Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জমে উঠেছে শীতবস্ত্র বেচাকেনা

| প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সায়ীদ আবদুল মালিক : রাজধানীর ফুটপাতে চলছে শীতবস্ত্রের জমজমাট বেচা-কেনা। মধ্যবৃত্ত, নিম্ন মধ্যবৃত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষসহ প্রায় সকল শ্রেণীপেশার মানুষ এ বাজারগুলো থেকে শীতের কাপড় কেনাকাটা করছে। রাজধানীসহ সারাদেশে বইছে শীতের হিমেল হাওয়া। গ্রামের তুলনায় শহরে শীতের তীব্রতা কম। এরপরও সর্দি, কাশিসহ শীতকালীন নানা রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছেন রাজধানীবাসী। কিনছেন হালকা ও মাঝারি ধরনের শীতের গরম পোশাক। গতকাল শুক্রবার মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম, পুরানা পল্টন, জিপিও, গুলিস্তান, মালিবাগ, মৌচাক, এলিফেন্ট রোড, নিউমার্কেট, ফারমগেইট, মহাখালি, গুলশানসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের ফুটপাত ও হলিডে মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে শীতবস্ত্র বেচা-কেনার তীব্র ভিড়। মানুষকে ঈদ বাজারের মত আগ্রহ নিয়ে শীতের কাপড় কিনতে দেখা গেছে। ভিড়ের কারণে দরাদরি ও যাচাইবাচাই করে কেনার সুযোগ পাচ্ছে না ক্রেতারা। শুধু কাপড়টি পছন্দ হলেই একদাম একরেটে কিনে অন্যকে কেনার সুযোগ করে দিতে হচ্ছে।
মতিঝিল ফুটপাতের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রহমান মিয়াজি বলেন, আমরা বছরে দুই ঈদ ছাড়া এই শীতে একটু বাড়তি ব্যবসা কারার সুযোগ পেয়ে থাকি। তবে সব বছর আবার এ সুযোগ পাওয়া যায় না বলে তিনি জানান। রহমান মিয়াজি বলেন, গত বছরও শীতবস্ত্রের মার্কেট জমজমাট ছিল। তবে গত প্রায় এক বছর ধরে সিটি কর্পোরেনের ধারাবাহিক উচ্ছেদের কারণে আমাদের ব্যবসার বারটা বেজে গেছে। তিনি বলেন, গত কয়েক মাস ধরে বসে বসে পুঁজি ভেঙ্গে খাচ্ছি। এবছর আমরা যারা ব্যাবসার জন্য পুঁজি খাটিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছি তাদের অনেক বেশি লস হয়ে গেছে। তিনি বলেন, যদি কটাদিন সুযোগ পাওয়া যায় তাহলে শীতের কাপড় বেচা-কেনা লস কিছুটা কাটিয়ে উঠা যাবে বলে তিনি জানান। দনিয়ার বাসিন্দা খাদিজা বেগম বলেন, শীতের তীব্রতা আনেক বেড়ে গেছে তাই পুরানো শীতের কাপড় দিয়ে আর কাজ হচ্ছে না। তিনি তার ছেলে অনিক ও মেয়ে সৃষ্টিকে নিয়ে শীতের কাপড় কিনতে এসেছেন, গুলিস্তান ফুটপাতে। তিনি বলেন, যেভাবে শীতের কাপড় বেচা-কেনা হচ্ছে এভাবে ঈদ বাজারেও বেচা-কেনা হয় না। মানুষের ভিড়ের কারণে দোকানেই ঢোকা যাচ্ছে না। দরদাম করে কেনাতো পরের কথা।
