পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
নিউ হ্যাভেন রেজিস্টার : মালদ্বীপে একদিকে যখন রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে অন্যদিকে ভারত মহাসাগরীয় এ দেশটির উপর কৌশলগত প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার জন্য এক নীরব লড়াই চলছে দু’ বিশ^শক্তি চীন ও ভারতের মধ্যে।
প্রথম দৃষ্টিতে দেখা যায়, প্রেসিডেন্টের প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বীসহ কয়েকজন বিরোধী নেতাকে মুক্তি দেয়ার প্রেক্ষিতে ১ ফেব্রæয়ারি দেশটিতে যে গোলযোগ শুরু হয় বেইজিং ও নয়াদিল্লী তাতে অঙ্ক নিতে চায়নি। চীন ও ভারতের কর্মকর্তারা স্বাভাবিক সুরেই কথা বলেন। তারা বলেন যে দ্বীপ দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, উভয়েরই আঞ্চলিক নিরাপত্তার স্বার্থ রয়েছে এবং তারা প্রাধান্য বিস্তারের লড়াইয়ে লিপ্ত।
প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন আবদুল কাইয়ুম সুপ্রিল কোর্টের নির্দশ প্রত্যাখ্যান, গত সপ্তাহে জরুরি অবস্থা জারি ও সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচাককে গ্রেফতারের পর তার সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যার জন্য তিনটি বন্ধু দেশ চীন, পাকিস্তান ও সউদী আরবে প্রতিনিধি প্রেরণ করেন। তার পদক্ষেপ সন্দেহ সৃষ্টি করেছে যে প্রতিদ্ব›দ্বীদের নির্মূলে এবং নির্বাচনের আগে ক্ষমতায় তার নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় করতে তিনি অনড়।
তার সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী প্রতিদ্ব›দ্বী নির্বাসিত সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ দেশের সঙ্কট অবসানে সৈন্য পাঠানোর জন্য ভারতের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
নাশিদ গত সপ্তাহে টুইটে বলেন, মালদ্বীপের জনগণের পক্ষ থেকে আমাদের বিনীত অনুরোধ যে আটক বিচারপতি ও বিরোধী নেতাদের মুক্ত করার জন্য ভারত তার সামরিক বাহিনীসহ প্রতিনিধি প্রেরণ করুক, আমরা তাদের বাস্তব উপস্থিতির অনুরোধ জানাই।
১২০০ দ্বীপ নিয়ে গঠিত, সাড়ে তিন লাখ সুন্নি মুসলিম অধ্যুষিত মালদ¦ীপ ঐতিহ্যগত ভাবে ভারতের প্রভাব বলয়ে অবস্থিত। ১৯৮৮ সালে একদল ভাড়াটে সৈন্য মালদ্বীপে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করলে ভারত হস্তক্ষেপ করে ও সরকার রক্ষা পায়। ভারতের সমর্থন সাবেক শক্তমানব মামুন আবদুল কাইয়ুমকে তিন দশকেরও বেশি ক্ষমতায় থাকতে সাহায্য করে। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদও ভারতের সমর্থন লাভ করেন।
তবে ২০১৩ সালে নাশিদকে হারিয়ে মামুন আবদুল কাইয়ুমের সৎ ভাই ইয়মিন ক্ষমতায় আসার পর মালদ্বীপ চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ইয়ামিন নাশিদের অনেক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থ বাতিল করেন। তিনি বিরোধী সকল গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিককে জেলে বা নির্বাসনে পাঠিয়েছেন। তার সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সমাবেশের অধিকার খর্ব করে। সরকার বিরোধী খরর প্রকাশের জন্য সাংবাদিক ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের বিপুল জরিমানার বিধান করেছে। ২০১৫ সালে মোহাম্মদ নাশিদকে ১৩ বছরের জেল দেয়া হয়। পরে তিনি ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেন।
চীন মালদ্বীপের ঘটনাবলীকে সূচনা হিসেবে দেখছে।
সিঙ্গাপুরের এস. রাজারতœন স্কুল অ্ব ইন্টিারন্যাশনাল স্টাডিজের ভারত-চীন বিশেষজ্ঞ মহালক্ষী গণপথি বলেন, ২১১১ সালে মালদ্বীপে যেখানে চীনের দূতাবাসই ছিল না সেখানে ২০১৮-তে এসে গোটা ভারত মহাসাগর অঞ্চলেই তাকে এক বড় শক্তি হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
