পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পদ্মায় ঢেউ নেই। আছে পানির জন্য কোটি কোটি মানুষের হাহাকার। অথচ বাঁেধর অপর পার্শ্বে ভারতে গঙ্গায় পানি থৈ থৈ করছে। একই উৎপত্তিস্থলের গঙ্গা-পদ্মা নদীর কেন এই হাল! উত্তর সহজ মরণবাঁধ ফারাক্কা। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ৩০ বছরের পানি চুক্তি হয়েছে। সেটা খাতা কলমেই সীমাবদ্ধ। চুক্তি অনুযায়ী পানির পাচ্ছে না বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী চুক্তির পানি ন্যায্য হিস্যার জন্য বাংলাদেশ থেকে চাপ প্রয়োগ না করায় ভারতের ড্যাম কেয়ার ভাব। উল্টো মরণবাঁধ ফারাক্কা দিয়ে অন্যত্র পানি সরিয়ে নেয়ায় ফাল্গুন মাসেই পদ্মায় পানির স্তর গেছে নীচে নেমে। এতে নদীর আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকায় বসবাসরত মানুষের জীবন-জীবিকা, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, বনজ, মৎস্যসম্পদ এবং জীব-বৈচিত্র পড়ে গেছে বিপর্যয়ের মুখে।
চৈত্র মাস আসার আগেই পানির জন্য পদ্মা পাড়ের কৃষকের বুকফাটা আর্তনাদ শুরু হয়ে গেছে। পানি বিশেষজ্ঞ-নদী গবেষকরা বলছেন, ফারাক্কায় বাঁধ দিয়েছে; এখন তিস্তা চুক্তি না হলে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা মরুভূমি হয়ে যাবে। ফারাক্কা নামটি উচ্চারিত হলেই বাংলাদেশের মানুষের সামনে ভেসে উঠে প্রতিবেশী ভারতের আগ্রাসী চেহারা। গঙ্গা থেকে পদ্মায় পানি না আসার কারণে পদ্মার শাখা প্রশাখা ২৫টি নদ-নদী শুকিয়ে পরিণত হয়েছে খালে। মরুকরণ প্রবল গতিতে গ্রাস করছে বাংলাদেশের বিরাট এলাকাকে। মানুষের জীবন-জীবিকা, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, বনজ, মৎস্যসম্পদ, জীব-বৈচিত্র, সভ্যতা-সংস্কৃতি, নৌ পরিবহন ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ভূপৃষ্ঠের পানি সংকটে ভূগর্ভস্থ পানির উপর চাপ পড়ছে। লবনাক্ততায় আক্রান্ত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। জলবায়ুর পরিচিত প্রকৃতি পাল্টাচ্ছে। প্রতিবছর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতি হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। মরণবাঁধ ফারাক্কা চালুর পর জাতিসংঘ পরিবেশ অধিদপ্তর ও হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণা ও বিভিন্ন সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছিল বাংলাদেশের ক্ষতি বছরে ৩শ’ মার্কিন ডলার। কৃষি ও নদী বিশেষজ্ঞদের মতে বর্তমানে ক্ষতির পরিমাণ আরো কয়েকগুণ বেড়েছে। অথচ ভারত বরাবরই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে চলেছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৭৫ সালে ২১এপ্রিল থেকে ৩মে পর্যন্ত পরীক্ষামূলক বাঁধটি চালু করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলার রাজমহল ও ভগবানগোলার মধ্যবর্তী স্থানে গঙ্গায় নির্মিত ২হাজার ২শ’৪০ মিটার লম্বা বাঁধটির ১শ’৯টি গেট আটকে ৮০ কিলোমিটার ফিডার খাল দিয়ে ভাগরথি-হুগলিতে পানি টেনে নেয় ভারত। সেই থেকে টানা ৪৩বছরেও পরীক্ষার শেষ হলো না। আদৌ কোনদিন এর পরিসমাপ্তি ঘটবে কিনা কারো পক্ষেই বলা সম্ভব নয়। ভারত বারবার ন্যায্য হিস্যার ব্যাপারে কথা দেয়, পানিবন্টনের চুক্তি হয়, যৌথ নদী কমিশনের জরিপ হয়। কিন্তু পানিবন্টনে থাকে শুভংকংরের ফাঁকি। ভারত আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি লংঘন করে পানি প্রত্যাহার করলেও কোন বাদ-প্রতিবাদ নেই।
