বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
রেজাউল করিম রাজু : শীত মানেই পিঠা পুলি পায়েসের আয়োজন। অগ্রহায়নে নতুন ধানের সোঁদাগন্ধ। এর সাথে তালমিলিয়ে আসে খেজুর আর আখের গুড়। নতুন ধানের চাল আর গুড়ের মিশেলে চলে পিঠা পায়েসের আনন্দ। প্রকৃতিক দূর্যোগ ধানের ফলন কম বা বেশী নিয়ে মন খারাপ বা ভাল যাই হোক না কেন শীত মওসুমটাকে সবাই উপভোগ করে সাধ আর সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে বেশ ভালভাবে। সকালের ধোয়া ওঠা ভাপা পিঠে আর সন্ধেয় ভাজা ও রসালো পিঠের আয়োজন চলে ঘরে ঘরে। শীত আসবে নতুন ধান উঠবে সাথে গুড়। পিঠে উৎসব হবে না তাকি হয়। এসময় মেয়ে জামাইকে নাইওরে নিয়ে আসা হয়। মেয়ের বাড়ি থেকে শহুরে বেহায় বাড়িতে নতুন ধানের চালের আটা আর গুড় পাঠানো হয়। নইলে যে মেয়ের মান যাবে। এসব পেয়ে বউকে ধন্যি ধন্যি করে অভিনন্দন জানানো হবে। আবার ব্যতিক্রম না পেলে ক্ষেত্র বিশেষে শাশুড়ি ননদের খোটা শুনতে হবে। এমনটি চলে আসছে আবহমানকাল ধরেই। ডিসেম্বরের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। অনেকে শহর থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে চলে আসে পিঠা পায়েসের স্বাদ নেবার জন্য গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের কাছে। শুধু কি পিঠা পায়েস। এখনতো শীতকালীন শাক স্বব্জীর ভর মওসুম। মাঠে মাঠে দুধ সাদা ফুলকপি, ফুটবলের মত বাধাকপি, সীম, মুলা, গাজর, টমেটোর সমারোহ। ক্ষেত থেকে তুলে আনা একেবারে টাটকা শাকস্বব্জীর স্বাদই যে অন্য রকম। তাছাড়া এবার বান বর্ষনের কারনে নদী দিঘী খাল বিল পুকুর খামার সব একাকার হয়ে গিয়েছিল। এখন পানি কমছে। খাল বিলে মিলছে হরেক রকমের মাছ। এসব মাছের স্বাদও কম নয়। সব মিলিয়ে রাজশাহী অঞ্চলে বইছে ভিন্ন আবহ। বরেন্দ্র অঞ্চল ঘোরার সময় দেখা যায় আমন কাটা শেষ। এখন চলছে ঝাড়াই মাড়াই। সনাতন পদ্ধতির সাথে যোগ হয়েছে যান্ত্রিকতা। গেরস্ত বাড়ির খৈলান গুলো সকাল সন্ধ্যা ব্যাস্ত। ধান সেদ্ধ করার সোঁদাগন্ধ চারিদিকে। ঢেকিতে চাকিতে চলছে চাল ধান চাল পেশাই। বিকেল হলেই গাছিরা রসের হাড়ি নিয়ে ছুটছেন খেজুর গাছের দিকে। এক গাছ লাগিয়ে আবার অন্য গাছে। ভোর বেলায় মাটির কলস ভর্তি খেজুরের রস নিয়ে মজুদ করা। কাঁচা মিষ্টি খেজুর রস মুড়ির সাথে ভালই জমছে। ফেরী করে বিক্রি হচ্ছে প্রতি গøাস তিন টাকা। বেশীর ভাগ রসদিয়ে তৈরী হচ্ছে জিভে পানি আনা খেজুর গুড়। গাছিরা রস সংগ্রহ করার পর লম্বা চুলায় প্লেনসীট দিয়ে তৈরী লম্বা কড়াইয়ে জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরীতে ব্যাস্ত। শীতের তীব্রতা শহরের চেয়ে গাঁও গেরামে একটু বেশী। তাই একটু উত্তাপ নিতে