পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সিয়াটল পাই : বন্দীতে ঠাঁসা, অপর্যাপ্ত জনবল ও তহবিল সঙ্কটকবলিত কারাগারগুলোতে যদি ইসলামী উগ্রবাদকে গুরুত্বের সাথে মোকাবেলা করতে চায় তবে ফ্রান্সকে এখনই তা করতে হবে। সাধারণ কারাগারগুলোর বন্দীদের মারে থাকা উগ্রপন্থীরা দ্রæত অন্যান্য বন্দীদের প্রভাবিত করা শুরু করতে এবং কারাগার কর্মচারীদের জন্য বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। কয়েক বছর ধরে যে সমস্যাটি ফরাসি কর্তৃপক্ষকে উদ্বিগ্ন করে রেখেছে, ইসলামিক স্টেট গ্রæপের পতনের পর বিদেশী যোদ্ধা ও তাদের পরিবার ফ্রান্সে ফিরে আসায় তা আরো বেড়েছে। ইউরোপের আর কোনো দেশের চেয়ে ফ্রান্স থেকে বেশি সংখ্যক যোদ্ধা সিরিয়া ও ইরাকের যুদ্ধক্ষেত্রে যোগদান করে।
এখন যুক্তরাষ্ট্র তার জোটভুক্ত দেশগুলোকে মার্কিন সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেসের হাতে আটক তাদের নাগরিকদের জন্য দাবি জানাতে বলছে। কারণ, তাদের আটক কেন্দ্রগুলো বন্দীতে পূর্ণ হয়ে গেছে। কিন্তু ফ্রান্স তার এ ধরনের নাগরিকদের জন্য দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।
ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রী জাঁ ইভস লা ড্রিয়ান এ মাসে বলেন, তারা ফরাসি, কিন্তু তারা আমাদের শত্রæ। তবে শিশুদের দেশে আনা হবে।
সত্য কথা হচ্ছে, ফরাসি কারাগারগুলোতে আরো বন্দীর জায়গা দেয়ার বিষয় কারাগার ব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। কিছু কারাগার উনিশ শতকে তৈরি। বিচার মন্ত্রণালয় বলে, ২০১৭ সালের ডিম্বেরে কিছু কারাগারে ধারণ ক্ষমতার ২২০ শতাংশ বেশি বন্দী ছিল। একজন বন্দীর জন্য নির্ধারিত সেলে কয়েকজন থাকা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গেছে।
ফরাসি কারাগারগুলোতে ইতোমধ্যেই সন্ত্রাসের দায়ে ৫শ’ ব্যক্তি দন্ডিত বা বিচারের অপেক্ষায় আছে। ১১৫০ জন উগ্রপন্থার বিভিন্ন পর্যায়ে থাকা বা সম্ভাব্য উগ্রপন্থী হিসেবে নজরদারিতে রয়েছে। তাদের মধ্যে ১৩০ জন যুদ্ধ এলাকা থেকে ফিরে আসা ব্যক্তি। এরা এমন লোক জেলখানার কর্মচারীরা যাদের সামাল দেয়ার মত উপযুক্ত উপকরণ সজ্জিত নন ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণও তাদের নেই।
গত মাসে একজন আটক উগ্রপন্থী হামলা করার পর কারারক্ষীরা দশদিনের এক নজিরবিহীন ধর্মঘট করেন। এ ঘটনার কারণে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ কারাগারের পুরনো ব্যবস্থার আধুনিকায়নের জন্য ফেব্রæয়ারির মধ্যে একটি বৈশি^ক কারাগার সংস্কার পরিকল্পনা পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মূল বিষয় হচ্ছে কত ভালোভাবে উগ্রপন্থীদের চিহ্নিত করা যায় এবং কারারক্ষী ও অন্য বন্দিদের জন্য বিপদ না ঘটিয়ে আটক রাখা যায়।
ফ্রান্স ১০-এর দশক থেকে মুসলিম সন্ত্রাসবাদের সম্মুখীন হলেও মাত্র তিন বছর আগে উগ্রবাদীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। কারাগারগুলো এখন উগ্রবাদীদের লালনক্ষেত্র এবং কারাগারে থাকা উগ্রপন্থীরা ফ্রান্সে বহুবার হামলা চালিয়েছে।
কারাগারে উগ্রপন্থায়নের বিষয়ে এক শীর্ষ বিশেষজ্ঞ ফরহাদ খোশখবর বলেন, এ এক আপাতবিরোধী পরিস্থিতি। জিহাদিদের সংখ্যা বেশি আর এ সমস্যা গুরুত্বের সাথে দেখার চেষ্টা অল্পই। তারপর এটা চলছে , কারণ উগ্রপন্থা থেকে বিমুক্ত করার গুরুত¦পূর্ণ কোনো কর্মসূচি নেই।
