Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

শাহজাদা আল-ওয়ালিদের গ্রেফতার সউদী আরবে ক্ষমতাবলয় আরো সুদৃঢ় করার ইঙ্গিত

লস এঞ্জেলেস টাইমস ও আরটি | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সউদী কর্তৃপক্ষ শাহী পরিবারের কয়েক ডজন সদস্য, বর্তমান ও সাবেক সরকারী কর্মকর্তা এবং শীর্ষ ব্যবসায়ীদের আকস্মিক গ্রেফতারের ঘটনাকে দেশে অনেকদিন ধরে জেঁকে বসা দুর্নীতি নির্মূল এবং সংস্কার উদ্যোগে বাধা সৃষ্টির বিরুদ্ধে ব্যাপক পদক্ষেপ হিসেবে উপস্থাপন করছে। কিন্তু শনিবার দিনের শেষে সউদী রাষ্ট্রপরিচালিত বার্তা সংস্থা এসপিএ ও সউদী রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নেটওয়ার্ক আল আরাবিয়া প্রচারিত এ নাটকীয় শুদ্ধি অভিযানকে তরুণ যুবরাজ কর্তৃক সিংহাসনের সম্ভাব্য প্রতিদ্ব›দ্বীদের নির্মূল করে ক্ষমতাকে আরো সংহত করার সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
বাদশাহ সালমানের আনুক‚ল্যপ্রাপ্ত পুত্র ৩২ বছরের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তিন বছরেরও কম সময়ের মধ্যে দেশের অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সামাজিক সংস্কার ও পররাষ্ট্র নীতির প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। শনিবার আল আরাবিয়ার খবরে বলা হয়, যুবরাজের নেতৃত্বাধীন একটি নতুন দুর্নীতি -দমন কমিটির নির্দেশে কমপক্ষে ১১ জন শাহজাদা, ৪ জন বর্তমান মন্ত্রী এবং বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রীকে আগের রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের কারো নাম জানানো হয়নি। তবে তাদের মধ্যে সউদী বিলিওনিয়ার বিনিয়োগকারী শাহজাদা আল-ওয়ালিদ বিন তালাল রয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি বিশে^র অন্যতম ধনী ব্যক্তি। মার্কিন টুইটার, অ্যাপল ও সিটি গ্রæপের মত বড় কোম্পানিগুলোতে তার বিশাল শেয়ার রয়েছে। তাকে ‘অ্যারাবিয়ান ওয়ারেন বাফেট’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। তিনি প্রথম সউদী বাদশাহর একজন নাতি। ফোর্বস ২০১৭ সালে তাকে বিশে^র ৪৫তম ধনীর স্থানে আসীন করেছে। বøুমবার্গের বিলিওনেয়ার ইনডেক্সে তিনি আছেন বিশে^র ধনীদের মধ্যে ৫০তম স্থানে। বিভিন্ন সূত্রে তার সম্পদের পরিমাণ ১৮ বিলিয়ন থেকে ১৯ বিলিয়ন ডলার বলা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপারে তার ধারণা ছিল বিতর্কিত। নির্বাচনের আগে তিনি ট্রাম্পকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহবান জানান। কিন্তু নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তাকে অভিনন্দন জানান। অক্টোবর মাসে সিএনবিসি টিভির সাথে এক সাক্ষাতকারে শাহজাদা তালাল ট্রাম্পের প্রশাসন ব্যবস্থার প্রশংসা করেন।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বাদশাহ আবদুল্লাহর দু’পুত্রও রয়েছেন যাদের একজন ছিলেন সিংহাসনের সাবেক দাবিদার। তারা হচ্ছেন শনিবার এলিট ন্যাশনাল গার্ডের প্রধানের পদ থেকে অপসারিত শাহজাদা মিতেব বিন আবদুল্লাহ এবং তার ভাই রিয়াদের সাবেক গভর্নর শাহজাদা তুর্কি বিন আবদুল্লাহ। শাহজাদা মিতেবকে এক সময় সিংহাসনের দাবিদার হিসেবে দেখা হত।
আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তাৎক্ষণিক ভাবে জানা যায়নি। তবে আল-আরাবিয়া জানায়, কমিটি ২০০৯ সালে জেদ্দায় সঙ্ঘটিত ভয়াবহ বন্যায় ১শ’ জনেরও বেশি লোকের প্রাণহানির ঘটনা এবং মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (মারস) নামে পরিচিত প্রাণঘাতী মহামারির প্রেক্ষিতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ তদন্ত করে দেখছে। আটলান্টিক কাউন্সিলের রফিক হারিরি সেন্টার ফর দি মিডল ইস্ট-এ অনাবাসিক ফেলো মোহাম্মদ খালিদ আল ইয়াহিয়া বলেন, আটককৃত সবার ক্ষেত্রেই যে অভিন্ন কারণটি রয়েছে তা হল তারা সবাই সরকারী কেলেংকারি ও দুর্নীতি সমস্যার সাথে জড়িত যা সবাই জানে। তারা হচ্ছেন দুর্নীতির ‘পোস্টার চিলড্রেন’।
তিনি বলেন, এর মাধ্যমে যে বার্তা দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে ‘ এটা আর চলতে দেয়া হবে না।’
সউদী আরবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সময় এ গ্রেফতার অভিযান সঙ্ঘটিত হল যখন জনগণের কাছে এমবিএস নামে পরিচিত যুবরাজ অতি রক্ষণশীল দেশটির আধুনিকায়ন এবং তেলের উপর ঐতিহাসিক নির্ভরতা হ্রাসের উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তেলের মূল্য হ্রাস ও কৃচ্ছ্রতার শিকার দেশের তরুণ সমাজের ক্ষোভের মুখে দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষার লক্ষ্যে দেশের অর্থনীতির বহুমুখীকরণ ও সামাজিক বিধিনিষেধ শিথিল করতে তিনি ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেছেন।
লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকসে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ফাওয়াজ জারজিস বলেন, এমবিএস এ ভিশনকে সউদী অর্থনীতির জীবন-মরণের ব্যাপার বলে আখ্যায়িত করেছেন। তার মতে, এ ভিশনের প্রতি যারা অনুগত নয় তারা দেশের অগ্রগতি চায় না।
সউদী নেতারা বলেছেন, দুর্নীতি বিরোধী তদন্তের শুরু স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে। আরো বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দুর্নীতি সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসা জনগণকে শান্ত করার জন্য সংস্কার প্রয়োজন।
অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ রবিবার এক বিবৃতিতে বলেন, রাষ্ট্র কখনোই স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক মানদন্ডের কোনো লঙ্ঘন বরদাশত বা উপেক্ষা করবে না। জাতীয় রূপান্তরের গতি ও অগ্রসরমানতা দ্রুত করতে বিশ^শ্রেণির বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টি করতে কোনো কিছুই এবং কেউই আমাদের নিবৃত্ত করতে পারবে না।
যাহোক, এ অপ্রত্যাশিত গ্রেফতারের ঘটনা বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন করতে পারে। শাহজাদা আলওয়ালিদের বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান কিংডম হোল্ডিং -এর শেয়ার গ্রেফতােেরর খবরে ৯.৯ শতাংশ পড়ে গেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাপান যাওয়ার পথে শনিবার বাদশাহ সালমানের সাথে কথা বলেন। তবে তিনি গ্রেফতারের বিষয় উল্লেখ করেননি।
সাংবাদিকদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে হোয়াইট হাউস রোববার বাদশাহ সালমানের সাথে ট্রাম্পের ফোন কলের বিশদ বিবরণ প্রদান করে। এতে দেখা যায়, উভয় পক্ষ বাদশাহ সালমান নিউইয়র্ক সিটিতে হামলায় ৮ ব্যক্তি নিহত হওয়ায় তার শোক জ্ঞাপন কর্নে। তারা ইসলামিক স্টেট, ইয়েমেন থেকে রিয়াদে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র সাফল্যের সাথে ধ্বংস করা, সউদী আরবের মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় এবং জাতীয় তেল কোম্পানি আরামকোর শেয়ার জনগণকে দেয়া নিয়ে আলাপ করেন। ফোন কলে গ্রেফতার বিষয়ে কোনো কথা হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে ছিল না।
সউদী প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) জানায়, বাদশাহ সালমান জনস্বার্থের উপর নিজেদের স্বার্থকে স্থান দেয়া কিছু খারাপ লোকের দুর্নীতি মোকাবেলায় নতুন দুর্নীতি দমন কমিটি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়ার কয়েক ঘন্টা পর গ্রেফতারের কথা জানা যায়। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিটিকে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি, একাউন্ট বন্ধ, বরখাস্ত করা এবং আটককৃত সম্পদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।
সউদী টুইটার একাউন্টসের বিলি করা বেসরকারী তালিকা অনুযায়ী গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আরো রয়েছেন প্রধান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেমন ন্যাশনাল এয়ারলাইন, মিডলইস্ট ব্রডকাস্টিং সেন্টার (এমবিসি) এবং রোটানা এন্টারটেইনমেন্ট গ্রপ-এর প্রধানগণ।
এই ধরপাকড়ের প্রতি সউদী আরবের শীর্ষ ধর্মীয় নেতারা সমর্থন জানিয়েছেন। তারা বলেন, ইসলামী শারিয়া দুর্নীতি দমনের নির্দেশ দিয়েছে। দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাদের কাউন্সিল এক টুইট বার্তায় বলেছে, দুর্নীতি দমন অভিযান সউদী আরবের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের মতই গুরুত্বপূর্ণ।
দেশের বহু টুইটার ব্যবহারকারীর কাছে এ গ্রেফতার অভিযান জনপ্রিয়তা পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সউদী দৈনিক শারক আল-আওসাতের লেখক সালমান দোসারি এক টুইট বার্তায় বলেন, সউদী আরবে দুর্নীতি দমন অভিযান রাষ্ট্রপ্রধানের জোরালো সমর্থন পেয়েছে। এর পরে আর কেউ দুর্নীতি করতে পারবে না।



 

Show all comments
  • Bilal Hosain ৭ নভেম্বর, ২০১৭, ২:২২ এএম says : 0
    I think that will be good for Saudi Arab
    Total Reply(0) Reply
  • মিলন ৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:২৪ পিএম says : 0
    সৌদি আরবের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • ফজলুল হক ৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:৫৪ পিএম says : 0
    হে আল্লাহ তুমি সউদী আরবের প্রতি রহমত নাযিল করো।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. maruf ahmed ১০ নভেম্বর, ২০১৭, ৮:৪৬ এএম says : 0
    i am Happy for This islamic low
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সউদী

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