পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিগত কয়েক মাস ধরে রাজধানীতে ছিনতাইকারীরা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, ছিনতাইয়ের পাশাপাশি অবলীলায় মানুষ খুন করতে দ্বিধা করছে না। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটলেও এসব ঘটনার সাথে জড়িত ছিনতাইকারীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার এবং বিচারের মুখোমুখি করতে সফল হয়নি। গত শুক্রবার রাজধানীতে পরপর দুইটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় দুজনের মর্মান্তিক মৃত্যু সাধারণ মানুষকে বেদনাহত করে তুলেছে। ভোরে বরিশাল থেকে ফিরে গ্রীন রোডস্থ নিজ বাসায় যাওয়ার পথে ধানমন্ডি ৭ নম্বরে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন ৪৫ বছর বয়স্ক হেলেনা বেগম। রাস্তা পার হওয়ার সময় পাশ দিয়ে যাওয়া প্রাইভেট কার থেকে চালক তার ব্যাগ ধরে টান দিলে তিনি পড়ে যান। ব্যাগ ধরে থাকায় চলন্ত গাড়ি তাকে কিছুদূর টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে হেলেনা বেগম চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনার দেড় ঘন্টা আগে টিকাটুলিতে খুলনার মো. ইব্রাহিমকে শরীরের তিন জায়গায় আঘাত করে দুর্বৃত্তরা। প্রাণ বাঁচাতে রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি প্রায় আধা কিলোমিটার দৌঁড়ে হাটখোলাস্থ একটি হাসপাতালে ঢুকে পড়েন। সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ছিনতাইকারী ও দুর্বৃত্তদের এই বর্বর দুই ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ ঘটনা দুটির আগে গত ১৮ ডিসেম্বর দয়াগঞ্জে ছিনতাইয়ের সময় মায়ের কোল থেকে পড়ে পাঁচ মাসের এক শিশুর নিমর্ম মৃত্যু হয়। গত ৮ অক্টোবর ওয়ারি এলাকাতে ভোরে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে আবু তালহা নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র নিহত হয়। ধারাবাহিকভাবে বর্বরোচিত ও নৃশংস এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও এর সাথে জড়িত ছিনতাইকারীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করতে পারেনি। ফলে ছিনতাইকারীরা আরো বেপরোয়া হয়ে একের পর এক মর্মন্তুদ ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে।
রাজধানীতে ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে যখন কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, তখনই কেবল ছিনতাইয়ের ঘটনাটি বড় হয়ে উঠে। অথচ প্রতিনিয়ত মানুষকে ছিনতাইয়ের কবলে পড়তে হচ্ছে। সেসব ঘটনা আড়ালেই থেকে যায়। অনেকে পুলিশি ঝামেলা এড়াতে থানায় যায় না। ফলে ছিনতাইকারীরা প্রশ্রয় পেয়ে দুর্বিনীত হয়ে উঠেছে। তারা প্রকাশ্যেই ছিনতাই করে বেড়াচ্ছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস। গাড়ি থেকেই টার্গেটকৃত ব্যক্তির কাছ থেকে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। বাধা দিতে গেলেই গাড়ির ধাক্কায়, নয়তো গাড়ির চাকায় তাদের পিষ্ট হয়ে করুণ মৃত্যুর শিকার হতে হয়। কারা, কোথায়, কোন চক্র ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত পুলিশ জানে না, তা বিশ্বাস করা যায় না। পুলিশ ঠিকই জানে, এমন অনেক নজির রয়েছে। দেখা গেছে, প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তি ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে জিনিসপত্র খোয়ালে পুলিশ দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা উদ্ধার করে দিয়েছে। এ ধরনের উদ্ধারের ঘটনা সম্ভব হওয়ার কারণ হচ্ছে, পুলিশ ভাল করেই জানে ছিনতাইকৃত এলাকায় কারা এবং কোন ছিনতাইকারী গ্রুপ এ কাজ করেছে। ফলে তাদেরকে ধমক দিলেই ছিনতাইকৃত জিনিসপত্র উদ্ধার হয়ে যায়। এ কথা বহুল প্রচলিত, পুলিশ বাহিনীর একশ্রেণীর অসাধু সদস্যের সাথে ছিনতাইকারীদের যোগসাজস রয়েছে। এলাকাভিত্তিক ছিনতাইকারী চক্রের কাছ থেকে তারা মাসোহারা পায়। এমনকি কোনো কোনো পুলিশ সদস্যকে ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত থাকার কথাও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। এসব কারণে অনেক সময় পুলিশের সামনে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলে, তারা দেখেও না দেখার ভান করে। ছিনতাইকারীদের ধরতে তৎপর হয় না। মাঝে মাঝে লোক দেখানো গ্রেফতার করলেও যোগসাজসের কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই ছিনতাইকারী ছাড়া পেয়ে যায়। বলা যায়, ছিনতাইকারী চক্র একশ্রেণীর পুলিশ সদস্য কর্তৃক লালিত-পালিত ও প্রশ্রয় পেয়ে থাকে। ছিনতাই বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ছিনতাইয়ের বিষয়টি তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, যখনই বড় ধরনের ঘটনা ঘটে, তখনই কেন গুরুত্ব দিতে হবে? ছিনতাইসহ জননিরাত্তাজনিত অন্যান্য অপকর্ম সম্পর্কে সবসময়ই পুলিশের সতর্ক থাকা এবং গুরুত্ব দেয়ার কথা। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলে ধারাবাহিকভাবে ছিনতাই বৃদ্ধি এবং এর কবলে পড়ে মানুষের করুণ মৃত্যু হতো না। পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজধানীর প্রায় শতাধিক স্পটে প্রতিনিয়ত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। চিহ্নিত এসব স্পটে ছিনতাইয়ের সাথে কারা জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তা অজানা থাকার কথা নয়। এদের গ্রেফতার করে আইনের মাধ্যমে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করলে রাজধানী থেকে যে ছিনতাই বহুলাংশে কমে যাবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। বলা বাহুল্য, পুলিশকে রাজনৈতিক দমন-পীড়নে ব্যস্ত রাখা এবং তা দমনে তার দক্ষতা প্রশ্নাতীত। অথচ সাধারণ মানুষ যে প্রতিনিয়ত বর্বর ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে মর্মভেদী মৃত্যুর শিকার হচ্ছে, তা দমনে তেমন কোনো দক্ষতা দেখা যায় না।
গত শুক্রবারের দুইটি বর্বরোচিত ছিনতাই ও খুনের ঘটনাসহ বিগত কয়েক মাসে সেসব ঘটনা ঘটেছে, এসব ঘটনার সাথে যারা জড়িত, তাদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ছিনতাই এবং হত্যা করে ছিনতাইকারী অবলীলায় পার পেয়ে যাবে, এটা কোনো সভ্য দেশে চলতে পারে না। পুলিশের ভাবমর্যাদা এবং তার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্তা ফিরিয়ে আনতে এসব ঘটনার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিধান করার বিকল্প নেই। ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশ অকার্যকর বা তার প্রশ্রয় পায়, জনশ্রুত এ বদনাম পুলিশকে ঘোচাতে হবে। যেসব চিহ্নিত স্থানে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটে, সেসব স্থানে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে ছিনতাইয়ের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করতে হবে। ছিনতাই প্রতিরোধে নিয়মিতভাবে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।