Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বেপরোয়া ছিনতাইকারী চক্র

সাখাওয়াত হোসেন : | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাজধানীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারী চক্র। সশস্ত্র ছিনতাইকারী চক্র ছিনতাই কাজে ব্যবহার করছে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল। এদের টার্গেট মহিলাদের ভ্যানেটিব্যাগ, হাতব্যাগ, স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল ফোনসেট। রাজধানীতে রয়েছে প্রায় ১৫০টি ছিনতাই স্পট। সম্প্রতি সময়ে কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা আতঙ্কিত করে তুলেছে নগরবাসীকে। গত ১৭ ডিসেম্বর ভোরের রাজধানীর দয়াগঞ্জ এলাকায় ছিনতাইকারীরা রিকশারোহী মা’য়ের ব্যাগ হেঁচকা টান দিলে মায়ের হাতে থাকা ৫ মাসের শিশু সন্তান আরাফাত পড়ে গিয়ে মারা যায়। গতকাল পর্যন্ত পুলিশ এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। গত বুধবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরার ১ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডে একটি পোশাক কারখানায় ৪০ লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছে। দুর্বৃত্তরা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে গাড়ি আটকে ওই টাকা নিয়ে যায়। এ সময় ওই প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তাসহ দুইজনকে বেদম মারধর করে দুর্বৃত্তরা। ডিবি পরিচয়দানকারী ওই দুর্বৃত্তদের কাছে রিভলবার, ওয়াকিটকি ও হাতকড়াসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি ছিল। প্রকাশ্য দিবালোকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে এই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার বা টাকা উদ্ধার করতে পারেনি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার এসআই জহিরুল ইসলাম গতরাতে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার বা টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি। তদন্ত চলছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দিন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের সমাজে মানুষের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। সামাজিক শৃঙ্খলা ও আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। কোন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর দ্রæত ওই ঘটনায় জড়িত অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হলে এ ধরনের অপরাধ কমবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া ও পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের ডিসি মো: মাসুদুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীতে ছিনতাই প্রতিরোধে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ছিনতাইসহ সব ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধেই সক্রিয় রয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের ধরলেও খুব সহজেই জামিন পেয়ে বের হয়ে আসে তারা। এ কারণেই সহজে ঠেকানো যাচ্ছে না ছিনতাই তৎপরতা। জামিনে বের হয়ে আবার একই কাজ শুরু করে। ছিনতাই প্রতিরোধে থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিকসহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে বেশিরভাগ ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগীরা বাড়তি ঝামেলা এড়াতে থানায় মামলা বা জিডি না করে হাসপাতালে বা ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েই বাড়ি ফিরে যান। এ কারণে ছিনতাইয়ের সঠিক পরিসংখ্যান থাকে না থানাগুলোতে। ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে গড়ে প্রতি মাসে কমপক্ষে ২৩টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেবলমাত্র ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছিনতাইয়ের শিকার ২৬২ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, রাজধানীর ১৫০টি স্পট আছে যেখানে বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এলাকাভিত্তিক বখাটেরা ছিনতাইয়ের গ্যাং পার্টি গড়ে তুলেছে। রাজধানীতে গত দুই মাসের অপরাধ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ছিনতাইকারীদের গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হয়েছে তিনজন, আহত অর্ধশতাধিক। মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে টানা পার্টির কবলে পড়ে গত ৫ ডিসেম্বর মারা যান জাতীয় হৃদেরাগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক ফরহাদ আলম। গত ২৯ নভেম্বর বিকেলে কর্মস্থল থেকে রিকশায় মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটির বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইকারীরা টান দিয়ে তার ব্যাগ নিয়ে যায়। এতে তিনি ছিটকে রাস্তায় পড়ে আহত হয়েছিলেন। এ ছাড়া গত ৮ অক্টোবর টিকাটুলীতে এক নারীকে ছিনতাইকারীদের কবল থেকে বাঁচাতে গিয়ে খুন হন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আবু তালহা খন্দকার। গ্রামের বাড়ি বগুড়া থেকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের তালতলার বাসায় ফিরছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী ইকবাল মাহমুদ। গত ৮ ডিসেম্বর ভোরে কল্যাণপুরে বাস থেকে নেমে রিকশায় যাওয়ার পথে শ্যামলীতে মোটরসাইকেলে আসা ছিনতাইকারীরা ছোঁ মেরে তার হাতব্যাগটি নিয়ে পালিয়ে যায়। ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, মামলা করতে পুলিশের কাছে গেলে নানা কথা শুনতে হবে এ কারণে আর অভিযোগ করিনি। স¤প্রতি কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন তরুণ মডেল আরমান হোসেন। শুটিং শেষ করে উত্তরা থেকে মোটরসাইকেলে রামপুরার বাসায় ফেরার পথে তিন ছিনতাইকারী পিস্তল ঠেকিয়ে আইফোন ও পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খিলক্ষেত থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে রাতে ও ভোরে প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ১০ ডিসেম্বর রাতে ওয়ারীতে শাহীদা নামের এক নারীর পায়ে গুলি করে টাকাসহ হাতব্যাগ ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। এর আগে মৌচাক এলাকায় রিকশায় যাওয়ার সময় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে আহত হন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মাহবুবুল হক। মৌচাক মোড় থেকে মগবাজার ওয়্যারলেস গেট পর্যন্ত রাস্তায় প্রতিদিনই ছিনতাই হচ্ছে। মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার নিয়ে ছিনতাইকারীরা সেখানে অপকর্ম করে। গত ১৯ নভেম্বর সকালে রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম দম্পতি। তারা কলেজ গেট থেকে রিকশায় আজিমপুরের বাসায় যাচ্ছিলেন। সাড়ে ৬টার দিকে তাদের বহনকারী রিকশাটি নিউ মার্কেট এলাকায় পৌঁছলে একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কার থেকে শফিকুল ইসলামের স্ত্রীর ব্যানিটি ব্যাগ টেনে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় শফিকুল একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নিউ মার্কেট থানায়। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত ওই ছিনতাইকারীদের ধরতে পারেনি পুলিশ। গাড়িটির কোনো সন্ধান মেলাতে পারেনি পুলিশ। রাজধানীতে এভাবে দেড় শতাধিক স্পট আছে যেখানে অহরহ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে ভয়ঙ্কর জোন হচ্ছে রাজধানীর শাপলাচত্বর থেকে টিকাটুলি মোড়, গোপীবাগের রাস্তা, মতিঝিল কালভার্ট রোড হয়ে আরামবাগ, মতিঝিল টিএন্ডটি কলোনির পাশের রাস্তা, পীরজঙ্গির মাজার, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের আশপাশের এলাকা, যাত্রাবাড়ী মোড়, জুরাইন রেলগেট থেকে পোস্তগোলা ব্রিজ, পুরনো পল্টন মোড়, কাকরাইল মোড় থেকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল মোড়, রাজারবাগ পূর্বপাশের মোড় থেকে শাহজাহানপুর রেললাইন, ফার্মগেট ওভারব্রিজ এলাকা, মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ মোড়, দোয়েল চত্বর থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রাস্তা, নিউ মার্কেটের দক্ষিণ দিকের রাস্তা, আজিমপুর মোড়, ধানমন্ডি ২ নম্বর রাস্তা এবং গাবতলী বেড়িবাঁধের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে নিয়মিত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে বলে অনেক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন।



