চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
\ ছয় \
বিনোদন তার অনুগামী মাত্র। এ থেকে আমরা কয়েকটি বিষয় বুঝতে পারি। যখন মানবজীবনের আবশ্যিক কাজের সাথে বিনোদনমূরক কর্মকান্ডের বিরোধ দেখা দেয়, তখন আবশ্যিক কাজই প্রাধান্য পাবে। আবু বারযাহ আল আসলমী রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল স. ইশার নামাজের পূর্বে ঘুমানো পর্যন্ত এবং তার পরে বিনা প্রয়োজনে জাগ্রত থেকে গল্প করাকে অপছন্দ করতেন। এ হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফিজ ইবনু হাজর আল আসকালানী রাহ. বলেন. সালাতুল ইশার পূর্বে ঘুমানোকে রাসূল স. অপছন্দ করার কারণ হলো, এর মাধ্যমে হয়ত সালাতের ওয়াক্তই ছুটে যাবে। একই ভাবে সালাতুল ইশার পরে অহেতুক গল্পগুজব ব্যাক্তির সালাতুল ফাজর কাযা হয়ে যাওযার কারণ হবে অথবা মুস্তাহাব ওয়াক্ত চলে যাবে।
উপর্যূক্ত আলোচনা থেকে জানা যায়, মানুষের শরীরের আরাম ও প্রশান্তির জন্যে ঘুম যদি ফরজ সারাত আদাযে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, তাহলে সে ঘুমকে ইসলাম পছন্দ করে না। অপরদিকে শালনি ও সত্যাশ্রয়ী গল্প বলা বিনোদনের একটি অংশ হলেও সে গল্প যেন সালাতের কোনো ক্ষতি না করে সে দিকেও গুরুত্ব দিয়েছেন। আবশ্যকীয় কাজকর্ম আর বিনোদনমূরক কর্মকান্ডের পরিমাণ সমান হবে না। মানুষের জীবনটাই হলো আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত এক বড় আমানত। এ জীবনের আসল ব্রত হলো স্রষ্টা কর্তৃক দায়িত্বসমূহ সঠিকভাবে আদায় করা। মূল্যবান এ জীবনের বিরাট অংশজুড়ে বিনোদনে কাটানো ইসলাম সম্মত নয়। বিনোদন মানুষকে আসল দায়িত্ব পালনে সহাযতা করবে শুধু মাত্র। এ ক্ষেত্রে সীরাতুল রাসূল স. আমাদেরকে সঠিক নির্দেশনা দান করে। সাইয়িদুনা আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ স. বলেন: তুমি অধিক হেসো না, কারণ অধিক হাসি অন্তরকে নির্জীব করে দেয়। এ হাদীস থেকে জানা যায়, হাসি মূলত বৈধ। তবে এ ক্ষেত্রে সীমালংঘন করাকে রাসূলূল্লাহ স. পছন্দ করেননি। একবার সিমাক রা. জাবির রা. কে লক্ষ্য করে বললেন: আপনি কি রাসূল স. এর সাথে উঠাবসা করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ রাসূল স. দীর্ঘ সময় চুপ থাকতেন, কম হাসতেন। তার সাহাবীগণ তার উপস্থিতিতে কবিতা বলতেন এবং তাদের ব্যক্তিগত এমন কিছু বিষয় আলোচনা করতেন, যার ফলে সকলে হাসতেন এবং রাসূলুল্লাহ স. অধিকাংশ সময় মুচকি হাসতেন। এ হাদীস থেকেও জানা যায় যে, হাসি কিংবা রসাত্মক কোনো কথা স্বল্প পরিসরে করা যায়, এর জন্য বেশি সময় ব্যয় করা ঠিক নয়।
বিনোদনমূলক ব্যবস্থা কোন মতেই ইসলামী শরীআতের মূলনীতির পরিপন্থি হতে পারবে না। বিনোদনের এ মূলনীতিটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম যে সমস্ত কথা, কাজ আচার আচরণ ও তৎপরতা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, তা কখনো বিনোদনের উপায় হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। এককথায়, এ ক্ষেত্রে শরীআতের মূলনীতির বিরোধিতা থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন- এমন পন্থায় বিনোদন না করা, যাতে অন্যের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রæপ বা নিন্দা করা হয় অথবা কারো প্রতি ভয় প্রদর্শন কিংবা অন্যের সম্পদ নষ্ট না করা হয়।
মুমিনগন কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে, কেননা সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। আর কোন নারী যেন অপর নারীদের উপহাস না করে, কেননা হতে পারে তারা তাদের চেয়ে উত্তম। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারূপ কর না। এবংঅপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাকে মন্দ নামে ডাকা গুনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তাওবা না করে তারাই যালিম। মুমিনগন, তোমরা অনেক ধারণা করা থেকে বেঁচে থাকো, নিশ্চয় কতক ধারণা গুনাহ এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না, তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করতে পারবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।
