Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

একই পরিবারে ৫ প্রতিবন্ধী

| প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বোচাগঞ্জ (দিনাজপুর) থেকে আবদুস সাত্তার: দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার ৪ নম্বর আটগাঁও ইউনিয়নের লোহাগাঁও গ্রামের মৃত এমারউদ্দীনের পুত্র মোজাম্মেল হক ওরফে বুধু তার পাঁচ প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে চরম দুঃখ কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করছেন। জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে জেলার কাহারোল উপজেলার বলরামপুর গ্রামে আবেদ আলীর মেয়ে বিউটি আরা খাতুনের সাথে মোজাম্মেল হক বুধুর বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর তাদের ঘরে এক এক করে ছয়টি ছেলে সন্তানের জন্ম হলে একমাত্র তৃতীয় ছেলে রিয়াদ (১৪) ছাড়া বাকি পাঁচ ছেলেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছেলে বিপ্লব (১৮), মিরাজ ওরফে রাসেল (১৫), রাজু (৯), রিশাত (৭) ও জীবন (৪)। একই পরিবারের পাঁচটি সন্তান শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয়ায় গ্রামের কিছুসংখ্যক মানুষ তাদের ভালো চোখে দেখে না। সমাজে তারা ভালোভাবে খোলামেলাভাবে চলতে পারে না, মিশতে পারে না। অধিকাংশই সময় বাড়িতেই থেকে সময় কাটাতে হয় তাদের। প্রতিবন্ধী হওয়ায় বাবা-মাকেই দেখাশোনা করতে হয়।
এদিকে সংসারের আটজন মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিতে অসহায় বাবা মোজাম্মেল হক বুধুকে কাজ করতে হয় চায়ের দোকানে। প্রতিদিনি দিন হাজিরা ২০০ টাকা দিয়ে তার সংসার চালাতে হয়। মাত্র ২০০ টাকা দিয়ে আটজন মানুষকে দুই বেলা দু-মুঠো ভাত দেয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে মোজাম্মেলের। চাষাবাদের জন্য বিঘে খানিক জমি চুক্তি দিয়ে যা পান, তাতে দিন চলে না তার। জীর্ণশীর্ণ একমাত্র কুড়েঘড়ে একত্রে স্বামী-স্ত্রী ও ছয় সন্তানকে নিয়ে বসবাস করেন। একই পরিবারের পাঁচজন প্রতিবন্ধী মানুষ থাকার পরও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অসচেতনতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে সরকার থেকে কোনো সুযোগ-সুবিধা পায়নি তারা। অবশেষে বোচাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফরহাদ হাসান চৌধুরী ইগলুর সার্বিক সহযোগিতায় ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে মিরজা ওরফে রাসেল মাসিক ৫০০ টাকা ও ২০১৭ সালের জুলাই মাস থেকে বিপ্লব মাসিক ৬০০ টাকা করে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন উপজেলা সমাজসেবা অধিদফতর থেকে। যা থেকে কিছুটা হলেও সহায়ক হয়েছে তাদের।
প্রতিবন্ধীদের মা বিউটি খাতুন জানান, একটি স্বাভাবিক সন্তান মানুষ করতেও খুব কষ্ট করতে হয়, কিন্তু পরপর পাঁচটি প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে তিনি যে মানষিক ও শারীরিক যন্ত্রণায় ভুগেছেন তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাদের সাথে কেউ মিশতে চায় না। বাড়ির বাইরে গেলে অন্যরা তাদের দেখে বিরুপ মন্তব্য করে। কিন্তু প্রতিবন্ধী হলেও তাদের বোঝা হিসেবে না নিয়ে অন্যান্য স্বাভাবিক সন্তানের মতোই মানুষ করে যাচ্ছেন তিনি। সমাজের কিছু মানুষের নানা রকম উক্তি সহ্য করেই শত দুঃখ কষ্টের মাঝে দিন পার করছেন তিনি। প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্ম নিলেও প্রতিটি সন্তানকেই মায়ের মমতা দিয়ে ভালোসাবেন তিনি। তাদের লেখাপড়া জন্য ভর্তি করে দিয়েছেন হাট মাধবপুর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলে। সপ্তাহে পাঁচদিন স্কুলের অটোতে করেই বিউটি খাতুন নিজেই পাঁচ সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যান ও নিয়ে আসেন। তারা এখন স্কুলে যেতে পেরে খুব খুশি। স্কুলে খেলার সাথী ও শিক্ষকদের সাথে মিশতে পেরে তারা এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে। প্রতিদিন বাড়িতেও পড়াতে বসান তাদের মা।
বাবা-মার ইচ্ছা, যতটুকু সম্ভব লেখাপাড়া করে তারা যেন সমাজের বোঝা না হয়ে নিজেরাই স্বাবলম্বী হতে পারে। বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীদের সমাজে বোঝা নয়, সম্পদ হিসেবে দেখার কারণে এই পরিবারটির মনে আশা জেগেছে, তাদের বাকি তিনটি সন্তানই প্রতিবন্ধী ভাতা পাবে। অবশ্য এ ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের আশ্বাস দিয়েছেন। লোহাগাঁও গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবক মিজানুর রশিদ জানান, বর্তমান সরকার যেভাবে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে এগিয়ে এসেছে, তাতে আমরা আশাবাদী এই পরিবারটির দীর্ঘদিনের অভাব অনটন ঘুছবে। এরা অসহায় সমাজের বিত্তবান মানুষদের এদের পাশে থাকা উচিত। ৪ নম্বর আটগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কফিল উদ্দীন জানান, আমরা এই অসহায় পরিবারটির পাশে আছি এবং থাকব। এদের জন্য যা করার দকরার, আমাদের পরিষদ তা করবে।
বোচাগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আহসান হাবিব জানান, একই পরিবারের পাঁচজন প্রতিবন্ধী একটি ব্যতিক্রম বিষয়। ইতোমধ্যে সমাজসেবা অধিদফতর বোচাগঞ্জ অফিস থেকে দুইজনের ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে, বাকি তিনজনকেও ভাতার আওতায় আনা হবে। ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এই উক্তিটি যদি কোনো সুহৃদয়বান ব্যক্তি মন থেকে মনে করেন, তাহলে সামজের অবহেলিত এই অসহায় প্রতিবন্ধীদের পাশে এসে দাঁড়াবেন এটাই একান্ত কাম্য?



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রতিবন্ধী

১৪ মার্চ, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