মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
আজীবনের জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন শি জিনপিং। হাজার হাজার চীনা আইন প্রণেতা সোমবার তাকে আজীবন ক্ষমতায় রাখার লক্ষ্যে সংবিধান পরিবর্তনের প্রস্তাবের প্রতি করতালি দিয়ে সাগ্রহে সমর্র্থন জানান। এটা হলে তিনি হবেন বিশ^ পরাশক্তি এশিয়ার শক্তিমান নেতা।
বেইজিংয়ে আকর্ষণীয় গ্রেট হলে সোমবার থেকে শুরু হওয়া চীনের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের (এনপিসি) বার্ষিক অধিবেশন পক্ষকাল চলবে। এতে চীনের পার্লামেন্টের প্রায় ৩ হাজার সদস্য অংশ নিচ্ছেন। উল্লেখ্য, চীনের পার্লামেন্টকে রাবার স্ট্যাম্প পার্লামেন্ট বলা হয়ে থাকে। বিশ্লেষকদের মতে, এ অধিবেশনের মধ্য দিয়ে মাও জে দং-এর পর শি জিনপিং-এর আজীবন ক্ষমতায় থাকা ও চীনের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী নেতা হওয়ার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যেই তিনি কয়েক দশকের মধ্যে তিনি চীনের সবচেয়ে ক্ষমতাবান নেতা হিসেবে স্বীকৃত।
অধিবেশনে চীনের প্রেসিডেন্টের দু’দফা মেয়াদের সীমাবদ্ধতা বাতিলের জন্য সংবিধান পরিবর্তনের প্রস্তাব পাঠ করে শোনানো হলে সবাই বিপুলভাবে তা সমর্থন করেন। ১১ মার্চ এ ব্যাপারে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ধারণা করা হচ্ছে যে প্রস্তাবটি সর্বসম্মত ভাবে পাস হবে। এর ফলে শি জিনপিং অনির্দিষ্টকাল ক্ষমতায় থাকবেন।
চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির (সিসিপি) প্রস্তাবে বলা হয়, এ পরিবর্তন কমরেড শি জিনপিংকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির কর্তৃত্ব নিরাপদ ও দেশকে ্ঐক্যবদ্ধ রাখতে এবং জাতীয় নেতৃত¦ ব্যবস্থা শক্তিশালী ও ত্রুটিহীন করতে সহায়ক হবে।
রোববার চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, মাওয়ের উগ্র রাজনৈতিক কর্মকাÐের ফলে বেড়ে যাওয়া বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে পাঁচ বছর মেয়াদে দু’বারের বেশি একজন ব্যক্তি চীনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না মর্মে সংবিধানে যে নিয়ম রচিত হয়েছিল, তা বিলোপের প্রস্তাব করেছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি। এই পদক্ষেপ শিকে আজীবন ক্ষমতায় রাখা ও চীনকে নিজের ভাবম‚র্তিতে নতুনভাবে গড়ে তোলার এই কমিউনিস্ট রাজপুত্রের মুকুটে আরেকটি নতুন পালক যোগ করবে।
চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং অধিবেশনে একটি রিপোর্ট পেশ করেন। তাতে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন যে দেশ তিনটি গুরুত¦পূর্ণ লড়াইয়ে নিয়োজিত। সেগুলো হলঃ অর্থনৈতিক ঝুঁকি, দারিদ্র ও দূষণ। তারপর তিনি সংবিধান পরিবর্তনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
রিপোর্টে বলা হয়, চীন সরকার ২০১৮ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। ২০১৭ সালে জিডিপি ছিল ৬.৯ শতাংশ। সরকার চলতি বছরে প্রতিরক্ষা বাজেট ৮. ১ শতাংশ বৃদ্ধি করে ১লাখ ১১ হাজার কোটি ইউয়ান (সাড়ে ১৭ হাজার কোটি ডলার) করেছে। বিগত দু’বছর প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় হ্রাসের পর এবারের বাজেট বিশে^র বৃহত্তম সশস্ত্র বাহিনীর জন্য প্রণোদনামূলক।
রিপোর্টে তাইওয়ানকে হুঁশিয়ার করে বলা হয়, চীন কোনো ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিকল্পনাকে বরদাস্ত করবে না। মূল ভ‚খন্ড ও স্বশাসিত দ্বীপটির মধ্যে উত্তেজনার প্রেক্ষিতে এ হুঁশিয়ারি দেয়া হল।