অনেকেই ভীড় করেন গুড় তৈরীর চুলার পাশে। তুহিন নামে এক গুড় তৈরী কারক জানালেন একটা খেজুর গাছের রসদিয়ে গড়ে প্রতিদিন আধা কেজি গুড় তৈরী করা যায়। এতে বাড়ির বউ ঝিরা অংশ নেয়। তাদের ব্যাস্ততা নজর এড়ায়না। খেজুর গুড়ের পাশপাশি তৈরী হচ্ছে আখের গুড়ও। গাও গেরামে এখনও ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের মুখে ধাঁধায় প্রশ্ন করা হয় বলতো আল্লাহর কি কুদরত লাঠি ভর সরবত। জিনিসটা কি ? এর সহজ উত্তর হলো আখ। এখন সেই আখের মওসুম। ক্র্যাসার পাওয়ার ক্র্যাসারে করে আখ থেকে রস নিয়ে একই পদ্ধতিতে জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরী করা হচ্ছে। প্রতিদিন রাজশাহী অঞ্চলে বিশেষ করে রাজশাহীর দূর্গাপুর, পবা, গোদাগাড়ী, চারঘাট, বাঘা এলাকায় খেজুর আর আখের গুড় তৈরী বেশী হয়। এখানকার গুড় দেশ বিদেশেও যায়। এক সময় খুব সুনাম থাকলেও এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর কারনে গুড় তৈরীতে ভেজাল ঢুকেছে। গুড়ের চেয়ে চিনির দাম কম হওয়ায় খেজুর ও আখের রসের সাথে চিনি মিশিয়ে তৈরী হচ্ছে গুড়। সাধারনত গুড়ের রং গাঢ় মেরুন রংয়ের হয়। কিন্তু সাদা রংয়ের চাহিদা সর্বত্র। তাই গুড় ফর্সা করতে ব্যবহার করা হচ্ছে নানা ধরনের দ্রব্য। যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। গুড়ের এখন আসল নকল চেনা দায় হয়ে পড়েছে। যারা ভোজন রসিক তারা নিজেদের ব্যবহার ও স্বজনদের জন্য গুড় তৈরী কারকদের কাছে স্পেশাল অর্ডার দিয়ে খাটি মানের গুড় তৈরী করিয়ে নেন। স্বাদে ভিন্নতা আনার জন্য আদার রসও দেয়া হয়। রাজশাহীর বড় গুড়ের বাজার বানেশ্বর হাট আর দূর্গাপুরের আমগাছি বাজার। এখান থেকে প্রতিদিন ট্রাক বোঝাই হয়ে গুড় যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। শুরুতে উৎপাদকরা দাম পাচ্ছেন ৭০/৮০ টাকা কেজি। খুচরোয় একশো। তবে নি¤œ মানের দাম কিছুটা কম। বাজারে চিনির দাম পঞ্চান্ন টাকা কেজি। গাও গেরামে নবান্ন অর্থাৎ পিঠা পায়েসের চলছে শিক্ষানগরী রাজশাহীতেও। এখানে বিভিন্ন স্থান থেকে লেখাপড়া করতে আসে লাখ দেড়েক শিক্ষার্থী। এরা মূলত গ্রামের ছেলে মেয়ে। লেখা পড়ার ব্যস্ততার কারনে মা দাদা নানীদের হাতের পিঠা পায়েসের স্বাদ খুব একটা নেয়া হয়না। ওরা শহরে এসে ফাষ্ট ফুডে আসক্ত হলেও শীত এলে মনটা যেন কেমন কেমন করে। তাদের চাহিদার দিকে খেয়াল রেখে নগরজুড়ে সকাল সন্ধ্যায় বসছে ভাপা পিঠার আয়োজন। জনবহুল মোড়ে মোড়ে ভ্যান গাড়িতে করে তৈরী করা হচ্ছে গরম গরম ভাপা পিঠে। অনেক রাত অবধি ভীড় থাকছে এদের ঘিরে। অনেকে বলেন যদিও এসব পিঠেতে গাঁয়ের স্বাদ নেই। তবুও দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।