হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
কামরুল হাসান দর্পণ : আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনের দুই বছর আগেই সভা-সমাবেশ করে নির্বাচনী প্রচারণা এবং ভোট চাওয়া শুরু করে দিয়েছে। এর বিপরীতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ভোট চাওয়া দূরের কথা, কোনো ধরনের সভা-সমাবেশও করতে দেয়া হচ্ছে না। দলটি সভা-সমাবেশ করতে চাইলেও বিভিন্ন অজুহাতে অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। এমনকি অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে বসে যে আলাপ-আলোচনা করবে, তাও করতে দেয়া হচ্ছে না। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি রোডম্যাপ দিয়েছে। সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করাসহ সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে এই রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন যদি নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য এ রোডম্যাপ ঘোষণা করে থাকে, তবে সব দলের জন্য সমান নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হলো না কেন? নির্বাচন কমিশন কি দেখছে না, ক্ষমতাসীন দল একতরফাভাবে সভা-সমাবেশ করে নির্বাচনী প্রচারণা এবং ভোট চাওয়া শুরু করে দিয়েছে? প্রধান বিরোধী দলসহ অন্যান্য দলকে এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে? এ পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে, তবে কি তা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হিসেবে গণ্য করা যাবে? প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইতোমধ্যে বার্তা দিয়েছেন, বিরোধী দলগুলোর সভা-সমাবেশে পুলিশি বাধা বন্ধ করতে পারবেন না। এ থেকে অনুমিত হয়, নির্বাচন কমিশন সব দলের জন্য নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে এক ধরনের উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে। বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান বা দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের এ ধরনের আচরণকে অনেকে রকিব কমিশনের ‘মেরুদÐহীনতার’ যে অভিযোগ উঠেছিল, তার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে মনে করছেন। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, যদি এ নির্বাচন কমিশন তার মেরুদÐ শক্ত না রাখতে পারে, তবে একাদশ জাতীয় নির্বাচন আরেকটি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো হতে পারে।
দুই.
নির্বাচন কমিশন যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে, তা তার রুটিন কাজ। প্রত্যেক জাতীয় নির্বাচনের আগেই এ ধরনের কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়। এটা নতুন কিছু নয়। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা যেহেতু খুবই ‘ক্রিটিকেল’ এবং ‘চ্যালেঞ্জিং’ বিষয়ে পরিণত হয়েছে, তাই এই নির্বাচন কমিশনের রুটিন কাজের বাইরে আরও অনেক কিছু করার রয়েছে। প্রথা, ঐতিহ্য, বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে পদক্ষেপ নিতে পারে। নির্বাচন কমিশন এসব বিষয় নিয়ে ভাবছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। বিষয়টি যদি এমন হয়, একজন একটি দোকান খুলে বসল, অথচ ক্রেতা এলো না, তাহলে কি এই দোকান খোলার অর্থ হয়? দোকান খুলে যদি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার মত সার্ভিস, মানসম্পন্ন পণ্য এবং ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ না করা হয়, তবে ক্রেতাদের সেই দোকানে আসার কি কোনো কারণ থাকতে পারে? নির্বাচন কমিশনের কাজ নির্বাচনে সব দলকে আকৃষ্ট করা এবং সমান সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য যত ধরনের প্রক্রিয়া অবলম্বন করা প্রয়োজন, তার সবই করা। এ নির্বাচন কমিশনের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। একটি নির্বাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আশা করছে মানুষ। ৫ জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচনের কারণেই আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কেউই চাচ্ছে না ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি হোক। এ বিবেচনায় দেশের মানুষ আগামী নির্বাচনের প্রতি অত্যন্ত আগ্রহ এবং উৎসাহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। কমিশন যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করা শুরু করেছেন। রুটিন কাজ বলে এটিকে তারা খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এর কারণ এতে সব দলের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। নির্বাচন কমিশন বলেছে, যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে তখন এ নিয়ে কাজ করবে। কমিশনের এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। কারণ, আগামী জাতীয় নির্বাচনের চরিত্র এবং ধরন ভিন্ন। এতে ৫ জানুয়ারির মতো ভোটারবিহীন নির্বাচন হতে না দেয়ার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ এতটাই কঠিন ও জটিল যে, তা অতিক্রম করতে হলে সাধারণ রুটিন ওয়ার্ক যথেষ্ট নয়। এর বাইরে নির্বাচন কমিশনকে আরও অনেক কাজ করতে হবে। সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কমিশনকে ৫ জানুয়ারির অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করতে হবে। কেবল মুখে বললেই হবে না, আমরা ভাল নির্বাচন উপহার দেব। কর্মকাÐ এবং উদ্যোগের মাধ্যমে তার প্রমাণ দিতে হবে। ইতোমধ্যে কমিশনের কিছু বক্তব্যে বিশিষ্টজনদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখন থেকেই তৈরি করতে হবে। তফসিল ঘোষণার পর নয়। কারণ হচ্ছে, ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন দল তার সব ক্ষমতা ব্যবহার করে একতরফাভাবে নির্বাচনী প্রচার ও ভোট চাওয়া শুরু করে দিয়েছে। প্রধান বিরোধী দলসহ অন্যান্য বিরোধী দলকে সে সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়টি স্বপ্রণোদিত হয়ে দেখতে হবে। যদি কমিশন এ কাজটি না করে এবং রুটিন কাজের মতো তফসিল ঘোষণার পর তিন মাসের প্রচারণার ব্যবস্থা করে, তবে সব দলের অংশগ্রহণের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে যাবে। আরেকটি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে, তফসিল ঘোষণার পর সব দল নির্বাচনী প্রচারণায় নামবে, তবে তা বাস্তব রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সুবিবেচনা প্রসূত হবে না। আমাদের দেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক দলগুলো দেড়-দুই বছর আগে থেকেই প্রচারণা শুরু করে। যেমনটি আমরা দেখছি, ক্ষমতাসীন দলের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে পার্থক্য হচ্ছে, প্রধান বিরোধী দলসহ অন্যান্য দলকে সরকার সে সুযোগ দিচ্ছে না। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের বিবেচনায় নেয়া উচিত। যদিও নির্বাচন কমিশনের মনোভাব এমন, এ বিষয়ে তাদের করার কিছু নেই। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কমিশন এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে পারে। রোডম্যাপের বাইরেও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে পারে। তা নাহলে তার এ রোডম্যাপ ঘোষণার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, তফসিল ঘোষণার আগে যদি রোডম্যাপ দেয়া যায়, তবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির উদ্যোগ নেয়া যাবে না কেন? বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসিতে নিবন্ধিত কোনো দলকে নির্বাচনী প্রচারে কেউ বাধা দিতে পারে না। বাধা দিলে তা নির্বাচন কমিশনকেই প্রতিকার করতে হবে। প্রয়োজনে কমিশন এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা নিতে পারে। এছাড়া সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে। এই সহায়তা শুধু তফসিল ঘোষণার পরপরই করতে হবে, তা বলা নেই। কাজেই তফসিল ঘোষণার আগেই অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বাধা দূর করতে কমিশন সরকারের কাছে আহŸান জানাতে পারে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে সরকারের সহায়তা চাইতে পারে।
তিন.
এ কথা অনস্বীকার্য, এখন থেকে বিরোধী দলগুলোর জন্য নির্বাচনী প্রচারের সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠবে। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে। শপথ নেয়ার পর অভিযোগ উঠেছিল, তিনি জনতার মঞ্চের লোক। অর্থাৎ তিনি ক্ষমতাসীন দলের লোক হিসেব বিবেচিত। তিনি যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার লক্ষ্যে সব দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে না পারেন, তবে এ অভিযোগ সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত হবে। সাধারণ মানুষ বলার সুযোগ পাবে, এজন্যই তিনি বিরোধী দলগুলোকে সুযোগ দিচ্ছেন না। তার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। বিশিষ্টজনরা প্রশ্ন তুলেছেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, সীমানা নির্ধারণ ও সংলাপ আয়োজনসহ অন্যান্য কাজ যদি দেড় বছর আগে থেকেই কমিশন শুরু করতে পারে, তবে আগেভাগেই নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ এবং সব দলের প্রচার-প্রচারণার সমান সুযোগ সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে পারবে না কেন? ক্ষমতাসীন দল তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে নির্বিঘেœ নির্বাচনী প্রচার করে যাবে, বিরোধী দলগুলো ভয়ে ঘরে বসে থাকবে বা তাদের মাঠে নামতে দেয়া হবে না, এমন পরিবেশ কাম্য হতে পারে না। ক্ষমতাসীন দল সরকারি অর্থে সভা-সমাবেশ করে একতরফাভাবে সারা বছর ভোট চাইবে, আর বিরোধী দলগুলো ভোটের আগে একমাস প্রচারণার সুযোগ পাবে, এমন হলে কোনোভাবেই তা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে কমিশনের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের বিধান রয়েছে। কাজেই স্বাধীন সংস্থা হিসেবে নির্বাচন কমিশন সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন তার এই ক্ষমতা এবং সক্ষমতা ব্যবহারে আন্তরিক হবে কিনা। ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তা মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। অনেকেরই মনে হয়েছে, তার কথাবার্তার মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের অদৃশ্য সুতার টান রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের দিকে দৃষ্টি রেখে এবং সে যাতে অসন্তুষ্ট না হয়, এ ব্যাপারে সতর্ক হয়ে কথা বলছেন। ক্ষমতাসীন দলের বিরাগভাজন না হওয়ার এক ধরনের প্রবণতা তার মধ্যে দেখা দিয়েছে। সকাল দেখলে যেমন মনে হয় দিনটি ভাল যাবে না খারাপ যাবে, তেমনি সিইসির বক্তব্যেও এমন একটি আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তা নাহলে তিনি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির কথা বলতেন। বলতেন না, সভা-সমাবেশে পুলিশি বাধা বন্ধ করতে পারবেন না। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তিনি যদি বিরোধী দলগুলোর সভা-সমাবেশে পুলিশি বাধা বন্ধ করতে না পারেন, তবে ক্ষমতাসীন দল যাতে সভা-সমাবেশে নির্বাচনী প্রচারণা ও ভোট না চায় অন্তত এ আহŸানটুকু তিনি জানাতে পারেন। এটুকু করলেও কমিশনের মেরুদÐের দৃঢ়তার কিছুটা প্রমাণ পাওয়া যেত। অথচ এ ব্যাপারে তিনি কোনো উদ্যোগ নিতে পারবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। এ থেকে প্রতীয়মাণ হয়, সিইসি তার নিরপেক্ষ অবস্থানের প্রতি সুবিচার করছেন না। স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করাতে পারছেন না।
চার.
রোডম্যাপ ঘোষণা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, তফসিল ঘোষণার আগে তাদের কিছু করার নেই। তার এ বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচন কমিশনের যদি কিছু করার না থাকে, তবে দুই-তিন মাসের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করলেই হতো। দেড়-দুই বছর আগে এসব রোডম্যাপ ঘোষণার কোনো প্রয়োজন হতো না। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এ বক্তব্য খুবই হতাশাজনক। তার এ কথা যথার্থ হতো যদি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সুষ্ঠু পরিবেশ ও জটিলতা না থাকতো। ইউরোপ-আমেরিকার মতো স্থিতিশীল পরিবেশ থাকত। তিনি ভালো করেই জানেন, তার অধীনে আগামী নির্বাচনটি সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করা কতটা কঠিন। আবার এটাও জানেন, নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি স্বাধীন। কেবল এ স্বাধীনতাকে সুবিবেচনায় নিয়ে সরকারি প্রভাব মুক্ত থেকে যথাযথভাবে কাজ করতে পারলে একটি সুষ্ঠু ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা খুবই সম্ভব। তার মধ্যে এ বোধ থাকতে হবে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার। শাসন ক্ষমতায় যেই থাকুক না কেন, তার উপর নির্ভর না করে নিজস্ব সক্ষমতার উপর নির্ভর করা। কোনো দলের দিকে না তাকিয়ে জনগণের ভোটাধিকারের দিকে তাকানো। তাদের ভোটের অধিকার কীভাবে কতটা সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করা যায়, সেদিকে মনোযোগ দেয়া। নির্বাচনের দিন নিজেকে ‘একদিনের সুলতান’ হিসেবে মনে করে তার ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে তার সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগে কোনো দ্বিধা থাকা উচিত নয়। প্রয়োজন শুধু নিরপেক্ষ থেকে ক্ষমতার সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। ৯০ দশকের শুরুতে ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার টি এন সেশান এ কাজটিই করেছিলেন। তিনি অনেক বাধাবিপত্তির মুখে পড়েছিলেন। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে গিয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন। এমনকি তাকে ইমপিচমেন্ট করার কথাও উঠেছিল। এসব কোনো কিছুই তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি নিজেকে মনে করেছেন, ফুটবলের মতো। যতই তাকে কিক মারা হোক না কেন, তিনি বাউন্সব্যাক করেছেন। ভারতের নির্বাচনী ব্যবস্থার খোলনলচ বদলে দিয়েছিলেন। সততা ও দক্ষতার সাথে অসাধারণ নির্বাচন উপহার দিয়ে ইতিহাস হয়ে রয়েছেন। আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সামনে এক ঐতিহাসিক নির্বাচন উপহার দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শুধু প্রয়োজন, তার দৃঢ়তা ও সক্ষমতা প্রদর্শন। এটা আমি পারব না, ওটা আমার এখতিয়ারের মধ্যে নেই-এ ধরনের কথা বলে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করা মোটেও উচিত হবে না।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।