পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাত তখন সাড়ে ৮টা। যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়ায় বাস থেকে নেমে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে নিচের রাস্তায় নামছিলেন বেসরকারী কোম্পানীর চাকরিজীবী ফারুক। হঠাৎ পেছন থেকে একজন তার কানে সজোড়ে থাপ্পড় মারে। হাত থেকে মোবাইল ফোনটি পড়ে যায়। থাপ্পড়ের আঘাতে নিমিষেই চোখে অন্ধকার দেখতে থাকেন। কিছু বুঝে ওঠার আগে সামনে এসে দুই যুবক মানিবাগ বের করতে বলে। একজন জোর করে প্যান্টের পেছনের পকেটে হাত দিয়ে মানিব্যাগ বের করে নেয়। এতোকিছু ঘটে মাত্র দেড় থেকে দুই মিনিটের মধ্যে। যুবকরা হেঁটে মহাসড়কের ওপাড়ে চলে যায়। আতঙ্কিত ফারুক বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর পেছনে তাকিয়ে দেখেন লোকজন স্বাভাবিক ভঙ্গিতে চলাফেরা করছে। কি হয়ে গেল বুঝে উঠতে বেশ সময় লেগে যায়। শনিরআখড়া বাস সস্ট্যান্ডের উভয় পাশে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর এভাবেই নতুন কৌশলে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। বাস স্ট্যান্ডের আশপাশের দোকানদাররা জানান, কয়েকটি চক্র ভোরে এবং সন্ধ্যার পর ছিনতাই করেই যাচ্ছে। এদেরমধ্যে তিন চারজনের একাধিক গ্রæপ খুবই ভয়ঙ্কর। তারা পথচারী কাউকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে দেখতে পেছন থেকে সজোড়ে থাপ্পড় মেরে প্রথমে দিশেহারা করে ফেলে। পরে মোবাইল ফোনসহ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। শুধু শনিরআখড়ায় নয় গোটা রাজধানীতেই ছিনতাই বেড়ে গেছে। একই সাথে বেড়েছে চুরিও। চোরের অত্যাচারে অনেকেই রাতে ঘুমাতে পারে না। ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় জনমনে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণের পরও এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ভাবিয়ে তুলেছে। গত ৮ অক্টোবর ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ওয়ারীর কে এম দাস লেনে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু তালহা। এর আগে ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে একই এলাকায় ছিনতাই করতে গিয়ে এক নাদিম ছিনতাইকারী ধরা পড়ে। ধরা পরার পর জনতা গণধোলাই দিলে তার মৃত্যু হয়। তালহার মৃত্যুর পর ওয়ারীর টিকাটুলি এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করায় ছিনতাইয়ের ঘটনা আগের তুলনায় কমেছে বলে এলাকাবাসী জানায়। ডিএমপি সূত্র জানায়, গত বছর পুলিশ নগরীর ১৪১ স্পটকে ছিনতাই ও অপরাধপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। বর্তমানে এই স্পটের সংখ্যা আরও বেড়ে কমপক্ষে ১৫১টি হয়েছে বলে গোযেন্দা সূত্রে জানা গেছে। গোয়েন্দা সূত্রে রাজধানীর অপরাধপ্রবণ ১৫১টি স্পটের নাম জানা গেছে। এসব স্পটের বাইরেও প্রতিনিয়ত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। গোয়েন্দারা যে সব স্পটকে অপরাধপ্রবণ বলে চিহ্নিত করেছে সেগুলো হলো, নিউ ইস্কাটন রোড, ইস্কাটন গার্ডেন রোড, দিলু রোড, কাকরাইল মোড়, মৎস্য ভবন এলাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দোয়েল চত্বর ও কাঁটাবন। দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, বলাকা চত্বর, দৈনিক বাংলা মোড়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এলাকা, কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকা, ফকিরাপুল, কমলাপুর রেলওয়ে হাসপাতাল রোড, পীরজঙ্গি মাজার, শান্তিনগর মোড়, নটর ডেম কলেজ গেট, ফকিরাপুল গরম পানির গলি, রাজারবাগ টেলিকম ভবনের সামনের রাস্তা, ইত্তেফাক মোড়, নয়াপল্টন ভাসানী গলি, পুরানা পল্টনের মল্লিক প্লাজার সামনে ও আরামবাগ। অভিজাত এলাকা উত্তরার অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলো হলো, ১১ ও ১৩ নম্বর সেক্টরের কয়েকটি সড়ক, আবদুল্লাহপুর, হাউসবিল্ডিং, জসীমউদ্দীন রোড, বিমানবন্দর গোলচত্বর ও রেলস্টেশন এলাকা। এছাড়াও খিলগাঁও, রামপুরা ও বাড্ডা থানা এলাকার মধ্যে রয়েছে গোড়ান, মালিবাগ, চৌধুরীপাড়া, খিলগাঁও