পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে মানুষের বাঁধভাঙা উচ্ছ¡াস ষ নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো ষ শুধু কক্সবাজারের হোটেল ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা ৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে ষ সিলেট-তিন পার্বত্য জেলা পর্যটকে ঠাঁসা; রাজশাহীর পদ্মার তীরে লাখো মানুষের ঢল
স্টাফ রিপোর্টার
ঈদের আনন্দের মতোই পরিপূর্ণভাবে উদযাপিত হলো মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। দুই বছর ধরে করোনাভাইরাসের স্বাস্থ্যবিধির নানা কড়াকড়ি থাকার পর এবার আবার পরিপূর্ণভাবে উদযাপিত হয় ঈদুল ফিতর। এক মাস সিয়াম সাধনার পর সারাদেশের ধনী-গরিব, আমির-ফকির সর্বস্তরের মানুষ এবারের ঈদে ঈদের আনন্দ উপভোগ করেন। অনেক ধনবান মানুষ জাকাত আদায়ে গরিবের মধ্যে অর্থ বিলিয়েছেন; কেউ কাপড় বিলিয়েছেন। যাদের অর্থ সম্পদ কম, তারাও ঈদের দিনটিতে তাদের চেয়ে গরিবদের প্রতি সহায়তা করেছেন; ধনী-গরিব এক কাতারে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। কাজী নজরুল ইসলামের ‘আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমন, হাত মেলাও হাতে/ তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ/ ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। ঈদে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের হাট-বাজারে কেনাকাটা, বিনোদন স্পটে ঘুরে বেড়ানো, বড় মাঠে নামাজ আদায়ের জন্য একশ-দেড়শ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ঈদের নামাজ আদায় ছিল ঈদের খুশিকে উপভোগ করা এবং অন্যের মধ্যে বিলিয়ে দেয়ার এক অন্যরকম উন্মাদনা। শুধু কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গেছে ৫ লাখ পর্যটক। পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস, কটেজের কোনো কক্ষ খালি নেই। ওইসব হোটেল-মোটেলে দৈনিক ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৬০ হাজার। ঈদের ছুটির ৭ দিনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অন্তত ৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে ঈদ আনন্দ উপভোগ ও ভাগাভাগি করার যেন প্রতিযোগিতা দেখল মানুষ। ঈদগাঁয়ে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের পর ঈদ উপলক্ষ্যে কক্সবাজার, কুয়াকাটা, পার্বত্য তিন জেলা, রাজধানীর ঢাকার হাতিরঝিল, চিরিয়াখানাসহ সারাদেশের বিনোদন স্পটগুলোতে লাখ লাখ লোকের সমাগম, উচ্ছ¡াস-উল্লাসের মধ্যদিয়ে ঈদের দিনকে স্মরণীয় করে রাখার প্রয়াস পান আবালবৃদ্ধবনিতা। বৃষ্টির কারণে অনেক জায়গায় মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করলেও যেখানে মাঠে নামাজ হয়েছে, সেখানে দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। জাতীয় ঈদগাঁ ময়দানে রাস্তায় মুসল্লিদের নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, মহাখালীর মসজিদে গাউসুল আজমসহ রাজধানী ঢাকার কয়েকটি মসজিদের ৪টি করে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হলেও হাজার হাজার মসজিদে মুসল্লিদের মসজিদের বাইরে রাস্তায় চট-জায়নামাজ বিছিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের সময় যে পরিমাণ বেচাকেনা হয়েছে, সারাবছর সে পরিমাণ বেচাকেনা হয় না। পর্যটন শিল্প, পরিবহন শিল্পের সঙ্গে জড়িতরাও বলছেন, ঈদের সবচেয়ে বেশি কেনাবেচা হয়েছে এবং যাত্রী পরিবহন করা হয়।
ঈদ সারাবিশ্বের মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশের মানুষ সংস্কৃতিকভাবে ঈদকে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হিসেবে পালন করে থাকেন। তবে দেশের কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, তথাকথিত সংস্কৃতিসেবি ইসলামবিদ্বেষ মানসিকতা থেকে পহেলা বৈশাখ, ভালোবাসা দিবস, থার্টি ফাস্ট নাইট, শারদীয় দুর্গা উৎসবসহ কিছু কিছু দিবসকে ‘সবচেয়ে বড় উৎসবের’ তকমা দিয়ে প্রচারনা চালিয়ে থাকেন। ঈদ উৎসবকে গুরুত্বহীন করার অপচেষ্টা করে থাকেন। এমনকি কিছু মোবাইল কোম্পানি এবং কিছু কর্পোরেট হাউস ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অর্থলগ্নী করে ওই সব উৎসবকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং সার্বজনীন হিসেবে প্রচার করে থাকে। বিশেষ করে আকাশ সংস্কৃতির নামে বিজাতীয় সংস্কৃতিকে ঊর্ধ্বগগণে তুলে ধরে মুসলমানদের ঈদ উৎসবকে গুরুত্বহীন করে তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু দুই বছর করোনার কারণে সীমিত পরিসরে ঈদের নামাজ আদায় হলেও এবার কারোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ থাকায় পুরো দেশ মেতে উঠেছিল ঈদ উৎসবে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া সর্বত্রোই ঈদ উৎসবে মেতে উঠে মানুষ। হাজার হাজার লাখ লাখ মানুষ বিনোদন স্পটগুলোতে ভিড় করছে। কক্সবাজার, কুয়াকাটা, জাফলং, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, সুন্দরবনসহ বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে তিল ধরনের ঠাঁই নেই। