বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
আমিনুল হক, মীরসরাই ( চট্টগ্রাম) থেকে : দেশের লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এখন সারাদেশে মাদক পাচারের প্রধান রুট হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদক বিক্রেতা, পাচারকারীগণ ও সেবীরা সারাদেশে মাদকের মরণ ছোবল ছড়িয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর এর জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে দিবা-রাত্রি বিভিন্ন কৌশলে সরাদেশে মাদকের জাল বিছিয়ে দিচ্ছে। এছাড়াও এই রুটে মীরসরাই, ফেনী ও কুমিল্লা অঞ্চলের সাথে ভারতীয় সীমান্ত এলাকা হওয়ায় অতি সহজে ভারত থেকে বিভিন্ন মাদক দ্রব্য, ফেনসিডিল, মদ, গাঁজা ও ভারতীয় শাড়ী সীমান্ত পার করে গাড়ী যোগে পাচার কারীদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার হচ্ছে বলে জানা গেছে। চলতি বছর এই রুটে মাদক পাচারের সময় র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক পাচারকারী ঘটনাস্থলে নিহত হওয়ার নজির ও রয়েছে। ভারত সীমান্ত থেকে মীরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়নের লিচুতলা, বদ্ধ ভবানী, কুচিয়া খোন্দা, হেঁয়াকো বাজারের আন্দার মানিক এলাকা দিয়ে প্রায় সময় ভারতীয় শাড়ী, ফেসসিডিল ও ভারতীয় মদ রাতের আঁধারে অনায়াসে প্রবেশ করছে। এক শ্রেণির স্থানীয় অসাধু প্রভাবশালী মাদক সিন্ডিকেট তা সীমান্ত এলাকা দিয়ে পাচার করে দেশের বিভিন্ন বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়, এসব মাদক পাচারের জন্য আলাদা লোক নিয়োগ করা থাকে। তাদের কাজ শুধু রাতের আঁধারে সীমান্ত পার করে মাদক এপারে নিয়ে আসা। এদেরকে দিনের বেলায় কেউ দেখে না। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে এলাকায় এদের তৎপরতা দেখা যায়। এদিকে ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলা দিয়ে ভারতীয় সীমান্ত খুব কাছাকাছি হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়কের শুভপুর হয়ে গোপাল ইউনিয়নের মুহুরীগঞ্জ রেল লাইন হয়ে এবং শুভপুর মুহুরী নদী পার হয়ে পূবালী-ফাজিলপুর হয়ে ফেনী সদরে ভারতীয় মাদক ও অবৈধ মালামাল প্রবেশ করছে। এছাড়াও গোপাল ইউনিয়নের স্থানীয় ক্যাপ্টেন বদিউল আলম সড়ক হয়েও ফেনী সদরে প্রতিনিয়ত এসব মাদক প্রবেশ করছে। এদিকে জোরারগঞ্জ থেকে মুহুরী প্রজেক্ট হয়ে ফেনী জেলার সোনাগাজী দিয়ে আঞ্চলিক এলাকাগুলোয় মাদক প্রবেশ করে। ভারতীয় সীমান্ত এলাকা ফেনী, ছাগলনাইয়া এবং মীরসরাই অঞ্চল দিয়ে মাদক চট্টগ্রামে প্রবেশ করছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় জোরারগঞ্জ থানায় ২০১৭ সালে মাদক সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ২৬৮টি, মাদক মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৩০৯ জন আসামী। জব্দ করা হয়েছে ৪টি প্রাইভেটকার, ১টি কাভার্ডভ্যান ও ১টি মিনি পিককাপ। মাদকদ্ররে্যর মধ্যে ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে সাড়ে ৩৬ হাজার, ফেনসিডিল প্রায় ৩ হাজার, গাঁজা ২৮ কেজি, ভারতীয় শাড়ী ১ হাজার ১শত পিস, চোলাইমদ, ১ হাজার ২শত লিটার। উদ্বেগ এর বিষয় হলো এই এক থানায় যদি মাদকের এই অবস্থা তাহলে দেশের অন্যান্য থানার কি অবস্থা ? বছরে কতশত হাজার কোটি টাকা মাদকের বাণিজ্য চলে এদেশে।
এদিকে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার বড় বড় চালান স্থল ও জলপথে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম হয়ে এবং নদীপথে চট্টগ্রাম হয়ে বাড়ককুন্ড এবং সীতাকুন্ডে এনে পাচার কারীদের মাধ্যমে এই রুট ব্যবহার করে ইয়াবা সারা দেশে ছড়িয়ে দিচেছ বলে জানা যায়।
সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে ইয়াবা পাচারে মাদক ব্যবসায়ী এবয় পাচার কারীরা ব্যবহার করছে নিত্য-নতুন, নামি-দামি প্রাইভেটকার ও বিলাস বহুল গাড়ী। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ও র্যাব কর্তৃক আটককৃত, মাদক পাচারের সময় জব্দ করা গাড়ী ও চেকপোস্টে গাড়ী থেকে মাদক উদ্ধারের নিমিত্তে এসব নামি দামি গাড়ী ব্যবহারের বিষয়টি উঠে আসে। প্রাপ্ত তথ্যে আর জানা যায়, এক সময় ইয়াবা পাচার কারীগণ গাড়ীতে করে, ব্যাগে করে, গাড়ীর বিভিন্ন যন্ত্রাংশের সাথে বেঁধে, শরীরের সাথে বেঁধে, বাদ্য যন্ত্রের ভেতরে, সর্বশেষ মলদ্বারে এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পেটের ভেতরে করে এই মাদক পাচার করে আসছিল। এছাড়া এই পাচারে যাদের ব্যবহার করত এদের মধ্যে একাংশ হচ্ছে মহিলা। পুরুষ যারা পাচারকারী হিসেবে মাদক বহন করত, তাদের বেশ-ভূষা ছিল এক প্রকার শ্রমিকের মত। এসকল কৌশল আইনশৃংখলা বাহিনী জেনে গেলে পাচারকারীরা বোল পাল্টে পাচার কাজে নামি-দামি প্রাইভেটকার যোগে ভদ্রলোক সেজে মাদক পাচার করছিল। সম্প্রতি চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে এসব নামি দামি প্রাইভেটকারসহ কতিপয় মাদক পাচার কারীদের আটক ও মাদক দ্রব্য উদ্ধারের পর বিষয়টি সকলের দৃস্টি গোচর হয়।
