হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
মুনশী আবদুল মাননান : ভারতের বহুত্ববাদী সমাজ ও রাষ্ট্রের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য কি হুমকির সম্মুখীন? বিজেপি শাসনের এই পর্যায়ে এ প্রশ্ন, বলা বাহুল্য, নতুন নয়। হিন্দুত্ববাদের প্রবল উত্থান, সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপক বিস্তার, সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বর আচরণ ও নিষ্ঠুর দমন-পীড়নের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সমাজ ও রাষ্ট্র তার ধারাবাহিকতার বাইরে চলে যাচ্ছে বলে সহজেই প্রতীয়মান। হিন্দুত্ববাদের উগ্রতা, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা, সংখ্যালঘুদের প্রতি বিষম আচরণ ও নির্যাতন ভারতে মোটেই নতুন নয়। তারপরও এটা মনে করা হতো, ভারতে যে বিভিন্নতা রয়েছে তা স্বীকার করে ঐক্যবদ্ধতা তৈরি করতে পারলে ভারতীয় সমাজ ও রাষ্ট্র অধিক নিরাপদ ও স্থিতিশীল হবে। তাদের অস্তিত্বের স্বার্থেই এই বহুত্ববাদিতা বা বিভিন্নতার মধ্যে ঐক্য শক্তিশালী করতে হবে। স্বাধীন ভারতের যারা প্রতিষ্ঠাতা তারা গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, অসম্প্রদায়িক ভারত গড়ার লক্ষ্য স্থির করেছিলেন এবং এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য যথাসাধ্য উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে ভারত তাদের দেখানো ও সূচিত পথে হাঁটতে পারেনি। কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপির উত্থান ও ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া তারই প্রমাণ। শত শত বছর পর হিন্দুপ্রধান স্বাধীন ভারত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এই নবীন রাষ্ট্রটির বিপদ কোনদিক দিয়ে আসতে পারে, এর প্রতিষ্ঠাতারা সেটা ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তারা বুঝেছিলেন, উগ্র হিন্দুত্ববাদের বিস্তার ও প্রতিষ্ঠা ঘটলে এর রাষ্ট্রভিত্তি ধসে পড়বে, গণতন্ত্র অচল হয়ে যাবে। সে জন্য তারা ধর্মনিরপেক্ষতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। এটাকে তারা ভারতীয় সমাজ ও রাষ্ট্রের রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যায়। তখন প্রধানমন্ত্রী নেহেরু। প্রেসিডেন্ট রাজেন্দ্র প্রসাদ। সোমনাথে নব নির্মিত মন্দির উদ্বোধনে সম্মতি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট। এ কথা জানার পর নেহেরু তার কাছে কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছিলেন, একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশের প্রেসিডেন্টের পক্ষে ধর্মীয় বিষয়ে জড়ানোর মতো কোনো কাজ থাকতে পারে না। নেহেরুর পরে যারা ক্ষমতায় আসেন তারা বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারেননি, অথবা সেই বিষয় মোকাবেলার সামর্থ্য তাদের ছিল না। অতঃপর ধীরে ধীরে উগ্র হিন্দুত্ববাদের উত্থান ও প্রতিষ্ঠা ঘটেছে।
ভারতে বিভিন্ন জাতি-উপজাতি, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষের বসবাস। হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও সেখানে দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী মুসলিম। এছাড়া বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিখ ধর্মাবলম্বীর সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়। একই সঙ্গে আরো ধর্মীয় ও নৃতাত্তি¡ক জনগোষ্ঠীর লোকও সেখানে রয়েছে। হিন্দুত্ববাদীরা বলছে, ভারতে একমাত্র হিন্দুদেরই বসবাসের অধিকার রয়েছে। অন্য ধর্মাবলম্বীদের হয় ভারত ছেড়ে যেতে হবে, না হয় হিন্দু হয়ে যেতে হবে। এটা কি সম্ভব? সম্ভব নয়। অথচ এই অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে আরএসএস, বজরং, শিবসেনা প্রভৃতি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন এবং বিজেপি। তারা বহুত্ববাদিতাকে অবলুপ্ত করতে চায়, ধর্মনিরপেক্ষতাকে অস্বীকার করতে চায় এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির প্রতিও তাদের আনুগত্য প্রশ্নাতীত নয়। আসলে বহুত্ববাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র ভারতের সমাজ ও রাষ্ট্রকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। এই ভিত্তিস্তম্ভগুলো যদি দুর্বল হয়ে পড়ে কিংবা ভেঙ্গে যায় তাহলে সমাজÑরাষ্ট্র থাকবে না। তা ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাবে। এমন আশঙ্কাই দিনকে দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। যারা ভারতকে উন্নত, সমৃদ্ধ, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ এবং মানব বিকাশের উপযোগী একটি দেশে পরিণত করতে চান, সেই সব ভারতীয়ের মধ্যে সঙ্গতকারণেই উদ্বেগ ও বিচলন দেখা দিয়েছে।
বাস্তবতার এই প্রেক্ষপটে ভারতের সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার সর্বশেষ ভাষণে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বলেছেন, বহুত্ববাদিতা আর সহনশীলতাই ভারতের অন্তরাত্মা। সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে বহুত্ববাদিতা যে বড় রকমে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সম্ভবত প্রণব মুখার্জির তা দৃষ্টি এড়ায়নি। সহনশীলতার অভাব তো পদে পদেই দৃশ্যমান। প্রকৃতপক্ষে বহুত্ববাদিতা যেখানে বর্তমান সেখানে সহনশীলতা তার অনুসঙ্গী। কাজেই বহুত্ববাদিতাই মূলকথা। সেই বহুত্ববাদিতা ‘যা প্রণব মুখার্জির ভাষায় ভারতের অন্তরাত্মা’ এখন ক্ষত-বিক্ষত। বোধকরি এ কথাটিই তিনি তার শেষ ভাষণে সবাইকে অনুধাবন করার তাকিদ দিয়েছেন। পরম বিস্ময় নয়, বরং নিরেট বাস্তবতাবোধেই মনে হয়, নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দকেও বহুত্ববাদিতা সম্পর্কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে অণুপ্রাণিত করেছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম ভাষণে তিনি তার পূর্বসূরির মতোই বলেছেন, আমাদের এমন একটি দেশ যেখানে বহু ভিন্নতা রয়েছে তবে এখন পর্যন্ত বহুত্বের মধ্যে ঐক্যই আমাদের এগিয়ে চলার পথ। বলা আবশ্যক, বহুত্ববাদিতার মধ্যে সব জাতি-উপজাতি, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষের অধিকার ও ক্ষমতার স্বীকৃতি রয়েছে। বহুত্ববাদী সমাজ ও রাষ্ট্রে জাতীয় ঐক্য হলো অনিবার্য ফল। প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দও তার শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির মাধ্যমে এ সত্য অনুধাবন করতে পেরেছেন, বহুত্বের মধ্যে চিড় ধরেছে, ঐক্যে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। তিনিও তার বক্তব্যের মধ্যদিয়ে জানাতে চেয়েছেন, বহুত্ববাদিতাকে লালন করতে হবে এবং এর মধ্যদিয়ে উৎসারিত ঐক্যই ভারতকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবে।
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ও নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের এই অভিন্ন এবং গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপোযোগী বক্তব্য হিন্দুত্ববাদীরা কীভাবে গ্রহণ করবে তা তাদের ব্যাপার। তবে অখÐ, প্রীতিময়, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভারত-অন্বেষীরা অবশ্যই তাদের বক্তব্য উপযুক্ত গুরুত্বের সঙ্গেই গ্রহণ করবেন বলে আশা করা যায়। বিজেপির শাসকরা যেদিকে দ্রæত ধাবমান সেদিক থেকে ফিরতে পারবেন কিনা তা নিয়ে পর্যবেক্ষক মহলে ঘোর সংশয় রয়েছে। বিখ্যাত ভারতীয় সাংবাদিক খুশবন্ত সিংয়ের একটি অভিমত উদ্ধৃত করে আমরা এ প্রসঙ্গের আলোচনা শুরু করতে চাই। বেশ আগে লেখা তার ‘এন্ড অফ ইন্ডিয়া’ গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, ‘এখন ভারতের জন্য ঘোর অন্ধকার সময়, গান্ধীজির নিজরাজ্য গুজরাটে ২০০২ সালের প্রথম দিকে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ এবং পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার ঘটনা আমাদের দেশর জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। ধর্মান্ধ হিন্দুদের ফ্যাসিবাদী তত্ত¡ আধুনিক ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতার সাথে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। দেশ বিভাগের পর আমার ধারণা হয়েছিল, আমরা আর কখনো অনুরূপ হত্যালীলার মুখোমুখী হবো না। আমার ধারণা হয়তো ভুল ছিল। ‘ভারত মহান’ হওয়ার চাইতে বরং সর্বনাশের পানে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এ পরিস্থিতিতে কোনো অলৌকিক ঘটনা যদি আমাদের রক্ষা করতে না পারে তাহলে দেশটি ভেঙ্গে যাবে। পাকিস্তান অথবা অন্য কোনো বিদেশি শক্তি যে আমাদের ধ্বংস করবে, তা নয়, আমরা নিজেরাই হারিকিরি করে মরবো।’
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর গুজরাট হত্যাকাÐ ছিল সব চেয়ে ভয়াবহ ও লোমহর্ষক ঘটনা। শত শত মুসলমান ওই পরিকল্পিত হত্যাকাÐে প্রাণ হারায়। অনেকেই বিশ্বাস করেন, ওই হত্যাকাÐের পেছনে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ছিল। সেই নরেন্দ্র মোদি এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তার নেতৃত্বে বিপুল ভোটে বিজয় হয়ে বিজেপি এখন ক্ষমতায়। উগ্র হিন্দুত্ববাদী, ঘোর সাম্প্রদায়িক রাজনীতি গত কয়েক দশকে কীভাবে ভারতে শিকড় সম্প্রসারণ করছে, দৃঢ়তা ও শক্তি অর্জন করেছে বিগত নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির বা বিজেপির ভূমিধস বিজয় তার প্রমাণ বহন করে। স্মরণ করা যেতে পারে, ১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি মাত্র দুটি আসনে বিজয়ী হয়েছিল। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সেই বিজেপিই আসন লাভ করেছিল ১১৭টি। এর পর মিত্রদের সহযোগে তার ক্ষমতায় অধিষ্ঠান। বিগত নির্বাচনে বিজেপিকে আর কারো দিকে তাকাতে হয়নি। বিশাল বিজয় তার পায়ে এসে লুটিয়ে পড়েছে। কংগ্রেস কিছু করতে পারেনি। কমিউনিস্টরাও লা-পাত্তা। এখন তো সব নির্বাচনেই বিজেপির জয় জয়কার।
জনসমর্থন ও বিজয়ের পালে এই ঝড়ো হাওয়ায় বিজেপির নেতারা রীতিমতো টাল-মাটাল। তারা ধরাকে সরাজ্ঞান করছেন। ক্ষমতায় আসার পরপরই বিজেপি ‘ঘর ওয়াপস’ নামে এক কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য ছিল অন্য ধর্মের লোকদের হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত করা। তখন কোথাও কোথাও জোর করে ধর্মান্তরকরণের ঘটনাও ঘটেছে। তবে উপযুক্ত সাড়া না মেলায় এই কর্মসূচি থিতিয়ে গেছে। এর পরই শুরু গোকাÐ, যা এখনও জোরদারভাবে চলছে। হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন জাতি-সম্প্রদায়ের লোকদের প্রিয় খাদ্য গরুর গোশত থেকে বঞ্চিত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, গরু জবাই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মূল লক্ষ্য মুসলমানরা হলেও অন্যরাও একই বঞ্চনার শিকার হয়েছে। ‘গো মাতা’ রক্ষার অজুহাতে গরু জবাই, এমনকি জবাইয়ের জন্য গরু বিক্রিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গো মাতা রক্ষার জন্য ‘সন্তানরা’ এমনকি মানুষ হত্যা করতেও দ্বিধা করছে না। ইতোমধ্যে কয়েকজন মুসলমান তাদের হাতে নিহত হয়েছে। গোকাÐে সারা ভারতে ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মুসলমান, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় এমনকি হিন্দুদের মধ্যে এই অন্যায় নিষেধাজ্ঞায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হলেও হিন্দুত্ববাদী ও বিজেপির পান্ডাদের তাতে ভ্রæক্ষেপ নেই। অথচ ভারত গরুর গোশত রফতানিতে বিশ্বের শীর্ষস্থানে রয়েছে। কীভাবে এই বিপুল সংখ্যক গরু জবাই হচ্ছে ও গোশত রফতানি হচ্ছে সেটা এক বিরাট প্রশ্ন। যেহেতু গোকাÐে মুসলমানেরাই আক্রমণের লক্ষ্য, সে জন্য গোটা ভারতে মুসলমানেরা গভীর শঙ্কা ও আতংকের মধ্যে রয়েছে। সামনে ঈদুল আজহা। এতে তাদের আতংক আরও বেড়েছে। ছুঁতানাতায় তারা আক্রমণ ও ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে পারে। এমতাবস্থায় দিল্লীর ঐতিহাসিক জামে মসজিদের ইমাম মওলানা সাইয়েদ আহমেদ বুখারী ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকে চিঠি লিখে ঈদুল আজহায় মুসলমানদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার আহŸান জানিয়েছেন। বলেছেন, ঈদুল আজহার সময় মহিষ অথবা ছাগল বহনকারী লোকদের ওপর যাতে কোনো জুলুম না হয় তা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। তিনি অবশ্য গরুর কথা উল্লেখ করেননি। কেন করেননি সেটা সহজেই অনুমেয়। তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন, পশু রক্ষার নামে যদি মুসলমানদের মারধর করা হয়, তাহলে দেশে শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ নাও থাকতে পারে। উল্লেখ বাহুল্য, স্বাধীনতার পর থেকে এত বছরে গরু নিয়ে এমন কাÐকারখানা কখনোই হতে দেখা যায়নি। যারা এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে, তারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সাংবিধানিক ও অন্যান্য অধিকার কীভাবে দলিত করতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। বিজেপি শাসনে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামার সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে মুসলমানরা এসব দাঙ্গা-হাঙ্গামার শিকার হয়েছে। কিছু দাঙ্গা-হাঙ্গামার শিকার হয়েছে খ্রিস্টান ও দলিত সম্প্রদায়ের লোকেরা। মুসলমানদের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয় ও উদ্বেগজনক।
কাশ্মীরে কি হচ্ছে? যা হচ্ছে তা বর্ণনার অতীত। নিরাপত্তা বাহিনীর লোকরা কাশ্মীরকে রীতিমত বধ্যভূমিতে পরিণত করেছে। কাশ্মীরীদের কথা বলার পর্যন্ত অধিকার নেই। তাদের শান্তিপূর্ণ কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেয়া হচ্ছে না। এক রকম বন্দী জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। তার মধ্য থেকেও স্বাধীনচেতা কাশ্মীরীরা কথা বলার ও প্রতিবাদী কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করছে। বুলেট, গ্রেফতার, অকথ্য নির্যাতন তাদের দমাতে পারছে না। কাশ্মীরের এই পরিস্থিতির জন্য ভারতের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ সরকারের দমনমূলক নীতি-ব্যবস্থাকেই দায়ী করছেন। তাদের কারো কারো দৃঢ় অভিমত, পরিস্থিতি এমন একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যখন কাশ্মীরীদের স্বাধীনতার অধিকার স্বীকার করে নেয়া ছাড়া ‘কাশ্মীর সমস্যার’ আর কোনো সমাধান নেই। সরকারই কাশ্মীরীদের সেখানে ঠেলে নিয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে মওলানা সাইয়েদ আহমেদ বুখারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকে পূর্ব কথিত চিঠিতে বলেছেন, জম্মু ও কাশ্মীর পরিস্থিতি দিনকে দিন খারাপ হতে চলেছে। এ জন্য ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। কাশ্মীরে শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করতে দেরী হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। সুতরাং ওই ইস্যুর সমাধানের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে কাশ্মীরকে ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যথাসাধ্য প্রয়াস চালানো উচিৎ।
প্রশ্ন হলো, উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার কি ইমাম বুখারী এবং তার মতো বিদগ্ধ, বিচক্ষণ, পরিণামদর্শী ভারতীয়দের সৎ-কথা ও সতর্কবাণীর কোনো মূল্য দেবে? সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির ‘বহুত্ববাদিতা ও সহনশীলতা ভারতের অন্তরাত্মা’ এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দের ‘বহুত্বের মধ্যে ঐক্য আমাদের এগিয়ে চলার পথ’ এ কথার গভীরতা ও তাৎপর্য উপলব্ধি করে ভারতীয় সমাজ ও রাষ্ট্রকে সুরক্ষা করতে এগিয়ে আসবে? স্বাধীন ভারতের প্রতিষ্ঠাতারা যেভাবে একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ ও সাধনা নিয়োজিত করেছিলেন বিজেপি কি সেই জায়গায় ফিরে যাবে? এ দু’টি প্রশ্নের জবাবের ওপরই ভারতের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।