সরেজমিন মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, শীত বস্ত্রের মধ্যে বেশি বেচা-বিক্রি হচ্ছে- ছোট বাচ্চা ও বয়স্কদের কাপড়। মাথার টুপি, পায়ের মোজা, হাত মোজা, মাপলা, স্যুায়েটার, জাম্পার, পুলহাতা গেঞ্জির দোকানেই বেশি ভিড় দেখা গেছে। বায়তুল মোকাররম, নিউমার্কেট ও ফারমগেইটের শীত বস্ত্রের মার্কেটের কম্বল দোকানগুলোতেও তীব্র ভিড় দেখা গেছে। শীত বস্ত্রের দোকানে ক্রেতার ভিড় বেড়ে যাওয়ায় সুযোগ বুঝে বিক্রেতারাও অতিরিক্ত দাম নিচ্ছে বলে অভিযোগ করছে ক্রিতারা। মোহাম্মদপুর ঢাকা হাউজিং থেকে ফারমগেইট ফুটপাতে শীতবস্ত্র কিনতে আসা মালেকা বেগমের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, বচ্চাদের শীতের কাপড় আগে যেটা ১০০ থেকে ১২০ টাকায় কেনা যেত এখন সেটা কিনতে হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে। তিনি বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিটি আইটেমেই ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। ছুটির দিন হওয়ায় নিউ মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, গাওসিয়া মার্কেটসহ আশপাশের পোশাকের দোকানে অনেকেই কিনছেন শীতের পোশাক। বিক্রেতারা বসেছেন গরম কাপড়ের পসরা সাজিয়ে। শীতের পোশাক কিনছেন এলিফেন্ট রোডের বাসিন্দা শাহানাজ পারভীন। তিনি পরিবারের জন্য শীতের চাদর ও সোয়েটার কিনেছেন। শাহানাজ বলেন, এখন তো আর হাড় কাঁপানো শীত নেই। তবে রাতের বেলায় কিছুটা শীত পড়ছে। আর এতেই সর্দি, কাশি হচ্ছে শিশুদের। তাই শীতের হালকা গরম কাপড় কিনতে হচ্ছে। প্রাইভেটকার থামিয়ে নিউ মার্কেটের ২ নাম্বার গেটের মুখ থেকে সোয়েটার কিনছেন রাহেলা বেগম। তিনি পরখ করে দেখে নিচ্ছেন কাপড় মোটা না চিকন। দোকানিকে বলতে শোনা গেল একটু মোটা সোয়েটার দেন। দোকানিও সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সোয়েটার বের করে দিলেন।
কথা বলে জানা গেল রাহেলা মোহাম্মদপুর থেকে এসেছেন। বললেন, শীতের মাত্রা হালকা হলেও সাধারণ কাপড়ে শীত আটকানো যাচ্ছে না। তাই নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য শীতের কাপড় কিনতে নিউ মার্কেট এসেছি। ছেলেদের শীতের পোশাক মানেই হলো ফ্যাশন-জানিয়ে ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, শীত যদিও নেই তারপরও হালকা বাতাসে শরীরে কাঁপুনি লাগে। তার চেয়ে বড় ব্যাপার হলো ফ্যাশন। টুপিওয়ালা সোয়েটার জিন্সের সঙ্গে পরতে অনেকেরই ভালো লাগে। নিউ মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, আমরা কমদাম, বেশিদাম সব ধরনের পোশাকই দোকানে তুলি। যে, যেটা পছন্দ করে। শীতের পোশাক বিক্রি তেমন শুরু হয়নি। তবে শীত একটু বাড়তে শুরু করলে আরও বেশি বেচাবিক্রি হবে।
এদিকে ইসলামপুর, বঙ্গবাজারের পাইকারি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শীত কাপড়ের পাইকারি বাজারে ব্যস্ততা বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শীতের পোশাক কিনতে আসতে শুরু করেছে পাইকাররা। মৌসুমের শুরুতেই এবার বিপণী বিতানগুলোতে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে সোয়েটার, জ্যাকেট, কোর্ট, টুপিসহ বাচ্চাদের নানা রংয়ের ও ডিজাইনের শীতের পোশাক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শীতবস্ত্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