Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সবজিতে অভাবনীয় ফলন

বন্যামুক্ত দক্ষিণ-পশ্চিমে রেকর্ড বৃষ্টি আশীর্বাদ

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এবার বর্ষা মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। অঞ্চলটি বন্যামুক্ত। বৃষ্টিতে সামগ্রিক কৃষির ক্ষতির চেয়ে লাভ হয়েছে বেশী। সারাদেশের মোট চাহিদার সিংহভাগ যোগানদাতা যশোরসহ ভেজিটেবল জোনে অফসিজনে অভাবনীয় ফলন হয়েছে সবজির। কয়েকদিন থমকে থাকলেও এখন মাঠে মাঠে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসালন অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ চন্ডিদাস কুন্ডু গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এবার বন্যা হয়নি। বৃষ্টি হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ। বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চলের সবজি, রোপা আমন ও রোপা আউশসহ ফসলাদির ক্ষতি হয়েছে ঠিকই কিন্তু ক্ষতির চেয়ে সামগ্রিকভাবে কৃষির লাভ হয়েছে বেশী। বৃষ্টির পর আপল্যান্ডের সবজির ক্ষেত তরতাজা হয়েছে। ফলন হয়েছে অভাবনীয়। যশোরসহ এই অঞ্চলে বারোমাসই সবজি আবাদ ও উৎপাদন হয়। এবার গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন সবজির বাইরে অফসিজনে প্রচুর সবজি উৎপাদন করে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যায় সবজির ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় ভেজিটেবল জোনের কৃষকরা অফসিজনে প্রচুর সবজি উৎপাদনে মাঠে নেমে বিরাট সফলতা অর্জন করেছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাসহ সারাদেশে সবজি সরবরাহ হচ্ছে এই অঞ্চল থেকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা বর্ষা মৌসুমে প্রায় সবসময় মাঠে থেকে কৃষকদের নিত্যনতুন কৌশলে সবজি আবাদ ও উৎপাদনে উৎসাহ দিয়েছেন। কৃষকরাও নতুন উদ্যোমে মাঠে নেমে আশানুরূপ ফল পেয়ে খুবই খুশী।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোরের উপ-পরিচালক ড. সুনীল কুমার রায় জানান, মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিতে নীচু এলাকার আড়াই হাজার হেক্টর জমির ধান, সবজি, কাঁচা মরিচ নষ্ট হয়েছে। তবে তার মধ্যে ১হাজার ৩শ’ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান রিকোভারি করা গেছে। জরুরিভাবে নাবিজাতের বীজ থেকে মাত্র ১৫দিনে চারা রোপন করা গেছে। সেজন্যই ক্ষতির পরিমাণ একেবারেই কম। বরং সামগ্রিকভাবে কৃষির জন্য আশীর্বাদ হয়েছে বৃষ্টি। তবে রোপা আউশ ও সবজির ক্ষেত্রে এটি হয়নি।জোনটিতে মাত্র দুটি জেলা যশোর ও মাগুরায় ৫শ’৭৩ হেক্টর জমির সবজি সম্পুর্ণ ক্ষতি হয়েছে। যা আবাদের তুলনায় সামান্য। কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের দেয়া তথ্যানযায়ী চলতি মৌসুমে গোটা অঞ্চলে ৪৫হাজা ৬৮ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে। সুত্র জানায়, এবারের বৃষ্টি হয়েছে থেমে থেমে। অবিরাম বর্ষণ হয়নি। রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি বেশী হলেও দেখা গেছে দিনে কোথাও ১০ মিলিলিটার হয়েছে, আবার পরদিন সেখানে হয়নি। তাতে বৃষ্টির পানি মাটিতে চুষে নেওয়ার সুযোগ হয়েছে। নিম্নাঞ্চল ভবদহ এলাকার মণিরামপুর, অভয়নগর ও কেশবপুরে যেটি হয়েছে সেটি নদী ও বিলের পানি সেইসাথে অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের অভাবে পানিবদ্ধতায়। ওই ৩টি এলাকায় সবজির আবাদ এমনিতেই কম হয়।
সংশ্লিষ্ট সুত্র যশোরের বারীনগর, খাজুরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের ভেজিটেবিল জোনের চিত্র বর্ণনা করে জানায়, শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও বাড়ীর আঙ্গিনায় এক ইঞ্চি জমিও কেউ ফেলে রাখেনি। আবাদ হচ্ছে রকমারী সবজির। অফসিজনেও মাঠে মাঠে এখন সবজি আর সবজি। বেগুন, সিম, বাধাকপি, লাউ, কচুরমুখী, পেপে, পটল, করলা, ঢ়েড়স, কাকরল, বরবটি ও টমেটোসহ সবজিতে মাঠ ভরে গেছে। সুত্র জানায়, বৃষ্টিতে রোপা আমনের সম্পুরক দেওয়া লাগেনি। পাটপচনে কৃষকের সুবিধা হয়েছে। বৃষ্টিনির্ভর আউশ আবাদে কৃষকদের খরচ লাগেনি বললেই চলে। কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাতে প্রথমদিকে আশংকা করেছিলাম ভেজিটেবল জোনে এবার সর্বনাশ ঘটবে। কিন্তু তা হয়নি। ক্ষতির পরিমাণ সামান্য। সবজি চাষি যশোরের হৈবতপুর গ্রামের লিয়াকত আলী বললেন, সাধারণতঃ উচু জমিতে সবজি আবাদ হয়। কোন ক্ষতি হয়নি বর্ষণে। বরং নানাদিক দিয়ে লাভ হয়েছে। মাঠপর্যায়ের একজন কৃষি কর্মকর্তা বললেন, এই এলাকায় সবজিকে ঘিরে বিশাল এক কর্মযজ্ঞ চলছে বহুদিন ধরে। সবজি চাষী, মাঠ শ্রমিক, পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ী, রফতানীকারক, পরিবহন ও ভোক্তাসহ সংশ্লিষ্টরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লাভবান হচ্ছেন। সবজি উৎপাদনে অসাধারণ সাফল্যে খুশী মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারাও। এখন ‘অফ সিজন’ অর্থাৎ বর্ষাকালেও প্রচন্ড রিস্ক নিয়ে আগাম আবাদ করা শীতকালীন সবজি বাজারে উঠছে প্রচুর। সমস্যা একটাই মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভ করে বেশী। এতে উৎপাদক চাষি আর ভোক্তা বরাবরই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক বললেন, আমি মেহেরপুর জেলায় ঘুরে দেখলাম, মাঠে বাধাকপি ও লাউ প্রচুর। দেখে অবাক হলাম। অফসিজনে এতা সবজি।যশোরে তো প্রধান ফসল সবজি। এমন কোন মাঠ নেই যেখানে সবজি নেই।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশী সবজির আবাদ ও উৎপাদন হয় যশোরে। সবজির ভান্ডার হিসেবে খ্যাত যশোরের বারীনগর, হৈবতপুর, খাজুরা, চুড়ামনকাঠি ও আমবটতলাসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন সবজি আবাদ হচ্ছে মাটিতে নয়, জমির থেকে ৩/৪ ফুট উচুতে মাচা করে। প্রবল বর্ষণেও সহজে ক্ষতি হয় না সবজি। তাছাড়া পোকামাকড়ের উপদ্রবও হয় কম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দক্ষিণ-পশ্চিম

৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
২৮ আগস্ট, ২০১৭

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