নেতারা এক ও অভিন্ন এমন আভাসই মিলছে আওয়ামীলীগের রাজনীতির মাঠে। আগামী নির্বাচনে তিতাস উপজেলা আওয়ামীলীগের আহŸায়ক পারভেজ হোসেন সরকার, হোমনা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ ও সাধারণ সম্পাদক এবিএম ছিদ্দিকুর রহমান আবুলসহ তিনজনই দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। আবার নির্বাচনের ডামাঢোল বাঁজলে অনেকেই যেমন সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় নাম তুলেন। তেমনি সেলিমা আহমাদ মেরি নামের একজন নারী উদ্যোক্তা আসন্ন একাদশ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে হোমনার আসাদপুর ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা মোসলেম উদ্দিন হত্যা মামলার অন্যতম আসামী ইউপি চেয়ারম্যান জালালউদ্দিন পাঠানকে আওয়ামীলীগে যোগদান করানোর ঘটনায় বির্তকের মুখে পড়েছেন অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ। কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল আওয়াল সরকার ওই ঘটনার জন্য আবদুল মজিদকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছেন। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপি প্রার্থী এমকে আনোয়ারের কাছে পরাজিত হোন। হত্যা মামলার আসামীকে দলে আনা এবং মাঠ পর্যায়ের রাজনীতিতে নিস্ক্রিয়তার কারণে বর্তমানে বর্তমানে তৃণমুল আওয়ামীলীগের ভরসা হয়ে ওঠেছেন পারভেজ হোসেন সরকার। তিনি নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়ে আঁটঘাট বেধেই মাঠে নেমেছেন। দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে পারভেজ সরকার কেন্দ্রে লবিংও চালাচ্ছেন। হোমনা-তিতাসের অভূতপূর্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা ও আওয়ামীলীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন মানুষের সামনে তুলে ধরছেন তিনি। তিতাসে আওয়ামীলীগকে সুসংহত করার কারিগর হচ্ছেন পারভেজ সরকার। হোমনাতেও যেনো আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকে এজন্যও কাজ করে যাচ্ছেন। ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে পারভেজ সরকারের সাংগঠনিক দক্ষতা ও সাধারণ ভোটারদের বিশ্বস্থতা ৮টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করেছে। ২০১০ সালে তিতাসে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের পাওয়ার সেন্টার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়ে ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করার ক্ষেত্রে পারভেজ সরকার ভূমিকা রেখেছিলেন। তিতাসের ক্লিন ইমেজের তরুণ নেতা পারভেজ সরকারের নিজ এলাকাতে যেমন ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে তেমনি হোমনাতেও তার কদর এবং অনুসারি সমর্থকের অভাব নেই। পারভেজের সাথে অধ্যক্ষ মজিদ ও ছিদ্দিকুর রহমান আবুলেরও রয়েছে সুসম্পর্ক। পারভেজ সরকারকে ঘিরে তিতাস-হোমনায় আওয়ামীলীগ এখন তারুণ্য নির্ভরতার দিকে এগুচ্ছে। হোমনা-তিতাস আওয়ামীলীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করছেন আগামী নির্বাচনে দীর্ঘদিনের হারানো কুমিল্লা-২ আসন পুনরুদ্ধারে পারভেজ সরকারের বিকল্প নেই। পারভেজের মতো তরুণ নেতৃত্বই কুমিল্লা-২ আসনে আওয়ামীলীগের জয় নিশ্চিত করে নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি করবেন।
এদিকে বিএনপির বর্ষিয়ান রাজনীতিক এমকে আনোয়ারের হাত ধরে কুমিল্লা-২ আসনটি বিএনপির ঘাঁটিতে পরিণত হয়। বিগত সময়ের জাতীয় নির্বাচনগুলোতে আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে মুর্তুজা হোসেন মোল্লা, জাহাঙ্গীর আলম সরকার, অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেও এমকে আনোয়ারের সঙ্গে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে বিজয়ী হতে পারেননি। গত ২৩ অক্টোবর মধ্যরাতে এমকে আনোয়ার ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুতে হোমনা-তিতাস বিএনপি অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়েছে এটি দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাই মনে করছেন। মামলা, কারাভোগসহ প্রায় তিন বছর ধরেই তিনি বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন। ফলে নিজের নির্বাচনী এলাকায় খুব বেশি সময় দিতে পারেননি। তার অনুপস্থিতি যাতে দলীয় নেতাকর্মীরা অনুভব করতে না পারে এজন্য হোমনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান মোল্লা মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছেন। আবার হোমনা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জহর ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলামও নিজের মতো করে দলকে গুছিয়েছেন। আগামীর নেতৃত্বের আশায় তারা তৃণমূল পর্যায়ে দলকে সংগঠিত রাখতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। এছাড়াও দাউদকান্দির সাবেক এমপি ড. মোশাররফ হোসেনের অনুসারি তিতাস উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ছাদেকুল ইসলাম চেয়ারম্যান তিতাসে তাঁর গ্রæপের অবস্থান শক্ত করে রেখেছেন। এমকে আনোয়ারের মৃত্যুর পর কুমিল্লা-২ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় দলের তৃণমূল থেকেই ওঠে আসে অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান মোল্লা, জহিরুল ইসলাম জহর, সিরাজুল ইসলামের নাম। কিন্তু হোমনা-তিতাসের বিএনপির একটি অংশ চাইছে মরহুম এমকে আনোয়ারের পুত্র মাহমুদ আনোয়ার কায়জার দলের প্রার্থী হোক। এমকে আনোয়ারের দলীয়, পারিবারিক ও ব্যক্তি ইমেজের পথ ধরে তাঁর ছেলে আগামী নির্বাচনে জয়ী হবেন বলে বিএনপির একটি অংশের ধারণা। তবে তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করছেন বিএনপির মাঠ পর্যায়ের রাজনীতিতে মরহুম এমকে আনোয়ারের পুত্রের কোনরকম সম্পৃক্ততা নেই। এমনিতেই হামলা মামলা-মোকদ্দমায় হোমনা তিতাসের নেতাকর্মীরা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। তার ওপর রাজনীতিতে নবাগত প্রার্থী দিলে জয় পাওয়াটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তবে আগামী নির্বাচনে এমকে আনোয়ারপুত্র প্রার্থী হবেন কিনা এবিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি। অন্যদিকে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, কুমিল্লা-২ নির্বাচনী এলাকাটি বিএনপির ঘাঁটি হলেও সেখানে আওয়ামীলীগ ধীরে ধীরে সাংগঠনিক শক্তি অর্জন করেছে। এমকে আনোয়ার না থাকায় ওই নির্বাচনী এলাকায় নেতৃত্ব শূণ্যতা সৃষ্টি হয়েছে। সেখানকার বিএনপি নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থেকে সেই শূণ্যতা পূরণ করে নিবে। কিন্তু আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী যে-ই হোক বিএনপির তো শক্তিশালী প্রার্থী লাগবে। আসনটি পুনরুদ্ধারের জন্য সবদিক থেকে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য এমন প্রার্থীই খুঁজে নেয়া হবে আগামী নির্বাচনের জন্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।