Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জন্মদিনে স্বরূপে মুস্তাফিজ

ইমরান মাহমুদ, চট্টগ্রাম থেকে | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

‘শুভ জন্মদিন মুস্তাফিজ’। সংবাদসম্মেলন কক্ষে গমগমিয়ে ওঠা এমন অবিভাদনেও স্বভাবসূলভ মুচকি হাসি। তাতেই বুঝিয়ে দিলেন দিনটি আট দশটা দিনের মতই। আসলেই কি তাই?
মুস্তাফিজুর রহমানের টেস্ট অভিষেক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই চট্টগ্রামেই, ২০১৫ সালে। নিজের অভিষেক ইনংসেই ৪ উইকেট নিয়ে শুরুটাও হয়েছিল দারুণ। মাঝে পেরিয়ে গেছে আরো তিন টেস্ট। ইনজুরির কারণে অবশ্য দুই টেস্ট খেলে মাঠ থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন দুই বছর। ফিরেছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এ বছর মার্চে গল টেস্টে। কলম্বোতে দেশের শততম টেস্টে ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচে বল হাতে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট। বলতে গেলে নিজের খেলা প্রথম চার টেস্টে উইকেট শুণ্য ছিলেন। কিন্তু ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে ফেরা সেই কাটার মাষ্টারকে যেন খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিলোনা। যার বড় প্রমাণ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঢাকায় প্রথম টেস্টে তার উইকেট শুন্য থাকা। ক্যারিয়ারে প্রথম টেস্ট যেখানে তিনি কোন উইকেটের দেখা পাননি। গুঞ্জনও শুরু হয় আর কত অপেক্ষা হারানো মুস্তাফিজকে ফিরে পেতে!
অবশ্য খুব বেশি দেরি করতে হয়নি। চট্টগ্রামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় দিন উদ্বোধনী জুটিতে ওয়ার্নারের সঙ্গী ম্যাট রেনশকে ফিরিয়ে দলকে প্রথম উইকেটের স্বাদ উপহার দিয়েছিলেন সাতক্ষীরার এই গতিতারকা। পরে অবশ্য প্রতিরোধ গড়ে তোলে অস্ট্রেলিয়া। ডেভিড ওয়ার্নার টাইগারদের বিপক্ষে টেস্টে টানা ফিফটি হাঁকিয়ে দলকে দারুণ অবস্থানে নিয়ে যান। সাকিব, তাইজুল, মিরাজ কোন স্পিনারকে যেন পাত্তাই দিচ্ছিলেন ওয়ার্নার। কিন্তু নিজের জন্মদিনে দলকে স্বস্তি উপহার দেন মুস্তাফিজ ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে। এরপর ওয়েডকেও বিদায় করেন তিনি। ২০ ওভার বল করে নিয়েছেন ৩ উইকেট। বলা চলে তার দারুণ এই বোলিংয়েই ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ দল। এমন একটি দিন আট দশটা দিনের মতো হতেই পারে না! সেটিকে আরো মহিমান্বিত করতেই যেন ম্যাচ পরবর্তি সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিনিধি হয়ে হাজির মুস্তাফিজই। জানালেন নিজেদের অবস্থান।
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ওয়ার্নারকে সবচেয়ে ভালো করে চেনেন মুস্তাফিজ। বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তার আইপিএল সানরাজার্স হায়দরাবাদের অধিনায়ক। তার উইকেট মুস্তাফিজের কাছে বিশেষ। টানা দ্বিতীয় শতক পাওয়া এই ‘বিষ্ফোরক’ ওপেনারকে ফেরান কাটার মাস্টার। বাঁহাতি এই পেসার জানান, পরিকল্পনার ফসল ওই উইকেট, ‘ওয়ার্নারের উইকেট আমার কাছে স্পেশাল। পরিকল্পনা করেই তাকে বাউন্সার দিচ্ছিলাম। সেটি কাজে লেগেছে।’ দুটি জীবন পাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া এতদূর এগিয়েছে এই ওয়ার্নারের ব্যাটে চড়েই। তার উইকেটটি সত্যিই স্পেশাল বলেও জানিয়েছেন বার্থডে বয়, ‘ওর (ওয়ার্নার) উইকেট প্রতিটি বোলারেরই আকাক্সিক্ষত। যতক্ষণ ক্রিজে থাকে সে, প্রতিপক্ষের জন্য হুমকি হয়েই থাকে। তার উইকেট সত্যিই দারুণ।’
জন্মদিন বলেই শুধু নিজেকে নিয়ে বলতে হবে কেন? মুস্তাফিজের ‘কঠিন’ প্রশ্নের মুখোমুখি এবার সাংবাদিকরাও। একটু ঘুরিয়ে এবার বললেন বাংলাদেশের সম্বাবনা নিয়ে। জানালেন কতো টার্গেট দিলে বাংলাদেশ নিরাপদে থাকবে, ‘ডিফিকাল্ট প্রশ্ন। ম্যাচের মাত্র তিন দিন শেষ হয়েছে। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। যেখানে দাঁড়িয়ে আছে ম্যাচ, এখনো দুই দিন আছে। যদি আমরা খুব ভালো করতে পারি, তাহলে অসম্ভব কিছু না।’ ভালোটা কী? এমন প্রশ্নের জবাবে ফিজের ভাবুক উত্তর, ‘আর একটা উইকেট নিতে হবে। এখনো দুই দিন আছে। আমাদের ব্যাটসম্যানরা যদি বড় টার্গেট দিতে পারি, অসম্ভব কিছু না। আবারও মুস্তাফিজ প্রসঙ্গ। শুরুটা করেছিলেন বিস্ময়কর বালক হিসেবে। ইনজুরি আর সাফল্যের ভারে আজ অনেকটাই পরিণত। পার্থক্যটা কোথায়? জানালেন, ‘আগে কেউ আমার বল বুঝতো না। এখন তো সবাই স্টাডি করে। এখন আমার চেষ্টা থাকবে নতুন একটা ভেরিয়েশন নিয়ে কাজ করতে হবে। আগে কাটার ছিলো। এখন নতুন কিছু করতে হবে।’ বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের সঙ্গে বাড়তি জিনিস নিয়ে কাজ করেছেন। সেগুলো কতোটা প্রয়োগ করতে পেরেছেন তাও জানালেন, ‘আমি অল্প কয়েকদিন প্র্যাক্টিস করেছি। এখনো ওইভাবে পুরোটা ইয়া (আয়ত্বই বোঝালেন বোধহয়) করা হয়নাই। ফিফটি-ফিফটি। আমি নরমালি বাউন্সার কম মারি। দুই বছরের বছরের ক্যারিয়ারে খুব কম। এখন চেষ্টা করছি ওভারে দুইটা বাউন্সার যদি ভালো জায়গায় করতে পারি। তাহলে ভালো। ব্যাটসম্যানের জন্য অসুবিধা, আমার জন্য ভালো।’
২০১৫ সালের জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই চট্টগ্রামেই দুর্দান্ত অভিষেক হয়েছিল ফিজের। নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। ‘পয়া’ মাঠ এবারও ফেরায়নি তাঁকে। আজ আর এক উইকেট যোগ করতে পারলেই অভিষেকের সেই ইনিংসের পর আরও একবার ৪ উইকেট পাবেন। অস্ট্রেলিয়ার আরেক ইনিংসও বাকি। নিজেকেই নিজের সেরা উপহার এই টেস্টে দিতে পারেন মুস্তাফিজ। তবে গতকালের দিনটায় সারল্যমাখা সেই হাসিমুখের প্রাপ্তিটাও কম নয়।