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে উপলক্ষ্য করে গড়ে উঠা বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা দারুণ ব্যস্ত।
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ উৎসবে কোটি কোটি মানুষের আবেগ-ভাবাবেগ উছলে পড়েছে। ‘যার যেমন সাধ্য’ সে তেমন ভাবে ঈদের দিন নতুন জামা কাপড় পড়েন, অপরের মাঝে বিলিয়েছেন; নিজে খেয়েছেন; আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশিকে খাইয়েছেন এবং পরিবার-পরিজনকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কাজী নজরুল ইসলামের ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/ আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানি তাগিদ’ এর মতো এই ঈদে মানুষ নিজেকে অন্যের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন। বিনোদন স্পটগুলোর দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যেমন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সৎপরতা দেখা যাচ্ছে; তেমনি মুসল্লিদের ঈদের নামাজ নির্বিঘœ ও ঈদে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঈদগাঁ মাঠ ও মসজিদের চারপাশে পুলিশের তৎপতরা দেখা গেছে। মসজিদের গেটগুলোতে মুসল্লিদের তল্লাশি করে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। জাতীয় ঈদগাঁ মাঠসহ অনেক মসজিদের প্রবেশ গেটগুলোতে বসানো হয় আর্চওয়ে।
গত দুই বছরের মতো এবার ঈদের জামাত শুধুমাত্র মসজিদের ভেতরে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আগের মতোই খোলা ময়দানে ঈদের জামাতে অংশ নিয়েছেন মুসল্লিরা। দুই বছর পরে ঢাকার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাত হয়েছে। সারাদেশের মসজিদ ছাড়াও ঈদগাঁ ময়দানে নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। যথাযোগ্য মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উচ্ছ¡াসের মধ্যদিয়ে সারাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ঈদের নামাজ আদায়ের মধ্যদিয়ে পালন করছেন অন্যতম প্রধান এই ধর্মীয় উৎসব। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশ নিয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। দিনাজপুরের গোরা এ শহীদ মাঠেও লক্ষাধিক লোক ঈদের জামাতে শরিক হন। ইনকিলাবের সংবাদদাতা এবং রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, ময়মনসিংহ থেকে মানুষ ট্রেনে করে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন। রংপুর, সৈয়দপুর থেকে ট্রেনে করে গিয়ে হাজার হাজার মানুষ গোর এ শহীদ ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করেন। করোনায় স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার বাধ্যবাধকতার কারণে দুই বছর ঈদের নামাজের পর মুসল্লিদের মধ্যে কোলাকুলির দৃশ্য দেখা যায়নি। এবার ঈদে ফিরেছে কোলাকুলির সেই চিরচেনা দৃশ্য।
রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা জাতীয় মসজিদে ঈদের জামাতে অংশ নিয়েছেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মসজিদের চারপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন দেখা গেছে। মসজিদের প্রবেশ গেটগুলোতে তল্লাশি করে মুসল্লিদের ভেতরে যেতে দেয়া হয়েছে। প্রবেশ গেট গুলোতে বসানো হয় আর্চওয়ে। ঈদ উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, মন্ত্রী-এমপি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ নির্বাচনি এলাকায় ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। নামাজের পর দলের নেতাকর্মী ও আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশির সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। রাজধানীর ঢাকার লাখ লাখ কর্মজীবী গ্রামের বাড়িতে আপনজন ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে গ্রামে গেছেন।