উপর্যুূক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইমানদারদেরকে কিছু বিষয় থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেগুলো হলো: কারো প্রতি ঠাট্রা বিদ্রæপ করা। কাউকে মন্দ নামে ডাকা। কারো ব্যাপারে অহেতুক কু ধারণা পোষণ করা। কারো দোষ অšে¦ষণ করা। পরনিন্দা করা।
তামাশাচ্ছলে অন্যের সম্পদ গ্রহণ করা প্রসঙ্গে রাসূল স. বলেন- অবশ্যই তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের সম্পদ (দ্রব্য সামগ্রী) খেলাচ্ছলে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে নিয়ে না ফেলে। কোন মুসলিমকে ভয় দেখানো সম্পর্কে তিনি বলেন-কোনো মুসলিমই অপর মুসলিমকে ভয় দেখানো বৈধ নয়। এমন বিনোদন না করা, যাতে অপর ভাইকে কথায় বা কাজে, শারীরিক বা মানসিক কিংবা আর্থিকভাবে কষ্ট দেয়া হয়। মহান আল্লাহ বলেন: যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ পাপের বোঝা বহন করবে। রাসূল স. ইরশাদ করেন, মুসলিম যে ব্যক্তি যার মুখ ও হাতের কষ্ট থেকে অপর মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে।
সুতরাং বিনোদনের নামে এমন কর্মকান্ড কখানো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, যা নানাভাবে মানুষকে কষ্ট দেয় কিংবা কষ্টের কারণ হয়। আমাদের সমাজে দেখা যায়, বিনোদনের নামে আয়োজিত কর্মসূচীগুলো অনেক সময় মানুষের ইবাদত বন্দেগী পালনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, অসুস্থ ব্যক্তিকে অস্তির করে তোলে ৃবা মানুষের আরামের ঘুমকে দূর করে দেয়। আবার কোনো কোনো সময় যুব সমাজকে অধ্যয়নের মহান ব্রত থেকে বিচ্যূত করে চরিত্রহীনতার দিকে নিয়ে যায়। এসব কিছু ইসলাম প্রবর্তিত বিনোদন ব্যবস্থার সম্পূর্ণ পরিপন্থি।
বিনোদনের ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় না নেওয়া এ প্রসঙ্গে রাসূল স. বলেন, ঐ ব্যক্তির জন্যে ধবংশ যে মানুষকে হাসাবার জন্যে এমন কথা বলে, যাতে সে মিত্যার আশ্রয় নিয়েছে। উপর্যুক্ত হাদীস থেকে জানা যায় মানুষকে আনন্দ বা খুশি করার জন্যে মিথ্যা গল্প গুজব বলা বা ঘটনা বর্ণনায় মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করা জায়িয নেই।
বিনোদনের যেন এমন না হয়, যাতে সম্পদের অপচয় হয় ঃ পবিত্র কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিভঙ্গি হলো- যে কোনো বৈধ কাজেও যদি কেউ অপ্রয়োজনীয় খরচ করে, তা অপচয় হিসেবে গণ্য হবে। অতএব, যদি অবৈধ বিষয়ে অল্পও খরচ করে, তাহলে তাও অপচয় বলে বিবেচিত হবে। প্রথমটিকে কুরআনের ভাষায় ইসলাফ এবং দ্বিতীয়টিকে তাবযীর বলা হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন: আত্মীয় স্বজনকে তার হক দান কর এবং অভাবগ্রস্থ ও মুসাফিরকে ও এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানে ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। আল কুরআনের উপর্যুক্ত আয়াতের মাধ্যমে আত্মীয় স্বজন, অসহায় ও মুসাফিরদের জন্যে ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে। মানুষের আয় রোজগার থেকে এসব জরুরী খাতে ব্যয়ের সীমারেখা যেখানে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে এ কথাই বলা বাহুল্য যে, বিনোদনের মত মুবাহ একটি বিষয়ে অযথা ব্যয় মোটেই ইসলামে অনুমোদিত হতে পারে না। বিনোদন যেন নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার মাধ্যম না হয়।
ইসলাম নারী পুরুষের অবাধ সংমিশ্রণকে হারাম ঘোষণা করেছে। বিনোদনের নামে নাররূ পুরুষের অবাধ মেলামেশার মাধ্যমে অনৈতিক কাজে জড়ানো ইসলাম স্বীকৃত বিনোদন নয়। ইসলামের শিক্ষা হলো, পুরুষ তার নিজস্ব পরিমন্ডলে বিনোদন উপভোগ করবে। পক্ষান্তরে নারী নিজ নিজ পরিধিতে ইসলামের সীমারেখা মেনে বিনোদন উপভোগ করতে পারবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তোমরা তাঁদের (নবী পত্মীদের) কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে।
উপর্যুক্ত আয়াতে বিশেষভাবে নবী স. এর পত্মীগণের উল্লেখ থাকলে ও বিধান সমগ্র উম্মতের জন্যে প্রযোজ্য। এ বিধানের সারমর্ম এই যে, নারীদের কাছ থেকে ভিন্ন পুরুষের কোন ব্যবহারিক বস্তু, পাত্র, বস্ত্র ইত্যাদি নেয়া জরুরী হয়ে পড়লে সামনে এসে নেবে না; বরং পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে। এ থেকে জানা যায়, নারী পুরুষের সংমিশ্রণ তথা অবাধ মাখামাখি কিংবা পর্দাহীনভাবে উঠাবসা বা চলাফেরা ইসলামে নিষিদ্ধ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।