Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বছরের শেষ ম্যাচ রাঙাবে তো?

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আজ একটি জায়গায় একই সূঁতোয়া গাঁথা বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ইস্ট লন্ডনের বাফেলো পার্কে সিরিজের শেষ ওয়ানডেটিই হতে যাচ্ছে এই ফরম্যাটে দল দুটোর শেষ ম্যাচ। ২০১৭ সালের বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ ওয়ানডেটি রাঙাবে তো? এমন প্রশ্নও এখন শঙ্কা নিয়ে করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। প্রশ্নটার ভেতরেই যেন লুকিয়ে আছে উত্তরের খানিকাট। যেখানে গত দু’বছর ধরে ক্রিকেট বিশ্বে নতুন এক পরাশক্তি হিসেবেই নিজেদের জাত চিনিয়েছে মাশরাফি, মুশফিক, সাকিবরা। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়েই যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট।
টেস্ট সিরিজের আগে তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে শুরু, একে একে দুই টেস্টে ভরাডুবির পর দুই ওয়ানডেতেও লজ্জার হারে সিরিজ খুইয়ে হতাশার এক চিত্রনাট্যই রচিত হয়েছে প্রোটিয়া সফরে। সেই নাটকের ম্যান্যুস্ক্রিপ্টে আছে কোচ-ক্রিকেটার রোমাঞ্চকর দ্ব›দ্ব, আছে ইনজুরির ট্র্যাজেডি, আছে প্রাপ্তির হাসির ঝিলিকও। তবে নায়ক মুশফিকের সেসব জারিজুরি আড়াল হয়ে যাচ্ছে খলনায়ক ডি ভিলিয়ার্স, ডি কক, আমলাদের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে। যাদের কল্যাণে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০ ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলেছে প্রোটিয়ারা। তবুও শেষ ম্যাচে জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামবে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। প্রোটিয়াদের লক্ষ্য হোয়াইটওয়াশ হলেও বাংলাদেশ তা এড়াতে মরিয়া।
দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশের পর রঙ্গীন পোশাকেও নিজেদের সেরাটা ধরে রেখেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরমেন্স প্রর্দশন করেছে প্রোটিয়ারা। কিম্বার্লিতে প্রথম ওয়ানডেতে দুই ওপেনার কুইন্ট ডি কক ও হাশিম আমলার ব্যাটিং দৃঢ়তায় ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে জয়ের স্বাদ নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর পার্লে ১৭৬ রানের দানবীয় ইনিংস খেলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১০৪ রানের জয় এনে দেন সাবেক অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স। ফলে এক ম্যাচ আগেই ওয়ানডে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ফেলে প্রোটিয়ারা। এবার বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশের সুযোগ পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এমন সুযোগ কাজে লাগানোর কথাই বললেন প্রোটিয়া দলের ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি, ‘আমরা ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের চে’া করবো। আমরা কোন দলকে ছোট করছি না এবং বাংলাদেশ গেল কয়েক বছর ধরে নিজেদের সেরা ক্রিকেটই খেলছে। সম্প্রতি টেস্ট ফরম্যাটে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে তারা। এমনকি কয়েক বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিজেদের মাটিতে দু’টি ওয়ানডেতেও হারিয়েছিলো। তাই বাংলাদেশকে শক্ত প্রতিপক্ষ ভেবেই তৃতীয় ওয়ানডের জন্য আমাদের পরিকল্পনা সাজিয়েছি। সেরা পারফরমেন্স দেখিয়ে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেও জিততে চাই আমরা।’
ওয়ানডে ম্যাচের প্রথম ম্যাচে মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৭৯ রানের টার্গেট দিয়েছিলো বাংলাদেশ। অপরাজিত ১১০ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন তিনি। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও কথা বলেছে মুশির ব্যাট। ৬০ রানের ইনিংস এসেছিলো তার ব্যাট থেকে। কিন্তু দলের অন্যান্য ব্যাটসম্যানরা ব্যাট হাতে নিজেদের মেলে ধরতে পারছেন না। শুরুটা ভালো করেও তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ-সাকিব-সাব্বিররা। ব্যাটসম্যানদের চেয়ে বোলারদের ব্যর্থতা আরও বেশি। প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কোন উইকেটই শিকার করতে পারেনি টাইগাররা বোলাররা। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৬ উইকেট শিকার করলেও, ডি ভিলিয়ার্স ততক্ষণে যা ক্ষতি করার করে দিয়েছেন বাংলাদেশের।
বোলারদের এমন ব্যর্থতার পেছনে ফিল্ডারদের অবদান সবচেয়ে বেশি। ক্যাচ ড্র’পের সাথে আন্ডারআর্ম ফিল্ডিং মিসের কাজটা বেশ দক্ষতার সাথেই করেছেন তারা। এই সুযোগে জীবন পেয়ে নিজেদের ইনিংসটা বড় করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা। তবে ব্যাটিং-এর সময় দক্ষিণ আফ্রিকার ফিল্ডারদের হাতে জীবন পেয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও। কিন্তু তারপরও নিজেদের বড় করতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ-সাকিব-সাব্বিররা। শেষ ওয়ানডেতে সুযোগ আছে বলে দ্বিতীয় ম্যাচ শেষে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, ‘আমাদের জন্য এখনো একটা সুযোগ আছে। আমরা দল হিসেবে ভালো খেলতে পারছি না। একজন-দু’জন ভালো খেললে হবে না। সবাইকে এক সাথে ভালো খেলতে হবে। দ্বিতীয় ম্যাচে ইমরুল-মুশফিক ভালো ব্যাটিং করেছে, কিন্তু অন্যরা পারেনি। বোলিং-এ রুবেল-সাকিব ভালো করেছে। তবে অন্য বোলাররা ব্যর্থ।’
ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত ৪টি ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এরমধ্যে ৩টি প্রোটিয়ারা ও ১টি বাংলাদেশ জয় করে। ৩টি সিরিজের সবক’টিতেই বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করেছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। এ বছরের শেষ ওয়ানডেটি কি পারবে মাশরাফির দল নিজেদের ফিরে পেতে?