ঢাকার বিনোদনকেন্দ্রে ভিড় : এবার পবিত্র ইদুল ফিতরের ছুটিতে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঈদের দিন বিকাল থেকে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। দীর্ঘ দুই বছর করোনা মহামারির কারণে বিনোদন কেন্দ্রগুলো প্রায় বন্ধই ছিল। এবার করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকায় ঈদগাহে নামাজ আদায়ের পাশাপাশি সব বিনোদন কেন্দ্র খোলা রয়েছে। যে কারণে রাজধানীর প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্রেই মানুষের ঢল নামে।
শিশুদের জন্য রাজধানীতে প্রধান আকর্ষণ মিরপুরের চিড়িয়াখানা। ঈদের দিন বিকাল থেকে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল। গতকাল ঈদের তৃতীয় দিনেও শিশুদের প্রধান বিনোদনকেন্দ্র চিড়িয়াখানায় ছিল দর্শনার্থীর ঢল। জনস্রোত এতই ছিল যে ভিড় সামাল দিতে কর্তৃপক্ষের হিমশিম খেতে হয়েছে। প্রচন্ড ভিড়ে ৭০ জন শিশু স্বজনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষের সহায়তায় তাদেরকে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
গতকালও ঢাকার আশপাশসহ বিভিন্ন জেলা থেকে শিশুদের নিয়ে পরিবারের লোকজন চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসেন। দর্শনার্থীর সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়াতে পারে এমনটাই সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। দর্শনার্থীর প্রচন্ড ভিড় সামলাতে ডান পাশের টিকিট কাউন্টারের পাশাপাশি বাম পাশে পার্কিংয়ে বসানো হয় অস্থায়ী একাধিক টিকিট কাউন্টার। এছাড়া ম‚ল গেটের বাম পাশে তিনটি প্রবেশমুখও বসানো হয়। তারপরও ভিড়ের চাপে অনেক শিশু স্বজনদের হাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। চিড়িয়াখানার পাশাপাশি উদ্ভিদ উদ্যানেও ছিল মানুষের ভিড়।
রাজধানীতে শিশুদের বিনোদনের অন্যতম স্থান শিশুপার্ক বন্ধ থাকায় ঈদুল ফিতরের ছুটিতে অনেকেই শ্যামলী শিশুমেলায় ছুটে গেছেন। সেখানেও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। শিশুমেলার গেটে দেখা যায় মানুষের উপচে পড়া ভিড়। শুধু শিশু মেলায় নয় এর কাছেই চন্দ্রিমা উদ্যান, সংসদ ভবন চত্বর, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার, সামরিক জাদুঘরসহ কয়েকটি বিনোদন কেন্দ্রে ছিল জনস্রোত।
শিশু মেলায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন মো: ইউসুফ। তিনি বলেন, ঈদে গ্রামে যেতে পারিনি। ঈদে বাচ্চাদের নিয়ে এখানে এসে খুব ভালো লাগছে, তবে রাইডগুলোর যে ম‚ল্য তাতে মধ্যবিত্তদের এখানে আসাটা দুরহ ব্যাপার। তিনি বলেন, শিশু মেলায় প্রবেশ মূল্যই জনপ্রতি ১০০ টাকা। প্রবেশ মূল্যটা অনেক বেশি। এরপর ভেতরে প্রবেশ করে প্রতিটি রাইড এর মূল্য ৫০ টাকা করে। যে কারণে একটা বাচ্চা যদি দশটি রাইডে চড়ে তাহলে তার জন্য প্রায় ১ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। কারণ বাচ্চারা একা একা রাইডে বসতে পারে না, সঙ্গে বাবা-মা কারো না কারো থাকতে হয়। যে কারণে প্রতিটি রাইডের জন্য মিনিমাম দুইটা টিকিট দরকার হয়। তবে রাইড মূল্য যাই হোক, বছরের একটি বিশেষ দিনে বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে অনেকেই কার্পণ্য করেননি। শিশুমেলার যতগুলো রাইট রয়েছে প্রতিটিতেই মানুষের দীর্ঘ লাইন। প্রচÐ ভিড়ের কারণে অনেকে প্রবেশ করতে না পেরে গেট থেকে ফিরে যাচ্ছেন। অন্যদিকে, চন্দ্রিমা উদ্যান লেকের পারে অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খোলা বাতাসে ঘুরতে এসেছেন। একদিকে গাছের সবুজ পাতা অন্যদিকে কৃষ্ণচ‚ড়ার লাল রঙে নিজেরাও রঙিন হয়েছেন। সংসদ ভবন এলাকায়ও ছিল মানুষের ভিড়।
রাজধানীর মানুষের কাছে এখন অন্যতম প্রধান বিনোদন কেন্দ্র হল হাতিরঝিল। ঈদের দিন থেকেই হাতিরঝিলে ছিল মানুষের ঢল। ঈদের দিন সকালে রাজধানীতে বৃষ্টি হওয়ায় অনেকেই ঘর থেকে বের হতে পারেননি। তবে বিকেলে অনেকেই বের হয়েছেন। ঈদের পরদিন থেকে হাতিরঝিল লেকের চারপাশে দেখা যায় হাজারো মানুষের ভিড়। মগবাজার, রামপুরা, গুলশান, বাড্ডা, তেজগাঁও এলাকা থেকেই হাতিরঝিলে লোকজন বেশি আসেন। এছাড়া দ‚র-দূরান্ত থেকেও অনেকেই হাতিরঝিল আসেন।
হাতিরঝিলের ব্রিজগুলোর ওপর ছিল উপচে পড়া ভিড়। বিকেলে ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে অনেকে নানা ভঙ্গিতে সেলফি তুলেছেন। সন্ধ্যার পর আলোর ঝলকানিতে হাতিরঝিলে এক স্বপ্নময় পরিবেশের তৈরি হয়। তখন তরুণ-তরুণীরা উচ্ছ¡াসে মেতে উঠে।
