শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
নজরুলের ওপর এক সময় অভিযোগ ছিল তিনি বিশেষ সময়ের কবি। কিন্তু, আমরা এখন এমন অবস্থার মধ্যে বসবাস করছি , যখন ধর্মের নামে খড়গের নিচে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে প্রতিনিয়ত; আর এই সময়ে নজরুলের প্রাসঙ্গিকতা নতুন করে ভাবনার জন্ম দিয়েছে। নজরুল সকল ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে তাঁর অল্প জীবনের সাহিত্যে তিনি হিন্দু-মুসলিমের অপূর্ব সমন্বয় করেছেন। ‘বিদ্রোহী’ কবিতার মধ্য দিয়েই নজরুলের উত্থান। এই কবিতার মধ্যে বিদ্রোহ, প্রেম ও ধর্মীয় নানা অনুষঙ্গ পাশাপাশি আবস্থান করেছে। আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই তা স্বকীয়তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। মাত্র একুশ বছর বয়সে লেখা বিদ্রোহী কবিতাটি সেই সময়ে সর্ব মহলে আলোড়ন তুলেছিল। আমরা ভেবে বিস্মিত হই, তিনি লিখতে পেরেছিলেন এমন পংক্তি, ‘আমি বিদ্রোহী ভৃগু ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ চিহ্ন।’ একবার ভাবুন সেই সময়ের কথা। আমরা জানি, দেবতা ভৃগুকে নানা সময়ে শাস্তি দেয়ার কারণে তিনি মহাদেবের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন। মহাদেবের নিদ্রার সুযোগে তিনি তার বুকে চড়ে লাফিয়েছিলেন। পূরাণের সেই বিষয়টি সাহসিকতার সাথে নজরুল কবিতায় ব্যবহার করেছেন। হিন্দু- মুসলমানের ধর্মীয় প্রসঙ্গগুলোও কবিতাটিতে পাশাপাশি অবস্থান করেছে। লিখেছেন, ঈষান-বিষাণের ওংকার, ইস্রফিলের শিঙ্গা, মহাদেবের ডমরু-ত্রিশূল,অর্ফিয়াসের বাঁশি,বাসুকীর ফণা, পুরাণের এইসব বিষয়াদি। তিনি লিখেছেন, ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাশরী আর হাতে রণ তূর্য।’ আমরা বলতে পারি, এই কবিতার মধ্যে সামগ্রিকতা বিষয়টি সম্পূর্ণভাবেই উঠে এসেছে।
তিনি বিদ্রোহের কবি, সাম্যবাদের কবি, প্রেমের কবি, ইসলামের কবি, শ্যামা সঙ্গীতের কবি এরকম যার যা সুবিধা সেভাবেই তাকে উপস্থাপিত করা হয়েছে। এ কথা ঠিক উপর্যুক্ত সকল অভীধায় তিনি কবিতা ও গান রচনা করেছেন। মুসলিম এতিহ্য বিষয়ক কবিতা কামাল পাশা, খেয়াপারের তরণী, মহরম, শাত-ইল- আরব, আনোয়ার,কাব্য আমপারা,ঈদ মোবারক,ফাতেহা-ই- ইয়াজদহম লিখেছেন পাশাপাশি স্বত:স্ফূর্তভাবে লিখেছেন হিন্দু ঐতিহ্য বিষয়ক কবিতা, আনন্দময়ীর আগমন, পূজারিণী, রক্তাম্বরধারিণী মা, আগমনী ও পূজা-অভিনয়। বিজয়া এবং হরপ্রিয়া নামে লিখেছেন দু’টো নাটক। লিখেছেন অজস্র ইসলমী গান ও শ্যামা সঙ্গীত। লিখেছেন বটে কিন্তু এর জন্য তাকে কম ধকল সহ্য করতে হয়নি। ইসলামী গান লেখার জন্য যেমন তৎকালের কট্রর হিন্দুত্ব বাদীদের যেমন তিনি রোষানলে পড়েছিলেন পাশাপাশি শ্যামা সঙ্গীত রচনার জন্য মোল্লা-মৌলবীদের কোপানলে পড়তে হয়েছে। ‘আমার কৈফিয়ত’ কবিতায় তিনি এর জবাবও দিয়েছেন। মুনীর চেীধুরীর ভাষায় বলা যায়, নজরুল ইসলাম বিদ্রোহের কবি, বিপ্লবের কবি, শান্তির কবি, সাম্যের কবি। তিনি প্রেম ও অপ্রেমের, হিংসা ও ভালোবাসার, মিলন ও সংঘাতের কবি। কালের। মহৎ শিল্পী তাঁর রচনায় বহু ধারার সৃষ্টি করেন। (অসমাপ্ত...)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।