নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরুর গতিপথটা দুজনেরই ছিল প্রায় একইরকম। দুজনেরই শুরু ওয়ানডে দিয়ে। ওয়ানডে অভিষেকের ৯ মাস পর সাকিব আল হাসান পান টেস্ট ক্যাপ। ২০০৭ সালের মে মাসে; ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট দিয়ে। তামিম ইকবাল টেস্ট ক্যাপ পান ওয়ানডে অভিষেকের ১১ মাস পর। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ডানেডিন টেস্ট দিয়ে।
বাংলাদেশের সেরা দুই পারফরমার, বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা দুই বিজ্ঞাপন এক সঙ্গেই স্পর্শ করলেন টেস্ট খেলার হাফ সেঞ্চুরি। গতকাল মিরপুরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলেছে নিজেদের ৫০০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
বাংলাদেশের হয়ে ৫০ টেস্ট প্রথম খেলেছিলেন হাবিবুল বাশার। ২০০৮ সালে মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে করেছিলেন ১১ ও ২ রান। হাবিবুলের সেটি ছিল ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট। পরের বছর ক্যারিয়ারের ৫০তম টেস্ট খেলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গ্রানাডায় সেই টেস্টে আশরাফুল করেছিলেন ১২ ও ৩ রান। এরপর আরেকজনের টেস্ট খেলার ফিফটি হতে দীর্ঘ অপেক্ষা। গত বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে ৫০তম টেস্ট খেলেন মুশফিকুর রহিম। দলের দারুণ জয়ের সেই টেস্টে অধিনায়ক করেছিলেন ৪ ও ৯ রান।
এবার সেই ফাড়া কাটালেন সাকিব। তার খানিক পর হাফসেঞ্চুরি করেন তামিমও। বল তুলনায় অনেক বেশি খেলেছেন তামিম। পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন ১১৯ বলে। তবে ইনিংসে ছিল তিনটি ছক্কা। তিনটিই নাথান লায়নের বলে।
ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে টেনে নিয়ে এগুচ্ছিলেন সাকিব-তামিম। দুজন উইকেটে জুটি বাঁধেন খুব দ্রুতই। স্বাগতিকরা মধ্যান্হ-বিরতিতে যায় স্বস্তি নিয়েই। প্রথম সেশন শেষে বাংলাদেশের স্কোর সেই তিন উইকেটে ৯৬। সাকিব লাঞ্চে গিয়েছিলেন ৪৮ রান নিয়ে। লাঞ্চের পর প্রথম ওভারেই সাকিব ছুঁয়ে ফেললেন হাফ সেঞ্চুরি। স্বভাবজাত ব্যাটিংয়ে তামিমকে ছাড়িয়েও যান সাকিব। হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ৬৫ বলে। টেস্ট ক্যারিয়ারে ২২তম, তবে একটা জায়গায় প্রথম। বাংলাদেশের হয়ে পঞ্চাশতম টেস্টে পঞ্চাশ স্পর্শ করলেন কেউ এই প্রথম! এর আগে এই মাইলফলকের ম্যাচে (৫০তম টেস্ট) আগের সর্বোচ্চ ছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের- ১২ রান!
ফিফটির যুগলবন্দীর দিনে বন্ধু তামিম কেন পিছিয়ে থাকবেন। তুলনায় অনেক বেশি খেলেছেন- পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন ১১৯ বলে। তবে ২৩তম অর্ধশতকের ইনিংসে ছিল তিনটি ছক্কা। তিনটিই নাথান লায়নের বলে। বুক চিতিয়ে লড়াই করে সাকিবকে নিয়ে গড়েছেন নিজেদের দ্বিতীয় শতরানের জুটি। চতুর্থ উইকেটে ৯৭ বলে এসেছিল তাদের ৫০। জুটির রান তিন অঙ্কে গেছে ১৮৩ বলে। দু’জন সবশেষ ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খুলনা টেস্টে জুটি বাধার সময় করেছিলেন ১৩২ রান। তার আগের তিনটি জুটিতে পঞ্চাশ পর্যন্ত যেতে পারেননি একবারও।
