পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
সউদী আরব গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, দেশটিতে প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলারের ঘুষ ও দুর্নীতি ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২০১ জনকে আটক করা হয়েছে। আধুনিক সউদী আরবের ইতিহাসে দেশটির শীর্ষ পর্যায়ে ব্যাপক শুদ্ধি অভিযান চালানোর পর এদেরকে আটক করা হলো। সপ্তাহান্তে উচ্চ পর্যায়ের যাদের গ্রেফতার বা বরখাস্ত করা হয় তাদের মধ্যে যুবরাজ, মন্ত্রী ও কোটিপতি এক ব্যবসায়ী রয়েছেন। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মাদ বিন সালমান ক্ষমতা কেন্দ্রিভূত করার অংশ হিসেবে এদের গ্রেফতার করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইয়েমেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং রিয়াদ থেকে হঠাৎ করে প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির পদত্যাগের ঘোষণার পর লেবাননের রাজনৈতিক সঙ্কটকে কেন্দ্র করে সউদী আরব ও ইরান মুখোমুখী অবস্থান নেয়ায় চরম আঞ্চলিক উত্তেজনার মধ্যে এ শুদ্ধি অভিযান চালানো হয়। অ্যার্টনি জেনারেল শেখ সউদ আল-মোজেবের বরাত দিয়ে সউদী তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, দুর্নীতির অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এ পর্যন্ত মোট ২০৮ জনকে ডাকা হয়েছে। কোন অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় এদের মধ্যে সাতজনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে সউদী আরবের বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন বিবিসির নিরাপত্তা বিশ্লেষক ফ্রাঙ্ক গার্ডনার। তিনি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, ‘সউদী আরবে এখন অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটছে। দেশটিতে রাজপরিবারের সদস্য, মন্ত্রী, শীর্ষ ব্যবসায়ীরা গ্রেফতার হচ্ছেন। তাদেরকে বিলাসবহুল হোটেলে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হচ্ছে, ব্যক্তিগত বিমানগুলো আটকে রাখা হয়েছে আর সম্পত্তি জব্দ করা হচ্ছে।
এসব কিছুর পেছনে রয়েছে ৩২ বছর বয়সী সউদী যুবরাজ মোহাম্মেদ বিন সালমান, যিনি সদ্য গঠিত দুর্নীতি দমন কমিটিরও প্রধান। কিন্তু এত কিছু কেন ঘটছে? এর কারণ কী শুধুই দুর্নীতি? নাকি যুবরাজের ক্ষমতা করায়ত্তের কৌশল?
উত্তরটা হলো, দুটোই।
দুর্নীতি সউদী আরবে প্রচলিত একটি ব্যাপার। তেল সম্পৃদ্ধ এই দেশটিতে ব্যবসা করতে গেলে ঘুষ বা উপঢৌকন দেয়া যেন ব্যবসারই একটি অংশ। সেখানে যারা গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় বসে আছেন, তাদের অনেকেই অকল্পনীয় সম্পদের মালিক। কিন্তু সরকারি বেতনে এত অর্থ উপার্জন সম্ভব না। তাদের বেশিরভাগ সম্পদই এসেছে বিভিন্ন অফ শোর একাউন্ট থেকে। সউদী আরবের এই ধনাঢ্য কিছু ব্যক্তির পেছনেই লেগেছেন যুবরাজ মোহাম্মেদ বিন সালমান, আর তাকে সমর্থন দিচ্ছেন তার পিতা ৮১ বছর বয়সী বাদশাহ সালমান। তিনি একটি বার্তা দিতে চান যে, ব্যবসার পুরনো রীতিনীতি আর চলবে না। সউদী আরবের এখন সংস্কার দরকার এবং একুশ শতকের সঙ্গে তাল মেলাতে একটি আধুনিক জাতি হয়ে ওঠা দরকার। এসব গোপন বা অফ শোর হিসাবের অর্থও পেতে চাইছে সউদী সরকার। অর্থের হিসাবে যা হবে আনুমানিক প্রায় ৮০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