গত ডিসেম্বরে ইয়ামিন যখন বেইজিং সফর করেন তখন দু’দেশ এক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করে যাতে মালদ্বীপের প্রধানত মাছসহ অধিকাঙ্ক রফতানি পণ্যের উপর থেকে শুল্ক বাতিল করা হয়। অন্যদিকে অর্থ বিনিয়োগ, স্বাস্থ্য সেবা ও পর্যটনসহ চীনা পণ্য ও সেবার জন্য মালদ্বীপকে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
চীনারা ইতোমধ্যেই মালদ্বীপের পর্যটনের প্রধান পর্যটক আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। বেইজিং বিমান বন্দর সম্প্রসারণ, গৃহায়ন উন্নয়ন ও অন্যান্য প্রকল্পে বহু কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে।
চীন ভারত মহাসাগর ও মধ্য এশিয়ার ভিতর দিয়ে প্রাচীন সিল্ক রটের পাশপাশি ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড মহাপ্রকল্পের জন্য মালদ্বীপকে এখন গুরুত¦পূর্ণ অঙ্ক হিসেবে দেখে। এ মহাপ্রকল্পে রয়েছে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে বন্দর, রেলপথ ও সড়ক নির্মাণ এবং এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপে চীনের প্রভাব বিস্তার।
দরিদ্র দেশগুলোতে চীনের ব্যাপক অর্থঋণ প্রদান তা পরিশোধের সক্ষমতার ব্যাপারে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বেইজিং ইতোমধ্যে তার উন্ন্য়নকৃত শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের দু’টি বন্দর দীর্ঘমেয়াদে লিজ নিয়েছে।
নাশিদ বলছেন যে চীন ইয়ামিনের অধীন মালদ্বীপকে কিনে ফেলছে। তিনি ন্যূনতম বা কোনো দূরদৃষ্টি ও স্বচ্ছতা ছাড়া চীনা বিনিয়োগের কাছে মালদ্বীপের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়ার জন্য ইয়ামিনকে অভিযুক্ত করেন। চীন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বেইজিং মালদ্বীপের উপর অত্যন্ত সতর্ক নজর রাখছে। মালদ্বীপের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যদি নাশিদের দিকে যায় তাহলে প্রভাবের ভারসাম্য নয়াদিল্লীর দিকে ঝুঁকবে।
এটা সুস্পষ্ট যে ভারত তার পিছনের দিকে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবে অস্বস্তিতে রয়েছে। কিন্তু যা বোঝা যাচ্ছে না তা হচ্ছে মালদ্বীপের বর্তমান গোলযোগে সে কিভাবে সাড়া দেবে।
এখন পর্যন্ত ভারত মালদ্বীপে সৈন্য প্রেরণ ও সঙ্কট অবসানে নাশিদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রকাশ্যে কিছু বলেনি। ভারত ইয়ামিনের প্রতিনিধির সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠক স্থগিত করেছে।
শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চীনকে লক্ষ্য করে সতর্ক ভাবে প্রণীত একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়, আমরা লক্ষ্য করছি যে চীন বলেছে যে মালদ্বীপ সরকারের মালদ্বীপে চীনা নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা প্রদানের সক্ষমতা রয়েছে। আমরা আশা করি যে সকল দেশ উল্টো কিছু করার বদলে মালদ্বীপে ইতিবাচক ভ‚মিকা পালন করতে পারবে।
অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরার ন্যাশনাল সিকিউরিটি কলেজের ভারত মহাসাগরীয় কৌশলগত বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ডেভিড ব্রæস্টার বলেন, ভারত অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছে। সে ইয়ামিনের অপসারণ চায়, কিন্তু কিভাবে তা করবে তা নিশ্চিত নয়। তিনি আরো বলেন, মালদ্বীপে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ভারতের প্রধান উদ্বেগ নয়, বরং সে সেখানে চীনের প্রভাব খর্ব করতে চায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।