Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শেয়ারবাজারে প্রবেশ করতে ভারতের প্রতিষ্ঠানের চাপ

| প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

এবার শেয়ারবাজারে ভারতীয় বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান কম দরে শেয়ার কিনে ঢোকার পায়তারা করছে। দেশের শেয়ারবাজার নিয়ে যখন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা বিরাজ করছে, তখন ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের যুক্ত হওয়ার বিষয়টি তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধ্বস নামার পর প্রায় ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারি নিঃস্ব হয়ে পড়ে। একটি চক্র এক লাখ কোটি টাকা লুটে নেয়ার পর শেয়ারবাজার ধ্বসে পড়ে। সেই থেকে শেয়ারবাজার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারছে না। এ প্রেক্ষিতে, শেয়ারবাজার চাঙ্গা করে স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কৌশলগত অংশীদারত্ব বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৩ সালে এক্সচেঞ্জ ডিমিচ্যুয়ালাইজেশন অ্যাক্ট জাতীয় সংসদে পাশ হওয়ার পর কৌশলগত অংশীদারের খোঁজে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। এতে আগ্রহ দেখায় চীনের সাংহাই ও শেনঝেন স্টক এক্সচেঞ্জ নিয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম এবং ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ নাসডাক ও ফ্রন্টিয়ার নিয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম। দরপত্রে প্রতিটি শেয়ারের জন্য চীনের কনসোর্টিয়াম ২২ টাকা এবং ভারতের কনসোর্টিয়াম ১৫ টাকা প্রস্তাব দিয়েছে। কারিগরি সহায়তায় চীনের প্রস্তাব প্রায় চার কোটি ডলার। ভারতীয় কনসোর্টিয়াম সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব দেয়নি। চীনের কনসোর্টিয়াম দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিলেও ভারতীয় কনসোর্টিয়াম চায় পাঁচ বছর পর শেয়ার বিক্রি করে চলে যেতে। অর্থ পাচারের অভিযোগে ভারতীয় কনসোর্টিয়ামে অন্তর্ভুক্ত ফ্রন্টিয়ার প্রতিষ্ঠানের নাম প্যারাডাইস পেপার্স-এর তালিকায় উঠেছে। বিতর্কিত এ প্রতিষ্ঠানের নাম শেয়ারবাজারে আসায় অর্থনীতিবিদরাও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। শেয়ারবাজারের অংশীদারিত্ব পেতে ইতোমধ্যে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নানাভাবে চাপ দিয়েছেন বলে জানা যায়।
এ কথা সবারই জানা, ভারত বাংলাদেশ থেকে তার স্বার্থের সবকিছুই কড়ায়-গন্ডায় আদায় করে নিয়েছে এবং নিচ্ছে। বিনিময়ে বাংলাদেশের ন্যূনতম স্বার্থ আদায় করা যায়নি। করিডোরের নামে ট্রানজিট এবং নামমাত্র শুল্কে মালামাল পরিবহন, সড়ক ও বন্দর ব্যবহার থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশের স্বার্থ উপেক্ষা করে গেছে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিশাল ব্যবধান বজায় রেখেছে। বাংলাদেশের পণ্য ভারতে প্রবেশের ক্ষেত্রে উচ্চ শুল্কহার নির্ধারণ করে রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশকে তার অন্যতম বৃহৎ পণ্যের বাজারে পরিণত করেছে। এমনকি তার প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শীর্ষ তালিকায় রয়েছে। এ খাত থেকে প্রতি বছর প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার আয় করে নিয়ে যাচ্ছে। এতসব সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পরও বাংলাদেশের ন্যায্য দাবীর কোনো কিছুই ভারত পূরণ করেনি। কেবল আশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে যত উপায়ে সম্ভব ভারত তার স্বার্থ আদায় করে নিতে বিন্দুমাত্র ছাড় দিচ্ছে না। যেখানেই সুযোগ রয়েছে, সেখানেই সে ঢুকে পড়েছে এবং পড়ছে। এখন শেয়ারবাজারের অংশীদারিত্ব নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে চলেছে। দরপত্রের বিধি-বিধানও মানতে নারাজ। যেখানে চীনের কনসোর্টিয়াম উচ্চ দরে শেয়ার কিনে এবং দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে, সেখানে ভারত নিম্ন দর এবং স্বল্প সময়ের জন্য বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়েছে। চীনের প্রস্তাবের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহও পরিলক্ষিত হয়। অন্যদিকে ভারতের প্রস্তাব এবং চাপ প্রয়োগের কারণে শেয়ারধারীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ বলেছে, কোন ধরনের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত এবং অনিয়ম করা হলে বিনিয়োগকারীরা তা মানবে না। কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে তা প্রতিহত করা হবে। নাগরিক পরিষদ বলেছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কৌশলগত মালিকানা নিয়ে ভারতের যে অনৈতিক চাপ তা শেয়ারবাজারকে দিল্লীর হাতে তুলে দেয়ার শামিল। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সর্বোচ্চ দরদাতা চীনের কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত অংশীদার করলে ভাল হবে। তারা এ কথাও বলেছেন, অর্থ কেলেংকারীর সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে এলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা ও শঙ্কা দেখা দেবে। যারা বেশি দরে প্রস্তাব দিয়েছে, তাদের কাছেই শেয়ার বিক্রি করা উচিৎ।
বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে ভারত বরাবরই প্রতিবন্ধক, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ যদি ভারতকে অংশীদারিত্ব দেয়, তবে তা কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। ভারতের প্রস্তাবে বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ সংরক্ষিত হচ্ছে না। বরং চীনের প্রস্তাবে ব্যাপক লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া চীন বিশ্বের শীর্ষ অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশ। চীনকে অংশীদারিত্ব দিলে বিশ্বের অন্যান্য অর্থনৈতিক শক্তির দেশ বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠবে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের বাজার একমুখী না হয়ে বহুমুখী হবে। এতে শেয়ারবাজার যেমন চাঙা হবে, তেমনি বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ-উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে। শেয়ারবাজার লুটের আশঙ্কা থাকবে না। অন্যদিকে ভারতকে দিলে তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পাশাপাশি এক ধরনের অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হবে। তাছাড়া ভারতের কনসোর্টিয়ামে অন্তর্ভুক্ত যে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে, তা শেয়ারবাজরে যুক্ত হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সবসময় এক ধরনের আতঙ্কে বিরাজ করবে। এ আশঙ্কার মধ্যে ভারতের কনসোর্টিয়ামকে অংশীদারিত্ব দেয়ার অর্থ শেয়ারবাজারকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয়া।



 

Show all comments
  • Das ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১১:১৪ পিএম says : 0
    Bangladesh o bharot dui deshi sarbonasher dike egocchhe
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শেয়ারবাজার


আরও
আরও পড়ুন