Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাচনী হাওয়া, নির্বাচনী চিন্তা-১

| প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক : আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করতে গেলেই, প্রধানতম বিষয় যেটি এখনও অমীমাংসিত, সেটি হলো নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা। ইতিহাস থেকে একটি উদাহরণ দিয়ে এই কলামের আলোচনা শুরু করছি। বাংলাদেশের মানুষ দুই প্রকারের সরকার ব্যবস্থার সাথে পরিচিত। যথা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা এবং প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার ব্যবস্থা। অন্য নিয়মে ব্যাখ্যা করলে বলা যায়, বাংলাদেশের মানুষ দুই প্রকারের সরকার ব্যবস্থার সাথে পরিচিত; যথা দলীয় সরকার এবং নির্দলীয় সরকার। নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থারও দুইটি প্রকার আছে। যথা সামরিক সরকার ও সমঝোতার ভিত্তিতে বেসামরিক সরকার। আমি সমঝোতার ভিত্তিতে স্থাপিত নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের প্রথম উদাহরণটি এখানে তুলে ধরছি। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ পদত্যাগ করার পর একটি বিশেষ প্রকারের নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশ শাসন করেছিল। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের নাগরিকগণের মধ্যে যাদের বয়স ৩৫ বা ৪০ এর কম, তারা ১৯৯০ সালের নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থার সাথে পরিচিত নন। তাই অতি ক্ষুদ্র পরিসরে, ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরের নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারটির প্রেক্ষাপট, পরিচয় ও দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে কিছুকথা এখানে তুলে ধরছি। ওই সময় বাংলাদেশের সংবিধানে এইরূপ বন্দোবস্ত ছিল না কিন্তু জাতীয় রাজনৈতিক প্রয়োজনে, তৎকালীন তিনটি বৃহৎ রাজনৈতিক জোটের এবং জোট বহির্ভূত রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতি ও সমঝোতার মাধ্যমে ওই অভিনব সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, অস্থায়ীভাবে, বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। দায়িত্ব গ্রহণ করার পূর্বে প্রধান বিচারপতি মহোদয় শর্ত দিয়েছিলেন যে, প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন শেষ হয়ে গেলে তিনি যেন প্রধান বিচারপতির আসনে পুনরায় ফেরত যেতে পারেন, রাজনীতিবিদগণ কর্তৃক তাঁকে সেই গ্যারান্টি দিতে হবে। রাজনৈতিক জোট ও দলগুলো ওই গ্যারান্টি দিয়েছিল। ইতিহাসের স্বচ্ছতার স্বার্থে উল্লেখ করে রাখতে চাই যে, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ, প্রেসিডেন্ট বা অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য নিজের থেকে আগ্রহ প্রকাশ করেননি; রাজনীতিবিদগণের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি সম্মত হয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন, দশ সদস্য বিশিষ্ট একটি নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকার গঠন করেছিলেন; উপদেষ্টাদের সকলেই অরাজনৈতিক স্বনামধন্য ব্যক্তি ছিলেন।
রাজনৈতিক জোট ও দলগুলোর পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের প্রতি দাবি ছিল, সুন্দর, সার্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠান করিয়ে দেওয়া। ইংরেজি পরিভাষায়: হিজ প্রিন্সিপাল ম্যান্ডেইট ওয়াজ টু হোল্ড এ ফ্রি এন্ড ফেয়ার পার্লামেন্টারি ইলেকশন। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন তৎকালীন নির্বাচন কমিশনের আগ্রহ ও নিষ্ঠা, তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক প্রশাসন তথা আমলাতন্ত্র এবং তৎকালীন সামরিক বাহিনীর নিরপেক্ষতা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার উপর ভরসা করেছিলেন। প্রেসিডেন্টের পৃষ্ঠপোষকতায়, সর্বমহলের সহযোগিতায়, তৎকালীন নির্বাচন কমিশন ১৯৯১ সালের ফেব্রেæয়ারির ২৭ তারিখে পার্লামেন্ট নির্বাচন করায়, যেটি কল্পনা মোতাবেক সার্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছিল।
