চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
ড. মাওলানা এ কে এম মাহবুবুর রহমান
\ শেষ \ ইউরোপ, আমেরিকা, পার্শবর্তী দেশ ভারত বিশেষ করে লন্ডনে ছাহেব কেবলা প্রতিষ্ঠিত দারুল হাদিস লতিফিয়া মাদরাসা, আমেরিকায় আল ইসলাহ ইসলামিক সেন্টার সহ শত শত প্রতিষ্ঠান ইলমি ও রূহানি খেদমতের যুগপোযুগী মার্কায হিসেবে যে খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে তা ছাহেব কেবলার রূহানি ফয়েজ ও বরকতের অনন্য ফসল।
কুরআন মাজিদ সহি করে তিলাওয়াত করা প্রত্যেক মুসলামনের উপর ফরজ। এ ফতুয়া আমরা উলামায়ে কেরাম সর্বত্র প্রচার করি। কিন্তু গোটা জাতিকে এই ফরজ আদায়ে যোগ্য করে গড়ে তোলার কার্যক্রম আমাদের অনেকেরেই নেই। বাস্তবতার আলোকে বলতে হয় ছাহেব কেবলা ফুলতলি কুরআন তেলাওয়াতের ফরজ ইবাদত পালনে সর্বস্তরের জনগনকে উদ্ধুদ্ধ করা, প্রশিক্ষণ দেয়া এবং দারুল কিরআতের কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে যে অবদান রেখেছেন, তার জুড়ি নেই। তিনি যে কত মুখলেছ ছিলেন তার প্রমান হল তার সাত ছেলে ও নাতিগন সবাই আলেম। দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, অনেক বড় বড় আলেম নিজের সন্তানদেরকে আলেম না বানিয়ে জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত করে ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, অফিসার হিসাবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন। মনে হয় যেন তারা ইলম শিখে, এত সম্মানের অধিকারী হয়েও ঠকেছেন। এসব আলেমের ইন্তেকালের পর, জাহিলরা তাদের গদি দখল করে নিচ্ছে। তারা ইলম নিয়েই কবরে চলে যাচ্ছেন। ছাহেব কেবলা ফুলতলী (রহ.) সন্তানদের আলেম বানিয়ে সমগ্র বিশ্বে ইলমের খেদমত করে যেই ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তা অনন্য। তার আওলাদগণ কেউ প্রিন্সিপাল, কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কেউ হাসপাতালের মালিক, কেউ বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বে নিয়োজিত থেকেও অবিরাম মহাগ্রন্থ আল কুরআনের খেদমত করে যাচ্ছেন। সারা দেশের আলেম সমাজ তার কার্যক্রম থেকে শিক্ষা নিতে পারেন।
ছাহেব কেবলার আরেক অনন্য অবদান হল তার আওলাদ, ভক্ত ও অনুরক্তদের কালবে দয়াল নবীজির প্রেম ভালোবাসা, মুহাব্বতের আগুন জাগিয়ে দেয়া। প্রিয় নবীজির তা’জিম, আদব, অনুকরণ ও অনুসরনে অভ্যস্ত করা। প্রিয় নবীজির নাম শুনলেই ভক্তদের চোখে পানি আসা ছাহেব কেবলারেই কারামত। সাহাবায়ে কেরামের প্রতি তাজিম আদব ও তাদের আনুগত্য আউলিয়ায়ে কামিলিনদের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদার প্রতি আপোসহীন মানুষিকতা সৃষ্টিতে ছাহেব কেবলা এক সফল ব্যাক্তিত্ব। ৮/২/২০১৮ ইং রোজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় ইয়াকুবিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ ছাহেবজাদার সুযোগ্য আওলাদ আল্লামা কমর উদ্দিন চৌধরীর সাথে সাক্ষাতে রসূল প্রেমের অনন্য এক দৃশ্য দেখতে পাই। তিনি ঢাকা আলিয়ার অতীত স্মৃতি আলোচনা করতে গিয়ে ছাত্র জীবনের হজ্ব সফরের কথা শুনাচ্ছিলেন। ঢাকা আলিয়ার ততকালীন প্রিন্সিপাল আল্লামা ইয়াকুব শরীফ (রহ.) এর রাসূল প্রেমের কথা আলোচনা করছিলেন। সাথে সাথে দেখলাম তার চোখে পানি ঝরছে। প্রিয় নবীজির প্রতি এই মুহাব্বাত ছাহেব কেবলারই ছোহবতের ফসল। অধ্যাপক আব্দুল মুসাব্বির ও উপাধ্যক্ষ কুতুবুল আলম কথাগুলো শুনছিলেন আর চোখের পানি মুচছিলেন। সামগ্রিক ভাবে ছাহেব কেবলা ফুলতলী (রহ.) ছিলেন ইলমে শরীয়ত, তরিকত, মারেফত ও হাকিকতের এক মহা সাগর। যে সাগর সম্পর্কে লেখা যায়, বলা যায় শেষ করা যায় না। তিনি দারস ও তাদরীসে, ওয়াজ নসিহতে কলমি জিহাদে যেভাবে অনুকরণীয় ওয়ারিসে নবী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন ঠিক একই ভাবে আচার আচরণে, আদব ও আখলাকে, রাসূল এর প্রেম সৃষ্টিতে আমলের ময়দানে তিনি ছিলেন এমন এক উজ্জল বাতি যার আলো কিয়ামত পর্যন্ত আলো বিস্তার করতেই থাকবে। আল্লাহ আমাদের এই মহান ব্যক্তির ফয়েজ ও বরকত দ্বারা ধন্য করুন, আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।