ইয়াবা পাচারকারীদের সর্বশেষ পরিবর্তনের অন্যতম মাধ্যম নামি-দামি বিভিন্ন ব্যান্ডের প্রাইভেটকার, বিলাশ বহুল গাড়ী, টাই শ্যূটপরে ভদ্রলোক সেজে তারা আইনশৃংখলা বাহিনীর নজরদারী এড়ানোর চেষ্টা করছে বলে সূত্রে জানা যায়। কিন্তু এতেও তাদের শেষ রক্ষা হচ্ছে না। মাদক পাচার কারীরা যত কৌশল অবলম্বন করুক না কেন, কয়েকদিন পর আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ঠিকই তাদের চাল ধরে ফেলছেন। তবে এখনো অধরা রয়ে যাচ্ছে এই রুটে চলা বিলাসবহুল গাড়ীতে টাইশ্যূট পরা ভদ্রলোক বেশি মাদক পাচারকারীরা। পুলিশ কর্মকর্তাগণ আরো জানান, অনেক সময় এসব গাড়ী থামালেও অনেকে এটাকে হয়রানি মনে করছেন। একটা গাড়ী যখন কক্সবাজার থেকে ছেড়ে ঢাকার উদ্দ্যেশে রওয়ানা হয়, তখন ঢাকা পর্যন্ত ককেটি চেকপোস্টে যখন গাড়ীগুলো থামানো হবে এতে করে একটু সময় লাগবে। আর এতে যাত্রীসাধারণ খুব বিরক্ত বোধ করেন। পুলিশ আরো জানায়, তারা বিভিন্ন চেকপোস্টে লোকাল গাড়ীগুলো থামিয়ে চেক করে কিছু মাদক দ্রব্য উদ্ধার করে এর সাথে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় নিয়ে আসে।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে উদ্ধার হওয়া মাদক দ্রব্য পাচারের তুলনায় কম। প্রতিদিন এইরুটে গড়ে কয়েক কোটি টাকার মাদকদ্রব্য পাচার হয়। চলতি বছর বাংলাদেশ মায়ানমারের নাগরিকরা অবাদে এইদেশে প্রবেশ করেছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় ইয়াবা ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারে থাকা তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রচুর পরিমান ইয়াবা বাংলাদেশে প্রবেশ করিয়েছে। বর্তমানে ওই ইয়াবাগুলো সময়-সুযোগ বুঝে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার করছে। ইয়বা পাচারের সময় সম্প্রতি কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময় ইয়াবাসহ মিয়ানমারের নাগরিকদের গ্রেফতার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বিশ্লেষকরা আরো মনে করছেন, মিয়ানমার থেকে ইয়াবা উৎপাদন হয়ে তা বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশে পাচার করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের প্রতিটি পথে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারী বাড়িয়ে এবং কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে প্রবেশে কর্ণফুলী ব্রিজে, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার রুটে, চট্টগ্রাম সিটি গেইটে, ফেনী ও কুমিল্লা এলাকায় নিয়মিত তল্লাশি চৌকি বসানো হয় সারাদেশে মাদক ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অনেকটা কম থাকবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি কঠোর নজরদারীতে রাখলে মাদকের এই বিশাল বহর ঢাকা হয়ে সারাদেশে ছড়ানোর আশঙ্কা থাকবে না। এবিষয়ে মীরসরাই সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মশিয়ার রহমান বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান সব সময় জিরো টলারেন্স। বিলাস বহুল গাড়ীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে কোন বিলাস বহুল গাড়ীর নির্দিষ্ট তথ্য থাকলে (গোয়েন্দা শাখা এবং সোর্স) আমরা সেটাকে তামিয়ে তল্লাশি করে মাদক থাকলে উদ্ধার এবং পাচারকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। এছাড়াও এই রুটে নিয়মিত চেকপোস্ট বসিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘আইনশৃংখলা রক্ষাকারী, ‘বিভিন্ন সময়ে এই রুটে মাদকের বড় বড় চালান আটক করায় এবং মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনায় মাদক পাচার, সেবন এবং বিকি-কিনি অনেকটা কমে গেছে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান আর দৃঢ় হবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।