Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আনোয়ারায় গড়ে উঠেছে বিষমুক্ত শুঁটকিপল্লী রপ্তানিতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা

| প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জাহেদুল হক, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) থেকে : চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপক‚লের গহিরা চরে বিষমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন শুঁটকিপল্লী গড়ে উঠেছে। এ পল্লীকে ঘিরে গ্রামের দরিদ্র মহিলারা খুঁজে পেয়েছেন কর্মসংস্থান। সংসারের কাজের পাশাপাশি বাড়তি টাকা আয়ের সুযোগ হয়েছে তাদের। ইতোমধ্যে পুরোদমে শুরু হয়েছে শুঁটকি তৈরির কাজ। শুঁটকি তৈরিতে রাত-দিন ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার শ্রমিকরা। এখানে উৎপাদিত শুঁটকি দেশের বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি বিদেশেও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
জানা যায়,আশির দশকের শুরু থেকে আনোয়ারা উপক‚লে বিভিন্ন এলাকায় শুঁটকি উৎপাদন শুরু হয়। তবে মাঝখানে টানা কয়েক বছর নানা কারণে শুঁটকি উৎপাদনে ভাটা পড়ে। গত কয়েক বছর ধরে আবারও শুঁটকি উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। সেই থেকে এই এলাকার উৎপাদিত শুঁটকি দেশ-বিদেশে ব্যাপক পরিচিতি পায়। এক্ষেত্রে গহিরা বেড়িবাঁধ সড়ক মেরামত,অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করা হলে পরিবেশবান্ধব এ শুঁটকিপল্লী সরকারি রাজস্ব খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে। এছাড়া শুঁটকিশিল্পে ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা গেলে রপ্তানিতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিপুলসংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় উদ্যোক্তা শাহজাহান জানান, নিজস্ব অর্থায়নে গহিরার চরে শুঁটকি উৎপাদনের জন্য একটি মহাল তৈরি করেছেন। প্রতিদিন শত শত কেজি সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি উৎপাদিত হচ্ছে ওই মহালে। কোন ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত হচ্ছে এসব শুঁটকি। সমুদ্রের তীরবর্তী হওয়ায় এখানে রোদের প্রচন্ড তাপ রয়েছে। এছাড়া বায়ু চলাচলেও নেই কোন প্রতিবন্ধকতা। তাই রোদ ও বাতাসের সংমিশ্রণে দ্রæত কাঁচা মাছ শুঁটকি হিসেবে রূপান্তরিত হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সাগরে পাতানো ভাসান ও টং জালে আহরিত সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রজাতির মাছ জেলেদের নৌকা থেকে উঠানো হচ্ছে। সেখানে জেলেদের কাছ থেকে পছন্দের মাছগুলো কিনে মহালে নিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এসব মাছ প্রথমে মহালে সংরক্ষণ করা হয়। পরে পরিশুদ্ধ করার পর এসব কাঁচা মাছে আংশিক লবণ মেশানো হয়। তারপর গিট তৈরি করে এগুলো শুকানোর জন্য ওই মহালের একাধিক মাচায় টাঙানো হয়। চিংড়ি ও ফাইস্যা জাতীয় মাছগুলো বিছানো পলিথিনের চটে ছিটিয়ে শুকানো হয়। উৎপাদিত শুঁটকিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে লইট্যা, ছুরি, ফাইস্যা, চইক্যা, পোপা ও চিংড়িসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ।
এখানকার উৎপাদিত শুঁটকি স্বাদে ও মানে প্রসিদ্ধ হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যা স্থানীয় খুচরা বাজারে প্রতি কেজি লইট্যা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, ফাইস্যা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা,ছুরি ৭০০ থেকে ৯৫০ টাকা,বড় চিংড়ি (চাগাইছা) ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শুঁটকি মহালের মাছের গুড়ি পোল্ট্রি ফার্ম ও ফিস ফিডের জন্য সরবরাহ হয়ে থাকে।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ হুমায়ুন মোরশেদ ইনকিলাবকে বলেন,আনোয়ারা উপক‚লে প্রায় ৩০টি মহালে প্রচলিত নিয়মে শুঁটকি উৎপাদন করা হচ্ছে। বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনের ক্ষেত্রে জেলেদের সচেতনতামুলক পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ডিডিটি পাউডার বা কীটনাশক না মেশালে শুঁটকির প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায়।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আনোয়ারা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