Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘সিডনি অভিষেক’ রাঙাতে চান সাকিব

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

হাঁটি হাঁটি পা পা করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩৬ আর টেস্ট ক্রিকেটের আঙিনায় ২২ বছর কেটে গেছে বাংলাদেশের। তারপরও খেলা হয়নি সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এসসিজি)! আরো বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, বর্তমান দলের সবচাইতে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানই খেলেননি ১৭৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী অস্ট্রেলিয়ান এই ভেন্যুতে, যিনি দুই দফায় বিগ ব্যাশেই খেলেছেন ৬ ম্যাচ! অবশেষে অনুশীলন করতে গিয়েই এসসিজির মুর পার্কে পা পড়ল তার ও দলের অন্যদের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে আজ এই ভেন্যুতেই আত্মবিশ্বাসী লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের প্রতিপক্ষ মরিয়া দক্ষিণ আফ্রিকা।
২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে অফিসিয়াল দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ সিডনিতেই খেলেছিল বাংলাদেশ। তবে সেটা ছিল শহর থেকে বেশ দূরে, ব্ল্যাকটাউনের একটি মাঠে। এবার এমসিজিতে পা রাখার পরও আবেগ-রোমাঞ্চের প্রকাশে সাকিব নির্লিপ্ত। পৌনে দু’শে বছর পুরনো এই স্টেডিয়ামে এসেও বিশেষ কিছু মনে হয়নি বলেই জানালেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘একসময় এসব নিয়ে অনেক এক্সাইটমেন্ট কাজ করত... যখন খেলা দেখতাম বা খেলা শুরু করার পরও নতুন ছিলাম। এখন আর এসব নিয়ে কিছু মনে হয় না। দেখে ভালো লাগে, ওই পর্যন্ত।’ তবে পরের কথাটিতেই লুকিয়ে তার আবেগের সীমানা। জানালেন, ‘জিততে পারলে হয়তো আরও ভালো লাগবে...।’ মনের এই লড়াইটা মাঠেও যে বড্ড প্রাসঙ্গিক!
ক্রিকেট যতটা ব্যাট-বলের ম্যাচ, ততটাই মনস্তাত্ত্বিক। অনেক সময়ই ২২ গজের লড়াইয়ের ভাগ্য গড়া হয়ে যায় মনের লড়াই দিয়েই। মাঠের বাইরের সেই খেলায় জিতে হয়তো এগিয়ে থাকতে চাইলেন সাকিব। এমনিতেই চাপে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর আরও চাপ চাপিয়ে দিতে চাইলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। চাপ নিয়ে এই চাপাচাপির উৎস জিম্বাবুয়ের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার পয়েন্ট হারানো। হোবার্টে যেদিন নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করে বাংলাদেশ, সেদিনই একই মাঠে নিশ্চিত জয়ের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা স্রেফ ১ পয়েন্ট পায় বৃষ্টির কারণে ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ায়। সেমি-ফাইনালে ওঠার অনিশ্চিত সমীকরণে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়টা নিশ্চিতই ধরে নেওয়ার কথা প্রোটিয়াদের। এমন ম্যাচে একটি পয়েন্ট হারানোর মানে তাই সম্ভাবনায় বড় চোট।
