নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সকলেরই দৃষ্টি এন্ট্রি গেটের দিকে। সেই চাহনিতে একটিই চাওয়া- কক্ষে যেন প্রবেশ হয় সাকিব আল হাসানের! অনেকক্ষণ ধরে, অনেকগুলো প্রশ্ন যেন ঘুরপাক খাচ্ছে মিডিয়া সেন্টারের আকাশে বাতাসে। তবে সাকিবের প্রতিচ্ছবি হয়েই যেন গতকাল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সাকিবকে করা প্রশ্নগুলোর ঠিক ঠিক উত্তরই যেন দিয়ে গেলেন তরুণ এই অলরাউন্ডার। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সেরা বোলার সাকিব তাতে সন্দেহ নেই। বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারের পাঁচ উইকেটের কীর্তির পাশে তিন উইকেট নিয়ে পার্শ্বনায়ক হতে পারেন মিরাজ। তবে অস্ট্রেলিয়াকে আসল ধাক্কাটা কিন্তু দিয়েছেন তিনিই। তবুও অগ্রজ সাকিবের কীর্তিকেই সামনে আনলেন অনূর্ধ্ব-১৯ এর গন্ধ লেগে থাকা এই তরুন।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ৫ উইকেট নিয়ে সাকিব ঢুকেছেন অভিজাত এক তালিকায়। ৯টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষ ৫ উইকেট নেওয়া মাত্র চতুর্থ বোলার তিনি। এই টেস্টের প্রথম দিনে ব্যাট হাতে সাকিব করেছিলেন ৮৪ রান। একই টেস্টে হাফ সেঞ্চুরি ও ইনিংসে ৫ উইকেটের জোড়া কৃতিত্ব দেখালেন অষ্টমবার। তার চেয়ে বেশি করতে পেরেছেন টেস্ট ইতিহসে কেবল একজন, ইয়ান বোথাম। সাকিবের অর্জন গর্বিত করে দেশের ক্রিকেটকে। আনন্দের উপলক্ষ্যে এনে দেয় তার সতীর্থদের জন্যও। দ্বিতীয় দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে মিরাজের চোখে-মুখে দেখা গেল সেই খুশির ঝিলিক, সাকিব ভাই তো তিনটি সংস্করণেই অলরাউন্ডার হিসেবে দাপট দেখাচ্ছেন। ভালো লাগে যে নিজেদের দেশের এমন একজন আছে, এমন একজন অলরাউন্ডারের সঙ্গে খেলতে পারছি। খুব ভালো লাগে। তার কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমরা সবাই জানি সাকিব ভাই অনলি ওয়ান। আমার কাছে খুব ভালো লাগছে যে উনি এত রেকর্ড গড়ছেন আর আমি তার সঙ্গে খেলছি। অনেক অভিজ্ঞতা উনি ভাগাভাগি করেন আমাদের সঙ্গে।’
আগের দিন ডেভিড ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে দিয়ে ধসের শুরু। গতকাল স্মিথকে আউট করে নিশ্চিত করেছেন, চাপ নিয়ে দিন কাটাতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। প্রতিপক্ষের অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ককে ফেরানোর এমন কৃতিত্বে তৃপ্তিই ঝরলো মিরাজের কণ্ঠে। তবে টেস্টের র্যাঙ্কিং সেরা ব্যাটসম্যানকে আউট করেই তৃপ্তি বেশি পাচ্ছেন। উইকেটটাও পেয়েছেন দুর্দান্ত ডেলিভারিতে। ডাউন দ্য উইকেটে নামা স্মিথকে বোকা বানিয়ে বোল্ড করে। দিন শেষে সে সাফল্যের কৃতিত্ব অবশ্য অধিনায়ককেই দিচ্ছেন মিরাজ। মুশফিক যে স্মিথকে আউট করার বুদ্ধিটা দিয়েছেন। শট খেলার আগে স্ট্যান্স নেওয়ার সময় স্মিথ সব সময় পা নাড়াতে থাকেন। বোলাররা এতে বিভ্রান্ত হন। মিরাজ বলেছেন, ‘মুশফিক ভাই বলেছিল, রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে বল করলে স্মিথ আটকে যাবে। পায়ের ব্যবহার কমে যাবে। তা হলে ক্যাচ বা স্টাম্পিংয়ের সুযোগ বাড়বে। ওভাবে চেষ্টা করেছি, কাজে লেগেছে।’
