Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সাড়ে ৩ দিনের রোমাঞ্চ

| প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম


বাংলাদেশ : ২৬০ ও ২২১
অস্ট্রেলিয়া : ২১৭ ও ২৪৪
ফল : বাংলাদেশ ২০ রানের জয়ী
ম্যাচ সেরা : সাকিব আল হাসান
ইমরান মাহমুদ
গতকাল মিরপুরে সকালটা যেন রোমাঞ্চের ডালা সাজিয়ে বসেছিল। একের পর এক রোমাঞ্চ, বাতাসে ভেসে বেড়িয়েছে উত্তেজনার রেনু। পরতে পরতে উত্তাপ ছড়ানো এক রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ অবশেষে পেল তৃপ্তির ছোঁয়া। স্টেডিয়ামের ঘড়িতে তখন দেড়টা পেরিয়েছে কেবল। আসলেই কি পার হলো? জোড়ালো আবেদন, আম্পায়ারের আঙুল, আবেদন থেকেই দুহাত ছড়িয়ে তাইজুলের উল্লাস, বাকিদের বাঁধনহারা উচ্ছ¡াস, ওই মুহূতর্টায় কী থমকে গেল না সময়? জয়, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়! এক সময়ের প্রবল পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়া, টেস্টের জগতে অভিজাত অস্ট্রেলিয়া, ১১ বছর পর বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট খেলা অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিল বাংলাদেশ। ২০ রানের রোমাঞ্চকর ও মহাকাব্যিক জয়ে স্মরণীয় হয়ে রইল মিরপুর টেস্ট।
তাইজুল যখন পেলেন শেষ উইকেট, মিড উইকেটে তখন বেশ কাছেই সাকিব আল হাসান। ছুটে আসলেন বোলারের দিকে। তাইজুল লাফ দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন তাকে। অসাধারণ এই জয়ের নায়ক তো বাংলাদেশের সুপারম্যানই! প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে ৮৪ রান। দুই ইনিংসেই ৫টি করে উইকেট। চতুর্থ দিনে যখন হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে জয়, তখনই আবির্ভাব ত্রাতা হয়ে। জাদুকরী পারফরম্যান্সে সাকিব রাঙালেন নিজের ৫০তম টেস্ট। সাকিবের পাশাপাশি তামিমেরও এটি ছিল ৫০তম টেস্ট। মুশফিকুর রহিম টেস্টের আগে বলেছিলেন, এই দুই নায়কের জন্যই খেলবে বাংলাদেশ। কিন্তু সতীর্থদের উপহার দিলেন তারা দুজনই, উপহার দিলেন দেশকেও। সাকিবের অসাধারণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্স, ব্যাটিং দূরূহ উইকেটে তামিমের ৭১ ও ৭৮! গত বছর এই শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামেই ইংল্যান্ডকে ১০৮ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর গত মার্চে শ্রীলঙ্কায় হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে। টেস্টে এগিয়ে যাওয়ার পালায় যোগ হলো আরেকটি পালক।
চতুর্থ দিনে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল ১৫৬ রান, বাংলাদেশের ৮ উইকেট। সকালে শুরুটা ছিল বাংলাদেশের জন্য হতাশার। প্রথম ৫০ মিনিটে পড়েনি উইকেট, এসেছে রান। ওয়ার্নার করে ফেলেন উপমহাদেশে তার প্রথম সেঞ্চুরি। উপমহাদেশে আগের ১১ টেস্টে ওয়ার্নারের গড় ছিল ২৫.০৪। চারটি পঞ্চাশে সর্বোচ্চ ছিল ৭১। এবারের সেঞ্চুরি হয়তো তাকে দেবে স্বস্তি। তবে দলকে জেতানোর তৃপ্তি পেলেন না। ওয়ার্নারের ব্যাটে ম্যাচ যখন বেরিয়ে যাওয়ার পথে, বাংলাদেশকে ফেরালেন সেই সাকিব।
আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে তাইজুল-মিরাজকে চাপে ফেলে দিয়েছিলেন ওয়ার্নার। সাকিব এসে শুরুতে বাধ দেন রানের গতিতে। এরপর দারুণ এক ডেলিভারিতে ফিরিয়ে দেন ওয়ার্নারকে। কঠিন উইকেটেও ওয়ার্নারের ব্যাটে ছিল নিজস্ব গতি। করেছেন ১৩৫ বলে ১১২। স্মিথের সঙ্গে তৃতীয় উইকেট জুটি ১৩০ রানের। সেই জুটি ভাঙার রেশ মিইয়ে যাওয়ার আগেই সাকিবের হাত ধরে আরও খুশির ছটা। এবার ফিরিয়ে দিলেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক স্মিথকে।
সাকিবে উজ্জীবিত তাইজুল ততক্ষণে শুরু করেছেন দারুণ বোলিং। পেলেন সেটির পুরস্কারও। যদিও উইকেটে নিজের ভাগ দাবি করতে পারেন সৌম্য সরকার! ¯িøপে দুই বারের চেষ্টায় দারুণ রিফ্লেক্স ক্যাচে ফেরালেন পিটার হ্যান্ডসকমকে। এই উইকেটেই টেস্টে ৫০ উইকেট পূর্ণ হলো তাইজুলের। তার সৌজন্যে খানিক পর ত্বরিত বিদায় প্রথম ইনিংসে ভোগানো অ্যাশটন অ্যাগারও। বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে তখন গ্লেন মাক্সওয়েল। তার জন্য সাকিব আছেন না! লাঞ্চের পর প্রথম বলেই বোল্ড ম্যাক্সওয়েল। ম্যাচে দ্বিতীয়বার ৫ উইকেট। এক ম্যাচে ১০ উইকেটও নিলেন দ্বিতীয়বার। বাংলাদেশে আর কারও নেই একবারের বেশি।
এরপর শুধু শেষের অপেক্ষা। তবু যেন হতে চায় না শেষ। লেজের দিকে লড়াই করলেন প্যাট কামিন্স ও ন্যাথান লায়ন। তবে তাতে বাংলাদেশের জয়ের অপেক্ষাটাই কেবল দীর্ঘায়িত হয়েছে একটু। আর বেড়েছে জয়ের মাহাত্ম্যও।
শেষ পর্যন্ত এরকম রোমাঞ্চের দোলায় দুলিয়ে এল বলেই হয়ত জয়টি হয়ে থাকবে আরও স্মরণীয়!
টেস্টে বাংলাদেশের ১০ জয়