 

Show all comments
  • Md.Afzal Hussain ২০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:৫৬ পিএম says : 0
    বাংলাদেশের ধৃত অপরাধীরা যদি অপরাধ না করার নিশ্চিত শিক্ষা প্রশিক্ষণ শিক্ষকের নিকট থেকে গ্র্রহণ করত বা করার সুযোগ সৃষ্টি করা হত, প্রত্যেক নাগরিকের জন্য নৈতিক অপরাধমুক্ত থাকার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে তদারকী প্রবর্তন করা হত; দেশে অপরাধীদের সংখ্যা হ্র্রাস পেত । অপরাধী ধরার ঔৎ পেতে থাকা সরকারের একটা বাহিনীকে যদি নাগরিককে শিক্ষা প্রশিক্ষণ দিত তদারকী করত তবে দেশে সুনাগরিক সৃষ্টি হত । আর এইশিক্ষা প্রশিক্ষণের ব্যয় বহনের ট্যাক্স জনগণের উপর আরোপ করত , মানবতা বিরুধী রাষ্ট্রবিরুধী নাগরিক সমাজে সৃষ্টি হত না । ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক মানব আবিস্কৃত শাষণ ব্যবস্থায় ব্যক্তি নিজের উদ্যোগে সুনাগরিক হবে আর সরকার জনগণের ট্যাক্সের টাকায় স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে রাখবে; জনগণকে প্রত্যক্ষভাবে সরকারী বাহিনী দ্বারা শিক্ষা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ না করে শুধু ভাযণ দিবে আর ধরপাকড় বাহিনীকে জনগণের টাকায় চাকুরী দিয়ে প্রত্যক্ষ শিক্ষা প্রশিক্ষণ দিয়ে অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত করবে এটা অযৌক্তিক প্রকৃতি বিরুধী । মানুষ সৃষ্টি করেই সরাসরী শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে ৷ অপরাধমুক্ত থাকার নির্দেশ দেয়া সত্বেও পাহারাদার না থাকায় মানুষের উপর জারীকৃত নির্দেশ কাযকরী হয় নাই ।বিতাড়িত শয়তান পাহারাদারের অনুপস্থিতিতে অপরাধ করতে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে সফল হয় । এই সত্য মানব জাতির নিকট মুসলমান জাতির মাধ্যামে অবগত করা সত্বেও মুসলমান শাসকরা নাগরিককে প্রত্যক্ষভাবে সরকারের তত্বাবধানে অপরাধমুক্ত থাকার শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও পাহারাদার নিযুক্ত না করে ধরে আর মারে ওজেলে ভরে রাখে ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ছিনতাই


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