শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
কুতুবউদ্দিন আহমেদ
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
একটি মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ের বন্দ্যোবস্ত হয়। কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হয় নি। মামার অতি চালাকির কারণে এবং নির্লজ্জভাবে অস্বাভাবিক যৌতুক চাওয়ার কারণে বিয়েটা ভেঙে যায়। কিন্তু বিয়ে ভেঙে গেলেও মেয়েটিকে মন থেকে দূরে সরাতে পারে নি। মেয়েটির সৌন্দর্য এবং আচরণ তাকে বিশেষ মুগ্ধ করেছে। কোনোভাবে মেয়েটিকে সে ভুলতে পারে না।
যুবকটি ভাবে, মেয়েটিকে জীবনে না পেলেও জীবনে তো সে এসেছিল; সে যে কোনোভাবেই হোক; এ-ও তো এক পরম ভাগ্য। এমন নিষ্পাপ, শুচিশুভ্র একটি মেয়ের সঙ্গে অন্তত কিছু একটা তো ঘটেছে তার। জীবনে এ-ও কম কী! হোক না তা বিরহ। এই বিরহও তো তার জীবনে ছিল না। বিরহই হোক তবুও তো সে জীবনে কিছু একটা দিয়েছে। এই বিরহই তার জীবনে পরম সম্পদ।
এই বিরহই এই যুবকের জীবনের নতুন একটি দুয়ার, নতুন একটি চক্ষু খুলে দিয়েছে। এই মেয়েটির সংস্পর্শে না এলে সে হয়তো জীবনের এই অনুভূতি থেকে চিরকাল বঞ্চিতই থেকে যেত। সে কীভাবে জানতো যে বিরহও একপ্রকারের সুখ; জীবনে বিরহও চরম তৃপ্তিময় উপভোগ্য। সে নিজের ভেতরে নিজে বিরহ উপভোগ করে। আহা! এই সুখের বিরহ জীবনে কেন আগে ধরা দেয় নি।
ফুল ভ্রমরের আবির্ভাবে জীবনে ধন্য হয়, তার জীবন ফলবতী হয়ে ওঠে; সার্থক হয়ে ওঠে। বৈজ্ঞানিকভাবেই সত্য যে, ফুলে ভ্রমর না বসলে পরাগায়ন ঘটে না। আর ফুলে পরাগায়ন না ঘটলে ফুল থেকে ফলেরও কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলহীন ফুল নীরবে ঝরে গিয়ে মাটির সঙ্গে মিশে যায়।
যুবকটিরও জীবন ধন্য হয়েছে জীবনে মেয়েটির আগমনে; মেয়েটির সঙ্গে সামান্য পরিচিত হতে পেরেই জীবনে নিজেকে সে ধন্য মনে করেছে; জীবনটাকে সার্থক মনে হয়েছে।
জীবনশিল্পী রবীন্দ্রনাথ যুবকটির জীবনের এই বিষয়টিকেই তুলে ধরেছেন এভাবে ঃ ইহা সেই ফুলের মতো যাহার বুকের উপরে ভ্রমর আসিয়া বসিয়াছিল, এবং সেই পদক্ষেপের ইতিহাস তাহার জীবনের মাঝখানে ফলের মতো গুটি ধরিয়া উঠিয়াছে।
এখানেই রবীন্দ্রনাথ সার্থক; এখানেই রবীন্দ্রনাথ শুধু একজন; অতুল্য। তাঁর এমন নির্মোহ জীবনবোধ সত্যি ভাবনা উদ্রেককারী। সত্যিকার অর্থে মানুষের জীবনের শিক্ষা কালে-কালে এখান থেকেই নেয়া উচিত; জীবনের মূল্য এখান থেকেই গ্রহণ করা উচিত।
রবীন্দ্রনাথ আমাদের জাতীয় জীবনে কতটা প্রাসঙ্গিগ! এই যে আজকাল আমাদের চারপাশে এতো এতো প্রতিহিংসা। নারীর সামান্য প্রত্যাখানে পুরুষেরা কতটা হিং¯্র হয়ে ওঠে। প্রত্যাখান বিষয়টাকে আজকালকার পুরুষেরা চরম অপমানের বিষয় বলে মনে করে; মানতেই চায় না একটা মেয়ে তাকে প্রত্যাখান করতে পারে। একটা মেয়েরও যে গ্রহণ-প্রত্যাখানের অধিকার আছে আজকালকার পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তা মেনে নিতে পারে না। চোখ খুললেই, পত্রিকার পাতা ওল্টালেই এই উদাহরণ আমরা দৈনিক কয়েকশত দেখতে পাই।
অথচ রবীন্দ্রনাথ শত বৎসর পূর্বে যে যুবকের চরিত্র সৃষ্টি করেছেন, সে যুবক নারীর প্রত্যাখান মেনে নিয়েছে অবলীলায়। নারীর চরম প্রত্যাখানও সেই যুবক হাসিমুখে মেনে নিয়েছে; সামান্য প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় নি। বরং বুকের ভেতরে সেই নারীর জন্য তুলে রেখেছে সম্মান, পুষে রেখেছে ভালোবাসা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।