সোহাগ কলাবাগান এলাকা থেকে হাতিরঝিলে বন্ধুদের সাথে বেড়াতে এসেছেন। তিনি বললেন, আমরা এসেছি হাতিরঝিলের ফাঁকা এলাকায় ঘুরে বেড়াতে। বিশেষ করে ওয়াটার-বোটে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা।
হাতিরঝিলের লেকে অনেকেই বোটে চড়ছেন। রামপুরা থেকে এফডিসি, এফডিসি থেকে গুলশান লিঙ্ক রোডে সাধারণত লোকজন প্রয়োজনে যাতায়াত করেন। তবে ঈদের ছুটিতে বিনোদনের জন্য অনেককেই বোটে চড়ে বেড়িয়েছেন।
বিনোদনকেন্দ্রে আসা মানুষগুলোর মধ্যে ছিল উচ্ছ¡াসের সুর। তাদের কথায় বন্দিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার পরে মানুষের ভেতরে যে উচ্ছ¡াস সেটিই প্রকাশ পেয়েছে। অনেক বিনোদন কেন্দ্রে শিশুদের আনন্দকে দ্বিগুণ করে দিতে নাগরদোলাসহ বিভিন্ন খেলনা সামগ্রীর আয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া অনেক স্থানে ঈদের মেলাও বসেছে। রাজধানীর নয়াবাজারের পার্কে অস্থায়ী মেলায় নাগরদোলায় চড়ে শিশুরা আনন্দ উপভোগ করেছে। ঈদ উপলক্ষ্যে যে মেলা জমেছে, তাতে শিশুরা ঘুরে ঘুরে নানান খেলনা কিনতেও দেখা গেছে। এছাড়া পুরান ঢাকার আহসান মঞ্জিল, ভিক্টোরিয়া পার্ক, বলধা গার্ডেনসহ অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোতেও ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। অন্যদিকে শাহবাগ মোড় থেকে টিএসসি এলাকায়ও ছিল তরুণ-তরুণীদের ভিড়। এ এলাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক এসব স্থানেও মানুষ ঘুরে ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছেন।
কক্সবাজার ব্যুরো জানায়, করোনামুক্ত পরিবেশে ঈদুল ফিতর উদযাপন শেষে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের ঢল নেমেছে। এতে করে পর্যটন শিল্পে আবারো সুদিন ফিরছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ঈদের দিন সৈকতে স্থানীয় লোকজনের সমাগম বেশি থাকলেও ঈদের ২য় ও ৩য় দিন সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা গেছে লাখো পর্যটকের ঢল। এতে করে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন মৌসুমের শেষে হলেও তারা লোকসান পুষিয়ে নেয়ার সুযোগ পাবেন। তবে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ ক্যাম্প ছেড়ে সৈকতে এসেছে বলে জানিয়েছেন সৈকতে কর্মরত পুলিশ ও বীচ কর্মীরা।
গত বুধবার সৈকতের ডলফিন মোড়ের টুরিস্ট পুলিশ বক্সের সামনে শতাধিক রোহিঙ্গা ছাত্র-যুবককে পুলিশ আটক করেছে। পুলিশ কর্মকর্তা ইকবাল জানান, আগে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে কক্সবাজার এর দিকে পথে পথে চেকপোস্ট ছিল। এখন কোন চেকপোস্ট নেই। তাই রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে যে কোনো দিকে চলে যাচ্ছে। তিনি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ওই সংস্থার আশকারা পেয়ে রোহিঙ্গারা এখন কিছুই মানতে চায় না।
ঢাকা থেকে আসা কয়েকজন পর্যটক জানান, তারা রমজানে হোটেল বুকিং দিয়ে কক্সবাজারে এসে ঈদ করেছেন। গত দুই বছর করোনাকালীন সময়ে তারা কক্সবাজার আসতে পারেননি। করোনামুক্ত এবার ঈদ আনন্দে যেন ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ঈদ আনন্দে মাতোয়ারা চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। সেখানে এখন পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। গতকাল বৃহস্পতিবার ঈদের তৃতীয় দিনেও সকাল থেকেই পর্যটকদের ভিড় দেখা যায়। দুপুরের পর যে দিকে চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। নারী শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের উপচে পড়া ভিড় ঈদের দিন থেকেই। ঈদের নতুন পোশাকে সাগরের কাছাকাছি আসতে পেরে আনন্দে আত্মহারা শিশু-কিশোররা। কেউ ঝাঁপিয়ে পড়ছে সাগরের বুকে। সৈকতের বালু চরে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের তালে অন্য রকম উৎসবের আমেজ। বৈশাখের প্রখর খরতাপের পর স্বস্তির বৃষ্টিতে শীতল পরশ সৈকতে ঘুরে বেড়ানোয় যোগ করেছে নতুন মাত্রা। আর তাই বাঁধভাঙা উল্লাসে সৈকতে জমেছে ঈদের উৎসব। চট্টগ্রাম মহানগরী ছাড়াও আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ এসেছে পতেঙ্গা সৈকতে। ঈদের লম্বা ছুটি তাই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে লোকজন সময় কাটাতে নেমে পড়েন। করোনায় পর্যটন শিল্পের আঁধার কেটে দেখা মিলছে আশার আলো। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের বেলাভ‚মি চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। নগরীর কোলাহল পেরিয়ে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে উত্তাল বিশাল জলরাশির বঙ্গোপসাগর। সৈকতের চারপাশে প্রকৃতির নৈসর্গিক মনলোভা দৃশ্যের হাতছানির সঙ্গে সমুদ্রবন্দরের কর্মব্যস্ততা আর বিশাল সমুদ্রের সঙ্গে কর্ণফুলী নদীর মিলনমেলা। সাগর পাড়ের বালুকাবেলা, বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ মন ভরিয়ে দেয় পর্যটকদের। আনন্দ পেতে তাই দূর-দূরান্ত থেকে দল বেঁধে সৈকতে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। সৈকতে সাগরের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি অনেকে স্পিড বোট, ঘোড়ায় উঠে আনন্দ উপভোগ করছেন। পতেঙ্গা সৈকতের মতো ঈদের ছুটিতে চট্টগ্রামের অন্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নেমেছে মানুষের ঢল। নারী-শিশু থেকে শুরু করে নানা বয়সের মানুষ ভিড় করেছেন সেখানে। কর্মব্যস্ত জীবনের ফাঁকে কয়েকটা দিন পরিবারের সঙ্গে আনন্দে মেতেছেন সবাই। নগরীর নেভাল সৈকত, বোট ক্লাব, পতেঙ্গা সিটি আউটার রিং রোড, ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, ওয়াটার ওয়ার্ল্ড, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, কাট্টলী সৈকত, গুলিয়াখালী সৈকত, পারকি সৈকত, কর্ণফুলী শিশু পার্ক, ভাটিয়ারি, সীতাকুÐ, বাঁশখালী, রাঙ্গুনিয়া ও মীরসরাইয়ের, পাহাড়ি ঝরনা, ইকোপার্কসহ এই অঞ্চলের বিনোদনকেন্দ্র দর্শনার্থীদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় সব বয়সি মানুষের ভিড় জমেছে। খাঁচায় বন্দি বাঘ, সিংহ, হরিণ, জেব্রাসহ নানা প্রজাতির পশুপাখি দেখে শিশুরা উচ্ছ¡সিত, মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। দোলনা, রাইডে উঠে শিশুদের খেলা আর প্রিয়জনদের সঙ্গে ছবি তুলে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া হচ্ছে। চিড়িয়াখানাও সেজেছে নতুন সাজে। ঈদের ছুটির এই সময়ে চার-পাঁচদিনে ৬০-৭০ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হবে। কাজীর দেউড়ির শিশু পার্ক, বহদ্দারহাট স্বাধীনতা কমপ্লেক্স, কর্ণফুলী নদীর তীর, কাট্টলী সৈকত, সিআরবি, ওয়ার সিমেট্রিও মুখর হয়ে উঠেছে দর্শনার্থীদের ভিড়ে।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, করোনার বিষাদ কাটিয়ে ঈদ আনন্দে মতোয়ারা রাজশাহী অঞ্চলের গাঁও-গেরাম। বিগত দুটি ঈদ ছিল ভয় স্বজন হারানোর শোক আর বিধি নিষেধের বেড়া। এবার এসব ভয় ডর ছিল না। নাড়ির টানে বাড়ি ফিরেছে মানুষ। চিরচেনা টানপড়নের মধ্যে সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে সেই আগের দিনের মতো করে মেতে ওঠে ঈদ আনন্দে।
যেন ঈদ আনন্দের সাথে এমন বর্ষনও ছিল আনন্দের। কারণ খরায় ঝরে পড়ছিল আম, লিচু, আর কটাদিন পর পুরোদমে কাটা শুরু হবে বোরো ধান। বর্ষনে সজীবতা ফিরে এসেছে রুক্ষ প্রকৃতিতে। হঠাৎ করে বদলে গেছে আবহাওয়ার রুপ। ধুলোর আস্তরনে থাকা গাছ পালার পাতাগুলো ধুয়ে যেন আরো সবুজ হয়ে উঠেছে। অন্যান্য ফসলের ক্ষেতও প্রা পেয়েছে। এবার কোভিড ভয় না থাকা আর লম্বা ছুটি পেয়ে চারিদিক থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে এসেছে মানুষ। কি শহর কি গ্রাম সর্বত্র মানুষ আর মানুষ। বিশেষ করে গাও গ্রাম যেন স্বজনদের কাছে পেয়ে প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
শহরে জীবন মানেতো যান্ত্রিকতায় ভরা আর বায়ুদূষণে দূষিত। পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ঈদের দিন বিকেল থেকে দলবেঁধে নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন বয়েসি মানুষ ছুটেছে বিনোদন কেন্দ্রগুলোর দিকে। কি শহর কি গ্রাম সর্বত্র গড়ে উঠেছে বিনোদনকেন্দ্র আর পার্ক। প্রত্যন্ত অঞ্চলের এখন শিশুপার্ক পিকনিক কর্নার গড়ে উঠেছে। গত দু’বছর এসব পার্ক আর বিনোদনকেন্দ্রে জঙ্গলে ভরে গিয়েছিল। এবার তা আবারো ঝকঝকে করে তোলা হয়েছে। এসব পার্কে রং বেরংয়ের ঈদের নতুন জামা পরে তরুণ-তরুণীরা যেন প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াচ্ছে।
খুলনা ব্যুরো জানায়, ঈদের পুরোটা দিন খুলনায় বৃষ্টি থাকায় পরদিন থেকে নগরবাসী আনন্দ উদযাপন শুরু করেছেন। নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে এখন উপচে পড়া ভিড়। খুলনা সেনানিবাস চিড়িয়াখানা ও বিনোদন পার্ক, রূপসা সেতু, শিশু পার্ক, বাইপাস সড়কের পাশের একাধিক বিনোদন স্পট, ভাসমান রেস্তোরাঁসহ প্রতিটি বিনোদন স্পট লোকে-লোকারণ্য। নৌ ভ্রমণের মাধ্যমে কিছুটা ব্যতিক্রমভাবে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে দেখা গেছে অনেককেই।