মিরপুরের উইকেটে অবশ্য স্পিনারদের রাজত্ব চলছে। গত অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষের ম্যাচের উইকেটের চেয়েও বেশি স্পিন সহায়ক মনে হচ্ছে এ পিচকে। উইকেট যে স্পিন সহায়ক, সেটা মানছেন মিরাজও। তাই বলে বোলারদের কৃতিত্বকে খাটো করে দেখতে মানা করছেন তিনি, ‘বোলাররা ভালো করছে। পিচ যেমন হোক না কেন, ভালো বল না করলে উইকেট পাওয়া যায় না।’
ভালো বোলিং অবশ্য বাংলাদেশের তিন স্পিনারই করেছেন। এ কারণেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এখন স্বাগতিক দলের কাছে। সেটাই বললেন মিরাজ, ‘অবশ্যই, এখনো পর্যন্ত ম্যাচ আমাদের নিয়ন্ত্রণে। কালকের দিনটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, আগামীকাল আমাদের ব্যাটসম্যানরা দায়িত্ব নিয়ে ব্যাট করতে পারে, বড় স্কোর দিতে পারি। সে ক্ষেত্রে ওদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে।’
বড় স্কোর মানে কত? ম্যাচের এখনো যে তিন দিন বাকি! মিরাজ আশাবাদী, ‘উইকেট যেমন, আমরা যত রানই করি না কেন লড়াই করতে পারব। নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না যে ৩০০-৪০০ করলে ম্যাচ জিতে যাব। ওরাও কিন্তু ভালো দল। আমরা যা লিড পাব, সেটা নিয়েই খেলতে হবে।’
এমন উচ্চাশার পরও মিরাজের কণ্ঠে লুকায়নি দিনের একমাত্র কালিমা লেগে যাওয়া সৌম্য সরকারের আউটটা। দিনের আর মাত্র দুই ওভার বাকি। এটা আম্পায়াররা জানতেন, অস্ট্রেলিয়ানরা জানতেন, মনোযোগী দর্শকেরও জানা ছিল সেটা। সবচেয়ে বেশি জানা দরকার ছিল যার, তিনি কি আর জানতেন না? কিন্তু যেভাবে শটটা খেলে আউট হলেন, প্রশ্নটা উঠছেই। অ্যাশটন অ্যাগারের নিরীহ এক বল দেখে লোভ সামলাতে পারলেন না সৌম্য সরকার। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়লেন। তাতেই সফল এক দিনে কালি লাগল খানিকটা। দিনের খেলা শেষে অ্যাগারও জানালেন, ওই সময়ে অমন শটে বিস্মিত তিনিও, ‘আমি কিছুটা অবাক হয়েছি। বুঝতে পারি, কোন ভাবনা থেকে সে শটটা খেলেছে। ফিল্ডার ভেতরে ছিল, সে চেয়েছিল ওপর দিয়ে মারতে। কিন্তু খেলার ওই পর্যায়ে, উইকেটও যখন বোলারদের হয়ে অনেক কিছু করছিল, এটা ছিল ঝুঁকিপুর্ণ শট। সৌভাগ্যজনক ভাবে শটটি আমার পক্ষে গেছে। আমি খুশি যে সে ওই ভুল করেছে।’
সৌম্যকে হারিয়ে ৪৫ রান তুলেছে বাংলাদেশে, দ্বিতীয় দিন শেষে ৮৮ রানে এগিয়ে আছে স্বাগতিক দল। হাতে ৯ উইকেট। ৩০ রানে অপরাজিত তামিমের সঙ্গে অন্য প্রান্তে দিনের বাকিটা নিরাপদে পার করে দিয়ে এসেছেন তাইজুল ইসলাম। বোলারদেও কাজ ঠিকই করেছেন সাকিব, মিরাজরা। দেখা যাক, ব্যাটসম্যানরা কতদূর নিয়ে যায় বাংলাদেশকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।