স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া, ২য় টেস্ট (৩য় দিন)
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম ২০১৭
টস : বাংলাদেশ
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩০৫
অস্ট্রেরিয়া ১ম ইনিংস : ২২৫/২ (২য় দিন শেষে)
রান বল ৪ ৬
ওয়ার্নান ক ইমরুল ব মুস্তাফিজ ১২৩ ২৩৪ ৭ ০
স্মিথ ব তাইজুল ৫৮ ৯৪ ৮ ০
হ্যান্ডসকম্ব রান আউট (সাকিব) ৮২ ১৪৪ ৬ ০
ম্যাক্সওয়েল ক মুশফিক ব মিরাজ ৩৮ ৯৮ ৩ ০
কার্টরাইট ক সৌম্য ব মিরাজ ১৮ ২৮ ২ ১
ওয়েড এলবিডবিøউ ব মুস্তাফিজ ৮ ৩১ ১ ০
আগার ব সাকিব ২২ ৩৫ ৪ ০
কামিন্স এলবিডবিøই ব মিরাজ ৪ ২৮ ১ ০
ও’কিফে অপরাজিত ৮ ২৮ ১ ০
লায়ন অপরাজিত ০ ১ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ৮, লে বা ৩, ও ১) ১২
মোট (১১৮ ওভার, ৯ উইকেট) ৩৭৭
বোলিং : মিরাজ ৩৮-৬-৯৩-৩, মুস্তাফিজ ২০-২-৮৪-৩, সাকিব ৩০-২-৮২-১, তাইজুল ২১-১-৭৮-১, নাসির ৬-২-১৪-০, মুমিনুল ২-০-৬-০, সাব্বির ১-০-৯-০।
উইকেট পতন : ১-৫ (রেনশ), ২-৯৮ (স্মিথ), ৩-২৫০ (হ্যান্ডসকম্ব), ৪-২৯৮ (ওয়ার্নার), ৫-৩২১ (কার্টরাইট), ৬-৩৪২ (ওয়েড), ৭-৩৪৬ (ম্যাক্সওয়েল), ৮-৩৬৪ (কামিন্স), ৯-৩৭৬ (আগার)।
*৩য় দিন শেষে



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্রিকেট

১০ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