Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

থমকে গেছে কাজের গতি

ভারপ্রাপ্ত মেয়রে চলছে ঢাকার দুই সিটি

সায়ীদ আবদুল মালিক | প্রকাশের সময় : ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম চলছে ভারপ্রাপ্ত মেয়র দিয়ে। এই দুই সিটি কর্পোরেশনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও রয়েছেন দেশের বাইরে কিংবা পদায়নের পর এখনো কাজে যোগদান করেননি। বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করানো হচ্ছে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে। এতে দুই সিটি কর্পোরেশনের কাজের গতি থমকে গেছে। একদিকে ডিএনসিসির মরহুম মেয়র আনিসুল হকের ইন্তেকালের কারণে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন ডিএনসিসি’র ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ ওসমান গনি।
অন্যদিকে ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন দেশের বাইরে থাকায় ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন ডিএসসিসি’র ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মোহাম্মদ আবু সাঈদ। ডিএসসিসি’র প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদারও গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে দেশের বাইরে রয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বিভাগের কাজ চালিয়ে নেয়ার জন্য ভারপ্রাপ্ত কিংবা অতিরিক্ত দায়িত্ব পলনের জন্য কাউ দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এছাড়াও ডিএসসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী’র দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান।
গত কয়েকদিন দুই সিটিতে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মেয়রের শূন্যতায় কাজের গতি স্থবির হয়ে গেছে। কোন কোন কর্মকর্তা সকালে অফিসে এসে হাজিরা দিয়ে চলে যান। কিছু কর্মকর্তা অফিসে থাকলেও হাতে কাজ না থাকায় অলস সময় পার করছেন। কেউ আড্ডায় কেউ বা মোবাইল ফোনে গল্পে মেতে উঠেছেন। আবার কেউ কেউ অলস সময় পার করছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মোহাম্মদ আবু সাঈদ ইনকিলাবকে বলেন, সিটি কর্পোরেশনের দৈনন্দনি কর্যক্রম ভালভাবেই চলছে। কর্মকর্তা কর্মচারিও সময়মত অফিসে আসছে ও কাজ করছে। তিনি বলেন, গতকাল ইজতেমার আখেরী মোনাজাতে কেউ কেউ অংশ নিয়েছে এবং কেউ কেউ কেউ রাস্তায় যানজটের কারণে সময়মত অফিসে আসতে পারেনি। এটা সাময়ীক সমস্যা ছিল। আগামীকাল (আজ সোমবার) থেকে সব কিছু আবার আগের মতই ঠিকঠাক ছলবে বলে তিনি আশা পোষণ করেন। গতকাল রোববার সকালে সরেজমিনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে গিয়ে দেখা যায়, মেয়রের কার্যালয়ের উন্নয়ন কাজ চলছে। ভারপ্রাপ্ত মেয়র কোথায় বসেন জানতে চাইলে আনসারের এক সদস্য বলেন, তিনি নীচ তলায় বসেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মেয়র দেশের বাইরে যাওয়ার পর মেয়রের পিএস কবির মাহমুদ আর অফিস মুখো হয়নি। মেয়রের এপিএস আবুল কালাম আযাদও রয়েছেন দেশের বাইরে। পিএস কবির মাহমুদ মেয়রের পিএস ছাড়াও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে রয়েছে। তার জন্য নগর ভবনের ৪র্থ তলায় রয়েছে একটি আলাদা কক্ষও। অথচ তাকে কোনদিন ওই কক্ষে অফিস করতে দেখা যায়নি। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে গিয়ে তাকে পাওয়া য়ায়নি। প্রধান প্রকৌশলী দায়িত্ব পাওয়ার পর এখনও কাজে যোগদান করেননি। প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরী, তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী ও কেইস প্রজেক্ট কর্মকর্তা সেহাব উল্লাহকেও অফিসে পাওয়া যায়নি।
গতকাল রোববার পূর্ণ কর্মদিবস অফিস খোলার দিন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি বিভাগেই গিয়ে দেখা গেছে সুনশান নিরবতা। মেয়র, প্রণিকসহ বেশ কয়েকজন বিভাগীয় কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে ঝিমিয়ে পড়েছে ডিএসসিসি’র কার্যক্রম। এবিষয়ে কথা বলার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলালের দফতরে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মোবাইল ফোনে যোগযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ডিএসসিসির সূত্রে জানায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ডিসেম্বরের ২৮ তারিখ রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। মেয়রকে বিদায় জানাতে সিটি কর্পোরেশনের পদস্থ কর্মকর্তারা বিমান বন্দরে উপস্থিত ছিলেন। যাত্রার প্রাক্কালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাজী মোহাম্মদ আবু সাঈদকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসাবে দায়িত্ব অর্পণ করেন। মেয়র সাঈদ খোকন জানুয়ারির ১৮ তারিখে দেশে ফেরার কথা রয়েছে। অর্থাৎ প্রায় ২১ দিনের সফলে মেয়র অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া এদিকে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের ভেতর কাজের কিছুটা ধীর গতি এসেছে। মেয়র দপ্তরে থাকলে সিটি কর্পোরেশনের কাজের গতি বাড়ে তার অনুপস্থিত কাজের গতি থকমে দাঁড়ায়।
ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, একদিকে শীত অন্যদিকে উত্তর সিটিতে এখন বইছে নির্বাচনী হাওয়া। এই নির্বাচনী হাওয়ার ছোঁয়া লেগেছে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের গায়েও। তাদের মধ্যে চলছে নানা সমীকরণ। অথচ মরহুম মেয়র আমিনুল হক থাকা সময়ে এমন চিত্র কল্পনাও করা যেত না। কে কত দ্রæত কাজ করে মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন সেই প্রতিযোগিতাই থাকতো সকলের মাধ্যে।
আনিসুল হকের ইন্তেকালের পর বর্তমানে আগের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজের ধারাবাহিকতাও ফিরে আসেনি। নেওয়া হয়নি নতুন কোনো প্রকল্পের উদ্যোগ। পুরনো সব কাজ বাস্তবায়ন মনিটরিং করেই সময় পার করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আর ভারপ্রাপ্ত মেয়র নতুন কোন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিতে চাইছেন না। নির্বাচিত মেয়র এসে নতুন নতুন পরিকল্পনা হাতে নেবে সেই আশায় রয়েছেন তারা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, আনিসুল হকের নেওয়া চলমান কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্যানেল মেয়র সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ও কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন। নথিপত্রে স্বাক্ষর করছেন। ঢাকা উত্তর সিটিতে এখন চলছে দখলের উৎসব। বিশেষ করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও পার্কিংমুক্ত করা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ফের বেদখল হয়ে গেছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছদে এরমধ্যেই কয়েকদিন ডিএনসিসির কর্মকর্তারা অভিযান চালালেও ফলপ্রসু কোন কাজ হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিটি কর্পোরেশনের

১৯ জানুয়ারি, ২০২০
১৫ জানুয়ারি, ২০১৮
২১ ডিসেম্বর, ২০১৭

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