পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
ভয়েস অব আমেরিকা : আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট তাদেরকে গোয়াদর বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার জন্য পাকিস্তানের কাছে অনুরোধ করেছে। স্থলবষ্টিত আফগানিস্তানে অধিকতর দ্রæত সময়ে ও সাশ্রয়ী ব্যয়ে ন্যাটোর সরবরাহ পথ চালু করতে চীনের নির্মিত পাকিস্তানের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় এ বন্দর ব্যবহার করা হবে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ভয়েস অব আমেরিকার সাম্প্রতিক এক খবরে বলা হয়, পাকিস্তানি কর্মকর্তারা এ অনুরোধের কথা নিশ্চিত করেছেন।
পাকিস্তানের সমুদ্র বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হাসিল বিজোঞ্জো বলেন, সম্প্রতি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে তা বৈঠকের সময় ন্যাটো প্রতিনিধিরা এ প্রস্তাব দেন। এ সপ্তাহের গোড়ার দিকে ভয়েস অব আমেরিকার (ভোয়া) সাথে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, তারা এ ব্যাপারে খুবই আগ্রহী। আমরা এ ব্যাপারে কাজ করছি। তিনি বলেন, ন্যাটোর লোকজন আমাদের বলেছেন যে গোয়াদর থেকে কান্দাহার পর্যন্ত সরাসরি সরবরাহ দ্রæত পরিবহনের ক্ষেত্রে এটা খুবই সুবিধাজনক হবে।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের সরবরাহ লাইন বর্তমানে পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল শহর ও দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় বন্দর করাচির মধ্য দিয়ে গেছে। সেখান থেকে ন্যাটো সরবরাহ ট্রাক বোঝাই হয়ে তোরখাম দিয়ে এক সপ্তাহের পথ পেরিয়ে আফগানিস্তানে পৌঁছে। তোরখাম হচ্ছে পাকিস্তানের উত্তরপশ্চিম সীমান্তে আফগানিস্তানের নানগারহার প্রদেশে প্রবেশের সীমান্ত পথ।
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো ও অন্যান্য অংশীদারদের ১৬ হাজার সৈন্য রয়েছে। তালিবান, আইসিস ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আফগান নিরাপত্তা ও সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ, পরামর্শ সাহায্যের জন্য ২০১৫ সালে দি রিজোলিউট সাপোর্ট মিশন শুরু হয়। এ মিশন পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে চালু স্থল ও বিমান পথের উপর বিপুল ভাবে নির্ভরশীল। ১৬ হাজার সৈন্য ছাড়াও প্রায় ২৬ হাজার ভাড়াটে সামরিক ব্যক্তি রয়েছে মিশনের আওতায়।
বর্তমান পথে ন্যাটো সরবরাহ পৌঁছতে যেখানে এক সপ্তাহ লাগে সেক্ষেত্রে গোয়াদর দিয়ে অনেক কম সময়ে আফগানিস্তানে সরবরাহ পাঠানো যাবে। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের (সিপিইসি) গুরুত্বপূর্ণ স্থান বালুচিস্তানের গোয়াদর আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় কান্দাহার প্রদেশের সীমান্তে অবস্থিত। আফানিস্তানের ৫টি মার্কিন সেনা ঘাঁটির একটি রয়েছে কান্দাহারে।
আফগানিস্তানে ন্যাটো সরবরাহ পথ যদি গোয়াদরের ভিতর দিয়ে চালু হয় তাহলে সরবরাহ বহনকারী ট্রাকগুলো ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আফগানিস্তানে পৌঁছবে। গোয়াদর বন্দর দুই প্রাদেশিক রাজধানী কোয়েটা ও বালুচিস্তানকে সংযোগকারী চমনের সাথে সংযুক্ত। দুই শহরকে যুক্ত করে সম্প্রতি নির্মিত একটি মহাসড়ক ন্যাটো সরবরাহ পরিবহনের একটি নিরাপদ পথ হবে।
যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা থাকলেও ইসলামাবাদকে পাশ্চাত্যের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবেই দেখা হয়। ২০০১ সালে আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালাতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীকে পাকিস্তান পরিচালিত গøক ও আলোক সরবরাহ পথ ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে পাকিস্তান অ-ন্যাটো মিত্রের মর্যাদা লাভের পাশাপাশি পাকিস্তান মার্কিন সামরিক ও বেসামরিক সাহায্য প্রবাহ নিশ্চিত করে।
