Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুখরিত পর্যটন স্পট

নতুন সাজে প্রকৃতির রানী রাঙামাটি

সৈয়দ মাহাবুব আহামদ, স্টাফ রিপোর্টার রাঙামাটি | প্রকাশের সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০২ এএম

নতুন সাজে সজ্জিত প্রকৃতির রাণী রাঙামাটির পর্যটন স্পটগুলো। দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত এখন। সবুজ-শ্যামল প্রকৃতি ঘেরা রাঙামাটির মোহনীয় সৌন্দর্য সাধারণত শীতল আবহাওয়ায় আরো সুন্দর হয়ে ওঠে। মাঝে কয়েকদিন শীতের প্রকোপ কিছুটা বাড়তির দিকে থাকলেও হীমেল ভাব কমতে থাকায় পর্যটকরা দল বেঁধে ছুটে আসছেন প্রকৃতির কাছে। তাদের বক্তব্য, এটাই বেড়ানোর মোক্ষম সময়। রাঙামাটির হোটেল মোটেলগুলো এখন পরিপূর্ণ। পর্যটকদের বাড়তি অনুসঙ্গ হিসেবে যোগ হয়েছে পাহাড়ের রসালো কমলাসহ স্থানীয় নানা ফল।
করোনার প্রভাবে চারমাস পর্যটন স্পটগুলো বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। এই অবকাশে সবগুলো পর্যটন স্পট নতুন করে সাজিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নবসাজে সজ্জিত ঝকঝকে পর্যটন স্পটগুলোতে ঘুরে দারুনভাবে আনন্দিত পর্যটকরাও। বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ থাকায় পারিবারিক ট্যুরের ধুম পড়েছে।

বেড়াতে আসা পর্যটকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সারাদিনের কর্মব্যস্ততার মাঝেও মানুষ প্রকৃতির কোলে হারিয়ে গিয়ে একটুখানি প্রাণভরে শ্বাস নিতে চায়। কিছুক্ষণের জন্য কাজের কথা ভুলে স্বস্তির নিশ্বাস নিতে চায়। নিজের যেমন রিলাক্স প্রয়োজন, তেমনি পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে একটু ঘুরে আসা অত্যন্ত প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে প্রকৃতির রাণী রাঙামাটিই তাদের কাছে আদর্শ স্থান। হ্রদ পাহাড় ঘেরা রাঙামাটিতে প্রকৃতির গন্ধ, পাখির কলকাকলী এবং সাগর বেলার পরিবেশ একসাথে বিদ্যমান। পলওয়েল ন্যাচারাল পার্ক -এর কাঠের তাকিয়াগুলোতে শুয়ে বা হেলান দিয়ে ছবি তুললে মনে হয় আপনি কোনো সমুদ্র সৈকতে ছবি তুলেছেন।

সবুজ চাদর পরে দাঁড়িয়ে থাকা নিশ্চল পাহাড়, পাহাড়ের পাদদেশে বয়ে চলা প্রাকৃতিক ছড়া, সর্পিল এঁকে বেঁকে দূর পাহাড়ের বাঁকে হারিয়ে যাওয়া মেঠোপথ, পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝর্ণার স্বচ্ছ জল, কর্ণফুলীর স্রোত, কাপ্তাই হ্রদের শান্তজলে স্রোতহীন ছোট ছোট ঢেউ। পাহাড়ের কঠিন বুকে ঘাম ঝরিয়ে গড়ে তোলা গ্রাম্য নারীর জুম। জুমের বিচিত্র সবজি বাগান আর রবি শস্যে সোনালী দোল। বুনো ফুলের মন মাতানো সৌরভ, অতিথি পাখির কিচির-মিচির ডাক, বানর ডাহুক আর হরিণের দুর্লভ মিতালী এমন বর্ণনাতীত বিচিত্র সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পার্বত্য রাঙামাটি।

ছবির মতো সবুজে ঘেরা পাহাড় আর কাপ্তাই হ্রদের বিশাল স্থির নীল পানি রাশি রাঙামাটিকে বাংলার সৌন্দর্যের স্বর্গে পরিণত করেছে। নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের অপার আঁধার পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। রাঙামাটিতে সম্প্রতি চালু করা হয়েছে ওয়াটার বাস এটা পর্যটকদের কাছে বাসতি আকর্ষণ। এদিকে সেনাবাহিনী পরিকল্পনায় গড়ে ওঠা আরণ্যক কেন্দ্রের ওয়াটার পার্ক এ একবার যে অবগাহন করেছে তার হৃদয় মুকুরে স্মৃতি বারবার আবর্তিত হয়। এখন রাঙামাটি শহরে পাওয়া যাচ্ছে স্থানীয় পাহাড়িদের পরম যত্মে চাষ করা বড়বড় রসালো কমলা। দাম কিছুটা চড়া হলেও কমলা বাজার ওঠার সাথে সাথেই ফুরিয়ে যাচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে পাহাড়ি মাল্টা, মিষ্টি পেয়ারা, আনারস এবং টপটপা আমলকি। পাহাড়ি নারীদের হাতে বোনা বস্ত্র সম্ভার তো আছেই। এই বস্ত্র সম্ভারে যুক্ত হয়েছে শীতকালীন নানা পোশাক।

