পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অবশেষে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন ২ দিন পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে পহেলা ফেব্রুয়ারি। গতকাল নির্বাচন কমিশন জরুরি বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। একই সঙ্গে এসএসসি ও দাখিলসহ সমমানের পরীক্ষা ২ দিন পিছিয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি শুরুর তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। মূলত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, ছাত্রদের আন্দোলন এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দাবির মুখে নির্বাচন কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরস্বতী পূজার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যাতে সুন্দরভাবে করতে পারে সে জন্যই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়।
গতকাল শনিবার (১৮ জানুয়ারি) নির্বাচন ভবনে ঢাকা দুই সিটির ভোটের তারিখ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিতে দুই দফা বৈঠকে বসেন সিইসির নেতৃত্বে অন্য কমিশনাররা। এর আগে বিকেল ৪টায় নির্বাচন ভবনে বৈঠক শুরু হয়। পরে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর রাত ৮টায় দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে বসে কমিশন। রাত সাড়ে ৮টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের ভোটের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, পরীক্ষার তারিখ পেছালে সমস্যা হবে কি না। তারা পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজার দিন ভোটের তারিখ নির্ধারণ করার বিষয়ে নানা মহল থেকে আপত্তি উঠেছে। অনেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু), জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। অনশন করেছে একাধিক ছাত্র সংগঠন। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ইসির সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনের তারিখ পেছানোর দাবি জানিয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম ঘোষণা দেন আদালত যদি নির্বাচনের তারিখ পেছানো সিদ্ধান্ত দেয় সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। গতকাল দুপুরে তিনি পুনরায় বলেন, ইসির বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ছাত্ররা যে নির্বাচনের তারিখ পেছানো দাবিতে অনশন করছেন তা যৌক্তিক। অবশ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আগেই বলেছেন, নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত করেসে ইসি। ইসি নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করলে আমাদের আপত্তি থাকবে না। এর আগে নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীরাও পূজার কারণে নির্বাচনের তারিখ পেছানো উচিত বলে বক্তব্য দেন।
নির্বাচনের তারিখ পেছানো দাবিতে গতকাল বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি দিয়েছে। তাদের কর্মসূচিতে রয়েছে আগামী ২০ জানুয়ারি বিকেল ৪টা থেকে এক ঘণ্টা সারা দেশে মানববন্ধন ও ক্ষোভ মিছিল। এ ছাড়া ৩০ জানুয়ারি সারা দেশে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, অবস্থান ধর্মঘট, প্রতীকী অনশন ও অবরোধ কর্মস‚চি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুক্রবার সংগঠনটি ধর্মীয় অনুভ‚তিতে আঘাত হানার অভিযোগ তুলে অবিলম্বে নির্বাচন কমিশন সচিবকে তার পদ থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে।
গত ২২ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ৩০ জানুয়ারি ভোটের দিন নির্ধারণ করে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ভোটগ্রহণের আগের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেছে। প্রার্থীরা এখন প্রচার চালাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তাদের কেউ কেউ আগেই বলছেন, ধর্মীয় উৎসব অনুষ্ঠানের কারণে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের নজির রয়েছে। জাতীয় সংসদের পঞ্চম সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ১৯৯১ সালের ২ মার্চ। কিন্তু ওই দিন শবেবরাত হওয়ার কারণে ভোটগ্রহণের তারিখ এগিয়ে এনে ২৭ ফেব্রæয়ারি নিধারণ করা হয়। অন্যান্য নির্বাচনের তফসিলেও কয়েকবার পরিবর্তন আনা হয়েছে মুসলিম ও অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উৎসবের কারণে। কিন্তু এবারের মতো বিতর্ক, আন্দোলন, অনশন ও আদালতে রিট আবেদনের ঘটনা কখনো ঘটেনি।
গতকাল নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নির্বাচন শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, ১ ফেব্রæয়ারি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। পরীক্ষার্থীদের আসন ঠিক করার জন্য এক দিন আগে থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে নির্বাচনী সরঞ্জাম সরিয়ে নিয়ে ফাঁকা করে দিতে হবে। এ অবস্থায় পরীক্ষা না পেছালে নির্বাচন ৩০ জানুয়ারির পর করার উপায় নেই। নির্বাচন ও অন্যান্য কারণে পরীক্ষার সময়স‚চি পরিবর্তনের নজির আছে। আবার ভোটগ্রহণের তারিখ এগিয়ে আনা যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রার্থীদের পক্ষ থেকে আপত্তি আসতে পারে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর সিটিতে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম নির্বাচন পেছানোর দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন। একই দিন একই সিটিতে বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেছেন, সরস্বতী পূজার দিন নির্বাচন হওয়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের মনের ক্ষোভ ভোটের বাক্সে প্রকাশ করবেন।
ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস একই দিন পূজা ও ভোট হওয়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানিয়েছেন। আর বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী ইশরাক হোসেনও সরস্বতী পূজার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ভোটের তারিখ পেছানোর জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছেন।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ যা বলছে : সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত গতকাল বলেন, নির্বাচন কমিশন সচিব একই দিনে ভোটকেন্দ্রের এক কক্ষে ভোটগ্রহণ আর অন্য কক্ষে পূজা অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। আমরা তার এই প্রস্তাবকে একটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভ‚তিতে আঘাত হিসেবে মনে করছি এবং এ প্রস্তাবকে ‘বাস্তবতাবিবর্জিত ও অবান্তর’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।’ নির্বাচনের অন্তত ২০ ঘণ্টা আগে যে ক্ষেত্রে স্কুল-কলেজসহ শিক্ষায়তনের ভোটকেন্দ্র আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে এবং নির্বাচনের দিন ১৪৪ ধারা জারি থাকবে, সে ক্ষেত্রে ভোটকেন্দ্রের এক কক্ষের পাশে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠান ও উৎসব আয়োজনের প্রস্তাব নিঃসন্দেহে হাস্যকর। সরস্বতী প‚জা উপলক্ষে নির্বাচনের তারিখ পুনর্র্নিধারণের দাবিতে ডাকসু ও সাধারণ ছাত্রসমাজের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের প্রতি আমাদের সংগঠনের আন্তরিক সমর্থন ও সংহতি রয়েছে। আমাদের সংগঠন মনে করে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এ আন্দোলন একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।
আজ আপিল বিভাগে শুনানি : সরস্বতী পূজার কারণে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভোটের তারিখ পরিবর্তন চেয়ে করা রিট আবেদন খারিজ করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানির কথা ছিল আজ রোববার। রিট আবেদনকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট অশোক কুমার ঘোষ এমনটাই জানিয়েছেন। সরস্বতী পূজার কারণে নির্বাচন পেছানোর দাবিতে গত ৫ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। গত ১৪ জানুয়ারি তা খারিজ করে আদেশ দেন আদালত।
এদিকে গতকাল শনিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের জানিয়েছেন ২০২০ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সময় পেছানো হয়েছে। পূর্বনির্ধারিত ১ ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে এ পরীক্ষা। তিনি জানান, আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ওইদিন সরস্বতী প‚জা থাকায় বিভিন্ন মহলের পক্ষে নির্বাচনের দিন পরিবর্তনের দাবি ওঠে। নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে যে, এসএসসি পরীক্ষার কারণে নির্বাচনের সময় পেছানো সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামী ১ ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ৩ ফেব্রুয়ারি এসএসসি, দাখিল ও সমমান পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
পরীক্ষা দুই দিন পেছানোর বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি গতকাল শনিবার রাতে হেয়ার রোডের সরকারি বাসভবনে জানিয়েছেন ১ ফেব্রুয়ারির বদলে ৩ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা শুরু হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।