২০১৮ সালের শুরুতে পাকিস্তান-মার্কিন সম্পর্ক যখন যথেষ্ট টানাপড়েন পূর্ণ তখন গোয়াদর দিয়ে ন্যাটোর সরবরাহ পথ চালুর মার্কিন উদ্যোগ অধিকাংশ মানুষকেই বিস্মিত করেছে। সমস্যার পর সমস্যার মধ্যে করাচির পরিবর্তে গোয়াদর দিয়ে সরবরাহ পথ চালুর মার্কিন প্রস্তাব দেখে মনে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সাথে তার তিক্ত সম্পর্ক মেরামত করতে প্রস্তুত।
নববর্ষের এক টুইটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩৩ বিলিয়ন ডলার সাহায্য দেয়া সত্তে¡ও পাকিস্তান আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াইকারী জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয় প্রদান করছে বলে মন্তব্য করার পর পাকিস্তানি কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তারা ট্রাম্পের বক্তব্যকে অনাকাক্সিক্ষত ও বোধের অগম্য বলে আখ্যায়িত করেন। তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে তাদের ব্যর্থতার জন্য পাকিস্তানকে বলি দিতে চাইছে।
ট্রাম্প প্রশাসন ইসলামাবাদকে পাকিস্তান থেকে তৎপরতা পরিচালনাকারী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়ে নিরাপত্তা সাহায্য বাবদ দেয়া বড় পরিমাণ অর্থ বন্ধ করেছে।
ট্রাম্পের দাবির জবাবে পাকিস্তানি কর্মকর্তারা বলেছেন যে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ পায়নি। তারা বলেন, এ অর্থ সাহায্য হিসেবে ছিল না, বরং আফগান-পাকিস্তান সীমান্তে সৈন্য মোতায়েনের জন্য দেয়া অর্থ। তারা বলেন, ইসলামাবাদ এখনো ওয়াশিংটনের কাছে ৯ বিলিয়ন ডলার পাবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান উভয়ের নেতিবাচক মন্তব্য দুই সাবেক মিত্রের মধ্য ইতোমধ্যে সৃষ্ট টানাপড়েনের সম্পর্কের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে। তবে দু’দেশের কর্মকর্তারা এ দাবি অব্যাহত রেখেছেন যে মার্কিন-পাকিস্তান সম্পর্ক মিডিয়া-কথিত ভেঙ্গে পড়া থেকে থেকে এখনো বহু দূরে আছে। ইসলামাবাদ সকল ন্যাটো সবরাহ পথ বন্ধ করতে চায় বলে দাবিও পাকিস্তানি কর্মকর্তারা নাকচ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন সরকারী সূত্র উদ্ধৃত করে ভোয়া বলে, দু’দেশÑ বিশেষ করে দু’ সামরিক বাহিনীর মধ্যে বলিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সংলাপ চলছে। সেনা মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর ভোয়াকে বলেন, সম্প্রতি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া ও সেন্টকমের কমান্ডার জেনারেল জোসেফ ভোটেলের মধ্যকার আলোচনা ভবিষ্যত সহযোগিতার ব্যাপারে কোনো শংকা দূর করেছে।
পাকিস্তান পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের প্রতিরক্ষা বিষয়ক কমিটির প্রধান সিনেটর মুশাহিদ হোসেন ভোয়াকে বলেন, চীন, তুরস্ক, ইরান ও রাশিয়ার সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দেশটিকে অধিকতর সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমাদের অবস্থানগত কারণ এবং আমাদের ভ‚মিকা, আমাদের সামনে খোলা থাকা পথের জন্য আমাদের চেয়েও যুক্তরাষ্ট্রকে আমাদের বেশি দরকার। তিনি আরো বলেন, গøক ও আলোক সরবরাহ পথ চালু রয়েছে, কেননা পাকিস্তান আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনার প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।