কিন্তু এর শেষ কোথায়? দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল এর মধ্যেই জানিয়েছেন, প্রথম ধাপের মাত্র সমাপ্তি হয়েছে। তার মানে সামনে আরো অনেকে গ্রেফতার হতে যাচ্ছেন। যদিও ক্ষমতাসীন আল-সউদ পরিবার কখনোই প্রকাশ করেনি, দেশটির তেল বিক্রির কী পরিমাণ অর্থ রাজপুত্র বা রাজপরিবারের সদস্যদের পেছনে খরচ হয়, যাদের সংখ্যা কয়েক হাজার।
২০১৫ সালে যুবরাজ নিজেই ৫০০ মিলিয়ন ইউরো (৫০০০ কোটি টাকা) খরচ করে রাশিয়ান এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে একটি বিলাসবহুল ইয়াট কিনেছেন বলে শোনা যায়। এখন অনেক সউদী সাধারণ নাগরিকের আশা, বিত্তশালীদের এসব সম্পদ সাধারণ মানুষের পেছনেই খরচ করা হবে। যদিও এই তদন্তের শেষ ঠিক কোথায় হবে, তা পরিষ্কার নয়। তবে শুধু এসব বিষয়ই নয়, পুরো ঘটনার সঙ্গে ক্ষমতার যোগসূত্র আছে। ৩২ বছর বয়সী যুবরাজ মোহাম্মেদ বিন সালমান বা এমবিএস, যে নামেও তিনি পরিচিত, এর মধ্যেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোয় ক্ষমতা করায়ত্ত করেছেন। তিনি এখন বিশ্বের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি দেশে একটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা চালু করেছেন, যার উদ্দেশ্য দেশের তেল নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা।
পিতার প্রিয় পুত্র হিসাবে তিনি দেশটির সর্বময় ক্ষমতাশালী রাজকীয় আদালতও পরিচালনা করেন। তার ঘনিষ্ঠ মিত্রও রয়েছে। ওয়াশিংটন সফর এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিয়াদ সফরের পর হোয়াইট হাউজের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ইয়েমেনের সঙ্গে একটি লড়াই এবং কাতারের সঙ্গে ব্যর্থ বয়কটের সিদ্ধান্তের পরেও তিনি দেশের তরুণদের কাছে যথেষ্ট জনপ্রিয়।
তবে তার কিছু শত্রুও আছে। সউদী আরবের ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী যেমন কিছুটা শঙ্কায় রয়েছে। সাবেক বাদশাহ আব্দুল্লাহর নিয়ন্ত্রণে ছিল এই বাহিনী। এরপর থেকে তার ছেলে প্রিন্স মিতেব বিন আবদুল্লাহ পরিচালনা করতেন। কিন্তু গত শনিবার তাকে এই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে সমর্থনকারী গোষ্ঠী আর গোত্র নেতারাও সংশয়ে পড়ে গেছেন।
যুবরাজ জানেন, তিনি যেসব সংস্কার পরিকল্পনা নিতে যাচ্ছেন, অনেকেই তার বিরোধিতা করবে। তবে তিনি এখন কিছু উদাহরণ দেখাতে চান যে, তার পরিকল্পনায় যেই বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তাদের তিনি সরিয়ে দেবেন।
রাজকীয় পরিবারের অনেক সদস্যরা চিন্তিত যে, তিনি খুব তাড়াতাড়ি অনেক বড় পদক্ষেপ নিচ্ছেন। তবে তাদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ, দেশটির ধর্মীয় নেতারা এসব পদক্ষেপকে কীভাবে দেখবেন? যাদের সমর্থনের উপরে আল সউদ পরিবার অনেকটাই নির্ভরশীল। ক্ষমতা করায়ত্ত করার এসব প্রচেষ্টা আর নারীদের গাড়ি চালনার অনুমতি দেয়ার মতো বিষয়গুলো তারা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু পশ্চিমা ধাপের বিনোদন, সিনেমা হল চালুর মতো বিষয়গুলো তারা কীভাবে নেবেন, তা পরিষ্কার নয়। বিশেষ করে তরুণদের চাকরির যেসব প্রতিশ্রæতি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান দিয়েছেন, তা রক্ষা করাও তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এসব পদক্ষেপ কি উন্নত, স্বচ্ছ সউদী আরবের দিকে নিয়ে যাবে, নাকি দেশটিকে আরো জটিলতার দিকে ঠেলে দেবে, তা হয়তো সময়ই বলে দেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।