ওভারব্রিজ, পল্লীমা সংসদ এলাকা, ভূঁইয়াপাড়া বালুর মাঠ, রামপুরা ব্রিজ, টিভি রোড, মেরুল বাড্ডা বাজার, উত্তর বাড্ডা থানা রোড, দক্ষিণ বাড্ডা, কুড়িল বিশ্বরোড, আফতাবনগর লোহার ব্রিজ, মধ্য বাড্ডা ব্যাপারী গলি, বাজার গলি, পূর্ব বাড্ডা কবরস্থান রোড ও লিঙ্ক রোড। যাত্রাবাড়ী-কদমতলী-শ্যামপুর থানা এলাকার মধ্যে রয়েছে, যাত্রাবাড়ীর বিবির বাগিচা, কুতুবখালী, উত্তর যাত্রাবাড়ীর কলাপট্টি, দয়াগঞ্জ মোড়, কাজলার পাড়, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, জনপদ সড়ক, ধলপুর সিটিপল্লী, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর কবরস্থান রোড, যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তের আশপাশে, মানিকনগর, মীর হাজীরবাগ ঘুণ্টিঘর, কদমতলী থানার জুরাইন বালুর মাঠ, কুদার বাজার, পাটেরবাগ, মেডিকে েেরাড, কদমতলী ওয়াসা রোড, নামা শ্যামপুর, শনিরআখড়া বাস স্ট্যান্ড, দনিয়া কলেজের সামনের রাস্তা, গোন্দিপুর বাজার গলি। গুলশান-বনানী থানা এলাকার মধ্যে রয়েছে, গুলশান লেকপাড়, নিকেতন, শুটিং ক্লাবের সামনে, কাকলী মোড়, বনানী কাঁচাবাজার রোড, কড়াইল বস্তি, বনানী ফ্লাইওভার সড়ক, সৈনিক ক্লাব ও চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকা। ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর থানা এলাকার মধ্যে রয়েছে, ধানমন্ডির আট নম্বর ব্রিজ, জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড, কলাবাগান খেলার মাঠ, সার্কুলার রোড (ভূতের গলি), মিরপুর সড়ক, মোহাম্মদপুরের আসাদ এভিনিউ, আওরঙ্গজেব রোড, কাঁটাসুর, বাঁশবাড়ি, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, বসিলা রোড, শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু (বসিলা), ঢাকা রেসিডেনসিয়াল কলেজ এলাকা, আদাবর ১৪ নম্বর সড়ক, বায়তুল আমান হাউজিং, রিং রোড ও হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ। তেজগাঁও থানা এলাকার মধ্যে রয়েছে, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড, মহাখালী কাঁচাবাজারের সামনে, তিব্বত মোড়, উত্তর বেগুনবাড়ী, হাতিরঝিল, মগবাজার মোড়, মালিবাগ সুপার মার্কেটের সামনে, কাওরান বাজার, গ্রীনরোড, ইন্দিরা রোড সংলগ্ন টিঅ্যান্ডটি কার্যালয়ের পেছনের গলি। মিরপুর ও আগারগাঁও থানা এলাকায়, মিরপুর বেড়িবাঁধের শাহ আলী মোড় থেকে ধউর, মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বর, মিরপুর-১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ড, দক্ষিণ মণিপুর, বাউনিয়া বাঁধ, বিহারি কলোনি, আগারগাঁও মোড়, আইডিবি ভবনের সামনে, কল্যাণপুর হাউজিং এস্টেটের পাশের সড়ক, শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রের সামনের সড়ক, আগারগাঁও ক্রসিং, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, দারুস সালাম থানার মাজার রোড,আমিনবাজার ব্রিজের সামনের রাস্তা। পুরান ঢাকায় অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে, চানখাঁরপুল, তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার, নিমতলী, সদরঘাট, বাবুবাজার, কাজী রিয়াজ উদ্দিন রোড, ধোলাইখাল, জুরাইন নতুন রাস্তা, মীরহাজিরবাগ, শহীদনগর ও কামরাঙ্গীরচর। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, অপরাধপ্রবণ এসব এলাকায় ভোরে এবং রাতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটে। ভোরে প্রাইভেটকারযোগে ছিনতাইকারীরা এসে রিকশারোহী বা পথচারীদের হাতের ব্যাগ ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এর বাইরে ছুরি, চাকু ও আগ্নেয়স্ত্র দেখিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, অপরাধপ্রবণ এসব এলাকা পুলিশই চিহ্নিত করলেও ঘটনার সময় পুলিশ ধারেকাছেও থাকে না। এ প্রসঙ্গে ডিএমপি মিডিয়া সেলের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, রাজধানীর ৪৯টি থানা এলাকায় অপরাধপ্রবণ বেশ কিছু এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সব স্পটে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।