পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত সকলকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের দাবী জানিয়েছেন নোবেল শান্তি পুরষ্কারে ভূষিত তিন নারী, যথাক্রমে উত্তর আয়ারল্যান্ডের ম্যারেইড মেগুইয়ার, ইরানের শিরিন এবাদি এবং ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন শেষে তারা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাদের মতে, রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমারের সেনাদের ববর্রোচিত হত্যাকান্ড, খুন-ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদির যে চিত্র বাইরে থেকে পাওয়া যাচ্ছে বাস্তবে অবস্থা তার চেয়েও অনেক বেশী ভয়ঙ্কর। বিষ্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো নেতা, স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচিও শান্তিতে নোবেল পুরষ্কারে ভ‚ষিত হয়েছিলেন। রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন, ধারাবাহিক ও পরিকল্পিত এথনিক ক্লিনজিংয়ের ইতিহাস বেশ পুরনো হলেও মূলত: সুচির নেতৃত্বে সেখানে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এই অপ-তৎপরতার মাত্রা অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। প্রায় দেড় বছর ধরে চলা রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অনেক কথা বললেও, অনেক মায়াকান্না দেখালেও গণহত্যা প্রতিরোধে তেমন কোন কিছুই করেনি। আট লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নাগরিক নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে এদের ভার বহনের ক্ষমতা বাংলাদেশের নেই।
দু’বছর আগে রাখাইনে জাতিগত সংঘাত ও রোহিঙ্গা গণহত্যা সংঘটনের সময়ই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিশেষ আগ্রহে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনানের নেতৃত্বে যে তদন্ত কমিশন গঠিত হয় তার রিপোর্টের প্রেক্ষিতে সমস্যা সমাধানে মিয়ানমার সরকারসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে সে প্রতিশ্রুতি এবং বিশ্বসম্প্রদায়ের মানবিক দায় হিসেবেও ইতিহাসের নজিরবিহিন এই গণহত্যা প্রতিরোধে যেমন কোন কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। একইভাবে অপরাধের সাথে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করারও কোন বাস্তব পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। সেই সাথে নিজ ভিটামাটি ছেড়ে আসা রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্বসহ রাখাইনে পুর্নবাসনের দাবীর বাস্তবায়ন যেন এখনো সুদূরপরাহত। রাখাইন থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়ন ও গণহত্যা এখন একটি আন্তর্জাতিক ইস্যু। লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশসহ মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়ার কারণে এটি এখন সবচে বড় আঞ্চলিক সমস্যা হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। এ ধরনের সংকট নিরসনে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ ও অংশগ্রহন জরুরী। অথচ মিয়ানমার সরকার এমন একটি ইস্যুকে বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধানের কথা বলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন ও পুর্নবাসনে কালক্ষেপণ ও প্রতারনা করে যাচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রে এবং অন্য ধমীয় সম্প্রদায়ের সাথে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যে ধরনের কঠোর ভ‚মিকা গ্রহণ করতে দেখা যায়, সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন বা রাখাইনের মুসলমানদের জাতিগত নিধনযজ্ঞের বিরুদ্ধে তার কিছুমাত্রও দেখা যায়না। তাদের এই নিরবতা ও দ্বিচারিতা বিষ্ময়কর। বিশ্বসম্প্রদায়ের এহেন নিরবতার বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন তিন নোবেল বিজয়ী নারী। তারা রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নিরাপত্তাসহ স্বদেশে পুনর্বাসনের দাবী জানিয়েছেন এবং নৃশংস ঘটনার সাথে জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের দাবী তুলেছেন। সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতার দায়ে তারা সুচির পদত্যাগও দাবী করেছেন।
পশ্চিমা সামরিক আগ্রাসনে যখন ইরাকের লাখ লাখ মুসলমান হতাহত হয়েছে, তখন সেখানকার কয়েক হাজার খৃষ্টান নাগরিকের নিরাপত্তার জন্য পশ্চিমাদের যে ধরনের জোরালো ভ‚মিকা দেখা গিয়েছিল, একইভাবে রাখাইনের কয়েক হাজার হিন্দুর নিরাপত্তা নিয়েও কিছু মহলকে অতি তৎপর দেখা গেছে। মিয়ানমারে কোন যুদ্ধাবস্থা না থাকলেও রাখাইনের সংখ্যালঘু মুসলমানদের গণহত্যা থেকে রক্ষায় কেউই এগিয়ে আসেনি। এ থেকে এমন ধারনার জন্ম হয় যে, পশ্চিমাদের কাছে মুসলমানদের জীবন ও নিরাপত্তার কোন মূল্য নেই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সময়োচিত সিদ্ধান্ত নিয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছেন বটে, তবে এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুর আশ্রয় ও ভরণপোষনের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা খুবই অপ্রতুল। নোবেল বিজয়ী তিন নারী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন এবং ভুক্তভোগি পরিবারগুলোর সাথে কথা বলার পর ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে একজন ‘দয়ালু মা’ বলে অভিহিত করেছেন। তারা বলেছেন, এ ধরনের নৃশংস গণহত্যার সামনে দাঁড়িয়ে বিশ্বসম্প্রদায়ের নিরবতা মেনে নেয়া যায়না। মিয়ানমার সরকার ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কোন আহ্বান বা শান্তির বাণীকেই পাত্তা দিচ্ছেনা। তাদের এহেন ঔদ্ধত্য বিশ্বসম্প্রদায় কীভাবে মেনে নিতে পারে! গত কয়েক দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার ও শাস্তি হয়েছে। বসনিয়া- হার্জেগোভিনা ও রুয়ান্ডা গণহত্যার বিচার সাম্প্রতিক কালের অন্যতম উদাহরণ। এখনো প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা সীমান্তের জিরো লাইনে আটকে আছে। প্রতিদিনই শত শত পরিবার নতুন করে রাখাইন ছেড়ে পালাচ্ছে। অবিলম্বে এ পরিস্থিতির পরিবর্তন দরকার। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক আদালতে অপরাধীদের বিচার করতে হবে।এই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নাগরিত্বসহ স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ জোরালো করতে হবে। এখানে এসে শুধু সহানুভ‚তি জানিয়ে, দু:খ প্রকাশ করে, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সন্তোষজনক সমাধান হবেনা। প্রয়োজন কার্যকর আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।