বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
প্রিয় রাসূলে কারীম (সা.) বলেছেন, ‘আহসানুল কালামি কালামুল্লাহ’ (সর্বোত্তম কালাম আল্লাহর কালাম) অন্যত্র বলেছেন- ‘খাইরু বিকাইল আরদি মাসাজিদুহ’ (জমিনের সর্বোত্তম স্থান মসজিদ)। আল-কুরআনের এই শ্রেষ্ঠত্বের কথা শুধু মুসলমানরাই নয়, বরং পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সেই জাহেলী ভাষাবিদদের আত্মসমর্পণের ঘোষণা ‘লাইসা হাযা-মিন কালামিল বাশার’-এর সূত্র ধরে এ যাবৎ বিশ্বের যে কোনো ধর্মাবলম্বী কুরআনের শত্রæ-মিত্র সকলেই স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন।
আমরা মুসলমানরা বাস্তব জীবনে যতটুকুই মানি আর না মানি, কথাটি কিন্তু মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি। অন্তত যারা মসজিদের মুসল্লি তারা তো অবশ্যই বিশ্বাস করে যে, জীবনে-মরণে প্রধান অবলম্বন আল-কুরআন এবং একমাত্র কেন্দ্রস্থল সেই বাইতুল্লাহর প্রতিচ্ছবি মসজিদ ঘর।
আল্লাহ ওয়াদা করেছেন, যাদের অন্তরে কুরআন থাকবে জাহান্নামের আগুন তাদের স্পর্শ করবে না। আর যাদের অন্তর মসজিদের সাথে লেগে থাকবে হাশরের ময়দানে তারা আরশের ছায়া পাবে। তাই কুরআনের সঙ্গে এবং মসজিদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আত্মার সম্পর্ক এবং হৃদয়ের গভীরের সম্পর্ক।
কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্য ও আফসোসের ব্যাপার হলো আমাদের মসজিদগুলোতে কুরআন মাজীদের দুরবস্থার দিকে তাকালে তা বিশ্বাস হয় না; বরং এমন অবস্থা হয়ে থাকে যা দেখলে শত্রæদেরও করুণা না হয়ে পারবে না। শত্রুদেরও করুণা হবে কুরআনের প্রতি। করুণা হবে মসজিদের প্রতি-সর্বোপরি আমাদের মুসলমান নামের মানুষগুলোর প্রতি। কারণ, না মানলেও কুরআনের মর্যাদা সম্পর্কে এখন তারাও অনেকটা অবগত। একদম অজপাড়াগাঁয়ের জীর্ণ ছাপড়ার মসজিদ বলুন আর শহরের অভিজাত এলাকায় কোনো আলীশান মসজিদ বলুন, অধিকাংশ মসজিদে ঢুকলেই কুরআন মাজীদগুলোর যে করুণ দৃশ্য চোখে পড়ে তা অবাক করার মতো এক লজ্জাজনক ব্যাপার।
কিছু ছেঁড়া-ফাড়া, কিছু বাঁধাই ছুটা, সেলাই খোলা- এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। আর ধুলামলিন যে কী পরিমাণ হয় তা তো সবার চোখের সামনে। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর হাত না লাগলে যা হবার তাই হয়ে থাকে। ধুলা-বালি জমতে জমতে ময়লার এমন স্তর পড়ে যায়, যা শুধু মসজিদের মতো পবিত্র জায়গাই নয় মানববসতির যেকোনো একটি সাধারণ পরিবেশেও বেমানান। যে মসজিদের এমন করুণ পরিস্থিতি এবং যে কুরআন মাজীদ আমাদের হাতে এমন নিগ্রহের শিকার সেই মসজিদে গিয়ে সেই কুরআন থেকে কীভাবে আমরা আত্মার পরিশুদ্ধির দীক্ষা নিব? অন্তরের পরিচ্ছন্নতার খোরাক পাব?
নিশ্চয়ই কুরআন ও মসজিদের সঙ্গে ভালোবাসার বিষয়টি ঈমানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিন্তু তবুও বলতে হয় এবং বাস্তবতাও এটাই যে, একটি মসজিদে শত শত নিয়মিত মুসল্লি আসেন। একজন মুসল্লিও যদি এমন থাকতেন যার অন্তরে কুরআন ও মসজিদের কিংবা যেকোনো একটির পূর্ণ ভালোবাসা আছে অথবা তার গুরুত্বের উপলব্ধিটুকু অন্তত আছে তাহলেও মনে হয় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারত না।
কারণ আমরা যারা শহরের বসতিতে কিংবা গ্রামের জীর্ণ কুটিরে বাস করি তাদের কারো ঘরেই আমার মনে হয় সাধারণ একটি বই কিংবা একটি খাতা এমন অযতœ অবহেলায় ধুলামলিন হয়ে পড়ে থাকার কোনো সুযোগ কখনো পায় না। পড়ে থাকা বস্তুটা যদি আদবযোগ্য হয় তাহলে অন্তত কুঁড়েঘরের শ্রী রক্ষার জন্য হলেও তা সঙ্গে সঙ্গেই গুছিয়ে রাখা হয়। আর আমরা যারা আলীশান প্রাসাদের বাসিন্দা তাদের প্রাসাদে তো এমন দৃশ্য কখনো কল্পনা করাও কঠিন। অথচ যে মসজিদের কথা বলছি আমরা কিন্তু সে মসজিদেরও বাসিন্দা। শুধু ইহকালের নয় চিরকালের বাসিন্দা।
একটু লক্ষ করে দেখুন তো আপনার বুকসেলফে গল্প-উপন্যাসের যেসব বই আছে তার ওপরও কি এরকম ধুলাবালি কখনো জমেছে, যা আপনার মসজিদের কুরআন মাজীদের ওপর জমে আছে। আপনার কোনো অসুস্থতার সময় বা জীবনের সবচেয়ে ব্যস্ততার সময়েও কি আপনার বসবাসের কামরা এবং কামরার বইপত্র বা অন্য কোনো আসবাবপত্র এমন এলোমেলো হয়ে পড়েছিল যেমন এলোমেলো হয়ে বছরের পর বছর পড়ে আছে আপনার মসজিদের কুরআন মাজীদগুলো।
এখন যদি আমরা ভাবি যে, এটা আসলে কুরআনের প্রতি মসজিদের প্রতি আমাদের হৃদ্যতার অভাব, ভালোবাসার অভাব, সর্বোপরি আমাদের ঈমানের দুর্বলতা তবে কি আমাদের এ ভাবনা অমূলক হবে? অবশ্য শহরের এবং গ্রামের বিশেষ বিশেষ মসজিদগুলো যেহেতু সাধারণ সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা এবং কার্যকরী কমিটির অধীনে থাকে তাই এ সমস্যার সমাধানে যেসব পদক্ষেপ নেয়া দরকার হয় তা যেকোনো সাধারণ মুসল্লির পক্ষে অনেক ক্ষেত্রে একক ও পরিপূর্ণভাবে নেয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। যদিও যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব ততটুকুও আমরা সাধারণত করি না
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।