ম্যাকেঞ্জি বলেই বুঝলেন বাংলাদেশের সমস্যাটা
স্পার্টস ডেস্ক : অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকায় যথেষ্ট ক্রিকেট না খেলা উপমহাদেশের একটা দলের বাড়তি গতি আর বাউন্সে ভোগাই স্বাভাবিক। ফাফ দু প্লেসিদের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রতিদ্ব›িদ্বতা গড়তে না পারা তাই নিল ম্যাকেঞ্জির কাছে অনুমিত। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং কোচ দিয়েছেন সফর বাড়ানোর পরামর্শ।
২০০৮ সালের পর এই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করছে বাংলাদেশ। জাতীয় দলের অমন লম্বা বিরতিতে নিয়মিত ‘এ’ দল, অ্যাকাডেমি ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে পাঠানোর পরামর্শ ম্যাকেঞ্জির, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে খেলা কঠিন। উপ মহাদেশের সব দল দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে বাড়তি গতি আর বাউন্সের জন্য সংগ্রাম করে। আমার মনে হয়, কন্ডিশনের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মানিয়ে নিতে হবে আর এখানে বারবার সফর করতে হবে। বেশি বেশি সফর হতে পারে এখানে মানিয়ে নেওয়ার আর ভবিষ্যতে এখানে ভালো খেলার সমাধান।’
মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ ও ইমরুল কায়েস ছাড়া বাংলাদেশের বর্তমান দলের আর কারোর দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলার অভিজ্ঞতা নেই। তারা যে অনেক ম্যাচ খেলেছেন এমনও নয়। সাব্বির রহমান, সৌম্য সরকার, লিটন দাসরা খেলছেন প্রথমবারের মতো। ম্যাকেঞ্জি মনে করেন, এই সফর দিয়ে প্রথম বড় বাধার মুখোমুখি হলেন বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটাররা, ‘বাংলাদেশের অনেক ব্যাটসম্যান তরুণ, ওরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে লড়ছে। আমার মনে হয় না, ওরা অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকায় যথেষ্ট সফর করেছে। আমার মনে হয়, এই দুই দেশ সফরে ওদের জন্য সবচেয়ে বড় ব্যাপার হবে গতি, বাউন্স আর আগ্রাসী ক্রিকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। উপমহাদেশে আপনি স্পিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন। দক্ষিণ আফ্রিকা আর অস্ট্রেলিয়ায় আপনাকে গতি আর বাউন্সের ব্যাপারে আগ্রাসন আর ভীতিরও মুখোমুখি হতে হবে।’
কিম্বার্লিতে প্রথম ওয়ানডেতে মুশফিকের ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ ম্যাকেঞ্জি। পার্লে মুশফিক আর ইমরুলের ফিফটিতে দেখেন উন্নতির আভাস। ব্যাটিং কোচ মনে করেন, লড়াই করতে হলে দল হিসেবে নিজেদের মেলে ধরতে হবে অতিথিদের, ‘যখন আপনি দেশের বাইরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলবেন তখন একটা বা দুইটা পারফরম্যান্স যথেষ্ট নয়। পুরো দলের এগিয়ে আসতে হবে এবং ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। বোলিং আর ব্যাটিং দুই ইউনিটকেই পারফরম করতে হবে। এক জনের গড় ৫০, অন্য জনের ২০, এটা দক্ষিণ আফ্রিকায় কাজ করবে না। দুই-তিন জনের পঞ্চাশ গড় লাগবে, দুই-তিন জনের ত্রিশ গড় হতে হবে, তাহলে আপনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ওয়ানডে


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