ফল প্রতিপক্ষ ভেন্যু তারিখ
২২৬ রানে জিম্বাবুয়ে চট্টগ্রাম ৬ জানু. ২০০৫
৯৫ রানে উইন্ডিজ কিংসটাউন ৯ জুলাই ২০০৯
৪ উইকেটে উইন্ডিজ সেন্ট জর্জি’স ১৭ জুলাই ২০০৯
১৪৩ রানে জিম্বাবুয়ে হারারে ২৫ এপ্রিল ২০১৩
৩ উইকেটে জিম্বাবুয়ে ঢাকা ২৫ অক্টো. ২০১৪
১৬২ রানে জিম্বাবুয়ে খুলনা ৩ নভে. ২০১৪
১৮৬ রানে জিম্বাবুয়ে চট্টগ্রাম ১২ নভে. ২০১৪
১০৮ রানে ইংল্যান্ড ঢাকা ২৮ অক্টো. ২০১৬
৪ উইকেটে শ্রীলঙ্কা কলম্বো ১৫ মার্চ ২০১৭
২০ রানে অস্ট্রেলিয়া ঢাকা ২৭ আগস্ট ২০১৭
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া, প্রথম টেস্ট
মিরপুর, চতুর্থ দিন
(৩য় দিন শেষে বাংলাদেশ ২৬০ ও ২২১, অস্ট্রেলিয়া ২১৭ ও ২য় ইনিংস : ৩০ ওভারে ১০৯/২, ওয়ার্নার ৭৫ ব্যাটিং, রেনশ ৫, খাজা ১, স্মিথ ২৫ ব্যাটিং; মিরাজ ১/৫১, সাকিব ১/২৮)
রান বল ৪ ৬
ওয়ার্নার এলবি ব সাকিব ১১২ ১৩৫ ১৬ ১
স্মিথ ক মুশফিক ব সাকিব ৩৭ ৯৯ ৩ ০
হ্যান্ডসকম্ব ক সৌম্য ব তাইজুল ১৫ ২৫ ২ ০
ম্যাক্সওয়েল বোল্ড সাকিব ১৪ ২৫ ২ ০
ওয়েড এলবি ব সাকিব ৪ ১৩ ০ ০
অ্যাগার ক এন্ড ব তাইজুল ২ ১৩ ০ ০
কামিন্স অপরাজিত ৩৩ ৫৫ ৩ ২
লায়ন ক সৌম্য ব মিরাজ ১২ ২৪ ২ ০
হ্যাজলউড এলবি ব তাইজুল ০ ১০ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ৭, লেবা ২) ৯
মোট (৭০.৫ ওভারে, অলআউট) ২৪৪
বোলিং : মিরাজ ১৯-৩-৮০-২, নাসির ৩-২-২-০, সাকিব ২৮-৭-৮৫-৫, তাইজুল ১৯.৫-২-৬০-৩, মুস্তাফিজ ১-০-৮-০।
উইকেট পতন : ১-২৭ (রেনশ), ২-২৮ (খাজা), ৩-১৫৮ (ওয়ার্নার), ৪-১৭১ (স্মিথ), ৫-১৮৭ (হ্যান্ডসকম্ব), ৬-১৯২ (ওয়েড), ৭-১৯৫ (অ্যাগার), ৮-১৯৯ (ম্যাক্সওয়েল), ৯-২২৮ (লায়ন), ১০-২৪৪ (হ্য্যাজলউড)।
ফল : বাংলাদেশ ২০ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)।
সিরিজ : ২ ম্যাচে ১-০তে এগিয়ে বাংলাদেশ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোমাঞ্চ


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