Inqilab Logo

বুধবার, ০৫ জুন ২০২৪, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

নাটোরে স্বর্ণপট্টিতে এসিডের ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে দুইশতাধিক পরিবার

| প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাটোর জেলা সংবাদদাতা : নাটোরে এসিড নিঃসৃত ধোঁয়া কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবেশের জন্য। শহরের গড়ে ওঠা অধিকাংশ জুয়েলার্স কারখানার মালিকরা তোয়াক্কা করছে না এসিড ব্যবহারের বিধি নিষেধ। কারখানাগুলো থেকে দিনরাত নির্গত হচ্ছে এসিড পোড়ানোর গ্যাস। গ্যাসের তীব্র বিষক্রিয়ায় শহরের কাপুড়িয়াপট্টি, পিলখানা ও লালবাজার এলাকায় বসবাসকারী অন্তত দুইশতাধিক পরিবারের লোকজন রয়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, চর্মরোগ, চক্ষুসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এখানকার মানুষ। এ ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশী রয়েছেন খোদ স্বর্ণ শিল্প কারিগররা ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এখানকার অধিকাংশ জুয়েলারী কারখানার পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। এসিড ব্যবহারের বিধি মানছেন না কেউ। এসিডের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে স্মারকলিপি ও জুয়েলারী মালিক সমিতিকে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পায়নি এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, এখানকার কারখানার কাজে ব্যবহৃত নাইট্রিক এসিড ও সালফিউরিক এসিড নিঃসৃত ধোঁয়া কারখানার স্বল্প দৈর্ঘ্য পাইপ দিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে পাশের বাড়িঘরে। দরজা-জানালা বন্ধ করেও রক্ষা পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। ফলে জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। লালবাজার এলাকার আব্দুর রাজ্জাক জানান, এসিডের ধোঁয়ায় শুধু বাতাসই বিষাক্ত হচ্ছেনা, এলাকার গাছপালার ফল, পাতাও বিবর্ণ হয়ে পড়ছে। টিনের বাড়ীর চালাগুলো রাসায়নিক প্রভাবে ঝাঁঝরা হয়ে ঝড়ে পড়ছে । শহরের চৌকির পাড় এলাকার খোকন সাহা জানান, অনেক মালিক ও কারিগর রাস্তার ধারে এসিড দিয়ে সোনা গলানোর কাজ করেন। ফলে এসিডের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন থাকে। এসিডের ঝাঁঝে পথ চলতে খুব কষ্ট হয়। এসময় নিশ্বাস নিতেও অসুবিধা হয়। নাটোর জর্জ কোর্টের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটার অ্যাডভোকেট মাসুদ হাসান জানান, আইন অনুযায়ী রাস্তার ধারে এসিডের ব্যবহার করা বেআইনি। একটি নির্ধারিত ঘরে ব্যবহারসহ ধোঁয়া নির্গমনে কমপক্ষে ১০০ ফিট পাইপ দিয়ে উপর দিকে প্রবাহিত করতে হবে। যাতে এসিডের ধোঁয়া মানুষের নাকে না লাগে বা মানুষের কোন ক্ষতি না হয়। স্বর্ন কারিগর অঞ্জন জানান, কারখানায় কাজ করতে গেলে নাক মুখ জ্বালাপোড়া করে। এ কাজে কোন জটিল রোগ হতে পারে এমন আশঙ্কা নিয়েই শুধু জীবন কাটানোর জন্য এ কাজ করতে হয় তাদের। স্থানীয় এসিড ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী জানান, প্রতি মাসে অন্তত তিন টন এসিড বিক্রি করে থাকেন। এর মধ্যে জুয়েলার্স কারখানায় মাসে অন্ততঃ পাঁচ থেকে ছয় মন এসিড ব্যবহার করা হয়। নাটোর জেলা জুয়েলার্স মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ভবেশ চন্দ্র চক্রবর্ত্তী জানান, এসিড ব্যবহারে জেলা প্রশাসন থেকে লাইসেন্স নেয়া থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অনেকের অনুমতিপত্র নেই। স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সমিতির পক্ষ থেকে সকল রকম এসিড ব্যবহার কারীকে নিষেধ করা হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা সরকার শফিকুল ফেরদৌস জানান, এসিডের ধোঁয়া মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক। এই ধোঁয়ার কারণে মানুষের শ্বাস কষ্ট, চর্মরোগ হতে পারে। এমনকি হৃদরোগ সহ নানা ধরনের শারিরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগের পরিচালক মামুনুর রশীদ জানান, আবাসিক এলাকায় কোনভাবেই এসিড পোড়ানো যাবে না। নিয়মানুসারে প্রত্যেক কারখানা স্থাপনের সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতিপত্র নিতে হবে। নাটোরের অনেক কারখানায় অনুমতি নেই। এসব অবৈধ কারখানার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেন। জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন জানান, এব্যাপারে কোন অভিযোগ পাননি তিনি জানান, অভিযোগ পেলে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলা হবে এবং তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণসহ সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরিবার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