তিনি বলেন, ব্রিটেন ও জার্মানিতে উগ্রপন্থা অবলম্বনের হার কম। এ সব দেশ অনেকদিন থেকেই কারাগারের বাইরে কম্যুনিটির মধ্যে এ কর্মসূচি চালু করেছে। ফ্রান্সে উগ্রপন্থা দূরীকরণের কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালে স্বেচ্ছা সেবা ভিত্তিতে। কিন্তু লোক না পাওয়্ায় গত বছর তা বন্ধ করে দেয়া হয়।
ফ্রান্স আবার শুরু করার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী এদুয়ার্দ ফিলিপ্পির শুক্রবার বন্দীদের বিষয়ে কিছু ব্যবস্থাসহ এক নতুন পরিকল্পনা ঘোষণা করার কথা।
২০১৫ সালে শার্র্লি হেবদো পত্রিকা ও একটি বিপণি কেন্দ্রে হামলা ফ্রান্সের কারা ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। হামলাকারীদের তিনজনের অন্তত একজন কারাগারে থাকা অবস্থায় উগ্রপন্থায় দীক্ষিত হয়।
এক বন্দী সিরিয়ায় যাওয়ার চেষ্টায় একজন কারারক্ষীর পিছন দিকে একটি ঘরে তৈরি অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার পর বন্দীদের উগ্রপন্থা গ্রহণের ব্যাপারে প্রথম স্বল্পস্থায়ী ব্যবস্থার অবসান ঘটে। এরপর নতুন যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাতে উগ্রপন্থী সন্দেহভাজন বন্দীকে ৪ মাস সময় মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়। কারারক্ষীদের ধর্মঘটের প্রেক্ষিতে বিচার মন্ত্রণালয় বার্ষিক বন্দী মূল্যায়নের সংখ্যা ২৫০-এ উন্নীত করে ও মারাত্মক বিপজ্জনক উগ্রপন্থী বন্দীদের কোয়ারান্টাইনের স্থান সংখ্যা ১৫০০ করে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে মূল্যায়ন কর্মসূচি যথেষ্ট নয় এবং বন্দীরা জেল ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেয়ার কৌশল শিখেছে।
কারাগার পরিদর্শনে দশ বছর কাটানো সমাজ বিজ্ঞানী কুইসা কিয়েস বলেন, তারা জানে তাদের উপর নজদারি করা হচ্ছে । চারমাস পর তারা প্রশ্নের সম্মুুখীন হবে ও ভালো মূল্যায়িত হলে সাধারণ বন্দীদের সাথে তাদের রাখা হবে।
সন্ত্রাস দমন মামলার বিশেষজ্ঞ এক কৌঁসুুলি এ মুূল্যায়নের প্রতিধ্বনি করেন। সামপ্রতিক এক সাক্ষাতকারে নাইমা রুডলফ লা ফিগারো সংবাদপত্রকে বলেন, তারা তাদের কৌশল পরিশীলিত করেছে এবং মূল্যায়নের পদ্ধতির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। তারা শিখেছে কিভাবে নিজেদের গড়তে হয়।
কিয়েস বরেন, কারাগারের বন্দীদের মধ্যে উগ্রপন্থীরা সাধারণত উঁচু অবস্থানে থাকে এবং তারা বন্দীদের উপর প্রভাব বিস্তার করে। তারা একটি গ্রæপে যোগ দিতে তাদের প্রলুব্ধ করে।
ব্রিটেন উগ্রপন্থীদের মোকাবেলার জন্য তাদের চিহ্নিত করা ও তাদের সামাল দিতে ২০১৬ সালে সংস্কারের অংশ সকল কারারক্ষীর প্রশিক্ষণের মানসম্মত পদ্ধতি প্রণয়ন করছে। অত্যন্ত বিপজ্জনক বন্দীদের আটক রাখতে নেয়া ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে পৃথকীকরণ কেন্দ্র , যেমন আছে ফ্রান্সে, এবং সুনিদিৃষ্ট হুমকি মোকাবেলায় বিশেষ ইউনিট তৈরি করা হচ্ছে।
জার্মান বিশেষজ্ঞ ড্যানিয়েল কোহলার বলেন, ফিরে আসা সন্ত্রাসীদের গ্রহণ করতে ইউরোপের কোনো দেশই প্রস্তুত নয়। এ জন্য বিশেষ কর্মসূচি প্রয়োজন। তিনি বলেন, যারা ভয়ংকর সহিংসতা সংঘটিত করেছে বা দেখেছে, তাদের অভিজ্ঞতা জার্মানি বা অন্যান্য পশ্চিম ইউরোপীয় দেশের কর্মসূচির অনেক বাইরে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।