চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
তরাবীতে পাঠক হাফেজ ছাহেবাগণ! আপনাদের অবগতির জন্য বলছি: আমাদের বাল্যকালে প্রায় মসজিদে একজন হাফেজ ছাহেবই তারাবীহ পড়াতেন, বড়জোর আর একজন হাফেজ পিছনে শ্রোতা হিসেবে থাকতেন, তিনি নামায পড়ানোতে শরীক হতেন না। যতদূর মনে পড়ে, ইমাম হাফেজ ছাহেব কোথাও তেমন আটকাতেন না, ফলে শ্রোতা হাফেজ ছাহেবের কদাচিৎ মুখ খুলতে হত। এভাবেই নামায শেষ হত।
সেদিনের সঙ্গে বর্তমান কালের তুলনা করলে দুঃখের সীমা থাকে না। বর্তমানে হাফেজদের ইয়াদের কথাটাই বার বার মনে আসে। আর চিন্তা হয় যে, সামনের বছর জানি হাফেজ ছাহেবদের কী অবস্থা দেখা যায়। আল্লাহ্ তাআলা তাঁদের সার্বিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা করুন- এই দোয়া ছাড়া আর কী করতে পারি। শোনা যায়, কোনো কোনো মসজিদে তারাবীর নামায পড়ানোর জন্য এমন হাফেজ দলও থাকেন, যারা পরামর্শ করে নেন, “আমরা তেলাওয়াতে ভুল করলে অথবা কোথাও আটকে গেলে কেউ কারো লুকমা দেব না, অর্থাৎ ভুল সহই পড়ে যাব অথবা আটকের স্থানে আয়াতটিই ছেড়ে সামনে বেড়ে যাব, অন্য সবাই চুপ থাকব।”
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। কী গযবের কথা, কত বড় খেয়ানতের কথা! আর সেই খেয়ানত কার সঙ্গে বা কিসের সঙ্গে? আল্লাহ্ পাকের সঙ্গে বা তাঁর পবিত্র কালামের সঙ্গে। এরচেয়ে বড় গযব আর কী হতে পারে? পাঠক ভাইগণ! এরা কোন্ হাফেজের দল, যারা মহান আল্লাহ্ ও পবিত্র কালামের সঙ্গে এমন গযবের বিষয় ও আমানতের খেয়ানতের কাজ করে হলেও মানুষের কাছে প্রিয় থাকতে চায়! এরা সেই হতভাগা হাফেজদের দল, যারা সারা বছর পবিত্র কুরআন হয়ত ধরেই দেখে না, আর পবিত্র রমযানে এসেও অলসতা, গপসপ ও আরামপ্রিয়তায় নিমজ্জিত থেকে কুরআন ভালো করে ইয়াদ করার কষ্ট নেয় না।
এরা নিঃসন্দেহে সেই দলের অন্তর্ভুক্ত, যাদের সম্পর্কে হযরত আনাস ইব্ন মালিক বলেন, “অনেক কারী (কুরআন তিলাওয়াতকারী) কুরআন পড়ে, অথচ কুরআন তাকে লা‘নত করে।” আল্লাহ্ তাদের হেফাযত করুন এবং হেদায়াত দান করুন। আমীন।
আমরা তারাবীর পাঠক হাফেজ ছাহেবদের অনুরোধ করে বলছি। আপনারা আল্লাহর ওয়াস্তে তাঁর অধিকতর রহমতের দিকে লক্ষ করুন। তাঁর কত বড় রহমত যে, তিনি পবিত্র কুরআনের ত্রিশটি পারা আপনাদের বুকে ধারণ করার তাওফীক দিয়েছেন। আপনাদের উপর কুরআনের হক তো এই যে, আপনারা রমযান মাস ছাড়াই সারা বছরে অন্তত এতটুকু করে পড়বেন, যাতে কুরআন আপনাদের ইয়াদ থাকে।
