রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
ফেনী থেকে মো. ওমর ফারুক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-৩ (সোনাগাজী-দাগনভূঞা) আসনে আ.লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে বিজয়ী হতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক তৎপর রয়েছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেককে আগে এলাকায় দেখা না গেলেও বর্তমানে জন্মদিন ও মৃত্যুবার্ষিকী, প্রীতি ফুটবল, ক্লাব উদ্বোধন, ত্রাণ বিতরণ, অসহায় মানুষদের সহযোগিতাসহ নানা আয়োজনে এলাকায় উপস্থিত হচ্ছেন। আ.লীগ বিএনপি দু’দলের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরাই এলাকায় এসে সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার অংশীদার হওয়ার চেষ্টা করছেন। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য ডজনখানেক প্রার্থী প্রকাশ্যে থাকলেও বিএনপি প্রার্থীদের নীরব প্রচারণা চলছে। তবে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টিসহ অন্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
আ.লীগ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে তারা হলেন- বিগত নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার, কেন্দ্রীয় আ.লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, কেন্দ্রীয় মহিলা আ.লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, কেন্দ্রীয় আ.লীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক মো. নূরের নবী ভ‚ঁইয়া রাজু।
যুক্তরাষ্ট্র আ.লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, ফেনী জেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি ও শিল্পপতি আকরাম হোসেন হুমায়ুন, জেলা যুবলীগ সভাপতি ও দাগনভ‚ঞা উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন ও সোনাগাজী পৌরমেয়র অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দলীয় সমর্থন পেতে লবিং চালাচ্ছেন বর্তমান স্বতন্ত্র এমপি হাজী রহিম উল্যাহ।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বায়রা লাইফের সভাপতি আবুল বাশার বলেন, আমি ২০০৮ সালে ফেনী-৩ আসনে আ.লীগ থেকে নৌকার টিকিট পেয়ে ৯৬ হাজার ভোট পেয়েছিলাম। তখন দলীয় কোন্দলের কারণে বিএনপি প্রার্থীর কাছে আমাকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল। পরবর্তীতে আমার নেত্রী ২০১৪ সালে পুনরায় আ.লীগ থেকে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে, কিন্তু মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দেয়ায় তখন জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমি আমার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছি। দলের স্বার্থে আমি যে কোনো নির্দেশ মানতে রাজি। তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় মানুষের সুখে-দুঃখে এবং সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড নিজেকে সবসময় উজাড় করে দিয়েছি। এসব বিবেচনায় এবারো আমি নৌকার টিকিট পাবো ইনশাআল্লাহ।
কেন্দ্রীয় আ.লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন বলেন, আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির ২৪ জন সদস্যের মধ্যে একজন ছিলেন। আমি সেই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। ২০০১ সাল থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি থাকা অবস্থায় আমি এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি। সে সব যোগ্যতার বিচারে দল আমাকে মনোনিত করবে আমি আশাবাদী। ‘বিগত দু’টি নির্বাচনে আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। এবারো মনোনয়ন চাইবো। দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা যাকেই যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দেবেন, আমি তার পক্ষে কাজ করব। দাগনভ‚ঞা উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগ সভাপতি দিদারুল কবির রতন বলেন, আমি আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-৩ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবো। গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে মনোনয়ন দেন, তাহলে আমি নির্বাচন করব। আমি টানা দুই মেয়াদে দাগনভ‚ঞা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। এমপি হলে উপজেলায় আরো উন্নয়ন হবে এবং নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙা হবে।
সোনাগাজী উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র অ্যাডভোকেট মো. রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হতে পেরে গর্ববোধ করছি। ফেনী-৩ আসনে একজন যোগ্য প্রার্থী দরকার। অতিতে যে ভুল হয়েছে তা কাটিয়ে উঠার সময় এসেছে। আসনটি ফেনীর জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ, দল যদি মনোনয়ন দেয় আমি নির্বাচন করব। ফেনী জেলা আ.লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য মো. নূরের নবী রাজু বলেন, বর্তমান সরকার আমাদের ফেনীর উন্নয়নে ব্যাপক ভ‚মিকা রেখে চলেছেন। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তবে আমি নির্বাচন করব এবং দলের বিজয় সুনিশ্চিত করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো এবং এলাকার উন্নয়নে দৃশ্যমান ভ‚মিকা রাখব ইনশা আল্লাহ।
এদিকে মামলা-হামলা আর কোন্দলে জর্জরিত জেলা বিএনপি স্থানীয়ভাবে নেতৃত্ব শূন্যতায় ভুগছে। বিএনপি থেকে বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম আলোচনায় রয়েছে। তারা হলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপির সাবেক সহ-দফতর সম্পাদক ও নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল লতিফ জনি, স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সাদরাজ জামান, কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) নাছির উদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মহিলা দল নেত্রী সাহেনা আক্তার শানু।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু রাজধানী না এলাকা থেকে নির্বাচন করবেনÑ এ বিষয়টি এখনো স্পষ্ট করেননি। এ ছাড়া আ.লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর বড় ভাই ও ওয়ান ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাঈদ হোসেন চৌধুরীর নামও শোনা যাচ্ছে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। অপর দিকে, বিএনপি-জামায়াত জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর আমীর মকবুল আহমাদের নিজের গ্রামের বাড়ি দাগনভ‚ঞা হওয়ায় তার নামও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনা হচ্ছে।
সে ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন সরকার বিরোধী দু’দফা আন্দোলনের দুঃসময়ে দলের সহ-দফতরের দায়িত্ব পালন করা ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা আবদুল লতিফ জনি। এ ছাড়া আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর কারণে এলাকায় তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। দলের মনোনয়নের বিষয়ে আবদুল লতিফ জনি বলেন, স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে কারাবরণ করেছি। ছাত্রজীবন থেকে আজ অবধি যে কোনো বিপর্যয়ে দলের সঙ্গে ছিলাম। সততা ও দলের প্রতি বিশ্বস্ততার বিচারে যদি কাউকে মনোনয়ন দেয়া হয়, তাহলে বেগম খালেদা জিয়া আমাকেই মনোনয়ন দেবেন বলে বিশ্বাস করি।
সাদরাজ জামান বলেন, কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে এ সংসদীয় আসনে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে আবদুল আউয়াল মিন্টু যদি এলাকায় নির্বাচনে যান, তাহলে তিনি মনোনয়ন চাইবেন না। মিন্টু প্রার্থী না হলে তিনি অবশ্যই দলের দুঃসময়ের কাÐারী হিসেবে মনোনয়ন চাইবেন। দল যাকে মনোয়ন দেবেন তিনি তার পক্ষে কাজ করবেন বলে জানান।
অপর দিকে, ফেনী-৩ আসনে চ‚ড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে জাপা। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের প্রচার ও প্রকাশনা উপদেষ্টা রিন্টু আনোয়ারকে এ আসনে জাপার প্রার্থী হিসেবে নাম প্রকাশ করা হয়েছে। বর্তমানে মাঠে সরব রয়েছেন রিন্টু আনোয়ার।
জাসদ (রব)-এর কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ফেনী-৩ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। তিনি আগামী নির্বাচনে এ এলাকা থেকে প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে। তারা কোনো জোটের সাথে না থাকলেও এককভাবে নির্বাচন করবেন বলে জানান দলের এক নেতা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।