Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

লেখক-পাঠক আর প্রকাশকের মিলন সেতু

| প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

এ হ সা ন আ ব্দু ল্লা হ
দাপ্তরিক নাম অমর একুশে গ্রন্থমেলা হলেও বইপ্রেমীদের নিকট তা পরিচিত অমর একুশে বইমেলা নামেই। ফেব্রæয়ারী মাস এলেই বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজকে ঘিরে মাসব্যাপি চলে এই মহা আয়োজন। ২০১৪ সাল থেকে প্রকাশক ও পাঠকদের চাহিদা মোতাবেক বইমেলা সম্প্রসারণ করা হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গনে। ১৯৫২ সালের ভাষা শহিদদের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করে এই বইমেলার নাম করণ করা হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা।
বই মেলার প্রথম দিক
বইমেলার শুরুটা হয় সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে। ১৯৭২ সালের ৮ই ফেব্রæয়ারীতে সর্বপ্রথম চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউজের সামনে একটি চাটাই বিছিয়ে কলকাতা থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশের অভিবাসী লেখকদের ৩২ টি বই শুরু করেন এই বইমেলার প্রাথমিক পর্যায়।
১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমি একটি সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করলে সেখানে অন্যান্য প্রকাশনীও চিত্তরঞ্জন সাহার দেখাদেখি নিজেদের বই নিয়ে আসে একাডেমি চত্বরে। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে একাডেমি বর্ধমান হাউজের প্রাঙ্গনে চুনের দাগ দিয়ে প্রকাশকদের জন্য জায়গা বরাদ্দ করে দেয়। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত এভাবেই চলে বইমেলা। এমনিকি ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত এই আয়োজনের কোনো নাম ও স¦ীকৃতি ছিলনা। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমীর তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমীকে এই বইমেলার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন। তখন একুশে ফেব্রæয়ারির উপর লক্ষ্য রেখে ৭ ফেব্রæয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত বইমেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলা একাডেমি এবং বইমেলার নামকরণ করে ‘একুশে গ্রন্থমেলা’। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮০ সাল এভাবেই বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮১ সালে মেলায় পরিবর্তন আনে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ, সেবছর মেলার মেয়াদ ২১ দিন থেকে কমিয়ে ১৪ দিনে নিয়ে আসে একাডেমি কর্তৃপক্ষ। সকলের দাবির মুখে ১৯৮২ সালে ‘একুশে গ্রন্থমেলা’র মেয়াদ পুনরায় বৃদ্ধি করে ২১ দিন করে এবং বাংলা একাডেমি নিজে সে মেলার উদ্যোক্তা হিসেবে ভূমিকা নেয়।
বর্তমানের এই বইমেলার সূচনা হয় ১৯৮৪ সালে। এবং সে বছর নাম পরিবর্তন করে অমর একুশে গ্রন্থমেলা রাখা হয়। এবং মেলার মেয়াদ মাসব্যাপি করা হয়।
এবারের বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ৫ লাখ বর্গফুট জায়গায়। একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৩৬টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৮৩টি ইউনিট। ১৩৬টি লিটল ম্যাগাজিনকে লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে রয়েছে শিশুচত্বর । এই কর্নারকে সজ্জিত করা হয়েছে শিশুকিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায়।
লিটল ম্যাগাজিন চত্ত¡র
লিটল ম্যাগাজিনের জন্য চত্বর করা হয়েছে বাংলা একাডেমির ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ মিলনায়াতন সংলগ্ন প্রাঙ্গনে।
অন্যান্য স্টল
একাডেমি প্রাঙ্গনে রয়েছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়, প্রতœতত্ব অধিদপ্তর, নজরুর ইনিস্টিটিউট, জাতীয় জাদুঘর, ডাক বিভাগ, ব্রিটিশ কাউন্সিল, উন্মাদ, কর্ণেল তাহের সংসদ, ঢাকা রিপোটার্স ইফনিটি, বাংলাদেশ পুলিশ সহ সরকারী ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টল। এর বাহিরে একাডেমি প্রাঙ্গনে রয়েছে কয়েকটি ই-বুকের স্টলও। এবারের মেলায় শারীরিকভাবে অসুবিধাগ্রস্থ ও প্রবীণ মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে হুইল চেয়ারের সংখ্যা গতবারের চেয়ে এবার বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেই সাথে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩টি এবং বাংলা একাডেমি অংশে ২টি ক্যান্টিন চালু করা হয়েছে।
কবিতার বই বিক্রি কম
গত মঙ্গলবার পর্যন্ত বইমেলায় প্রকাশিত মোট বইয়ের সংখ্যা ছিল ২৯৬৯টি। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল কবিতার বই। তবে বেশি সংখ্যক প্রকাশিত হবার পরও প্রতিবারের ন্যায় কবিতার বইয়ের কাটতি যাচ্ছে অন্যান্য বইয়ের তুলনায় একেবারেই নগন্য। অন্যদিকে পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী মেলায় আসছেনা অনুবাদ সাহিত্য।
প্রকাশিত বই সমূহ
গত মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে গল্পের বই ছিল ৪১৯টি, উপন্যাস ৪৭৬টি, প্রবন্ধ ১৬৬টি, কবিতার বই ৯৪৩টি, গবেষণা গ্রন্থ ৬২টি, ছড়ার বই ৭১টি, শিশুতোষ সাহিত্য ৯৪টি, জীবনী নির্ভর বই ৬৯টি, রচনাবলী সমগ্র ১৩টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ৫৫টি, নাটক ১৪টি, বিজ্ঞান ভিত্তিক বই ৪৬টি, ভ্রমণ বিষয়ক বই ৬৪টি, ইতিহাস ও ইতিহাস নির্ভর বই ৭১টি, রাজনীতি নিয়ে বই ৮টি, চিকিৎসা বিষয়ক বই ২৩টি, রম্য ও ধাঁধাঁ নিয়ে বই ১২টি, ধর্মীয় বই ১৩টি, অনুবাদ সাহিত্য ৩০টি, সায়েন্স ফিকশন ও গোয়েন্দা কাহিনী ৪২টি এবং অন্যান্য বই ২৮১টি।
নারী লেখকদের বই
এবারের বইমেলায় গতবারের তুলনায় নারী লেখকদের বই প্রকাশ পেয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এর মধ্যে আছে আগামী প্রকাশনী থেকে সুস্মিতা চক্রবর্তীর ও নীল বিচ্ছেদ বড় ভালোবাসিলাম, আপন প্রকাশ থেকে পারভীন রেজার নোনাজল, মূধর্ন্য থেকে তহসিনা এ্যানির গহিনে অথৈ প্রেম, মহাকাল থেকে আয়েশা মুন্নির নীলাভ দূরত্ব, বিদ্যা প্রকাশ থেকে ডা. ফারহানা মোবিনর আসুন সুস্থ থাকি, পালোলিক সৌরব থেকে প্রকাশিত তামান্না সেতুর সে রাতে আমিও মেঘ হয়েছিলাম, অয়ন প্রকাশন থেকে পূরবী মিত্রর তিনু মণির দিনলিপি, বাবুই প্রকাশনী থেকে তাসলিমা শাহনুরের অমিমাংসীত।
চিত্তরঞ্চন সাহা স্মৃতিপুরস্কার ও অন্যান্য পুরস্কার
প্রবিবারের মতোই বইমেলার শেষে ২০১৭ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০১৭ গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে। এছাড়া ২০১৭ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ-বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লেখক-পাঠক
আরও পড়ুন