একদা বাংলাদেশে আগত মেহমান হযরত মাওলানা হাফেজ সলিমুল্লাহ খান (শায়খুল হাদীস) রহ.-কে আমাদেরই সামনে মারকাযে দাওয়াতুল ইসলামের উস্তাদ অধমের কনিষ্ঠ বান্দাযাদা হাফেজ সাঈদ আহমদ জিজ্ঞাসা করল, “হযরত! একজন আলেম হাফেজের পক্ষে দৈনিক কতটুকু করে কুরআন শরীফ পড়া উচিত।” উত্তরে হযরত এরশাদ করলেন, “দৈনিক তিন পারা করে পড়বেন।”
এখন চিন্তা করে দেখুন, এত বড় হাফেজ আলেমের পবিত্র মুখে শোনা গেল, হাফেজ আলেমের উপর কুরআনের হক দৈনিক তিন পারা করে পড়া। আর আমাদের হাফেজ আলেমদের কুরআন পড়ার অবস্থা ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে। অতএব, তাঁদের কাছে সবিনয় আরয করছি, আপনারা পবিত্র রমযানে অন্তত দশ খতম কুরআন পড়ুন, যাতে দৈনিক একটি পারা আপনাদের দশবার পড়া হয়। এরকম হলে আপনাদের প্রতি অনুরোধ, খতমে তারাবীতে অংশ নেওয়াই আপনাদের উচিত নয়।
মসজিদ কমিটিও আল্লাহ্র ওয়াস্তে হাফেজ ছাহেবের পরম কল্যাণহেতু এবং মসজিদের মুসল্লীদেরও মঙ্গল কামনায় পাঠক হাফেজ ছাহেবদের বলে দিলে অন্যায় হবে না বলে আমরা মনে করি যে, “আপনারা দৈনিক প্রতি পারা দশবারের কম পড়লে এবং তারতীল ছাড়া পড়লে আমরা সন্তুষ্ট নই। বড় কথা, সুন্দর ইয়াদ করার নিমিত্তে দশবার করে পারা পড়া লাগলে তার কম যদি পড়েন, তবে আল্লাহ্ তাআলাও আপনাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন।” ইন্শআল্লাহ্ এতে অবস্থার তারাক্কী হবে। ফলে তাঁদের কল্যাণ। আর মুসল্লীগণও অফুরন্ত ছওয়াবের ভাগী হবেন। এটা অবশ্যই তাদের মঙ্গলই মঙ্গল।
কমিটির প্রতি নিবেদন এই যে, রমযানের কমপক্ষে ১০/১৫ দিন পূর্বে ২/৩ জন বিজ্ঞ আলেম, হাফেজ ও কারী ছাহেবদের কর্তৃক নিয়োগপ্রার্থী হাফেজদের যথারীতি ইন্টারভিউ নিয়ে তাদের থেকে ভালো কারী, আলেম, দীনদার ও পরহেযগার হাফেজদের বেছে নির্বাচন করবেন। সেই সাথে উপরিউক্ত নসীহতও করে দিতে অনুরোধ।
মনে রাখতে হবে, হাফেজ ছাহেবদের পড়ার বিশুদ্ধতা ও শ্রুতিমধুরতা তেলাওয়াতে কুরআনের দুটি বিশেষ গুণ। তবে শ্রুতিমধুরতার চেয়ে বিশুদ্ধতার মূল্য ও গুরুত্ব অবশ্যই বেশি।
আর বলারই অপেক্ষা রাখে না যে, মসজিদ কমিটির এতটুকু প্রয়াসে একটি মসজিদে হাফেজ ছাহেবদেরসহ হাজারো মুসল্লীর খতমে তারাবী ও খতমে কুরআন সুন্দরমতো ও যথাযথভাবে সাধিত হলে কমিটির সদস্যবৃন্দ আল্লাহ্ তাআলার নিকট অতি বড় পুরস্কার লাভ করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।