Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সংলাপ, নির্বাচন ও ইসির অগ্নিপরীক্ষা

| প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হোসেন মাহমুদ : বাংলাদেশে আরেকটি নির্বাচনের তারিখ এগিয়ে আসছে। দেশে সাম্প্রতিককালে সর্বশেষ বৈধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। তারপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনটি দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট ও কম্যুনিস্ট পার্টিসহ আরো কয়েকটি দল বর্জন করে। তা সত্তে¡ও সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠান করে ও নতুন সরকার গঠিত হয়। এটি একটি ত্রæটিপূর্ণ নির্বাচন বলে দেশে-বিদেশে বিবেচিত। এ সরকারের মেয়াদ শেষ হবে ২০১৮ সালের শেষদিকে। সে হিসেবে ২০১৮-র শেষে বা ২০১৯-এর প্রথম দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে।
নির্বাচন কমিশনেও (ইসি) চলছে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি। উল্লেখ্য, গত বছরের ফেব্রæয়ারিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা হয়। ২০১৮ বা ১৯-এ বাংলাদেশে এগারোতম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান তথা গণতন্ত্রের চর্চায় এ নির্বাচন কমিশনের বিশেষ ভূমিকা থাকবে। কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন পূর্ববর্তী নির্বাচন কমিশনের মত এ নির্বাচন কমিশন সরকারের অনুগত আখ্যায়িত মেরুদÐহীন, নিন্দিত হবে কিনা, তা আগামী দিনগুলোতে জানা যাবে। আগামী নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যার পরিণতিতে গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের সাথে এক মত বিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে গত ১৬ জুলাই দেড় বছরের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের কথা জানায় নির্বাচন কমিশন। তারই অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দল, নির্বাচন পরিচালনা বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, পর্যবেক্ষক ও নারী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আগারগাঁয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে এ সংলাপ বা মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।
ইতোমধ্যে এ সংলাপের ক্ষেত্রে কিছু নেতিবাচক দিক পরিলক্ষিত হয়েছে। ইসির পক্ষ থেকে এ সংলাপে যোগ দেয়ার জন্য বিভিন্ন মহলে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এমন ৫৯ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু এতে অংশ নেন মাত্র ৩০ জন। অর্থাৎ আমন্ত্রণ পাওয়া অর্ধেক ব্যক্তিই যাননি। জানা যায়, কাজের ব্যস্ততা, অসুস্থতা, বিদেশে থাকা, ইসির উপর আস্থা না থাকা ইত্যাদি কারণে তারা যাননি। যারা গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, সিপিডি’র বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দীন খান, সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তাসনীম সিদ্দিকি, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, পিএসসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. সা’দত হুসাইন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী প্রমুখ।
যারা সংলাপে যাননি বা যেতে পারেননি তাদের মধ্যে রয়েছেন ড. আকবর আলী খান, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী ও মির্জা আজিজুল ইসলাম, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, শাহদীন মালিক, বিচারপতি গোলাম রাব্বানী, অধ্যাপক আবুল বারাকাত, কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. হুমায়ুন কবির, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল হাফিজ প্রমুখ। এদের মধ্যে সৈয়দ আবুল মকসুদ সংলাপে না যাওয়ার কারণ হিসেবে বলেন, এতে কোনো লাভ হবে না। এক খবরে বলা হয়, তিনি তার মত লিখিত আকারে নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ করেন। স্মরণ করা যেতে পারে যে, নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এ কমিটির সদস্যরা নাগরিক সমাজের সাথে বৈঠক করেছিলেন। কিন্তু নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা যে সব সুপারিশ করেছিলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে তার কিছুই রাখা হয়নি। এ নিয়ে সে সময় তাদের কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।
এ সংলাপকালে আরেকটি নেতিবাচক বিষয় পরিলক্ষিত হয়েছে। তা হল, সাংবাদিকদের সেখানে প্রবেশাধিকার না দেয়া। জানা যায়, ছবি তোলার জন্য চিত্রগ্রাহকদের কয়েক মিনিট সময় দেয়া হয়। এটি কোনো গোপন সভা ছিল না, ছিল নির্বাচন বিষয়ক মত বিনিময় বা সংলাপ। এখানে সংবাদ সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকদের কেন যেতে দেয়া হয়নি তা বোধগম্য নয়। এটি কি সরকারের ইচ্ছায় না নির্বাচন কমিশনের ইচ্ছায় হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে সাংবাদিকদের পরিহার করা বা ছবি তোলার জন্য স্বল্প সময় বরাদ্দ বিষয়ে সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে কোনো কথা বলা হয়েছে কিনা জানা নেই। ধরে নেয়া যায় যে নির্বাচন কমিশন যা করেছে তা হয়ত ঠিকই করেছে। তাই সেখানে সংবাদ সংগ্রহের জন্য যেতে দেয়া না হলেও সাংবাদিকরা তাতে কোনো প্রকার ক্ষুব্ধ হননি। পরে সিইসির সংবাদ সম্মেলনে তারা যোগ দেন।
জানা গেছে, সংলাপে তিনটি বিষয় ব্যাপক গুরুত্ব পায়। এক, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, দুই, না ভোট দেয়ার ব্যবস্থা, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙ্গে দেয়া। বিএনপির দাবি সহায়ক সরকারের পক্ষেও অনেকেই প্রস্তাব করেছেন। তবে সহায়ক সরকার ও সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেছেন কেউ কেউ। ড. হোসেন জিল্লুর রহমান নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার বিষয়ে বলেন, সহায়ক সরকার রাজনৈতিক বিষয়। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ হওয়া উচিত। জানা গেছে, আলোচকদের অধিকাংশই নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনারদের কথা না বলার পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যদিকে সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান বলেন, তত্ত¡াবধায়ক সরকার সম্ভব নয়, এটি একটি ডেড ইস্যু। তিনি বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী আনা যাবে না। তিনি নির্বাচনের আগে পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেয়ারও বিরোধিতা করেন। তার মতের মধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় মতের প্রতিফলন দেখা যায়। এদিকে সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, সেনাবাহিনীকে দিয়ে যদি হাসপাতাল, বীমা প্রতিষ্ঠান চালানো যায়, রাস্তা নির্মাণের কাজ করানো যায়, ত্রাণ দেয়ার কাজ, এমনকি ট্যাক্সি সার্ভিসের কাজ করানো যায় তাহলে সেনাবাহিনীকে দিয়ে নির্বাচনী কাজ করানো যাবে না কেন? পত্রিকার খবরে দেখা যায়, নির্বাচনে না ভোটের ব্যবস্থা রাখার পক্ষে বেশি মত পড়েছে। ইতোমধ্যে (বুধবার) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংলাপে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবিকে অবান্তর বলে নাকচ করে দিয়েছেন।
সংলাপের পর সংবাদ সম্মেলনে সিইসি বলেন, সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা থেকে উঠে আসা পরামর্শের ভিত্তিতে প্রয়োজনে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করেই সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ আগামীতে তিনি যাদের সাথে বসবেন তাদের সুপারিশ একত্রিত করে বই আকারে প্রকাশ করা হবে এবং জানুয়ারির দিকে তা সরকার ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। সিইসি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে বলেন, তাদেরকে আমরা আশ্বস্ত করেছি যে আইনের আলোকে নির্বাচন পরিচালনার যে ক্ষমতা ইসির সাংবিধানিকভাবে রয়েছে, তা পরিপূর্ণভাবে পালন করা হবে। সিইসি মনে করেন, সংলাপের মাধ্যমে সরকার ও রাজনৈতিক দলের উপর প্রভাব পড়বে। তবে সংলাপের সুপারিশ নিয়ে সরকার চাপে থাকবে কি না, তা নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে চাননি।
এদিকে নির্বাচন কমিশনে সদ্য যোগদানকারী ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সকল দলের অংশগ্রহণে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন । রোববার আগারগাঁওয়ে ইসি সচিবালয়ে প্রথম কার্যদিবসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ আশা প্রকাশ করেন। ইসি সচিব বলেন, জাতি আগের মতো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন চায় না।
২০১৪ সালে একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা লাভের পর দেশের বহু মানুষই নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। নির্বাচন কমিশন তাদের কাছে সরকারের আজ্ঞাবহ একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কিছু নয়। ভবিষ্যত কোনো নির্বাচনে ইসির সেই ভূমিকা আর কেউ দেখতে চায় না। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের অনেকেই বাংলাদেশে সকল দলের অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন চায়। বিএনপি সহায়ক সরকার না হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। কিন্তু সহায়ক সরকার গঠনের বিষয়টি ইসির বিষয় নয়। সরকার যদি এ দাবি না মানে সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কোনো ভূমিকা পালন করার আছে কিনা তা নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন। কিন্তু সহায়ক সরকারের দাবি পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই ধরে নেয়া যায়। তারপরও বিএনপি শেষপর্যন্ত নির্বাচনে গেলে ভালো। কিন্তু বিএনপি যদি নির্বাচনে না যায় এবং সরকারের ইচ্ছায় নির্বাচন কমিশন যদি ২০১৪-র মত যুক্তিতেই নির্বাচন সম্পন্ন করে সেক্ষেত্রে সকল দলের অংশগ্রহণ ভিত্তিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের আন্তর্জাতিক মহলের দাবি পূরণ হবে না। একই সাথে নির্বাচন কমিশনের প্রতি বহু মানুষের হারানো আস্থাও আর পুনরুদ্ধার হবে না।
নির্বাচন কমিশনের সামনে আবারো অগ্নিপরীক্ষা আসছে। অন্যকথায়, ইসিকে পাড়ি দিতে হবে সুকঠিন, দুর্গম পথ। সরকারের আন্তরিক সদিচ্ছা থাকলে এবং নির্বাচন কমিশনারগণসহ সিইসি যদি নীতিনিষ্ঠ ও দৃঢ় মনোবলের অধিকারী হন তাহলে এ পথ পাড়ি দেয়া কোনো বিষয় নয়। কিন্তু কে না জানে যে দুর্ভাগ্য আমাদের প্রায়ই তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। অতীতে ও নিকট অতীতে তা দুঃখজনকভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। ভারতের নির্বাচনে তাদের নির্বাচন কমিশনের প্রশ্নাতীত অবিতর্কিত ভূমিকার কথা আমরা জানি। বলা হয়ে থাকে, ভারতের নির্বাচন কমিশনের চেয়েও নাকি শক্তিশালী বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন। তবে সে রকম প্রমাণ আমরা তেমন পাইনি। বরং সাম্প্রতিককালে দেখা গেছে, সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার দ্বারাই মূলত ইসি পরিচালিত হয়েছে। এক্ষেত্রে লজ্জাজনক উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন সাবেক সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ। এখন আগামীতে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বর্তমান সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন কী ভূমিকা পালন করে সেটাই দেখার বিষয়।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সংলাপ

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১০ জুন, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন