ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
পৃথিবীর সব মানুষই একটু সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন ধারণ করতে ভালোবাসে, শান্তিতে থাকতে চায়। এ কারণে এখন গ্রামের মানুষ শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাদের ধারণা গ্রাম ছেড়ে শহরে গেলে পাল্টে যাবে তাদের জীবন যাত্রার মান। হতে পারবে তারা অতি তাড়াতাড়ি বড় লোক। শহরমুখী জন¯্রােত বাড়ছে। গ্রামীণ জনজীবনে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হচ্ছে। গ্রামগুলো আগের আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছে। গ্রাম উজাড় হচ্ছে প্রধানত দ্রæত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণে। অপেক্ষাকৃত ভালো জীবনযাপনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে নিম্নবিত্ত, দরিদ্র শ্রেণি গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হচ্ছে। শহরে পা রাখতে পারলে রিকশা চালিয়ে, শ্রমিক হিসেবে কাজ করে মোটামুটি ভালো উপার্জন সম্ভব। গার্মেন্টসকর্মী হিসেবে কাজ করলে প্রতিমাসে নির্ধারিত বেতন পাওয়া যাবে যা গ্রামে বসে অর্জন সম্ভব নয়। অধিকতর উপার্জনের আশায় ঢাকা, চট্টগ্রাম মহানগরী এবং আশপাশের শিল্প এলাকাগুলোতে গ্রাম থেকে আসা নারী-পুরুষের ভিড় বেড়েই চলেছে। এর ফলে শহরে বসবাসকারী লোকজন এখন আর আগের মতো সুন্দর জীবন যাপন করতে পারে না। গ্রামের লোকজন অতিমাত্রায় শহরে আসার কারণে বসবাসের জায়গার পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। ঘেঁষাঘেঁষি করে বসবাস করতে হচ্ছে এখন শহরে বসবাসকারী লোকজনদের। শহরে লোকজন অতিমাত্রায় আগমনের ফলে শহরে বাড়ছে বস্তিবাসী মানুষের সংখ্যা। যারা গ্রামের সহায় সম্পতি বিক্রি করে অধিকতর ভালোভাবে জীবন ধারণের জন্য শহরে পাড়ি জমায় তারা সেখানে গিয়ে বস্তিবাসী হয়ে যায়। গ্রামে যাদের লোকজন সামান্য পরিমাণ হলেও ইজ্জত দিত আজ তারা শহরে গিয়ে হয়ে যাচ্ছে বস্তিবাসী।
সচেতন নাগরিকদের প্রত্যাশা, দেশের লোজজন যে যেখানে যে অবস্থায় আছে তাদের সেখানে সুষ্ঠুভাবে বসবাস করার জন্য পরিকল্পিতভাবে বাসস্থান নির্মাণ করা হোক। পরিকল্পিত নগরায়ণ হোক বাংলাদেশে। যেখানে থাকবে প্রশস্ত রাস্তা, বিস্তৃত খেলার মাঠ, লেক, সবুজ গাছপালা বন বনানী সমৃদ্ধ পার্ক, সুদৃশ্য বাসযোগ্য টেকসই ইমারত, হাসপাতাল, স্কুল কলেজ, বিনোদনের জন্য অডিটরিয়াম, হল প্রভৃতি। যেখানে যানজট, লোডশেডিং এবং ভোগান্তি, বছরজুড়ে পানি সরবরাহে ঘাটতি, গ্যাস সংকট, ময়লা আবর্জনার স্তূপ, দুর্গন্ধময় অস্বস্তিকর পরিবেশ কোনোটাই থাকবে না। বর্ষাকালে রাজপথগুলো হাঁটুসমান, কোমর সমান পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে দুর্বিষহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে না। আলো বাতাসহীন অস্বাস্থ্যকর দুর্গন্ধময় বস্তির বিস্তৃতি ঘটবে না। অনাসয়ে মানুষ আনন্দের সঙ্গে বসবাস করবে। পাল্টে যাবে দেশের সকল মানুষের জীবন যাত্রার মান।
এক সময় গ্রাম ছেড়ে শহরে লোকজন চলে যাওয়ার বড় কারণ ছিল দারিদ্র্য। প্রচÐ অভাব ছিল গ্রামগুলোতে। কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পেত না উৎপাদিত কৃষিপণ্যের। আবাদি জমি পড়ে থাকত। বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদের তেমন উদ্যোগ ছিল না। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ না থাকার কারণে ফসলের পরিমাণ হতো অত্যন্ত কম। তখন যে পরিমাণ লোকজন ছিল সে পরিমাণ ফসল দিয়ে তাদের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করা যেত না। যার কারণে গ্রামে অভাব, মঙ্গা, দুর্ভিক্ষ লেগেই থাকত। তখন কেউ কেউ অভাবের যন্ত্রণা সইতে না পেরে সচ্ছলতার আশায় শহরে পা রাখত। তখন মানুষ অন্নের অভাবে শহরমুখী হতো। কিন্তু গত দেড় দুই দশকে গ্রামগুলোর অর্থনৈতিক ভিত্তি আগের চেয়ে অনেকটা মজবুত ও সবল হয়েছে। গ্রামের মানুষ এখন দেশে কৃষি কাজের পাশাপাশি আরও অনেক কর্ম করে থাকে। গ্রামে এখন এমনও মানুষ রয়েছে যারা রোজ দৈনিক এক থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারে। তারপরও মানুষ শহরমুখী হচ্ছে নানা লক্ষ্য-উপলক্ষে। আর শহরে জীবনমানে সৃষ্টি হচ্ছে চাপ। যেভাবেই হোক গ্রাম থেকে শহরে লোক স্থানান্তর রোধ করতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।