ওপারের একাধিক সুত্র জানায়, ফারাক্কার বাঁধের নীচে ওপার আর এপারের চিত্র বিপরীত। একই গঙ্গা ওপারে পানি থৈ থৈ করছে। এপারে নেই পানি। বাংলাদেশ অংশে সামান্য পানি পড়ছে চুইয়ে চুইয়ে। পানিবন্টন চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে পানি দেওয়া হচ্ছে না। ভারত গঙ্গার পানি ছাড়ছে তাদের ইচ্ছানুযায়ী নামকাওয়াস্তে। সম্প্রতি বাংলাদেশের এক সাংবাদিক দার্জিলিং যাবার পথে ফারাক্কা ব্যারেজ পয়েন্টে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে একই গঙ্গায় দুইপাশে দুই ধারার চিত্র অবলোকন করেন। দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে আফসোস করেন। অভিন্ন নদীর পানি প্রত্যাহার করে ভারত ভাটির এলাকাকে ভয়াবহ বিপর্যয়কর অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তার কথায়- পানি নয়, বন্ধুরুপী ভারত প্রতিবেশি বাংলাদেশকে দিচ্ছে মরুকরণের ¯্রােত। শুধু ফারাক্কা বাঁধ নয়, তিস্তা, গোমতি, ধলেশ্বর, ইছামতি, কোদলা ও বেতাইসহ প্রায় সব ক’টি অভিন্ন নদ-নদীর উজানে বাঁধ, গ্রোয়েন ও পাথর ফেলে পানি নিয়ন্ত্রণ করে ভারত বাংলাদেশকে মরুভুমি বানাচ্ছে। বর্তমান আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণে পরিবেশবিদগণ দারুণভাবে উদ্বিগ্ন। তাদের কথা নদ-নদীর প্রবাহ বিঘœতা ও সমুদ্রের পানির উচ্চতা জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায়। পদ্মায় পানির অভাব বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ফারাক্কার প্রভাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের কৃষি, শিল্প, মৎস্য, বনজসম্পদ ও পরিবেশ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির কি পরিমাণ ক্ষতি হয় প্রতিবছর তার হিসাব কোন বিভাগই দিতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র জানায়, সুনির্দ্দিষ্ট কোন তথ্য নেই, ক্ষতি নিরুপণও করা হয় না। তবে সুত্রগুলো অফ দ্যা রেকর্ডে স্বীকার করেছে ক্ষতি অংক বিরাট।
সুত্র জানায়, নদ-নদী খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় দেশীয় প্রজাতি মাছের উৎপাদন প্রায় শূন্যের কোঠায়। রেকর্ডে দেখা যায়, গঙ্গার পানির উপর শতাধিক প্রজাতি মাছ ও ১৮ প্রজাতির চিংড়ির বিচরণ ছিল। তার সিংহভাগই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। প্রকৃতির নৈসর্গিক ভুখন্ড থেকে বৈচিত্রময় অসংখ্য দুর্লভ প্রজাতির পশুপাখি, কীটপতঙ্গ ও পোকা মাকড় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এসবের জীবনধারা ছিল পদ্মা। সুত্র জানায়, ফারাক্কা বাঁধ চালুর বছর তিনেক পরের এক জরিপ রিপোর্ট হচ্ছে ১শ’১৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৬শ’৩০ প্রজাতির পাখি, ১শ’২৫ প্রজাতির সরীসৃপ ইত্যাদি ক্ষতির মুখে পড়ে যায়। বর্তমান কি অবস্থায় তার তথ্য দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট বিভাগ। স্বাদু পানিতে বসবাস করা ২শ’৬০ প্রজাতির মাছের অনেকগুলো প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
