বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
রেজাউল করিম রাজু: রাজশাহী অঞ্চলে তিন ফসলি জমিকে ভিন্নখাতে রুপান্তর থামছেনা। বিশেষ করে আবাদি জমিকে পুকুরে রুপান্তর। কোন কিছুতেই আটকানো যাচ্ছেনা খনন কাজ। সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও ভূমি আইন উপেক্ষা করে চলছে কৃষি জমিতে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন। এতে করে আবাদি জমির পরিমান যেমন কমছে, তেমনি আশেপাশের জমিগুলোয় হচ্ছে পানিবদ্ধতা। বছরের বেশীরভাগ সময় আবাদি জমি পানির নিচে থাকায় চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। ইতোমধ্যে হাজার হাজার বিঘা আবাদি জমি পুকুর হয়ে গেছে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসাবে গত পাঁচ বছরে শুধু রাজশাহীর উপজেলাগুলোয় সাড়ে তিনহাজার পুকুর খনন করা হয়েছে যার পরিমান প্রায় কুড়ি হাজার বিঘা আর এর ফলে পানিবদ্ধতার শিকার হয়েছে আরো আড়াই হাজার বিঘা। প্রতিনিয়ত এর পরিমান বাড়ছেই। আইন কানুন কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে প্রভাবশালী মহল বিশেষ করে রাজনৈতিক ছত্র ছায়ায় গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট জোর করেই জমির রকম পরিবর্তন করছে। এরা এতটাই ক্ষমতাধর যে প্রশাসনের অভিযান তর্জন গর্জন কোন কিছুই এরা আমলে নেয়না। এদের কাছে যেন সবাই অসহায়। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারা প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনের দুয়ারে আবেদন নিবেদন করে তেমন ফল পাচ্ছেন না। আবার কোথাও বাধা দিলে মিথ্যে তথ্য দিয়ে উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা নিয়ে এসে দাপটের সাথে পুকুর কাটা অব্যাহত রেখেছে। ভ্রাম্যমান আদালত অসহায়। তাদের কর্মকাÐ বলতে নামকাওয়াস্তে দু’একটা খনন যন্ত্র আটক। এ অঞ্চলে মাছের উৎপাদন ও বাজার ভাল হওয়ায় মানুষ কৃষি আবাদের চেয়ে মৎস্য খামারের দিকে বেশী ঝুকে পড়েছে। অন্যের লাভ দেখে অনেকেই ঐ লাভ ও লোভের দিকে পা বাড়িয়েছে। পুকুর খননের মাটিও ভাল দামে ইটভাটা গুলোর কাছে নগদ দামে বিক্রি হচ্ছে। অনেকে নিজের পুকুরের পাশে পানিবদ্ধতা হওয়া অন্যের জমি লীজ নিয়ে পুকুর করছেন। বাধ্য হয়ে মালিকরা তাদের জমি লীজ দিচ্ছেন। বিলের মধ্যে ও সরকারি খাস জমিতে চলছে পুকুর খননের উৎসব। দূর্গাপুরের বেশ কজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন অনুলিয়ার বিল ও পোড়া বিলে খালের মুখে পুকুর খনন করায় পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে আশেপাশের জমিতে পানি জমে যায়। ফলে তারা আবাদে নামতে পারেননি। পানি নিষ্কাশনের পথ খুলে দেবার জন্য পুকুর মালিকদের নিকট গেলে তাদের ধমক খেতে হয়েছে। প্রশাসনের নিকট দেন দরবার করে লাভ হয়নি। বাধ্য হয়ে পুকুর মালিকের কাছে জমি লীজ দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছে। দুর্গাপুর পবা মোহনপুরসহ সব উপজেলায় চলছে পুকুর কাটার উৎসব। সবচেয়ে বেশী পুকুর কাটা হয়েছে দুর্গাপুর উপজেলায়। এখন পাশ্ববর্তী উপজেলা পবায় চলছে। বড়গাছির কানপাড়া বিল, কর্নহার বিলে খনন যন্ত্র দিয়ে পুকুর খনন চলছে। এক দুর্গাপুর উপজেলাতে পাঁচ হাজার পুকুর খনন করা হয়েছে। রাজশাহী অঞ্চলে পুকুরের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মাছের উৎপাদন বাড়ায় মৎস্য সম্প্রসারণ বিভাগ খুশি। তারা বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে উৎসাহিত করছে। তাদের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় শুধুমাত্র দুর্গাপুর উপজেলায় পাঁচ হাজার পুকুর খনন করা হয়েছে। যার আয়তন তিন হাজার হেক্টরের বেশী। এরপর রয়েছে পুঠিয়া ও পবা। এসব এলাকায় এখনো পুকুর খনন অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ তিন ফসলী জমিকে পুকুরে পরিনত করায় নাখোশ। তারা বলছেন এতে করে কৃষি জমির পরিমান কমে গেছে। যার ফলে হুমকীর মুখে পড়েছে খাদ্য নিরাপত্তা ও চাষাবাদ। অপরিকল্পিতভাবে জবরদস্তী করে পুকুর খননের ফলে সৃষ্ট পুকুরের আশেপাশের জমির পানি নিক্সাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানে চাষাবাদ করা যাচ্ছেনা। এসব জমিতে আলু বোরো গমসহ বিভিন্ন শাকসব্জী আবাদ হতো। পবা উপজেলার ভবানীপুর, ঘোলহরিয়া বিল, মতিয়া বিল, রুয়ের বিলসহ বিভিন্ন বিলে চলছে পুকুর খনন। পুকুর খননের ফলে গ্রামীন রাস্তাঘাটগুলো নষ্ট হচ্ছে। পুকুর খননের মাটি ট্রলিতে করে পাশ্ববর্তী ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভারী যানবাহন চলাচল করায় রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে। পরিবহনের সময় রাস্তাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে কাদামাটি। ফলে পিচ কার্পেটিং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাস্তা হচ্ছে কর্দমাক্ত। মানুষ যান চলাচলে ঘটছে বিঘœ। পুকুর কাটা সিন্ডিকেটের দাপটে সবাই। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ছুটছেন স্থানীয় এমপি, উপজেলা প্রশাসনের কাছে প্রতিকার পাবার জন্য। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মিলছে আশ্বাস। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আমরা অভিযোগ পেয়ে তা বন্ধের জন্য অভিযান চালাতে গিয়ে দেখতে পাচ্ছি তারা উচ্চ আদালতে রীট করে পতিত জমি খননের জন্য অনুমতি নিয়ে এসেছেন। ফলে প্রশাসনের লোকজন ফিরে এসেছে। আদালত তাদের কাজে বাধা না দেবার নির্দেশ দিয়েছে। তাই কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছেনা। আদালতে মিথ্যে ঘোষণা দিয়ে নির্দেশনা আনার এমন পথ অবলম্বন করছেন সকলেই। তাছাড়া পুকুরকাটা সিন্ডিকেট খুব শক্তিশালী। তাদের দম্ভ সবাইকে ম্যানেজ করে পুকুর কাটছি। এক্ষেত্রে ক্ষতাসীন দলের লোকজনকে ব্যবহার করা হচ্ছে বেশী। অভিযোগ রয়েছে পুকুরের আশেপাশের জমি জবর দখল করা হচ্ছে। আবার খুব কমদামে বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন সরকারি বিধি মোতাবেক জমির রকম পরিবর্তন করা যাবেনা। যদি কোন পরিবর্তন করতে হয় তবে আগে সংশ্লিষ্টদের প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। যা কেউই মানছে না। সব চলছে ফ্রি স্টাইলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।