বিশ্ব আসরে বৃষ্টি ভেজা ম্যাচ থেকে সিক্ত নয়নে বিদায় নেওয়ার নজির তো তাদের আছেই। দুঃসহ এই অতীত এবারও তাড়া করার শঙ্কা জেগে উঠেছে প্রথম ম্যাচ থেকেই। আগের নানা অভিজ্ঞতার কারণে এবারও দক্ষিণ আফ্রিকানদের মনে এখনই ‘কু-ডাক’ শোনাটা অস্বাভাবিক নয়। সাকিব হয়তো চাইলেন প্রতিপক্ষের মনের সেই ক্ষত আরও দগদগে করে তুলতে। সিডনিতে ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নটা ভিন্ন প্রসঙ্গে হলেও সাকিব নিজে থেকেই যেভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার চাপে থাকার কথা টেনে আনলেন, তাতেই ইঙ্গিত তার মনস্তাত্ত্বিক খেলার, ‘আমরা ম্যাচটা খেলতে নামব জেতার জন্য। আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ম্যাচ। দক্ষিণ আফ্রিকার জন্যও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। যেহেতু ওদের প্রত্যাশা ছিল একটা পয়েন্ট বেশি পাবে প্রথম ম্যাচে, যেটা পায়নি। ওদের জন্য অনেকটা বাঁচা-মরার লড়াই, একটু হলেও চাপ থাকবে। সেখানে আমরা ম্যাচ জিতে এসেছি।’
শুধু এই টুর্নামেন্টের বাস্তবতাই নয়, মানসিকভাবে প্রতিপক্ষকে কাবু করার চেষ্টায় সাকিবের হাতিয়ার স্কিলের একটি ঐতিহাসিক দুর্বলতাও। পেসের চেয়ে স্পিনের বিপক্ষে বরাবরই দক্ষিণ আফ্রিকানদের একটু নড়বড়ে বলে মনে করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার যে উইকেটগুলোতে স্পিনে সহায়তা তুলনামূলকভাবে একটু বেশি, সেই মাঠেই হবে এই ম্যাচ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যদিও স্পিনে সহায়তা খুব বেশি এমনিতে থাকে না এখানে। তাছাড়া, বিশ্ব আসরের উইকেট তত্ত্বাবধান করে থাকে আইসিসি। তবুও এই সুযোগে মোক্ষম জায়গায় আঘাত হেনে রাখলেন সাকিব, ‘(সিডনি) এমন একটা মাঠ যেখানে, আমরা হয়তো প্রেফার করব যে কোনো দলের সঙ্গে খেলার জন্য। অস্ট্রেলিয়ার অন্য যে কোনো উইকেট থেকে সাধারণত এখানে স্পিনারদের জন্য একটু বেশি সুবিধা থাকে। তবে বিশ্বকাপে যেটা হয়, আইসিসি ‘ট্রু’ উইকেট তৈরির চেষ্টা করে। যেখানে সবার জন্যই একটা ভারসাম্য থাকে।’
উইকেট বিবেচনায় এই ম্যাচে আগের চেয়ে হয়তো বেশি রান করতে হবে, ‘আমি ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স বা পরিসংখ্যানের দিকে গুরুত্ব দিতে চাই না। (নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে) আমরা দল হিসেবে ১৪৫ (আসলে ১৪৪) রান করেছি এবং সেটা ডিফেন্ড করতে পেরেছি। তার মানে ওই পিচের জন্য এটা যথেষ্ট ছিল। এখানেও তা হবে সেটা জরুরি নয়। এখানে হয়তো ১৮০ করতে হবে।’ অধিনায়ক হিসেবে কে রান করে দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে গেল সেটি নিয়ে ভাবছেন না সাকিব। বরং দলগতভাবে চাহিদা অনুযায়ী সংগ্রহ পেলেই খুশি তিনি। তবে দারুণ ফল পেতে হলে দরকার ব্যক্তিগত কিছু ঝলক। ব্যাট হাতে কেউ একজনকে রাখতে হবে বড় ভূমিকা, বোলিং জ্বলে উঠতে হবে কাউকে না কাউকে। সব মিলিয়ে একজনকে হতে হবে নায়ক। কে হবেন সেই নায়ক, অপেক্ষায় সাকিবও, ‘আমি এটা আশা করছি যে, আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আমাদের জন্য আরেকটা সুযোগ। আমাদের ১১ জনের যারা খেলবে তাদের মধ্যে একজনের হিরো হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তো ওই হিরোটা কে হবে সেটাই দেখার। আমাদের চিন্তাভাবনাও এমন যে আমরা কীভাবে দলগতভাবে দলকে এগিয়ে নিতে পারি।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টি ২০ বিশ্বকাপ

১০ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