পানির অভাবে কৃষির বেহাল দশা। দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্প। প্রথমদিকে প্রকল্পের আওতায় ৪ লাখ ৮৮ হাজার একর জমিতে সেচ সরবরাহ করা হতো। পানির অভাবে তা কমতে কমতে এখন মৌসুমে মাত্র কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে এসে ঠেকেছে। এ অঞ্চলের ৫শ’৪৫ কিলোমিটার নৌপথ বন্ধ হওয়ায় লাখ লাখ দরিদ্র মাঝিমাল্লা হয়ে পড়েছে কর্মহীন। অনেকেই পেশাবদল করতে বাধ্য হয়েছেন। কোটি কোটি মানুষের জীবন জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে মরণবাঁধ ফারাক্কা। প্রতিটি শুষ্কা মৌসুমে পানির লেয়ার নেমে যাওয়ায় গভীর ও অগভীর নলকুপ ড্র-ডাউন করতে হওয়ায় কৃষকের বিপুল অর্থ ব্যয় হয়। টিউবওয়েলের পানি উঠা বন্ধ হয়ে খাবার পানির জন্য সীমাহীন কষ্ট করতে হয় ।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন ফারাক্কার কারণে নদী বাহিত পলির গ্রেইন সাইজ স্পেকট্রাল প্যার্টান অর্থাৎ পলি কণার সাইজ এর তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন ঘটছে। এই পরিবর্তন বাংলাদেশের মাটির ভৌত কাঠামোর উপর নেতিবাচক প্র্রভাব ফেলছে। একসময় পদ্মার দুই কুল জুড়ে পানি ছিল টয়টম্বুর। পদ্মারপাড়ের তসলিম উদ্দীনসহ কয়েকজন বৃদ্ধ বললেন, ‘পদ্মার তুমুল গর্জন দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। আর মরা পদ্মার দৃশ্যও দেখছি। মাত্র ৪৩ বছরের ব্যবধানে পাল্টে গেছে সবকিছু। সেই পদ্মা আর পদ্মা নেই। ভারত ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে কি সর্বনাশ করেছে তা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। এ যেন বিশাল পদ্মায় শূন্যের গভীরে অণু’। পদ্মাপাড়ের বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের কথা, বিশাল পদ্মা পায়ে হেটে পার হওয়া যাবে অতীতে কেউ কখনো ভাবেনি। বাস্তবে সেটিই হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও হাইড্রোলজি বিভাগের দু’জন কর্মকর্তা নামপ্রকাশ করতে নিষেধ করে দৈনিক ইনকিলাবকে জানালেন, পদ্মার ন্যায্য হিস্যার পরিমাপ করা হয় হার্ডিঞ্জ পয়েন্টে। কখনোই ন্যায্য হিস্যা পাওয়া যায়নি। পদ্মায় ও গড়াইয়ে পানি প্রবাহ নেই বললেই চলে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের মোট ১৫টি স্প্যানের মধ্যে ১১টিই এখন পুরোপুরি পানিশূন্য। ৪টি স্প্যানেও যা পানি আছে তা দেখে মনে হয় না নদী একেবারে খালে পরিণত হয়েছে। পদ্মা ও গড়াইয়ের বুক জুড়ে শুরু হয়েছে হাহাকার। পদ্মার চিরচেনা চেহারা দ্রæত বদলে গেছে। এখন অপেক্ষার পালা পদ্মার মৃত্যু হতে আর কতদিন বাকি?
১৯১৫ সালে ইংরেজ শাসনামলে যখন বিশাল পদ্মায় ভেড়ামারা-পাকশীতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মিত হয়েছিল, তখন গর্জনী স্রোত ছিল। ফারাক্কা বাঁেধর কারণে পদ্মা আজ মৃত। অবস্থা যেদিকে যাচ্ছে তাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম হয়তো প্রশ্ন ছুঁড়ে বসবে বিশাল ব্রিজ তৈরীর প্রয়োজনীয়তা কি ছিল? হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি নির্মাণের আগে পদ্মা নদীর পূর্ব তীরে সাড়াঘাট ছিল দেশের অন্যতম বৃহৎ নদী বন্দর। সেই সময় দেশী-বিদেশী বড় বড় স্টীমার, লঞ্চ, বার্জ ও মহাজনী নৌকা ভিড়তো সাঁড়াঘাট বন্দরের ১৬টি ঘাটে। বিদেশী পর্যটকের ভিড় থাকতো অনেক। পরবর্তীতে অবশ্য যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের বিরাট সুবিধা করে দেয় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের নদীদেহের অন্যতম হৃদপিন্ড পদ্মা। পদ্মা ও গড়াই এর উপর নির্ভরশীল মাথাভাঙ্গা, ইছামতি, ভৈরব, আপার ভৈরব, কুমার, মধুমতি, ফটকি, বেতাই, চিত্রা, কপোতাক্ষ, নবগঙ্গা ও অভিন্ন নদী ইছামতি ও কোদলাসহ ২৫টি শাখা নদী শুকিয়ে মুমূর্ষ খালে পরিণত হয়েছে। অথচ এদিকে কারো ভ্রæক্ষেপ নেই!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।