নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ। বিজয়ের মাসে দেশের ফুটবলকে আরেকটি জয় এনে দিলো বাংলাদেশের কিশোরীরা। তারা অপরাজিত থেকেই সাফ শিরোপা ঘরে তুললো। গতকাল দুপুরে কমলাপুরস্থ বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশ ১-০ গোলে হারায় ভারতকে। বিজয়ী দলের হয়ে একমাত্র জয়সূচক গোলটি করেন শামসুন্নাহার। এ টুর্নামেন্টে ভারতীয়দের বিপক্ষে স্বাগতিক বাংলাদেশের এটা টানা দ্বিতীয় জয়। এর আগে লিগ পর্বে লাল-সবুজরা ৩-০ গোলে হারিয়েছিল ভারতকে।
লিগ ম্যাচের মতো ফাইনালেও স্বাগতিকদের সামনে পাত্তা পায়নি ভারত। লাল-সবুজের মুহুর্মুহু আক্রমণে ম্যাচের প্রায় পুরোটা সময়ই কোনঠাসা থাকে অতিথি দল। তহুরা, শামসুন্নাহার, মনিকা চাকমাদের একের পর এক আক্রমণ ঠেকাতেই ব্যস্ত দেখা যায় ভারত ডিফেন্ডারদের। একটি মাত্র গোল পেলেও প্রায় এক হালি গোলের সুযোগ নষ্ট হয়েছে বাংলাদেশের। তা না হলে জয়ের ব্যবধানটা লিগ পর্বের মতো বড় হতে পারতো।
কাল কমলাপুর স্টেডিয়ামে প্রায় দশ হাজার দর্শকের মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাতœ ফুটবল উপহার দেয় বাংলাদেশ কিশোরী দল। শুরু থেকে বেশ ক’টি সুযোগ পেলেও ম্যাচে প্রথম গোলের সুযোগটি বাংলাদেশ পায় ২২ মিনিটে। এসময় মারিয়ার মান্ডার ঠেলে দেয়া বল ধরে ভারতের বক্সে প্রবেশ করেন আনুচিং মগিনি। সামনে ভারতীয় গোলরক্ষক মনিকা দেবী। একা থাকলেও তাকে ফাঁকি দিতে পারেননি আনুচিং। এ যাত্রায় গোল হজম থেকে বেঁচে যায় ভারত। ম্যাচে ভাল খেললেও কাক্সিক্ষত সেই গোলের দেখা পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষায় থাকতে হয় প্রায় পৌনে একঘন্টা। অবশেষে গোল আসে। উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা স্টেডিয়াম। ম্যাচের ৪২ মিনিটে ডান দিক দিয়ে আক্রমণে উঠে শামসুন্নাহার বল বাড়িয়ে দেন আনুচিংকে। সেই বলে অনুচিং শট নিলে ভারতীয় গোলরক্ষক মনিকা দেবীর পায়ে লেগে তা ফিরে আসে। ফিরতি বলে বক্সে দাঁড়ানো শামসুন্নাহার টোকা দিয়ে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন (১-০)। গোল আনন্দে ভাসেন গ্যালারিতে উপস্থিত প্রায় দশ হাজার দর্শক। মাঠে উৎসবে মাতেন ফুটবলাররাও। এগিয়ে থেকে বিরতিতে গেলেও দ্বিতীয়ার্ধেও স্বাগতিকদের আক্রমণের ধার কমেনি। একই ছন্দে খেলতে থাকে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা। ম্যাচের ৪৬ মিনিটে মার্জিয়ার কর্ণারে আনুচিংয়ের হেড ক্রসপিস ঘেসে বাইরে চলে যায়। এই অর্ধেও যেন আক্রমনের ঝাপি খুলে বসে স্বাগতিক দল। তাদের আক্রমণ ঠেকাতে ব্যতিব্যস্ত দেখা যায় ভারতের ডিফেন্ডারদের। ৬০ মিনিটে সহজমতম আরেকটি গোলের সুযোগ নষ্ট করে বাংলাদেশ। এসময় আনুচিংয়ের থ্রু ধরে দু’ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন তহুরা। এগিয়ে আসা গোলরক্ষক মনিকা দেবীকে কাটালেও গোল করতে পারেননি তিনি। এক গোলে পিছিয়ে পরা ভারতও গোল পরিশোধে মরিয়া হয়ে ওঠে। কিন্তু ডিফেন্ডার আনাই মোগেনি ও আঁখির বাধার কারণে গোলের দেখা পায়নি ভারত। ফলে শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জয়ের আনন্দে মাতে বাংলাদেশ কিশোরী দল।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে শিলিগুড়িতে সাফ টুর্নামেন্টের মূল আসরে এই ভারতের কাছে হেরেই শিরোপা জেতা হয়নি বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা দলের। এবার বড়দের সেই হারের প্রতিশোধ নিলো ছোটরা।
ম্যাচ শেষে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মারিয়া মান্ডা। মৃদুভাষী হলেও শিরোপা জয়ের পর বেশ উচ্ছ¡াস ঝরে পড়লো তার কন্ঠে। তিনি বলেন,‘বড় দিনের আগে শিরোপা জিতে খুব ভালো লাগছে। বড় দিনের উৎসবটা আনন্দমুখর হবে।’
ভারতকে দেশের মাটিতে হারিয়ে সাফ শিরোপা জিতে তৃপ্ত অনুর্ধ্ব-১৫ বাংলাদেশ দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। তার কথা,‘ বিজয়ের মাসে এমন জয় আমাদের মহিলা ফুটবলের জন্য বড় পাওয়া।’ চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফি অনেককে উৎসর্গ করেছেন স্বাগতিক অধিনায়ক ও কোচ। তারা বলেন,‘দেশ স্বাধীনের জন্য শহীদদের, ক্রীড়াপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের দলের প্রয়াত ফুটবলার সাবিনাকে এই ট্রফি উৎসর্গ করছি আমরা।’
টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন বাংলাদেশের আঁখি খাতুন। টুর্নামেন্ট সেরা হয়ে আঁখি বলেন,‘ সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়ে ভালো লাগছে। নিজে এই পুরস্কার না পেয়ে অন্য কেউ পেলেও কষ্ট পেতাম না। দল জিতছে এতেই খুশি।’ ভারতের কোচ ময়মল রকি বাংলাদেশ ধরকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তার কথা,‘টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ খুব ভালো খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তারা সব দিক থেকে ভালো দল। আমরা চেষ্টা করেছিলাম গোল শোধ করার জন্য। কিন্তু পারিনি। সেরাদের হাতে ট্রফি গেল।’
ম্যাচ সেরা হন শামসুন্নাহার। ফেয়ার প্লে-ট্রফি পায় বাংলাদেশ। চার গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরষ্কার পান ভারতের প্রিয়াংকা দেবি। ফাইনালে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের কোচ ও অধিনায়কের হাতে ট্রফি তুলে দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, এমপি। এসময় উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, এমপি, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ও সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের (সাফ) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সাফ সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলাল ও বাফুফের সিনিয়র সহ সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী ও হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সভাপতি একেএম নুরুল ফজল বুলবুল।
যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় বিজয়ী বাংলাদেশ দলের মেয়েদের জন্য তার মন্ত্রণালয় থেকে ৬ হাজার মার্কিন ডলার এবং দলের জন্য নৈশভোজের ঘোষণা দেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।