Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

বন্যার্ত মানুষের জন্য

মো. ওসমান গনি | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কমতে শুরু করছে দেশের বন্যা উপদ্রæত এলাকার পানি। সাথে সাথে দেখা দিচ্ছে ক্ষত-বিক্ষত, লন্ড-ভন্ড সড়কের আসল চেহারা। তবে বন্যা কবলিত নিচু এলাকাগুলো থেকে এখনো নামছে না পানি। চর্ম ও পানিবাহিত রোগ এবং খাদ্য সঙ্কটে বানভাসীরা আছেন দুর্ভোগে। ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি পুনর্বাসনের দাবি তাদের। আমাদের দেশের কৃপ্র্রিধান গ্রামের অসহায় মানুষগুলোর বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা কৃষি কাজ। সর্বনাশি বন্যা তাদের শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নেয়ায় তাদের সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যত। অনেকে হারিয়েছেন সারা জীবনের সঞ্চয়, ধার করে তৈরি করা বসতবাড়ি। ফলে বসবাস করার একমাত্র ভরসা এখন তাদের রাস্তাঘাট। ঘরবাড়ির কথা মনে পড়লে তাদের দুচোখ ভরে আসে পানি। ঘরবাড়ি সম্পর্কে তাদের মতামত হলো, ছেলে-মেয়েদের যেখানে পেট ভরে খাবার দিতে পারবো কিনা তা জানি না, বসতবাড়ি করা তো এখন দুঃস্বপ্ন। তার উপর রয়েছে ঋণের বোঝা। সরকার যদি আমাদের ত্রাণের পাশাপাশি পুনর্বাসন না করে তাহলে আমাদের মৃত্যু ছাড়া আর কোন পথ দেখছি না। এদিকে, বন্যার পানি নামার সাথে সাথে নদ-নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ভাঙন তীব্র হয়েছে। ক্ষত-বিক্ষত, লন্ডভন্ড হচ্ছে জনপদ। শুধু ঘরবাড়ি, স্কুল-কলেজ, কমিউনিটি ক্লিনিক কিংবা মসজিদ-মাদরাসা নয়, বিলীন হয়ে গেছে রাস্তাঘাটও। ভেঙে গেছে সেতু-কালভার্ট। বিভিন্ন জেলার সঙ্গে উপজেলার সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ত্রাণ পৌঁছাতে পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। যাতায়াতও পরিবহনসহ নানা ভোগান্তিতে রয়েছে বন্যাকবলিত এলাকার সাধারণ মানুষ।
বানভাসি মানুষের এই কঠিন মুহূর্তে সাহায্যের জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও লোকজন এগিয়ে আসছে। তারা দেশবাসীকে বন্যার্ত মানুষের পাশে এগিয়ে আসার আহŸান জানিয়েছেন। ঢাকাসহ সারাদেশে চলেছে বানভাসি মানুষের জন্য তহবিল সংগ্রহ। ‘বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ান, মানবতার হাত বাড়ান’ ও ‘বন্যাদুর্গতের জন্য এগিয়ে আসুন’ এমন শ্লোগানকে সামনে রেখে অর্থ এবং ত্রাণ সংগ্রহ করছে তরুণরা। রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের কর্মীরা এ কাজ করে যাচ্ছে। পথ-ঘাট থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন ইভেন্ট খুলে এসব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ফেসবুকের বিভিন্ন ইভেন্টে যোগাযোগের জন্য নির্দিষ্ট মোবাইল নম্বর ছাড়াও বিকাশ ও ব্যাংক এ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়া আছে, যাতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা সাহায্য করতে পারেন। অন্যদিকে রাস্তায়, পথের ধারে, গলির মোড়ে, মার্কেটের সামনে, শপিং মলের সামনে, যাতায়াত পথে, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তরুণরা সাহায্যের বাক্স হাতে নিয়ে বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাচ্ছে। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে তারা এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে। দেশে বর্তমানে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থতি দেখে চুপ করে বসে নেই তারা। নিজেরা যতটুকু পারছে, তাই নিয়ে দাঁড়াচ্ছে বন্যার্ত মানুষগুলোর পাশে। তবে ত্রাণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করা তরুণরা। তরুণদের নিয়ে অনেকে হতাশার কথা বললেও তাদের এই ধরনের উদ্যোগ আমাদের জন্য আশাব্যঞ্জক। তারা মানুষের পাশে দাঁড়াতে চায়। তাদের মতো সবারই উচিত মানুষের জন্য এগিয়ে আসা। মানুষ মানুষের জন্য এ কথাটি স্মরণ রেখে দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ কে এগিয়ে আসা উচিত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যার্ত


আরও
আরও পড়ুন