Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছাত্রলীগের হামলা

| প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়ন বিরোধি আন্দোলনের নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ইতিপূর্বে ঢাকার ৭টি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার একটি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থানগ্রহনকারী শিক্ষার্থীদের উপর গত ১৫ জানুয়ারী ছাত্রলীগ কর্মীরা হামলা চালালে নিপীড়ণ বিরোধি আন্দোলন নামের কমিটির পক্ষ থেকে ছাত্রলীগের হামলার বিচার ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী তোলা হয়। নিপীড়ন বিরোধি আন্দোলনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে মঙ্গলবার আন্দোলনরত নেতাকর্মীরা ভিসিকে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। আন্দোলনের কর্মীরা আগে থেকেই তালাবদ্ধ করে রাখা প্রশাসনিক ভবনের মূলগেটের গ্রীল ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে ভিসিকে অবরুদ্ধ করে রাখার পর ছাত্রলীগ কর্মীরা ভিসিকে উদ্ধার করতে গেলে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সশস্ত্র ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলায় সাংবাদিকসহ নিপীড়ন বিরোধি আন্দোলনের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। কয়েকটি বামপন্থী ছাত্র সংগঠন নিপীড়ন বিরোধি আন্দোলনের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করছিল বলে জানা যায়। তবে আন্দোলন ও বিক্ষোভরত শিক্ষার্র্থীদের নিবৃত্ত করতে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আলোচনাসহ বিকল্প প্রস্তাব দেয়া হলেও আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করে তাদের অবরোধ ও বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে সরাসরি কথা বলার চেষ্টা না করে পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে চাইলে শিক্ষার্থীদের হাতে লাঞ্ছিত হন। এক পর্যায়ে ভিসিকে উদ্ধারের নামে ছাত্রলীগ কর্মীরা লাঠিসোটা ও রড নিয়ে বিক্ষোভকারিদের উপর হামলা চালালে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জাতির ভবিষ্যত নেতৃত্ব গঠন, শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে জাতীয় সমস্যার সমাধান ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে মূল ভ‚মিকা পালন করার কথা। বিশ্বের সব উন্নত দেশেই রাজনৈতিক নেতৃত্ব, উদ্ভাবনী প্রতিভার বিকাশ ও গবেষণার মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কারে নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বৃটিশ বিরোধি আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন পর্যন্ত আমাদের জাতীয় ইতিহাসের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অসামান্য অবদান রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোই সেই গৌরবময় ইতিহাসের ধারক। দেশের অন্যতম প্রাচীন ছাত্র সংগঠন হিসেবে ইতিহাসে ছাত্রলীগেরও গৌরবময় অবদান রয়েছে। এমনকি আশির দশকে স্বৈরাচার বিরোধি সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের ব্যানারে ছাত্রলীগ,ছাত্রদলসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠন সর্বদলীয় সহাবস্থান ও ঐক্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। তবে নব্বইয়ের পর দেশে বহুদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক সহাবস্থান ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ক্রমাগত অস্থিতিশীল ও বিনষ্ট হয়ে পড়ে। কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে এমন অরাজক ও অস্থিতিশীল অবস্থার কোন দ্বিতীয় নজির আছে কিনা আমাদের জানা নেই। দেশে গণতন্ত্র ফিরে এসেছে বলে দাবী করা হলেও বিগত ২৭ বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোন ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় এ দীর্ঘ সময় ধরে দেশে রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে ওঠার স্বাভাবিক পথ রুদ্ধ হয়ে আছে।
গত ২৭ বছর ধরে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোন ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা না থাকা এবং ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের একচ্ছত্র দখলবাজির ধারাবাহিক প্রবণতা জাতীয় রাজনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও সুস্থ্য ধারার রাজনৈতিক পরিবেশ না থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একশ্রেনীর দলবাজ শিক্ষকের রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির কবলে পড়ে গেছে। মেধা, যোগ্যতা ও জেষ্ঠ্যতার বদলে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি ও বেপরোয়া দলবাজি হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও ভিসি নিয়োগের প্রধান মানদন্ড। বর্তমান সরকারের ৯ বছরের শাসনামলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কার্যত ছাত্র রাজনীতি ও ছাত্র আন্দোলন না থাকায় এক ধরনের স্থিতিশীল পরিবেশ দেখা গেছে। তবে অনৈতিক ও অগণতান্ত্রিক পন্থায় সর্বক্ষেত্রে ছাত্রলীগের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন স্থিতিশীল পরিবেশকে শিক্ষা, জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা ও গবেষণার কাজে লাগাতে পারেনি। উপরন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস থেকে শুরু করে প্রতিটি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ছাত্রলীগের হস্তক্ষেপে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বাভাবিক প্রশাসনিক কর্মকান্ড চরমভাবে ব্যহত হয়েছে। ঢাকার কথিত কলেজগুলো ঢাবি’র অধিভুক্ত থাকবে কি থাকবে না তা সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিষয়। সাধারণ শিক্ষার্থী বা সংশ্লিষ্ট যে কেউ এ নিয়ে ভিন্নমত ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ করতেই পারে। এ ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের বেপরোয়া শক্তি প্রয়োগের ঘটনা দু:খজনক। সরকারী দলের অংগ সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের এহেন ভ‚মিকার বিরুদ্ধে সরকারের শীর্ষ মহলকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সব দল ও মতের শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও উচ্চ শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও সুযোগ নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ছাত্রলীগ

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন