শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
কুতুবউদ্দিন আহমেদ
আমাদের এই বঙ্গদেশে এসেছিলেন এক সোনার মানুষ, ধূলো আর কাঁদামাটির দেশে সোনার মানুষ। তিনিই প্রথম বঙ্গদেশের হয়ে বিশ্বজয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বঙ্গসন্তানদের কী করে বিশ্বজয় করতে হয় তিনিই প্রথম শিখিয়েছিলেন। এই বঙ্গসন্তানটির নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [১৮৬১ Ñ ১৯৪১]; বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি তাঁর এক হাত দিয়ে বঙ্গবাসীদের টেনে তুলেছিলেন অনেক ওপরে; জাতে টেনে তোলা যাকে বলে।
রবীন্দ্রনাথকে ধারণ করে কেবল বঙ্গভূমিই উপকৃত হয়েছে তা বলা যায় না ; উপকৃত হয়েছে সমগ্র বিশ্বভূমি। তাঁর কলমের সৌন্দর্য দেশ-কাল ছাড়িয়ে বিচ্ছুরিত হয়েছে সমগ্র বিশ্বব্যাপী। জীবনের সৌন্দর্য ঠিক রেখে কী করে জীবনকে উপভোগ করতে হয় তাঁর মতো সাবলিল ভঙ্গিতে পৃথিবীর আর কোনো সাধক-কবি দেখিয়ে যেতে পারেন নি। জীবন এক অসম্ভব সম্ভবের যাদুমন্ত্র; জীবন সমাজের এক সান্দৌর্যিক শিল্পীত উপাদান; জীবন কেবল সাদামাটা যাপিত হবার নয়; রবীন্দ্রনাথ তা আমাদের উপলব্ধি করতে শিখিয়েছেন। এই কারণেই বলা হয়, তিনি একজন প্রকৃত জীবনশিল্পী। জীবনের অলিগলি চিনতে হলে, এর সৌন্দর্যমন্থন করতে হলে, যুগে-যুগে রবীন্দ্রনাথের দ্বারস্থ হতেই হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর একটি ছোটগল্পের মধ্য দিয়ে সাতাশ বছরের এক জীবনকে এভাবে মূল্যায়ণ করেছেন ঃ আজ আমার বয়স সাতাশ মাত্র। এ জীবনটা না দৈর্ঘ্যরে হিসাবে বড়, না গুণের হিসাবে। তবু ইহার একটু বিশেষ মূল্য আছে। ইহা সেই ফুলের মতো যাহার বুকের উপরে ভ্রমর আসিয়া বসিয়াছিল, এবং সেই পদক্ষেপের ইতিহাস তাহার জীবনের মাঝখানে ফলের মতো গুটি ধরিয়া উঠিয়াছে। [অপরিচিতা ঃ গল্পগুচ্ছ]
সাতাশ বছরের এই যুবকটির জীবনটা হয়তো বৃথাই চলে যেত; এটি যুবকটিরই ধারণা। তার মানে যুবকটির সাতাশটি বছর হয়তো নিস্তরঙ্গভাবে কেটে গেছে। দুঃখজনকভাবে মনে রাখার মতো বা হৃদয়ে দাগ কাটার মতো কিছু তার জীবনে ঘটে নি। তাই যুবকটির নিকট নিজের জীবনটাকে অর্থহীন মনে হয়েছে। বেঁচে থাকতে হলে তো জীবনে কিছু না কিছু রং থাকা চাই। সাদা-কালো একটি জীবন অতিবাহিত করা মানে চরম ব্যর্থ একটি জীবন অতিবাহিত করা; আর যাই হোক এটাকে তো জীবন বলা চলে না।
কিন্তু সাতাশ বছরের ঐ যুবকটির জীবন সাদা-কালোভাবে কাটে নি। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।