আগামী নির্বাচনও যেন সুষ্ঠু হয় সেটিই সকলের কামনা। নির্বাচনী হাওয়া অবশ্যই বইতে শুরু করেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে বাংলাদেশিগণ অভ্যস্ত। প্রাণ যায়, সম্পদ যায় কিন্তু নতুন করে জীবন শুরু করতেই হয়। সা¤প্রতিককালে বন্যা, সাইক্লোন, পাহাড়-ধ্বস, সড়ক দুর্ঘটনা, লঞ্চডুবি ইত্যাদির মিছিল বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সংসার জীবন থেমে নেই। সবচেয়ে বড় কথা, রাজনীতি-প্রিয় এবং রাজনীতি-প্রবণ বাংলাদেশিগণ আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা, নড়াচড়া শুরু করেছেন। মানুষ কতটুকু বলছেন বা বলছেন না সেটি এক এক নির্বাচনী এলাকায় এক এক রকম। কিন্তু মুদ্রণ মিডিয়া বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার হালচাল, রাজনৈতিক জোটগুলোর হালচাল, রাজনৈতিক দলগুলোর হালচাল ইত্যাদি নিয়ে লেখালেখি পুরোদস্তর শুরু করেছে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে রিপোর্টিং কম হলেও, টকশোগুলোতে নির্বাচন নিয়ে প্রচুর আলোচনা চলছে। অর্থাৎ প্রাকৃতিক আবহাওয়া ও জলবায়ু রাজনৈতিক আবহাওয়া ও জলবায়ু সহঅবস্থানে থেকেই অগ্রসরমান।
উদাহরণস্বরূপ, বিগত তিন-চার সপ্তাহের মধ্যেও অনেকগুলি বড় বড় দৈনিক পত্রিকায় চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন আসন নিয়ে বা ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের আসন নিয়ে, খবর বেরিয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে যেহেতু চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসন থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী অথবা আমার দলের জেষ্ঠ্য ১০-১২ জন নেতা বিভিন্ন আসন থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী, সেহেতু, দলের নেতাকর্মীরা খবরাখবর রাখবেই। অথবা এমনও বলা যায় যে চট্টগ্রামের আসনগুলি নিয়ে ২০ দলীয় জোটের বা বিএনপি’র চিন্তাধারা কিরকম, সেই সম্বন্ধে অবহিত থাকার নিমিত্তেই, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীগণ, পত্রপত্রিকা নিয়মিত ভিত্তিতে ঘাঁটাঘাঁটি করতে থাকেন। ঐ সুবাদেই বলছি যে, মনমানসিকতায় রাজনীতিবিদগণ, রাজনৈতিক কর্মীগণ নির্বাচনমুখী হয়ে উঠেছেন।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সকল রাজনৈতিক দলই উন্মুখ হয়ে আছে; তবে অবশ্যই শর্ত সাপেক্ষে। কিছু রাজনৈতিক দল নিবন্ধনবিহীন অতএব, তাদের বিষয়টি আলাদা এবং এই কলামের আলোচনার বাইরে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, এলডিপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপ, তরিকত ফেডারেশন ইত্যাদি নিবন্ধনওয়ালা দলের বিষয়টি ভিন্ন। সরকারি জোট বা সরকারি জোটের বন্ধুরা চায় তাদের শর্ত মোতাবেক সবাই যেন নির্বাচনে আসে। কিন্তু সরকারি জোটের বাইরে যারা তাদের অনুভূতি হলো, একটি নিরপেক্ষ পরিবেশে নির্বাচন হলেই মাত্র তারা নির্বাচনে আসবে। বিএনপি’র ভাষায় তথা ২০ দলীয় জোটের ভাষায়, নির্বাচনকালে একটি সহায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে হবে, তাহলেই বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোট আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। অর্থাৎ যেই প্রশ্নটি জাতির সামনে ঘুরঘুর করছে সেটি হলো, আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচনকালে সরকার ব্যবস্থা কেমন হবে? সরকার ব্যবস্থা কেমন হবে, সেটি বাংলাদেশের সংবিধানে দেওয়াই আছে। কিন্তু সংবিধানটি তো আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক আওয়ামী লীগের সুবিধার্থে সংশোধিত। তাহলে কী করা যায়?
আলোচনার এই স্থলে পুনরায় ইতিহাসে ফিরে যাচ্ছি। জুলাই ১৯৮৭ থেকে জুন ১৯৮৯ পর্যন্ত, রাঙামাটিতে ছয় মাস এবং খাগড়াছড়িতে দেড় বছর ব্রিগেড কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছি। অতঃপর এক বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম, উচ্চতর সামরিক লেখাপড়ার জন্য। ফেরত এসেই, জুন ১৯৯০ এর শেষ সপ্তাহ থেকে সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে ডাইরেক্টর অফ মিলিটারি অপারেশন্স নিযুক্ত হয়েছিলাম। ১৮ অক্টোবর ১৯৯০ থেকে হঠাৎ করেই এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল। সেই চাঙ্গা ভাব কখনও হালকাভাবে কমলেও, পুরোপুরি স্তিমিত আর হয়নি। ২৯ নভেম্বর ১৯৯০ তারিখ থেকে মারাত্মক গরম হয়ে যায় পরিবেশ পরিস্থিতি। ৬ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট এরশাদ পদত্যাগ করেছিলেন। ১৯৯০ এর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অফ আর্মি স্টাফ বা সেনাপ্রধান পদে অদল-বদল হয়েছিল; লেফটেনেন্ট জেনারেল আতিকুর রহমান স্বাভাবিক অবসরে যান এবং লেফটেনেন্ট জেনারেল নুরুদ্দীন খান নতুনভাবে দায়িত্ব নেন। অর্থাৎ রাজনীতিতে অস্থির পরিবেশ থাকলেও, সেনাবাহিনীতে অস্থির পরিবেশ ছিল না কিন্তু ক্রান্তিকালীন বা ট্রানজিশনাল পরিবেশ ছিল। কয়েক মাস পূর্বে ইরাক কুয়েত দখল করেছিল এবং আশঙ্কা ছিল যে, আগ্রাসী ইরাকি বাহিনী কুয়েত-সৌদি সীমান্ত ক্রস করতে পারে। তাই পবিত্র ভূমি রক্ষার জন্য, শুধুমাত্র প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকার নিমিত্তে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীরি একটি কনটিনজেন্ট সৌদি আরবে পাঠানো হচ্ছিল। সময়টা খুব ব্যস্ত যাচ্ছিল। মনের ভেতরে বা চিন্তার জগতেও ব্যস্ততা ছিল। ধীরে ধীরে, একটু একটু করে, সেনাবাহিনীর সকল পর্যায়ে একটা মত বা ওপিনিয়ন দৃঢ় হচ্ছিল। মত বা ওপিনিয়নটি ছিল এই যে, সেনাবাহিনী এরশাদ সাহেবের শাসনকে দীর্ঘায়িত করায় আর অতিরিক্ত সহযোগিতা করবে না। এই প্রসঙ্গটি নিয়ে এই কলামে আর আলোচনা করছি না। কিন্তু একইসঙ্গে, জ্যেষ্ঠ মহলে অনুভূতি দৃঢ় হচ্ছিল যে, এরশাদ সাহেব চলে যাবেন এবং একটি সুন্দর নির্বাচন প্রয়োজন হবেই হবে। ওই সুন্দর নির্বাচন, সেনাবাহিনীর সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নাও হতে পারে। সম্মানিত পাঠক, আমি আপনাদেরকে এটাই বোঝাতে চাচ্ছি যে, ১৯৯০ সালের শেষাংশে, উত্তাল রাজনৈতিক পরিবেশে, সেনাবাহিনী স্থির চিত্তে দেশের শান্তি-শৃংখলার কথা চিন্তা করছিল এবং অদূর ভবিষ্যতের সম্ভাব্য করণীয় নিয়েও চিন্তা করছিল। এইরকম পরিস্থিতিতেই ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০, প্রেসিডেন্ট এরশাদ পদত্যাগ করেছিলেন। এই তারিখের পরবর্তী পাঁচ-সাত দিনের ঘটনা অন্যদিন লিখবো। আজকে এবং ইনকিলাবের আগামী কলামটিতেও যেই বিষয়টিতে লেগে থাকতে চাই সেটি হলো নির্বাচন।
সামরিক ও বেসামরিক সহযোগিতার উজ্জ্বল উদাহরণ
১৯৯১ সালের ফেব্রæয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে, অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচন উপলক্ষে, তৎকালীন বাংলাদেশের সামরিক ও বেসমারিক অঙ্গনের মধ্যে যে সহযোগিতা হয়েছিল, সেটি অতি উজ্জ্বল ও গঠনমূলক ছিল। ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০-এর তিন-চারদিন পর অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন সামরিক বাহিনীর উচ্চ পদস্থ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মোলাকাত করেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় আবেদন করেন যে, সামরিক বাহিনীর সহযোগিতা ব্যতীত তিনি তাঁর উপর অর্পিত প্রধান দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। প্রধান দায়িত্বটি কী? সার্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা। সামরিক বাহিনীর নিকট থেকে প্রত্যাশিত সহযোগিতাটি কী? সামরিক বাহিনী দেশব্যাপী মোতায়েন হবে এবং সামরিক বাহিনী মানুষের আস্থা অর্জন করবে, মানুষের মনোবল অটুট রাখবে, নিরপেক্ষ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ উপহার দেবে, আইনশৃংখলা পরিস্থিতি যেন অবনতি না হয় তার নিশ্চয়তা দেবে। সামরিক বাহিনী অবশ্যই তাদের সুপ্রিম কমান্ডার (তথা দেশের প্রেসিডেন্ট) এর নির্দেশনা পালনে বাধ্য। এটি সেনাবাহিনীর দায়িত্ব। কিন্তু কতটুকু আন্তরিকতার সঙ্গে এই দায়িত্বটি পালন করবে, সেটি কোনো কাগজে লেখা ছিল না এবং কোনো কাগজে লেখা থাকেও না। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরের বা ৯১-এর জানুয়ারি-ফেব্রæয়ারির সেনাবাহিনীর উচ্চ পদস্থ নেতৃত্বের অন্যতম আভ্যন্তরিণ দায়িত্ব ছিল সেনাবাহিনীর সকল স্তরের সকল সদস্যের মনে, নতুন অর্পিত দায়িত্ব পালনের নিমিত্তে, উচ্চতম মানের আন্তরিকতা সৃষ্টি করা। সেনাবাহিনীকে বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় কাজে লাগাতে গেলেই ডাইরেক্টর অফ মিলিটারি অপারেশন্স এবং তার ডাইরেক্টরেট বা পরিদপ্তরই হলো বিধিবদ্ধ পয়েন্ট অফ কন্টাক্ট ও মাধ্যম। অতএব, আমরা অত্যন্ত গুরুদায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম এবং প্রস্তুতির পর সেই দায়িত্ব পালন করেছিলাম। তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সেনাবাহিনীর অভূতপূর্ব সহযোগিতা আদান-প্রদান হয়েছিল। আমার যোগাযোগের পয়েন্ট অফ কন্টাক্ট ছিলেন তৎকালীন যুগ্ম সচিব আব্দুল হামিদ চৌধুরী। সকলের সার্বিক ইতিবাচক প্রচেষ্টায়, ১৯৯১ সালের ফেব্রæয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে, বাংলাদেশে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নির্বাচনটি সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য ছিল। ভালো কিছু পেতে হলে কষ্ট করতে হয়। গৎ বাঁধা প্রক্রিয়ায় ভালো কিছু না-ও আসতে পারে। তাই ব্যতিক্রমী প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয় অনেক সময়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক জোট ও দলগুলো ১৯৯০-৯১ সালে এই বাস্তবতারই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
অতএব আগামী নির্বাচন উপলক্ষেও রাষ্ট্রের সকল অঙ্গের মধ্যে, সকল বাহিনীর মধ্যে আন্তরিক ও গঠনমূলক সহযোগিতা প্রয়োজন। এটির জন্য এমন একটি সরকার প্রয়োজন, যেটি নির্বাচনকালে, সকল মহলকে সহায়তা প্রদান করতে পারবে। ইনকিলাবের সম্মানিত পাঠকদের জন্য, এই প্রসঙ্গের আলোচনাটি আগামী কিস্তিতে করবো। অতএব, সম্মানিত গুণগ্রাহী পাঠকদের নিকট আবেদন করতেই পারি যে, আজকের কলামটি সংরক্ষণ করুন যেন আগামী কলামটির সঙ্গে সংযোগ করা সহজ হয়। পুরো পত্রিকা সংরক্ষণ করতে না পারলেও, কলামটি কাটিং করে ফটোকপি করে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
www.generalibrahim.com



 

Show all comments
  • বিপ্লব ২০ জুলাই, ২০১৭, ৩:০৭ পিএম says : 0
    লেখাটি খুব ভালো লেগেছে। আগামী কিস্তির জন্য অপেক্ষায় রইলাম.....
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