নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
রেজাউর রহমান সোহাগ : দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার তামিম ইকবাল ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে গিয়ে মাত্র ১টি ম্যাচ খেলেই অপ্রত্যাশিতভাবে দেশে ফিরে এসেছেন। ইংলিশ ক্লাব এসেক্সের হয়ে তামিমের মোট ম্যাচ খেলার কথা ছিল ৮টি। তামিমের এই হঠাৎ করে দেশে ফিরে আসার ঘটনাটি বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে এখন অন্যতম আলোচিত বিষয়।
হঠাৎ করে দেশে ফিরে আসার বিষয়টি নিয়ে তামিম ইকবাল একেবারে নিশ্চুপ থাকায় ক্রীড়ামোদীদের মনে এটা নিয়ে আরো প্রশ্ন ও কৌতূহল বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও এই ব্যাপারে স্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা না দেয়ায় আরো বেশি ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। তবে একথা সকলেই নিশ্চিত করেই বুঝতে পারছেন যে নিশ্চয়ই এমন কোন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে যার কারণে তামিম ইকবালকে বাধ্য হয়েই ইংল্যান্ডের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ক্রিকেট আসর কাউন্টি লীগে বাকি ম্যাচগুলো না খেলেই দেশে ফিরে আসতে হয়েছে। তামিম ইকবালের এই দেশে ফিরে আসার বিষয়টি নিয়ে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) একজন শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইনকিলাবকে জানান, নিরাপত্তার অভাবজনিত কারণেই একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে তামিমকে সপরিবারে দ্রæত দেশে ফিরে আসতে হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের উক্ত কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ইংল্যান্ডে খেলার সময় তামিম ইকবাল তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলেন। চট্টগ্রামের অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান তামিম ইকবালের স্ত্রীর মাথায় তখন হিজাব পরা ছিল। ঐ সময় চার পাঁচজন শ্বেতাঙ্গ যুবক রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে তামিম ইকবাল ও তার স্ত্রীর দিকে এসিডের বোতল নিক্ষেপ করার চেষ্টা করলে ঘটনার ভয়াবহতায় তামিম কোনক্রমে ঐ অবস্থা থেকে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দ্রæত ঐ স্থান ত্যাগ করেন। সঙ্গে সঙ্গে তামিম এই বিষয়টি তার ক্লাব কর্তৃপক্ষকে জানান এবং স্পষ্ট সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন যে, তিনি আর ইংল্যান্ডে খেলবেন না এবং দ্রæতই দেশে ফিরে যাবেন।
ঘটনার বাস্তবতায় তামিম ইকবাল আর কোন ম্যাচ না খেলেই দ্রæত দেশে ফিরে আসার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা একেবারেই সঠিক এবং যুক্তিযুক্ত। নিশ্চয়ই একজন খেলোয়াড়ের কাছে তার জীবন ও পরিবারের চেয়ে ক্রিকেট বেশি আপন হতে পারে না। এই বিষয়টি তামিম তার ব্যক্তিত্বসুলভ সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন। তামিম ও তার পরিবারের সাথে ইংল্যান্ডের রেস্টুরেন্টের শ্বেতাঙ্গ যুবকরা যে আচরণ করেছে তা শুধু নিন্দনীয়ই নয়, বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার ওপরও একটা বিরাট হুমকি। তামিমের ওপর এই আক্রমণের ঘটনাটি আরো বড় কোন দুর্ঘটনারও জন্ম দিতে পারতো। তবে তামিম ইকবাল যে ভুলটি করেছেন তা হলো, দেশে ফিরেই তামিমের এই ঘটনাটি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে অবহিত করা উচিৎ ছিল। কারণ এই ঘটনার সঙ্গে শুধু তামিম নয়, বাংলাদেশের সকল ক্রিকেট খেলোয়াড়দেরই ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত।
বিসিবির উক্ত পদস্থ কর্মকর্র্তা সূত্রে আরো জানা গেছে, এই ঘটনাটি যাতে তামিম দেশে ফিরে গোপন রাখেন সে ব্যাপারে তার ইংলিশ ক্ল্যাব এসেক্সের শীর্ষ কর্মকর্তারা তামিমকে অত্যন্ত বিনীত ও জোরালোভাবে অনুরোধ করেন। যে কারণে তামিমের কাছ থেকে কোন অভিযোগ না পাওয়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও এ ব্যাপারে কোন কঠোর ও জোরালো ভূমিকা রাখার সুযোগ পাচ্ছে না। তবে দেশের ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের বৃহত্তর স্বার্থেই তামিম ইকবালের উচিত প্রকৃত ঘটনাটি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে অবহিত করা। তামিম যদি বিষয়টি অভিযোগ আকারে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে অবহিত করেন তাহলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের উচিত হবে এই ব্যাপারে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের কাছে জোরালো প্রতিবাদ জানানো এবং কঠোরভাবে ঘটনার ব্যাখ্যা দাবি করা।
উল্লেখ্য, বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি আসলেই ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট কর্তৃপক্ষ শুধু বাংলাদেশে নিরাপত্তার অভাবের বিষয়টি বার বার তুলে এনে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ করার চেষ্টা করে। অথচ আজ পর্যন্তও ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া তাদের ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরের সময় কোন নিরাপত্তার সমস্যা খুঁজে বের করতে পারেনি। বরং বার বার মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় ক্রিকেট বিশ্বের কাছে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার এই অভিযোগ একটি ভিত্তিহীন বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
অথচ বাংলাদেশের একজন জাতীয় ক্রিকেটার যখন ইংল্যান্ডের কাউন্টিতে খেলতে গেলেন তখন তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি ব্রিটিশ সরকার ও ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ড! এইরকম একটি দুঃখজনক ও লজ্জাজনক ঘটনার পরও কি আর কোনদিন বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করার যোগ্যতা ও এখতিয়ার রাখে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড? মাত্র কিছুদিন আগে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ক্রিকেট চলাকালেও লন্ডন ও ম্যানচেস্টারে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং ঐ ঘটনায় বেশ কয়েকজন মানুষ নিহত হয়েছেন। ঐ ঘটনার সময় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলও সেখানেই অবস্থান করছিল। কিন্তু বাংলাদেশ দল তো তখন নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে খেলা বন্ধ রেখে চলে আসেনি বা কোন অভিযোগও করেনি।
সর্বশেষ তামিম ইকবালকে নিয়ে লন্ডনে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের উচিৎ বাংলাদেশের সকল খেলোয়াড়দের বিদেশের মাটিতে ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের নিশ্চয়তা বিধান করা। আর এইক্ষেত্রে জোর গলায় কথা বলার শতভাগ যোগ্যতা, কারণ, অধিকার ও ন্যায্যতা সবই বাংলাদেশের রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।