খুলনা মহানগর ও জেলাকে ঘিরে রেখেছে রূপসা ও ভৈরব নদী এবং এর বিভিন্ন শাখা প্রশাখা। তাই নৌকা ভ্রমণ অপেক্ষাকৃত সহজ ও সুলভ। নগরীর জেলখানা ঘাট, ৫ নং ঘাট, চরেরহাট ঘাট, ক্যাবল শিল্প ঘাট, ফুলবাড়িগেট ঘাট, রূপসা ঘাটসহ একাধিক ঘাট থেকে ঘণ্টা চুক্তিতে নৌকা ভাড়া করে রূপসা ও ভৈরবে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরছেন অনেকেই।
ঢাকা থেকে খুলনায় ঈদ করতে আসা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মামুন জানালেন স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে নৌকা ভ্রমণ করছি, খুব ভালো লাগছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী মৌ জানালেন, নৌকা ভ্রমণের আনন্দটাই আলাদা। আবহাওয়া ভালো থাকায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে নদীতে ঈদের আনন্দ ব্যতিক্রমীভাবে উপভোগ করছি।
স্টাফ রিপোর্টার, বান্দরবান থেকে জানান, পর্যটনে মুখরিত বান্দরবান। গত দুই বছর করোনার কারণে ঈদে পর্যটকরা ভ্রমণে বের হতে না পারলেও এবার পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে বান্দরবানে জড়ো হয়েছে হাজারো পর্যটক। বান্দরবানে পাহাড়-পর্বত ছাড়াও এখানে রয়েছে অসংখ্য ঝিরি-ঝর্ণা, মেঘলার লেক, স্বর্ণমন্দির, নীলাচল, নীলগিরি, শৈলপ্রপাত, নাফাকুম, রেমাক্রি, চিম্বুক, নীলদিগন্তসহ সরকারি-বেসরকারি অনেকগুলো পর্যটন স্পট। সবকিছু মিলিয়ে ঈদের টানা ছুটিতে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকের পদভারে এখন মুখর হয়ে উঠছে বান্দরবান। পুরো শহরজুড়ে পরিণত হয়েছে মিলন মেলায়। পর্যটকের বাড়তি চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, রেস্ট হাউস মালিকসহ পর্যটনশিল্পে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
বান্দরবানের হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটকের উপস্থিতি বেড়ে গেছে। এবছর ঈদে অনেক পর্যটক আসছে। বান্দরবান হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় প্রায় ৫৫টি হোটেল-মোটেলে আগামী শনিবার পর্যন্ত পর্যটকের আগমন অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
বদলগাছী (নওগাঁ) সংবাদদাতা জানান, ঈদ উপলক্ষ্যে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় অবস্থিত ঐতিহাসিক বৌদ্ধ বিহার পাহাড়পুরে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঐতিহাসিক পাহাড়পুরের রয়েছে সৌন্দর্য বর্ধনশীল ও আকর্ষণীয় মূল প্রবেশদ্বার। আরো আছে ১টি মসজিদ। রয়েছে অফিসারদের জন্য কোয়ার্টার, ব্যাটালিয়ানদের জন্য আনসার কোয়ার্টার, স্টাফ কোয়ার্টার। দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য ১০টি ছাউনী সেজেছে বিভিন্ন সাজে। দর্শনার্থীদের আগমন উপলক্ষ্যে বৌদ্ধবিহার পাহাড়পুর সংলগ্ন হোটেল, রেস্তোরাঁ, কসমেটিস ও ঝিনুকের দোকানগুলো দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন বর্ণিল সাজে সাজিয়েছেন দোকানিরা। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার অফিস সূত্রে জানা যায়, এই রোজার ঈদে প্রথম দিন এই পাহাড়পুরে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটেছে এবং পরের দিন বুধবারে ২৫ থেকে ৩০ হাজার দর্শনার্থীর আগমন ঘটে এখানে।
ফয়সাল আমীন সিলেট থেকে জানান জেলার দর্শনীয় স্থান, বিনোদন পার্ক, প্রাকৃতিক স্পট, চা বাগান বিভিন্ন সেতু ও যানবাহনের কোলাহলমুক্ত সড়ক-কোথাও নেই তিল ধারণের ঠাঁই! যেন পর্যটক-দর্শনার্থীসহ ভ্রমণপিপাসুদের বিস্ফোরণ ঘটেছে গোটা সিলেটেজুড়ে।
গত দুইটি বছর করোনাভাইরাসের কারণে ঈদসহ বিভিন্ন সময়ে পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে যেতে ছিল নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু এবার তা নেই। তাই এবার সিলেটে পর্যটকরা যেন বাঁধনহারা। এনিয়ে ঈদের আগেই সংশ্লিষ্টরা আগাম একটি ধারণা জানিয়ে বলেছিলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় থাকবে। ঈদ পরবর্তী চার দিন (বুধ থেকে শনিবার পর্যন্ত) স্থানীয় পর্যটকসহ প্রতিদিন গড়ে দুই লাখ পর্যটক পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় উপস্থিত থাকবেন। সে অনুযায়ী চার দিনে গড়ে ৮ লাখ পর্যটক উপস্থিত থাকবেন। এতে সিলেটের পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের প্রায় ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে। সে ধরণাকে বাস্তবে রূপ দিতে গত দুই দিন থেকে (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পর্যটক সিলেটের জাফলং, সাদাপাথর, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, পান্তুমাইসহ বিভিন্ন চা-বাগান দেখতে ছুটে এসেছেন। এ ছাড়া শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.) মাজারেও ভিড় জমেছে পর্যটক ্ও দশনার্থীদের। এছাড়াও সিলেট মহানগরী এলাকার পার্ক, বিনোদন স্পট, সেতু ও সড়কসহ দর্শনীয় সকল স্থান দিনভর ছিলো পর্যটক এবং ভ্রমণপিপাসুদের উপচেপড়া ভিড়। সিলেট মহানগরীর ওসমানী শিশু পার্ক, অ্যাডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ড, শেখ হাসিনা শিশু পার্ক, কাজির বাজার সেতু, তারাপুর চা বাগান, মালনিছড়া চা বাগানসহ বিভিন্ন স্থানে মানুষের প্রচÐ ভিড়। জানা যায়, ঈদের আগ থেকেই পর্যটকেরা হোটেল বুকিং শুরু করেন। ঈদের আগে আগেই সিলেটের হোটেল-মোটেলগুলোর ৭৫ শতাংশ অগ্রিম বুকিং হয়ে যায়। যারা হোটেল বুকিং দিয়েছিলেন, তারা ঈদ-পরবর্তী দুই থেকে চার দিন পর্যন্ত বুকিং দিয়ে রেখেছেন। এদিকে, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় প্রশাসন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলা পুলিশ ঈদের আগেই সিলেটের ১০টি পর্যটনকেন্দ্র ও জনসমাগমস্থল চিহ্নিত করেছে। এসব কেন্দ্রে ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া সাদাপোশাকেও নিযুক্ত রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। সিলেট জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা ও গণমাধ্যম) মো. লুৎফর রহমান বলেন, ঈদে পর্যটকদের হয়রানি কমাতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জনসমাগমস্থল চিহ্নিত করে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সিলেটের জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঈদ পরবর্তী ছুটিতে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সিলেট মহানগর ও জেলায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশের সমন্বয়ে টহল দল বৃদ্ধিসহ নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এছাড়াও পর্যটনকেন্দ্রের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থার পাশাপাশি পর্যটকদের সতর্ক করতে লাল নিশানা কিংবা নির্দেশনামূলক বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। প্রশাসনের এতোসবের পরও খোদ প্রশাসনের অধিনস্ত স্বেচ্ছাসেবক কর্তৃক হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে জাফলংয়ে। এঘটনায় আশংকা তৈরি হয়েছে সিলেটে পর্যটন নিয়ে ষড়যন্ত্রের। এরই মধ্যে ভোলাগঞ্জের পাথরকোয়ারী পাথর উত্তোলন বন্ধ করে কর্মহীন করা হয়েছে স্থানীয় হাজার হাজার মানুষকে। একই ভাবে জাফলংয়ে টিকেট বিক্রির নামে প্রশাসনের লোকজন কর্তৃক পর্যটকদের উপর হামলার ঘটনা নতুন যড়যন্ত্রের আভাস বলে মনে করছেন অনেকে। অপরদিকে বিভাগের সুনামগঞ্জে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় জমে উঠেছে তাহিরপুর উপজেলার শিমুল বাগানে। বিশাল এই শিমুল বাগানে এখন লাল ফুল নেই, তবে গাছে গাছে নতুন পাতা গজে উঠেছে। যা দেখতে দর্শানার্থীরা ভিড় করে তার সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। শিমুল বাগানের তত্ত¡াবধায়ক ফরিদ গাজী বলেন, ঈদের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য পর্যটক বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছেন। এদিকে, ঈদে হবিগঞ্জের প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে এক লীলাভ‚মি সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান জমে উঠেছে। ঈদের দিন থেকে গতকাল (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত শতশত পর্যটক অবস্থান করেছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে। পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারে ঈদের ছুটিতে দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভিড় করেছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। লাউয়াছড়ার টিকিট কালেকক্টর শাহিন মিয়া জানিয়েছেন, ঈদের দ্বিতীয় দিন ছিল বৃষ্টিবিঘœ। তবুও প্রায় ৯ হাজার পর্যটক প্রবেশ করেছেন লাউয়াছড়ায়।
বাগেরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান, ঈদের টানা ছুটিতে বিশ^ ঐতিহ্য ষাটগুম্বুজ মসজিদ ও সুন্দরবনসহ বাগেরহাটের পর্যটন স্পটগুলোতে দর্শনার্থীদের ছিল উপচেপড়া ভিড়। তবে বৈরি আওহাওয়ার কারণে ঈদের দিন দুপুর পর্যন্ত এসব স্থানে দর্শনার্থীরা যেতে পারেননি। ঈদের দ্বিতীয় দিন ও ৩য় দিন সকাল থেকে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয় ষাটগুম্বুজ মসজিদ, হযরত খানজাহান আলী (রহ:) মাজার, বাগেরহাট সদর উপজেলার বেসরকারি পর্যটন কেন্দ্র, হাকিমপুরের চন্দ্রমহল ইকো পার্ক ও বারাকপুরের সুন্দরবন রিসোর্ট। দর্শনার্থীদের ভিড়ে এসব বিনোদন কেন্দ্রগুলো ছিল সরগরম। এখানে শিশুসহ বড়রা বিভিন্ন রাইডে চড়ার পাশাপাশি আড্ডায় মেতেছিল।
আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ঈদের ছুটিতে চট্টগ্রামের আনোয়ারা পারকী সৈকতে পর্যটকের ঢল নেমেছে। সৈকতের ঢেউয়ে আনন্দ আর উল্লাসে মেতেছেন তারা। এবছর করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় পর্যটকদের ঢল নেমেছে। হাজার হাজার নারী-পুরুষ ঈদের ছুটিতে সময় কাটাতে সৈকতে ছুটে আসছে। বাস, প্রাইভেট কার, আবার কেউ জীপ-ট্রাক কিংবা মোটরসাইকেলে করে আসছে পারকীতে। ব্যক্তিগতভাবে ছাড়াও কেউ কেউ প্রতিষ্ঠান থেকে পারকীতে এসেছেন। তরুণেরা দল বেঁধে ডিজে পার্টি নিয়ে আনন্দ-উপভোগ করেছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় অতিরিক্ত পুলিশও মোতায়েন করেছে প্রশাসন।
ঝালকাঠি জেলা সংবাবদাতা জানান, ঈদের টানা তিনদিন ঝালকাঠির বিভিন্ন বিনোদন স্পটে মানুষের ঢল নেমেছে। সকাল থেকে উৎসব প্রিয় মানুষ বেড়াতে বের হন। প্রতি বছরের মতই ঝালকাঠি শহরতলীর গাবখান চ্যানেলের ওপর নির্মিত পঞ্চম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতুটি মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। ঈদের প্রথম দিন বৃষ্টি হওয়ায় পরিবার পরিজন, বন্ধুবান্ধব দলে দলে বুধবার ঈদের দ্বিতীয় দিন এখানে ছুটে আসেন। ঈদের তৃতীয় দিনেও ভিড় রয়েছে সেখানে। দেশের সর্বচ্চ উচ্চতায় নির্মিত এ সেতু থেকে নদীর অপররূপ দৃশ্য দেখে আর মেঘ-বৃষ্টির প্রাকৃতিক পরিবেশে সবাই হারিয়ে যান ঈদ আড্ডায়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে ঈদের মিলন মেলায়। এছাড়াও শহরের সুগন্ধা নদী তীরের মিনিপার্ক, কাঁঠালিয়ায়র ছৈলার চর ছিল উৎসবমুখর মানুষের মিলনমেলা।
ঝিনাইগাতী (শেরপুর) সংবাদদাতা জানান, এবার ঈদে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ের ৯০ একর জমির ওপর গজনী অবকাশ পযর্টন কেন্দ্রে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। ঈদের দিন থেকে পযর্টকদের সমাগম বাড়তে থাকে। ঈদের তৃতীয় দিন বৃস্পতিবারও পযর্টন কেন্দ্রে হাজারো প্রকৃতিপ্রেমীর পদভারে মুখরিত। পর্যটন ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মৌসুমের শেষে ব্যবসায় লাভবান হচ্ছেন। সৌন্দর্য উপভোগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও পর্যটকের ঢল নেমেছে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, মাগুরা থেকে জানান, মাগুরার শ্রীপুরের চৌগাছী-গোয়ালদাহ সম্মিলিত বিদ্যা নিকেতন ও মানব কল্যাণ তহবিলের উদ্যোগে ঈদের আনন্দকে আরো বাড়িয়ে দিতে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা ও ঘুড়ি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঈদের পরের দিন বিকেলে উপজেলার চৌগাছী বাওড় সংলগ্ন দোয়াড় পাড়ে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। লাঠি খেলায় ৭ টি দল ও ঘুড়ি প্রতিযোগিতায় অর্ধশতাধিক ঘুড়ি নিয়ে প্রতিযোগিরা অংশ নেন। ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা ও ঘুড়ি প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো দর্শকের সমাগম ঘটে দোয়াড় পাড় এলাকায়।
রামগতি (ল²ীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, বৈশ্বিক মহামারি করোনার সঙ্কটকালীন সময় পার করে সামাজিক বিধি-নিষেধ উঠে যাওয়ায় লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত ল²ীপুরের রামগতি উপজেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান মিনি কক্সবাজার নামে খ্যাত মেঘনা নদীতে বøকে বাঁধাই করা বেড়িবাঁধ ‘মেঘনা সি বিচ’। রামগতির আলেকজান্ডার উপজেলা পরিষদের সামনে ও কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরহাট এবং মতিরহাটে এই স্থানগুলো অবস্থিত। ঈদুল ফিত
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।