Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুঁড়িয়ে চলছে দক্ষিণ-পশ্চিমের বিসিক: প্লট আছে শিল্প নেই

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

প্লট আছে শিল্প নেই। শিল্প আছে চালু নেই। স্থাপনা আছে, কলকারখানা নেই। দীর্ঘদিনে এই অবস্থার পরিবর্তন হয়নি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ বিসিক শিল্পনগরী। শুধুমাত্র জোরালো উদ্যোগের অভাবে দিনে দিনে বিসিকের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়েছে। বছরের পর বছর ধরে একেবারেই খুঁড়িয়ে চলছে। সরকারের নজর নেই বিসিকের দিকে। অথচ একটু নজর দিলে বিসিকের অন্ধকার ঘুচবে, দেখবে আলোর মুখ। এসব কথা বিসিকেরই দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তা ও শিল্প উদ্যোক্তাদের। তাদের কথা, বিশাল বিশাল দামি সরকারী প্লট বরাদ্দ নিয়ে শিল্প কলকারখানা না করে ভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য করার ঘটনাও আছে। অথচ অনেক উদ্যোক্তা প্লট বরাদ্দ পাচ্ছেন না। সংশ্লিষ্টদের অভিমত, বিসিকের শিল্প শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেই। প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, মুলধনের অভাব, উৎপাদিত পণ্যের বিপনন ব্যবস্থা দুর্বলসহ নানা কারণে বিসিকের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে গতিশীলতা সৃষ্টি হচ্ছে না। জেলায় জেলায় অনুসন্ধান চালিয়ে যেখানে যে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা উপযোগী সে মোতাবেক উদ্যোগ নিলে বিসিক ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। দরকার শুধ্ ুসরকারী পদক্ষেপের।
যশোর বিসিকের ডিজিএম লুৎফর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বিসিককে গতিশীল করা দরকার। বর্তমান সরকার বিসিককে গতিশীল করার জন্য বেশকিছুদিন হলো একটা পরিকল্পনা হাতে নেয়। কিন্তু এখনো কাজ শুরু হয়নি। তবে জেলার পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়েও বিসিক শিল্প গড়ে তোলার ব্যবস্থা হচ্ছে। নতুন বিসিক গড়ে তোলার পাশাপাশি সব সমস্যার সমাধান ও গতিশীল করার কার্যক্রম চালানো হবে। শিল্প প্লট পড়ে থাকার ব্যাপারে তার ব্যাখ্যা হচ্ছে, প্লট দেখিয়ে মোটা টাকার ব্যাংক ঋণ নিয়ে অনেকেই ভিন্ন ব্যবসা করছে বিসিকের বাইরে। সুত্র জানায়, সরকারী বরাদ্দের অভাবে বিসিক এলাকার রাস্তা, বিদ্যুৎ, ড্রেনসহ যাবতীয় কাজকর্ম বলা যায় বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স¤প্রসারণে দেশের অন্যান্য জেলার মতো যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ বিভিন্ন জেলায় বিসিক শিল্প নগরী গড়ে তোলা হয়। যুগ যুগ ধরে নামকাওয়াস্তে বিসিক শিল্পনগরী হলেও বাস্তবে উল্লেখযোগ্য শিল্প গড়ে ওঠেনি। বিশাল বিশাল এলাকার জমি অধিগ্রহণ করে বিসিক স্থাপিত হয় যে উদ্দেশ্যে তা আজো বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু শুরুর সময় উদ্দেশ্য খুবই প্রশংসনীয় হয়। প্রথমদিকে বিসি এলাকা ছিল জমজমাট। দিনে দিনে বিসিক হয়ে পড়েছে অন্ধকার। বিসিকের দিকে একটু নজর দিলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প রমরমা অবস্থায় ফিরে আসতো। ফিরে পেত প্রাণ। এতে যেমন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতো, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দেখতো আলোর মুখ। বিসিকের বাইরে অনেক ক্ষুদ্র শিল্প লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। অথচ বিসিক এলাকায় কেন হচ্ছে না তার কারণ খুঁজে দেখা জরুরি। অনুসন্ধানে জানা যায়, যশোর, খুলনা ও কুষ্টিয়ার হাতেগোনা কয়েকটি শিল্প বিসিক এলাকায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বাকিগুলো চলছে খুঁড়িয়ে। এই অঞ্চলের মধ্যে কুস্টিয়া বিসিক বিআরবি কেবলস এর জন্য রমরমা রয়েছে। সেখানে বিআরবির একারই ১৩টি লাভজনক শিল্প ইউনিট রয়েছে।
সরেজমিনে যশোর বিসিক এলাকা ঘুরে স্থানীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যশোর শহরতলী ঝুমঝুমপুরে বিসিককে ঘিরে এক সময় জমজমাট অবস্থা ছিল। এখন তা আর নেই। সরকারী আনুকল্য, সহায়তা, পরিবেশ, ব্যাংক ঋণের সহজলভ্যতা, উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর সুষ্ঠু বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা থাকা সত্বে বিনিয়োগকারী ও শিল্প উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসছে না। যশোরে উল্লেখযোগ্য ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি পর্যাপ্ত কাঁচামাল থাকা সত্বেও। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অবস্থাও নাজুক। অবশ্য একসময় ২৯টি টেক্সটাইল মিল ছিল যশোরে। যার প্রায় সবই বন্ধ হয়ে গেছে। বিসিক সুত্র জানায়, ১৯৬২ সালে ৫০দশমিক ০৬ একর জমিতে বিসিক প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৬৩ সালে ১২টি ইউনিট নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও একপর্যায়ে ১২২টি ইউনিটে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। সনি ইঞ্জিনিয়ারিং, ইকোনো বল পেন, এমইউসি ফুড, রেসকো বিস্কুট ও ইউনির্ভাসাল ফ্ল্ওায়ার মিলসহ খুব কমসংখ্যক শিল্প টিকে আছে। ইতোমধ্যে অসংখ্য ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। বিসিকের অনেক শ্রমিক এখন ফেরিওয়ালা ও রিকসাচালক। অথচ একসময় হাজার হাজার শ্রমিক স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটাতো।
খুলনার শিরোমনিতে গড়ে ওঠেছিল ১৯৬৬ সালে বিসিক শিল্পনগরী। ৪৪ দশমিক ১০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত বিসিকে ৯২টি ইউনিট গড়ে ওঠে। খাদ্যজাত, পাটজাত, বনজ, প্রিন্টিং এ্যান্ড প্যাকেজিং, গ্লাস, সিরামিক, কেমিক্যাল ও ট্যানারীসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান মাথা উঁচু দাঁড়াতে সক্ষম হয়। অনেক ইউনিট ব্যাংক ঋণ নিয়ে দেউলিয়া হয়ে গেছে। কুষ্টিয়ার বিসিকে বিআরবি কেবলসহ বেশ কয়েকটি ইউনিট খুবই রমরমা। ঝিনাইদহ ও সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ বিসিকের মূল্যবান জমি পড়ে আছে। জমিগুলো বরাদ্দ দেয়া আছে। কিন্তু শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু হচ্ছে না। যা চালু হয়েছে তা রুগ্ন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দক্ষিণ-পশ্চিম

৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
২৮ আগস্ট, ২০১৭

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