বিদ্যমান আইনে চীনের প্রেসিডেন্টের কর্মকালের মেয়াদ পাঁচ বছর। কোনো নেতা দু’বারের বেশি প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না। শি ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। বর্তমানে ৬৪ বছর বয়স্ক শি ২০২৩ সাল পর্যন্ত দলীয় প্রধান, সামরিক বাহিনী প্রধান ও প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন, তার পরে নয়। তিনি বর্তমানে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট রয়েছেন। এখন ২০২৩ সালের পরও তার ক্ষমতায় থাকার ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত চীনকে বিশে^ ঝড় তোলার, একটি উন্নত সমাজ নির্মাণ ও একটি শক্তিশালী সামরিক শক্তিতে পরিণত করার তার স্বপ্নলক্ষ্য পূরণের সুযোগ সৃষ্টি করবে। উল্লেখ্য, শি এখন একই সাথে প্রেসিডেন্ট, পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও পার্টির সামরিক শাখাকে নিয়ন্ত্রণকারী কমিশনের চেয়ারম্যান।
সংহাইয়ের এক প্রতিনিধি ঝু ফেং এএফপিকে বলেন, আমি শি জিনপিংকে সমর্থন করি, সংবিধান পরিবর্তনকে সমর্থন করি। মধ্যাঞ্চলীয় হেনান প্রদেশের আরেক প্রতিনিধি বলেন, শি জিনপিংএক মহান মানুষ।
কিšুÍ অন্য কয়েকজন আইন প্রণেতা সংবিধান সংশোধন বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকার করেন।
বিশ্লেষকরা হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, এ পদক্ষেপ যৌথ নেতৃত¦ মডেলের অবসান ঘটানোর ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে যা ১৯৪৯ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত মাও-এর বিশৃঙ্খলাপূর্ণ নেতৃতে¦র পর দেশে স্থিতিশীলতা এনেছিল।
এদিকে চীনের সামাজিক মাধ্যমে ভিন্নমত নির্মূল করতে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। একমত নই, স¤্রাট ইত্যাদি জাতীয় শব্দ বøক করে দেয়া হয়।
সংশোধন প্রস্তাবে বলা হয় যে তৃণমূল পর্যায়ে এ বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছিল এবং বহু অঞ্চলের জনগণ, পার্টি সদস্য ও ক্যাডাররা সর্বসম্মত ভাবে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ সীমা সংশোধনের আহবান জানিয়েছেন।
পার্লামেন্ট সংবিধান সংশোধন বিষয়ে ভোটের আয়োজন করবে যার ফলে শি’র নাম রাষ্ট্রীয় সংবিধানে লেখা হবে এবং একটি নতুন জাতীয় দুর্নীতি দমন সংস্থা গঠিত হবে।
শি দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিরতিহীন সংগ্রাম করছেন যা তাকে জনপ্রিয় করেছে। এতে ১০ লাখেরও বেশি দলীয় কর্মকর্তা শাস্তি পেয়েছেন।
অধিবেশনে লি কেকিয়াং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর প্রধানতা দৃঢ়ভাবে সমর্থন এবং চিন্তা, কথা ও কাজে তাকে অনুসরণের আহবান জানান। তিনি মাও জে দং-এর পর চীনের সবচেয়ে ক্ষমতাবান এ নেতার পিছনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য রাজনৈতিক এলিটদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, আমরা নতুন যুগে প্রবেশ করেছি। আমাদেরকে অবশ্যই তাকে সমর্থন জানাতে হবে। তিনি বলেন, শি’র নেতৃতে¦ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির শক্তিশালী নেতৃতে¦র প্রশংসা করে বলেন, এ নেতৃত¦ চীনকে এক গুচ্ছ ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সাহায্য করেছে। তিনি বলেন, ঐক্য আমাদের শক্তিশালী করেছে।