সবুজ-শ্যামল চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক দৃশ্য সম্বলিত এই অপরূপ রাঙামাটিতে যাদের আসার সুযোগ হয়নি তারা হয়তো দেশের প্রকৃত সৌন্দর্য কখনই চিত্রিত করতে পারবেন না। লীলাময়ী প্রকৃতি যেন আপন হাতে এ অঞ্চলে তার সৌন্দর্য সুধা ঢেলে দিয়েছেন।

সবুজের শেষ প্রান্তে মেঘ বালিকার মিতালি, উঁচু-নিচু, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ। আর তুলির আঁচড়ের মতো মাঝে মাঝে সবুজের বুক চিরে বয়ে যাওয়া কাচালং নদী আর পাহাড়ি ছড়া। যে কোনো নিরস মনকেও ভাবুক আর উদাস বানিয়ে দেয় কিছুক্ষণের জন্য হলেও। নগর জীবনের আয়েসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত আক্ষরিক অর্থে সভ্য মানুষ এই রূপ ভুলতেই পারেন না। এই শহরের প্রবেশ দ্বারে রয়েছে সাপছড়ির ফুরোমোন পাহাড়, আর শেষ প্রান্তে ডিসি বাংলো।
বেড়াতে বেড়াতে খানিকটা গলা ভিজিয়ে নেয়া বা কিছু চিবানোর ইচ্ছা থাকলে তাও পুরণ করে নিতে পারবেন অনায়াসেই। এখানে ছোটখাট রেস্টুরেন্ট, কুলিং কর্ণার এবং ছোট্ট একটি দোকানও রয়েছে। জেলা পুলিশের ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা পলওয়েল ন্যাচারাল পার্কটি যে কোনো বয়সের নারী পুরুষ কিংবা শিশুদের বেড়াবার জন্য একটি আদর্শ স্থান। সবদিক থেকে নিরাপদও বটে। এই স্থানটির সবচেয়ে উল্লেখ যোগ্য দিক হলো সমুদ্র সৈকতের স্বাদ নেয়ার সুযোগ। এখানে আপনি নিশ্চিন্তে হৃদের জলে পা ভিজিয়ে নিতে পারবেন। পলওয়েল ন্যাচারাল পার্ক এর পাশেই আছে লাভস্পট। বিশ্বের অনেক দেশেই পর্যটন এলাকগুলোতে ভালোবাসার নিদর্শন প্রকাশ করার জন্য এমনি লাভস্পট চিহ্নিত করা আছে। এই পার্কে প্রবেশের জন্য অবশ্য বর্তমানে টিকেট কাটতে হয়। জনপ্রতি ১৫ টাকা।

প্রকৃতির রাণী রাঙামাটিতে ভ্রমণ করার জন্য রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে সুখী নীলগঞ্জ এবং ফুরমোন অনতম আকর্ষণীয়। এ ছাড়া কাপ্তাই হ্রদ, পর্যটন মোটেল, ডিসি বাংলো, ঝুলন্ত ব্রিজ, সাজেক, পেদা টিংটিং, সুবলং ঝর্ণা, রাজবাড়ি, রাজবন বিহার, উপজাতীয় জাদুঘর, কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

রাঙামাটি কীভাবে যাবেন : ঢাকা সায়েদাবাদ, কলাবাগান, ফকিরাপুল অথবা গাবতলী থেকে শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক, এস আলম এবং বিআরটিসি বাসে করে যেতে পারবেন রাঙামাটি। নন এসি বাস ৬২০ টাকা। এসি বাস আছে শ্যামলী এবং বিআরটিসির ভাড়া ৯০০-১০০০ টাকা। সাধারণত সকাল ৮টা, ৯টা এবং ১০টায় প্রতিটি কোম্পানির ২টা করে বাস ছাড়ে। আবার রাতে ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে প্রতি কোম্পানির দুইটা করে বাস ছাড়ে।
কোথায় থাকবেন : রাঙামাটি বেশ কিছু হোটেল মোটেলে আপনি থাকতে পারেন। হোটেলের মধ্যে অন্যতম হোটেল সুফিয়া, সাংহাই ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল প্রিন্স ইত্যাদি। হোটেলের নন এসি সিঙ্গেল রুমের ভাড়া ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা এবং ডাবল রুম ৮০০-১৫০০ টাকার মধ্যে। আর এসি সিঙ্গেল রুমের ভাড়া ১০০০-১৮০০ টাকা, ডাবল ১৫০০-২৫০০ টাকার মধ্যে। আর মোটেলের মধ্যে রয়েছে জর্জ মোটেল, পর্যটন মোটেল ইত্যাদি। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন পর্যটন কমপ্লেক্স সুন্দর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। বেড়ানোর পাশাপাশি পাহাড়ি ফল আর বস্ত্র সম্ভার থেকে যা কিছুই আপনি সংগ্রহ করতে পারবেন, সেটা নিঃসন্দেহে সেরা সংগ্রহের কাতা থাকবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