ধীরে ধীরে এগুচ্ছিলেন তারা, রানার চাকাও ছিল সচল। জুটি টেনে নিয়ে গেছিলেন দেড়শ’তে। তবে সেটা আর লম্বা করতে দেননি গেøন ম্যাক্সওয়েল। তার অফ স্পিনে কাট করতে চেয়েছিলেন তামিম। মন্থর উইকেটের জন্য বল একটু দেরিতে এসায় ঠিক মতো শট খেলতে পারেননি বাঁহাতি এই ওপেনার। সহজ ক্যাচ চলে যায় ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ডেভিড ওয়ার্নারের হাতে। ১৪৪ বলে তিনটি ছক্কা আর ৫টি চারে ৭১ রান করা তামিমের বিদায়ে ভাঙে তার সঙ্গে সাকিব আল হাসানের ১৫৫ রানের জুটি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে কোনো জুটিতে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
তামিমের বিদায়ের পর চেপে ধরার সুফল খুব দ্রæতই পায় অজিরা। ম্যাক্সওয়েলের জায়গায় বল করতে আসা নাথান লায়নের বাড়তি বাউন্সে খোঁচা মেরে শেষ হয় ১১টি চারে গড়া সাকিবের ৮৪ রানের ইনিংস। এটি লায়নের ২৪৮তম শিকার। এই উইকেটে রিচি বেনোর পাশে দাঁড়ালেন অস্ট্রেলিয়ার অফ স্পিনার। শেষ হয় ব্যাট হাতে দুই বন্ধুর নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার উপাখ্যানও। তখনও বাকি ছিল সাকিবের সুযোগ।
বল হাতে টেস্টে দেড় শ উইকেটের মাইলফলক পেরিয়েছেন আগেই। নিজের ৫০তম টেস্টে এসে ৩৫০০ রানের মাইলফলকও ছুঁলেন। সেই সঙ্গে দারুণ রেকর্ডও নিজের করে নিলেন। টেস্টে দ্রুততম সময়ে ৩৫০০ রান ও ১৫০ উইকেটের কীর্তিও এখন সাকিবের ঝুলিতে।
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব এই কীর্তিতে যাঁদের পেছনে ফেলেছেন, সেই নামগুলো চমকে দেওয়ার মতোই। গ্যারি সোবার্স, ইয়ান বোথাম, ইমরান খান, কপিল দেব, রবি শাস্ত্রী, শন পোলক, জ্যাক ক্যালিস, ড্যানিয়েল ভেট্টোরি, অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফরা সকলেই পিছিয়ে আছেন সাকিবের চেয়ে।
পিছিয়ে থাকার ব্যবধানটাও যথেষ্ট বড়। এর আগে রেকর্ডটা ছিল ক্যারিবীয় গ্রেট সোবার্সের। তিনি ৬৩ টেস্টে এমন কীর্তি গড়েছিলেন। বোথামও এমন ‘ডাবল’ ছুঁয়েছেন ৬৩টি টেস্ট খেলে। ইমরানের লেগেছিল ৮২ টেস্ট, কপিলের ৮৫। শাস্ত্রী অবশ্য ৭৮তম টেস্টেই তা করেছিলেন। জ্যাক ক্যালিসের লেগেছিল ৬৯ টেস্ট।
সাকিব প্রথম দিনেই দারুণ একটা রেকর্ড নিজের নামের পাশে লেখালেন। আরও ভূমিকা রাখার সুযোগ তো রইলই।
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া
১ম টেস্ট, মিরপুর, ২০১৭
বাংলাদেশ ইনিংস রান বল ৪ ৬
তামিম ক ওয়ার্নার ব ম্যাক্সওয়েল ৭১ ১৪৪ ৫ ৩
সৌম্য ক হ্যান্ডসকম্ব ব কামিন্স ৮ ৮ ২ ০
ইমরুল ক ওয়েড ব কামিন্স ০ ৬ ০ ০
সাব্বির ক ওয়েড ব কামিন্স ০ ১ ০ ০
সাকিব ক স্মিথ ব লায়ন ৮৪ ১৩৩ ১১ ০
মুশফিক এলবিডবিøউ ব আগার ১৮ ৫০ ২ ০
নাসির এলবিডবিøউ ব আগার ২৩ ৬১ ২ ০
মিরাজ ক হ্যান্ডসকম্ব ব লায়ন ১৮ ৩৮ ২ ০
তাইজুল এলবিডবিøউ ব লায়ন ৪ ১০ ১ ০
শফিউল ক হ্যাজেলউড ব আগার ১৩ ১৭ ৩ ০
মুস্তাফিজ অপরাজিত ০ ৭ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ১৫, লে বা ৩, নো ২, ও ১) ২১
মোট (৭৮.৫ ওভার, অল-আউট) ২৬০
উইকেট পতন : ১-১০ (সৌম্য), ২-১০ (ইমরুল), ৩-১০ (সাব্বির), ৪-১৬৫ (তামিম), ৫-১৮৮ (সাকিব), ৬-১৯৮ (মুশফিক), ৭-২৪০ (মিরাজ), ৮-২৪৬ (নাসির), ৯-২৪৬ (তাইজুল), ১০-২৬০ (শফিউল)।
বোলিং : হ্যাজেলউড ১৫-৫-৩৯-০, কামিন্স ১৬-১-৬৩-৩, লায়ন ৩০-৬-৭৯-৩, আগার ১২.৫-২-৪৬-৩, ম্যাক্সওয়েল ৫-০-১৫-১।
অস্ট্রেলিয়া ইনিংস রান বল ৪ ৬
ওয়ার্নার এলবিডবিøউ ব মিরাজ ৮ ১৫ ১ ০
রেনশ অপরাজিত ৬ ২৫ ১ ০
খাজা রান আউট (মুশফিক/সৌম্য) ১ ২ ০ ০
লায়ন এলবিডবিøউ ব সাকিব ০ ৫ ০ ০
অতিরিক্ত ০
মোট : (৯ ওভার, ৩ উইকেট) ১৮
উইকেট পতন : ১-৯ (ওয়ার্নার), ২-১৪ (খাজা), ৩-১৪ (লায়ন)। বোলিং : শফিউল ২-০-৮-০, মিরাজ ৪-২-৭-১, সাকিব ৩-১-৩-১।
*প্রথম দিন শেষে
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।