চীনা প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতা কারো খেয়ালখুশি মত ব্যবহার করা যাবে না। ক্ষমতার ব্যবহার অবশ্যই নজরদারি করা হবে। আইেেনর ভিত্তিতে বলিষ্ঠ ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জনস্বার্থ বিষয়ক কোনো গুরুত¦পূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সকল দলের সমালোচনার প্রতি গুরুত¦ দেয়া হবে।
গত সপ্তাহেই আভাস পাওয়া যায় যে শি এবারের কংগ্রেস অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট পদে দু’বারের বেশি না থাকার বিধিনিষেধটি বিলোপ করার চেষ্টা করবেন যা তার আগামী একাধিক দশক ক্ষমতায় থাকার পথ প্রশস্ত করবে।
বেইজিং ভিত্তিক রাজনৈতিক ভাষ্যকার হুয়া পো বলেন, ৫ বছর আগে শি যখন ক্ষমতায় আসেন তখন বিশৃঙ্খল অবস্থা ছিল। কাজ শেষ করার জন্য তার আরো সময় দরকার। তিনি এএফপিকে বলেন, ক্ষমতায় আসার পর তার অন্যতম প্রদান কাজ ছিল দল ও রাষ্ট্রের প্রতি সকল প্রকার হুমকির অবসান করা। তা করার জন্য মাত্র দু’ মেয়াদ পর্যাপ্ত নয়।
এনপিসি যখন প্রেসিডেন্টের মেয়াদ সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন করবে বলে আশা করা হচ্ছে তখন বিশ্লেষকরা বলছেন যে আইন প্রণেতারা অনুপস্থিত থেকে বা শীর্ষ পদগুলোতে শি’র মিত্রদের নিয়োগের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করতে পারেন।
হংকং-এর চীনা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক উইলি ল্যাম বলেন, সেন্সরশিপের কারণে আমরা তার আজীবন মেয়াদের বিরোধিতার ব্যাপারে কিছু শুনতে পাইনি। কিšুÍ জনগণের মধ্যে যারা বর্তমান প্রশাসন বিরোধী তারা মনে করেন যে এটা মারাত্মক ও তিনি অনেক বেশিদূর এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি দলের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান শুরু করেছেন। তিনি আরো বলেন, শত শত লাখ সিদ্ধান্তের একজন গ্রহীতা মাও সে তুংয়ের যুগে ফিরে যাচ্ছি আমরা। মাও যুগ থেকে চীনে আসা-যাওয়াকারী চীন বিশেষজ্ঞ ওরভিল শেল বলেন, শি’র ক্ষমতাপ্রীতি শক্ত মানবের শাসনের যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিশ^্যাপী প্রবণতার অংশ। আমরা অতীতে এ রকম শাসকদের দেখেছিঃ হো চি মিন, স্ট্যালিন, চিয়াং কাই-শেক, মাও, চার্লস দ্য গল। যারা আজীবন ক্ষমতায় ছিলেনঃ এনভার পাশা, চসেস্কু।
চীনে কর্তৃত¦পরায়ণতার পুনরুজ্জীবন বিষয়ক বইয়ের লেখক কার্ল মিনজনার বলেন, ’৭০ দশকের শেষ ও ’৮৯-র দশকের গোড়ার দিকে চীন মাওবাদী যুগ ও এক ব্যক্তির শাসন থেকে যৌথ নেতৃতে¦ বেরিয়ে আসে। চীন ব্যক্তির অর্চনা থেকে অধিকতর স্থিতিশীল , আমলাতান্ত্রিক রীতির শাসনের আওতায় আসে।
অধিবেশনে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ সীমা বিষয়ক অতি সংবেদনশীল বিতর্কে অংশ নিতে প্রতিনিধিরা অস্বীকার করেন। কেউ কেউ খোলাখুলি তা সমর্থন করেন। জিলিন প্রদেশের এক প্রতিনিধি দিং ঝাওমিন বলেন, আমি পক্ষে ভোট দেব। এটা কোনো ভালো নীতি নয় যে সকালে যা বলবত হল বিকেলে তা বাতিল হল। বাইরের অনেক দেশে এক প্রেসিডেন্টের আমলে যা শেষ হয় না আরেক প্রেসিডেন্টের আমলে তা বন্ধ করা হয়। এতে কোনো লাভ হয়? মোটেই না।
শি জিনপিং-এর উচ্চাকাক্সক্ষী বেল্ট অ্যান্ড রোড হচ্ছে সড়ক, সাগরপথ ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে এশিয়া ও ইউরোপকে যুক্ত করার উদ্যোগ। বেইজিং-এর কৌশলগত উচ্চাকাক্সক্ষা ও ঋণভার স্বাগতিক দেশগুলোকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। শি’র আজীবন ক্ষমতায় রাখার পদক্ষেপ পার্লামেন্টের প্রতিনিধিরা সমর্থন করলেও উদারপন্থী বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে তা ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।